ভুলতে পারিনি তাকে পর্ব ১৬ || নীল ক্যাফের ডায়েরী

ভুলতে পারিনি তাকে পর্ব ১৬
Mahfuza Akter

তানিয়া আহসান দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
—শ্রুতি আমাদের একমাত্র মেয়ে। আমার কলিজার একটা অংশ। রক্তের সম্পর্ক না থাকলেও আত্মার সম্পর্ক আছে, সেটা মনে রাখবেন। এই বাড়িতে ওর যদি কোনো অমর্যাদা হয় বা ক্ষতি হয়, তাহলে আমি যে কী করতে পারি সেটা কল্পনাও করতে পারবেন না!
আরিহা খান অক্ষিগোলক ইয়া বড়বড় করে তাকালেন। একের পর এক শক খেয়ে তিনি কিছুই হজম করতে পারছেন না। এসব কী ঘটছে তার সামনে? কিছুটা ভড়কে গিয়ে বললেন,

—কিন্তু আমার জানা মতে ওর বাবা-মা তো………
আরাফ আহসান তার কথায় দাঁড়ি বসিয়ে বললেন,
—আমরাই ওর বাবা-মা। আপনি যাদের কথা বলছেন, তারা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করার সাথে সাথেই আমরা বৈধভাবে ওকে এডপ্ট করেছি।
তানিয়া আহসান কঠিন সুরে বললেন,
—আমরা যেভাবে আপনার মেয়েকে নিজের পুত্রবধূ হিসেবে নয় বরং মেয়ের মতো ভালোবাসি, আশা করি আপনিও সেরকম ভাবেই আমাদের মেয়েকে স্নেহ করবেন।
আরিহা খান বিরক্ত হয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলেন। মনে মনে বললেন,
—এই উটকো ঝামেলাটা আবার ঘাড়ে চেপে বসেছে। একবার বেঁচে গেছিস তো কী ভেবেছিস? এবারো বেঁচে ফিরবি? যতই আহসান পরিবারের সাথে সম্পর্ক পাতাস না কেন? এবার আর কেউ তোকে বাঁচাতে পারবে না। এমন ব্যবস্থাই করতে হবে।

আরও গল্প পরতে ভিজিট করুন

আরাফ আহসান তার পরিবার নিয়ে ফিরে যেতে চাইলে আভাস আঁটকে দেয়। তন্ময় বললো,
—আরে আমরা তো জাস্ট এটাই দেখতে এসেছিলাম যে, তুই সবকিছু হ্যান্ডেল করতে পারছিস কিনা! বাট তোর পারফরম্যান্স তো আমাদের এ্যাসপিরেশনকে ছাড়িয়ে গেছে! একদম কোলে তুলে!! ও মাই গুডনেস!!!
বলেই একগাল হাসলো সবাই। শ্রুতি আভাসের কানে ফিসফিস করে বললো,
—এবার তো আমায় একটু নিচে নামান! আপনার তো দেখি লজ্জা শরমের কোনো বালাই নেই!
আভাস মুখ বাকিয়ে বললো,
—এখন আমি নির্লজ্জ হয়ে গেলাম! আর নিজে কী করেছিলেন ভুলে গেছেন? কাল কীভাবে আরাফ স্যারকে বলেছিলেন, ‘বাবা, আমি এখনি ধলা বিড়ালকে বিয়ে করতে চাই। ‘ তখন কোথায় ছিল লজ্জা শরমের কথা?
—তাও আপনি আমায় নিচে নামান। এভাবে আর কতক্ষণ?
আভাস একজন সার্ভেন্টকে বললো, আহসান ফ্যামিলির সবাইকে যার যার ঘর দেখিয়ে দিতে। শ্রুতিকে নিয়ে নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বললো,
—আমি যখন মন চাইবে, তখন নামাবো। আর একবারো যদি বলেছো ‘আমায় নামান’, তাহলে একটা আছাড় মারবো বলে দিলাম।

আরিহা খান ঘরে বসে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে নাতাশাকে কল দিলেন। নাতাশা কল রিসিভ করলে রাগী স্বরে বললেন,
—সেই কখন থেকে ফোন দিচ্ছি, তোর কোনো খবর নেই কেন?
নাতাশা নির্লিপ্ত কণ্ঠে বললো,
—কেন কল দিয়েছো? আমি কিন্তু আর তোমাদের বাসায় যাচ্ছি না।
—আমার ছেলে না হয় তোকে একটা থাপ্পড়ই মেরেছে! এতে এতো কাহিনী করার কী আছে?
—আমি কোনো কাহিনী করছি না, খালামনি। তোমার দু-চারটে থাপ্পড় খাওয়ার অভ্যাস থাকলেও আমার সেটা একদমই নেই।
নাতাশার গায়ে জ্বালা ধরানো কথা শুনে আরিহা খান কড়া গলায় বললেন,
—এদিকে আভাস বিয়ে করে বসে আছে, আর তুই থাপ্পড় নিয়ে পড়ে আছিস? তুই তাহলে তোদের বাড়িতেই থাক! এখানে আর আসতে হবে না।
নাতাশা অবাক হয়ে বললো,
—আভাস বিয়ে করেছে? ইম্পসিবল!!! ও তো ঐ শ্রুতি নামের মেয়েটাকে ছাড়া কিচ্ছু বুঝে না! অন্য কোনো মেয়েকে বিয়ে করা তো দূরে থাক!
—আভাস শ্রুতিকেই বিয়ে করেছে।
নাতাশা চোখ বড়বড় করে বললো,
—হোয়াট?? ঐ মেয়েটা না মারা গেছে অনেক আগে? তাহলে আবার ফিরে এলো কীভাবে?
আরিহা খান দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

—কৈ মাছের প্রাণ মেয়েটার! এজন্যই মরতে মরতে বেঁচে ফিরেছে।
নাতাশা আরিহা খানের কথার মানে কিছু বুঝতে পারলো না। তবুও তড়িঘড়ি করে বললো,
—দেখি আমি যতো তাড়াতাড়ি পারি, ঢাকা ব্যাক করছি।
আরিহা খান ফোন রেখে নিজের বালিশের নিচ থেকে একটা ছবি বের করলো। তার চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি গড়িয়ে পড়ছে, অথচ চোখে মুখে বিরাজ করছে হিংস্রতা।

স্নেহা কিছুক্ষণ আগে রাজশাহী থেকে নিজের বাড়িতে ফিরেছে। সবকিছু শোনার পর তার মধ্যে প্রচন্ড অপরাধবোধ কাজ করছে। যদিও নিজের মায়ের কুকর্মের ব্যাপারে স্নেহা কিছু জানে না এখনো। কিন্তু আভাসের সাথে করা খারাপ ব্যবহারের জন্য সে অনুতপ্ত। তার অন্তত আভাসের মনের অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করা উচিত ছিল! আভাস তো তাকে নিজের ছোট বোন থেকেও বেশি কিছু ভাবে! তবুও সে আভাসের মনটাকে বুঝতে পারলো না। কোন মুখে যাবে আভাসের কাছে ক্ষমা চাইতে?
স্নেহা গালে হাত দিয়ে গভীর ভাবনায় নিমগ্ন। হঠাৎ তন্ময় তার ঘরে প্রবেশ করতে করতে বললো,

—হোয়াট হ্যাপেন্ড, স্নেহময়ী? মন খারাপ?
স্নেহা আনমনে বললো,
—হুম। অনেক মন খারাপ। অনেক টেনশন হচ্ছে।
—কেন?
—ভাইয়াকে কীভাবে………..
বলতে গিয়ে হুশ ফিরতেই সামনে চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে বললো,
—আপনি? আপনি এখানে, আমার বাড়িতে কী করেন?
—তোমার বাড়ি কে বলেছে? এটা আমার এবং আমার বোনের শশুর বাড়ি।
স্নেহা ভ্রু কুঁচকে বললো,
—আচ্ছা? তাহলে আমার ঘরে কেন এসেছেন? আপনাকেও তো আলাদা রুম দেওয়া হয়েছে নিশ্চয়ই!
তন্ময় মজা করে বললো,
—এটাই তো আমার রুম! আমাকে তো এখানেই আমার বউয়ের সাথে থাকতে বলা হয়েছে!
স্নেহার চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। বিয়ের আগে একঘরে থাকার মতো উদ্ভট কথা কে বলতে পারে? স্নেহা আমতা আমতা করে বললো,

ভুলতে পারিনি তাকে পর্ব ১৫

—দেখুন, এ বাড়িতে ঘরের অভাব নেই। চলুন আপনাকে আমি একটা সুন্দর ঘর দেখিয়ে দিচ্ছি।
তন্ময় রহস্যময় হাসি দিয়ে স্নেহার দিকে এগুতে এগুতে বললো,
—কেন? আমি তোমার সাথে এই ঘরে থাকলে কী সমস্যা তোমার?
স্নেহা ভয়ে পেছাতে পেছাতে বললো,
—আপনি এভাবে এগুচ্ছেন কেন?
—তুমি পিছিয়ে যাচ্ছো কেন?
—আপনি এগিয়ে আসছেন, তাই?
—আমিও এগিয়ে আসছি তুমি পেছাচ্ছো, তাই?
—এটা কোনো লজিক হলো? আপনি এখান থেকে চলে যান।
—আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দাও।
—কী প্রশ্ন বলুন।
—আমি এই ঘরে তোমার সাথে থাকলে তোমার কী সমস্যা?
—যেকোনো ছেলে আমার সাথে থাকলেও আমার কোনো সমস্যা নেই।
তন্ময় পা থামিয়ে স্নেহার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো। কথাটার মর্মার্থ বুঝতেই চোখ বড়বড় করে বললো,
—-যেকোনো ছেলে!! তুমি তোমার কথার মানে বুঝতে পারছো?
স্নেহা তেমন কোনো হেলদোল না দেখিয়ে বললো,

—না বোঝার কী আছো? আমি পৃথিবীর সকল ছেলেকে নিজের ভাইয়ের চোখে দেখি।
—আমি থাকলেও তোমার কোনো সমস্যা নেই।
—আমি কী বললাম শুনেননি?
—হ্যাঁ, শুনলাম তো! পৃথিবীর সকল ছেলেকে তুমি নিজের ভাইয়ের………….
কথাটা থামিয়ে কিছু একটা চিন্তা করে তন্ময় রাগী স্বরে বললো,
—তার মানে তুমি আমাকেও……
—হ্যাঁ, কেন? আপনি কি ছেলে না? আর তাছাড়া আদম-হাওয়া (আঃ) এর হিসেবে তো আপনি আমার ভাই-ই হন, তাই না?
তন্ময় ব্যাপারটা বুঝতে না পেরে বললো,
—আদম-হাওয়া (আঃ)…….
পরক্ষণে বিষয়টা মাথায় আসতেই দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—ইউ আর জাস্ট ইম্পসিবল!!
বলেই গটগট করে নিজের ঘরে চলে গেল। মেয়েটা কেমন অদ্ভুত লজিক দেখিয়ে ওকে নিজের ভাই বানিয়ে দিলো ভাবতেই রাগটা সপ্তম আসমানে উঠে যাচ্ছে।
এদিকে স্নেহা তন্ময়ের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ!!!!

ভুলতে পারিনি তাকে পর্ব ১৭