প্রেম পরিণয় পর্ব ৫
রাজশ্রী মজুমদার রাই
অভি হন্তদন্ত হয়ে বাসায় আসলো, বাসায় এসেই দেখে দিয়া টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছে,, অভি বিচলিত হয়ে বললো,
অভি- হাতের কি অবস্থা দেখি, সাবধানে কাজ করবি না, আমারই ভুল হইছে, কেন যে রান্না করতে বললাম তোকে। খুব বেশি ব্যাথা পেয়েছিস??
দিয়া অভির দিকে তাকিয়ে বললো
দিয়া- কি শুরু করছো দাদাভাই,, তেমন কিছুই হয় নি, শুধু একটু ছ্যাঁকা খেয়েছি। আর তোমাকে কে বলছে??
অভি দিয়ার বাঁ হাতটা দেখতে দেখতে বললো,
অভি-দাদাই বলেছে, হাত তো লাল হয়ে গেছে।
দিয়া- একটু লাল হয়েছে,এটা কোন ব্যাপার না।
অভি- কি বলছিস তুই??
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
দিয়া- ঠিকই বলছি, তাড়াতাড়ি খেতে বসো তো, খাবারগুলো ঠান্ডা হয়ে যাবে।
অভি- সত্যি ব্যাথা করছে না তো।
দিয়া- আরে বাবা, করছে না ব্যাথা। এবার কি খেতে বসবে?
একটু রাগ দেখিয়ে বললো দিয়া
অভি- আরে বসছি, আচ্ছা দাদাই কোথায়?
দিয়া- রুমে ছাড়া আর কোথায়?
অভি এখান থেকেই জোরে জোরে অগ্নিকে ডাকতে লাগলো
অভি- দাদাই, এ দাদাই
অভির ডাকেই অগ্নি রুম থেকে বেরিয়ে এলো,, অগ্নি সামনে দাঁড়াতে, অভি এক বার অগ্নির মুখের আরেকবার দিয়ার দিকে তাঁকাছে,,, দিয়া এবার বিরক্ত হয়ে বললো
দিয়া- কি দেখছো এভাবে??
অভি- আসলে আমি বুঝার চেষ্টা করছি,, হাত কার পুড়ছে তোর না দাদাইয়ের।
দিয়া একপলক অগ্নির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
দিয়া- আজকে আমার হাতে একটু ছ্যাঁকা লাগায় এতো কষ্ট লাগছে আপনার, আর এতো গুলো বছর যে আমাকে পুড়িয়েছে তখন কি একটুও কষ্ট লাগে নি।
অভি আবারও দুঃখী দুঃখী ভাব নিয়ে বললো
অভি- দাদাই বেশি লেগেছে তোমার?? কোথায় ব্যাথা লাগছে আমাকে বল??
অগ্নি রাগী চোখে অভির দিকে তাকালো, মুখে কিছুই বললো না, অভি ভয় পাওয়া ভান করে বললো
অভি- এভাবে তাকিয়ো না, আমার খুব ভয় লাগছে।
দিয়া দুই ভাইয়ের উপরে রাগ দেখিয়ে বললো
দিয়া- দাদাভাই এবার তোমাদের নাটক শেষ হলে খেতে বসো, আমার কিন্তু খুব খিদে লাগছে।
দিয়ার কথা শুনে অভি আর অগ্নি দুজনেই খেতে বসলো, দিয়া দুজনকে খাবার সার্ভ করে দিচ্ছে, অভি বললো
অভি- আরে বাবা, তুই এতো গুলো আইটেম রান্না করেছিস। আমি শুধু দুইটা ডিস রান্না করতে বলছি। এতোকিছু করার কি দরকার ছিলো?? আরো ভর্তা ও তো করেছিস।
দিয়া- তুমি খেতে কি দিয়ে, ইলিশ মাছে তো তোমার এলার্জি, আর চিকেন ও তো খুব একটা পছন্দ করো না দাদাভাই।
দিয়ার কথা শুনে, অভি – অগ্নি দুজনেই অবাক, অগ্নি তো ভুলেই গিয়েছিলো অভির যে ইলিশ মাছে এলার্জি আর অভি ও দাদাইয়ের ভয়ে আর কিছু বলে নি। কিন্তু দিয়া সবটা খেয়াল করে অভির জন্য আলাদা করে রান্না করেছে।অভি দিয়াকে পাশে বসিয়ে মাথা হাত বুলিয়ে বললো
অভি- হাতে জ্বালা নিয়ে ভর্তা বানাতে গেলি কেন,,, অনেক কষ্ট হয়েছে তাই না?
দিয়া- কি যে বলো না দাদাভাই, সামান্য একটু ছ্যাঁকা লেগেছে।
অভি- হাত টা লাল হয়ে আছে, এটা তোর কাছে সামান্য।
দিয়া- হুম, যখন প্রথম প্রথম পিসিরা জোর করে রান্না করাতো,তখন তো এর থেকে বেশি ছ্যাঁকা খেয়েছি, হাত ফোস্কা পড়েছে, তরকারি কাটতে গিয়ে হাত ও কেটে ফেলেছি। মা ঔষুধ লাগাতে আসলে তা ও দিতো না, পিসিরা বলতো এ সামান্য ব্যাথায় ঔষুধ লাগাতে হবে না, এতোটুকু কষ্ট সহ্য করতে না পারলে, পরের সংসার কিভাবে করবো। আর আজকে তো সামান্য ছ্যাঁকা লাগছে, তাও আজ উনি ঔষুধ ও লাগিয়ে দিয়েছে।
দিয়ার কথা শুনে অভি আর অগ্নি দুজনেই হতবাক, অভি বললো
অভি- এসব কথা আমাকে আগে বলিস নি কেন??
দিয়া- বললে কি হতো, বাবাইয়ের সাথে সম্পর্কের তিক্ততা বাড়তো।
অভি- তোর বাপের সাথে আমি সম্পর্ক রাখতেও চায় না,, শুধু পিসিমনি আর তোদের জন্য কিছু বলি না,,,
দিয়া- দেখো দাদাভাই, আমি একদিন বাবাই-য়ের এ কঠোর নিয়ম কানুন থেকে পালিয়ে যাবো, অনেক দূরে চলে যাবো। এমন কোথাও চলে যাবে সেখানে আমার ইচ্ছার, পছন্দের, অপছন্দের মূল্য থাকবে।
বিকালে অভি আর অগ্নি দুজনেই বাসা থেকে বের হলো, ওদের কিছু বন্ধু মিলে একসাথে আড্ডা দিবে, অগ্নির একদম যাওয়ার ইচ্ছা ছিলো না, কিন্তু অভির জোরাজোরিতে যেতেই হলো,,,
বিকাল পাঁচটা, স্কুল মাঠে বসে আছে, আকাশ, রনিত, অভি, জুবায়ের, কবির, অগ্নি। সবাই কথা বললেও অগ্নি চুপচাপ, জুবায়ের বললো
জুবায়ের – কি রে তুই ব্যাটা কিছু বলছিস না কেন?? তুই আর ঠিক হলি না, সে বোরিং রয়ে গেলি
অগ্নির হালকা হাসলে, কবির বললো
কবির – শালা চুপচাপ বসে না থেকে একটু ঢাকা শহরের গল্প কর, ঢাকা শহরে তো অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে, কাউকে মনে ধরেছে নাকি??
অগ্নিকে কিছু বলতে না দিয়েই আকাশ বললো
আকাশ – ওর মন বলে কিছু আছে নাকি, যে কাউকে মনে ধরবে শালা এক নাম্বারের নিরামিষ। ওই অভি আঙ্কেল আন্টিকে বলে একটা বিয়ে করিয়ে দে।
অভি- আঙ্কেল, আন্টিকে বলে কি হবে, দাদাই রাজি থাকলে তো আমি আজই বিয়ে করিয়ে দিবো।
জুবায়ের – ওই সত্যি করে বল তো,ঢাকা শহরের এতে সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে কাউকে তোর মনে ধরে নি।
অগ্নি – নাহ্, ঢাকা শহরের মেয়েরা সুন্দরী হতে পারে কিন্তু মায়াবতী না।।।
আকাশ – তাে আমাদের এলাকায় আছে নাকি সে মায়াবতী??
অগ্নি- আমার কথা বাদ দিয়ে তোদের কথা বল, কেমন চলছে দিনকাল।
কবির- আমার আর দিনকাল, মনে হয় সারাজীবন সিঙ্গেল থাকতে হবে। চাকরি ও পাচ্ছি না, চাকরি হলেও তো বাসায় বিয়ের কথা বলতে পারতাম।
অগ্নি- জুবায়ের তুই তো বিয়ে করেছিস। কেমন কাটছে বিবাহিত জীবন।
জুবায়ের – আলহামদুলিল্লাহ, খুব ভালো।
কবির- ভালো তো হবেই, শালা, তিনবছর খালাতো বোনের সাথে প্রেম করছে কিন্তু আমাদের কিছুই বলে নি, বিয়ের পরে বলে আমার তো লাভ ম্যারেজ।
এসব নিয়ে কথা বলার মাঝে অগ্নি খেয়াল করলো রনিত একদম চুপ হয়ে আছে। তাই অগ্নি রনিতকে উদ্দেশ্য করে বললো,
অগ্নি- কি রনিত, তুই কোন কথা বলছিস না।
সবাই রনিতের দিকে তাকালো, অভি হাসাহাসি চেহারা মুহূর্তের মধ্যে বদলে গেলো, কিন্তু কিছুই বললো না , আকাশ টিটকারি মেরে বললো
আকাশ – বন্ধুর বোনের প্রেমে পড়ে, বন্ধুর হাতের উরাধুরা কেলানি খাইছে, তাই চুপচাপ হয়ে গেছে
অগ্নি- কার বোনের প্রেমে পড়ছে? জুবায়ের আর কবিরের বোন তো নেই, আর তোর দিদির তো অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে তাহলে।
আকাশ – নিজের বোনদের কথা ভুলে গেলি নাকি
আকাশের কথা শুনে অগ্নি ভ্রু কুঁচকে তাঁকালো, কবির বললো
কবির – এখানো বুঝতে পারিস নি, তোদের ফুফাতো বোন আছে না যেটা এবার S.SC পরীক্ষা দিলো,,, কি জানি নাম,
অগ্নির মুখ থেকে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো
অগ্নি- দিয়া
কবির- হুম, ওইটা।অভিকে বলার সাথে সাথেই উরাধুরা মেরেছে রনিতকে।
রাগে অগ্নির চোয়াল শক্ত করে ফেললো, কিছুখন রাগি চোখে তাকিয়ে রইলো রনিতের দিকে, তারপর কিছু না বলেই হনহন করে উঠে হাঁটা ধরলো, পিছন থেকে সবাই ডাকছে, অভি ও ভাইয়ের পিছনে ছুটলো।
আকাশ – ওর আবার কি হলো?
কবির- রেগে গেছে মনে হয়, শালারা কি বোন বিয়ে দিবে না নাকি??
রনিত এতোখনে মুখ খুললো
রনিত- না দিলে তুলে নিয়ে আসবো।
রুমের এক কোণে হাঁটুতে মুখ গুঁজে কাঁদছে দিয়া,, পাশে পড়ে আছে অগ্নির ডায়েরি৷ এতোগুলো বছরের অভিমানের পাহাড় ধসে পড়েছে অগ্নির ডায়েরি পড়ে। ডায়েরি প্রতি পাতায় এক প্রেমিকে অসহায়ত্ব , কাছ থেকে দেখেও কথা না বলার তীব্র যন্ত্রণা ফুটে ওঠেছে।
ফ্লাশব্যাক, বিকালে অভি আর অগ্নি বেরিয়ে যাওয়ার পর দিয়া আবারও অগ্নির রুমে এলো, সকালে অগ্নির ফোনের ওয়ালপেপার নিজের ছবি দেখেই দিয়া বুঝে নিয়েছে অগ্নির মনে কি আছে,কিন্তু ওর সাথে কথা না বলার কারণ খুঁজতে হবে, তাই অগ্নির রুমে আবার গুপ্ত অভিযানে এসেছে, নিজ মনেই বললো
দিয়া- ঈশ্বর সহায় হও, কেন উনি এতোগুলা বছর এমন ব্যবহার করছে তা জানতেই হবে।
দিয়া সারারুমে চোখ ঘুরালো, পরিপাটি করা সবকিছু, কোথাও কিছুই ফেলো না, আলমারি দিকে চোখ পড়তেই দেখলো, লকের সাথে চাবি ঝুলছে, তাড়াহুড়ো করে চাবি খুলতে ভুলে গেছে হয়তো৷ সবসময় অগ্নির আলমারি লক করায় থাকে, দিয়া গিয়ে আলমারি টা খুললো অগ্নির কাপড়চোপড় ছাড়া তেমন কিছুই দেখতে পেলো না, আলমারি ড্রয়ারে খুলেই দিয়া একটা মোটা ডায়েরি দেখতে পেলো, সাথে সাথেই সেটা বের করে নিলো, ডায়েরি নিয়ে নিজের রুমে চলে এলো, প্রথম পেইজে দিয়ার ছোটবেলার একটা ছবি লাগানো রয়েছে, নিচে লেখা আমার পিচ্চি পরী,,,, হাতের লেখা টা চিনতে দিয়ার বেশি সময় লাগে নি। তারপরের কয়েক পেইজ খালি, তারপর একটা পেইজে লেখা ছিলো
অগ্নি- ১৩ তম জন্মদিনে শুভেচ্ছা পিচ্চি পরী, অনেক অনেক শুভকামনা তোর জন্য,,,, আর নিজে হাতে গিফট দিতে পারলাম না সরি।
দিয়া- তারমানে তিন বছর আগের এ ডায়েরি।
কয়েক পেইজ বাদ দিয়ে আবার লেখা
অগ্নি- আমি যে চাইলেও তোকে ভুলতে পারছি না, আমার যে ভীষণ কষ্ট হয়। তোকে সামনে দেখেও কথা বলতে পারি না। তোর অভিমানী দৃষ্টি যে আমাকে ভীষণ পুড়াই।
দিয়া নিজ মনেই বললো,
দিয়া- কথা বলতে কে বারণ করছে শয়তান বেডা।
আবারও কয়েক পেইজ বাদ দিয়ে লেখা, এবারের টানা দুই পাতা লিখা আছে,,,
অগ্নি- তুই কেন পিসিমনির মেয়ে হয়ে জন্ম নিলি,, পিসিমনির মেয়ে হলেও আমি তোকে বোন বলে মানতে পারবো না, আমি যে সম্পর্কের মারপেঁচ না বুঝেই তোকে ভালোবেসেছি, ভীষণ ভালোবাসি তোকে, সৃষ্টিকর্তা কেন আমার মনে তোর জন্যই এতো মায়া ভালোবাসা দিয়েছে বলতে পারিস???
তোকে ভুলে যাওয়ার ক্ষমতা আমার নেই, আমি কখনো পারবো ও না।৷ খুব কথা বলতে ইচ্ছা করে তোর সাথে কিন্তু তুই যদি আবারও ছোটবেলার মতো আমাকে দাদা বলে ডাকিস আমি সেটা নিতে পারবো না, তোর ছয় বছর বয়সে তুই প্রথম বার আমাকে দাদা বলে ডেকেছিলি, সেদিন আমার খুব রাগ লেগেছে, সেদিন থেকেই তোর সাথে কথা বলা বন্ধ করেছি, ওইটা প্রথম আর ওইটা শেষ বার,
আমি জীবনে আর কখনো তোর মুখ থেকে ওই ডাক শুনতে চাই না, জানিস পরী তোকে নিয়ে ভাবতেই কিভাবে একটা নির্ঘুম রাত কাটে আমি বুঝতেই পারি না, পিচ্চি তুই কি কখনো বুঝবি আমার অনুভূতি গুলো,,, উঁহু বুঝতেই দিবো না কখনো আমি। আমার পাপের ভাগিদার আমি তোকে কখনোই করবো না। তীব্র ভালোবেসে তোকে না পাওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিবো,,, এটাই বোধহয় তোকে ভালোবাসার শাস্তি ।
লেখাগুলো পড়ে দিয়ার চোখ দিয়ে জল পড়ছে, হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে নিয়ে আবার পাতা উল্টাতে লাগল, দিয়ার ছবি লাগানো আছে কয়েকটা পাতায়,,
অগ্নি- এক আকাশ পরিমাণ ভালোবাসি পিচ্চি। চোখের দূরত্ব আছিস, মনের নাাা, তোর থেকে দূরে আছি বলেই বুঝতে পারছি কতোটা জুড়ে আছিস তুই আমার। জানিস মাঝে মাঝে আমার নিশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হয় যখন ভাবি তুই আমার হবি না,,,,
দিন শেষে তোকে ছাড়া আমি শূন্য,
দিয়া কান্না করতে করতেই বললো,,,
দিয়া- আপনাকে ছাড়া আমার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
চোখ মুছে আবারও ডায়েরি পাতা উল্টাতে লাগলো
সেখানে লেখা
অগ্নি- জানিস পিচ্চি, পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মম তৃষ্ণা হলো তোর সাথে কথা বলার তীব্র ইচ্ছা। অনেক বেশি কথা বলতে ইচ্ছা করছে।
তোকে বুকের বাঁ পাশে রেখে দিয়েছি খুব যত্ন করে, তোকে কখনো বুঝতে দিবো না, তোকে পাওয়ার তীব্র ইচ্ছা নিয়ে ও আমি তোর থেকে দূরে সরে এসেছি।
আমার শূন্যতায়, পূর্ণতায় শুধু তুই।
দিয়া ঝাপসা চোখে আরো কয়েকটা পাতা উল্টে পড়তে লাগলো
অগ্নি – তোকে হুটহাট করে মনে পড়ে আমার, বুকটা ভারি হয়ে আসে,দম আটকে আসে আমার, চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় তোকে লাগবে আমার, আমার খুব কষ্ট হচ্ছে, আমি সহ্য করতে পারছি না দিয়া,,
আমি তোকে আমার জন্যই ভালোবাসি,, এক সমুদ্র কষ্ট নিয়েও আমি তোকে ভালোবাসি, তোকে ভালোবেসেই আমি বেঁচে আছি,,
আর পড়তে পারলো না দিয়া, ডুকরে কেঁদে উঠলো,,,
বর্তমান, দিয়া এখনো হাঁটুতে মুখ গুঁজে কেঁদেই যাচ্ছে, মুখ তুলে বিড়বিড় করে বললো
দিয়া- আপনার মতো কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো না, আমার শুধু আপনাকেই লাগবে,, সমাজ,সম্পর্ক কিছু মানি না আমি।
রাত নয়টা, অভি পায়চারি করছে ড্রয়িং রুমে,, অগ্নি বাইরে থেকে এসেই দরজা বন্ধ করে রুমের ভিতরে বসে আছে। অভি বাসায় আসার পর থেকে দিয়াকে একবার রুম থেকে বের হতে দেখে নি, দিয়াও নিজের রুমে দরজা ভিতর থেকে লক করে রেখেছে। দুজনের দরজা নক করেছে, কিন্তু কেউই দরজা খুলছে না, টেনশনে অভির মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে,,, আবার ও অগ্নির রুমের বাইরে থেকে জোরে জোরে ডেকে বলছে
অভি- দাদাই প্লিজ দরজা খোল,,, কি শুরু করেছা তোমরা দুজন, দিয়াও দরজা খুলছে না,,, এবার কিন্তু আমি দরজা ভেঙে ফেলবো
বলেই জোরে জোরে দরজা ধাক্কা দিতে লাগলো, কয়েক মিনিটের মধ্যে অগ্নি দরজা খুলে বের হতো, অগ্নিকে দেখে অভি রাগ নিয়ে বললো
অভি- কি সমস্যা তোমাদের,, দুজনে দুই রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছো?? কিসের শোক পালন করছো??
অভি কথা কোন উওর না দিয়েই অগ্নি দৌড় লাগালো দিয়ার রুমের দিকে, দরজা ধাক্কা দিতে দিতেই বললো
অগ্নি- দিয়া, দরজা খোল। দিয়া শুনতে পাচ্ছিস??
অভিও ভাইয়ের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে,, অগ্নির চোখে মুখে ভয় ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, অনেকখন ডাকার পরও দিয়ার কোন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না, অগ্নি অস্থির হয়ে অভিকে বলছে
অগ্নি- অভি দরজাটা ভেঙে ফেল, ভিতরে কোন বিপদ হলো না তো,
অগ্নি কথা গুলো বলতে গলা কাঁপছে, ভাইয়ের কথা শুনে অভি নিজেও ভয় পাচ্ছে, কারণ দিয়া তো কোন দিন এমন করে নি। হঠাৎ করে রুমের দরজা খুলে দিলো দিয়া, দিয়াকে দেখেই অগ্নির বুকটা ধক করে উঠলো, এমন কেন দেখা যাচ্ছে
দিয়াকে, চোখ মুখ গুলো ফুলে লাল হয়ে আছে, চুল থেকে টপটপ করে জল পড়ছে, অনেক পর্যন্ত শাওয়ার নেওয়ার কারণে সারা শরীর সাদা হয়ে গেছে, অভিও দিয়াকে দেখে হতবাক হয়ে দুপুর পর্যন্ত তো সব ঠিক ছিলো, এখন কি হলো, অভি বললো
অভি- কি হয়েছে, তোকে এমন দেখাছে কেন?? চোখ মুখের এমন অবস্থা কেন?? এই রাতের বেলা স্নান করেছিস কেন??
দিয়া খুব মৃদু স্বরে বললো
দিয়া- কিছু হয়নি দাদাভাই।
অভি- বললে হলো কি হয় নি?? চোখ মুখ ফুলে আছে কেন? কান্না করেছিস??
দিয়া- নাহ্,মাথা ব্যাথা করেছে, তাই ভাবলাম মাথায় জল দিলে হয়তো ব্যাথা কমবে তাই স্নান,,,,,,
শেষ করতে না দিয়েই অভি বললো
অভি- ডাঃ হয়ে গেছিস নাকি,, কোন ডাক্তারি শাস্ত্রে পাইছিস স্নান করলে মাথা ব্যাথা কমে?
দিয়া চুপ করে রইলো, অভি আবার বললো
অভি- আমি ঔষুধ নিয়ে আসছি, আর বাইরে থেকেই রাতের খাবার নিয়ে আসবো, পাকনামি করে রান্না করতে যাবি না।
দিয়া মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে গেলো, অগ্নি এতোখন দিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিলো, দিয়া একবারও মুখ তুলে তাঁকায় নি, মাথা নিচু করেই ছিলো,, অভির এবার অগ্নির দিকে চেয়ে বললো
অভি- তোমাদের ব্যাপার ঠিক বুঝলাম না, দুপুরে হাত পুড়লো দিয়ার, রোগী লাগলো তোমাকে, বিকালে প্রেয়সী হারানোর ভয় পেলে তুমি, আর এখন দিয়াকে দেখে মনে হচ্ছে বিরহে পুড়ছে ও।
অগ্নি অসহায় চোখে তাকিয়ে রইলো অভির দিকে, অভি অগ্নির হাত ধরে বললো,
অভি- এখনো অনেক সময় আছে, নিজের ভালোবাসা কে নিজের করে নাও, আর প্লিজ রুমে বসে না থেকে একটু দিয়ার কাছে যাও, ওর কি হয়েছে জানতে চাও,, তোমার কি মনে হয় ও সত্যি কথা বলছে। আমার তো মনে হয় না।
অগ্নি – ও কি আমাকে বলবে কি হয়েছে?
অভি- সত্যি টা বললে তোমাকেই বলবে।
বলেই অভি চলে গেছে, অগ্নি অনেকখন দাঁড়িয়ে থেকে নিজের মনের দ্বিধা দন্ড কাটিয়ে দিয়ার রুমে ঢুকলো। দিয়া জানালা পাশে দাঁড়িয়ে আছে, অগ্নি দিয়ার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়, এখনো দিয়ার ভেজা চুল থেকে জল পড়ছে, অগ্নি খুব মৃদুস্বরে ডাকলো
অগ্নি – দিয়া
সাথে সাথে দিয়ার চোখ দিয়ে দুফোঁটা অশ্রু গরিয়ে পড়লো। মুখে কিছুই বললো না, ফিরে ও তাঁকালো না অগ্নির দিকে। অগ্নি আবারও বললো
অগ্নি- দিয়া চুলটা মুছে নে, ঠান্ডা লেগে যাবে।
দিয়া এখনো নিশ্চুপ,,, অগ্নি নিজে থেকেই টাওয়াল নিয়ে দিয়ার পিছনে দাড়িয়ে চুল মুছে দিলো। দিয়া একবারের জন্যও পিছনে ফিরে তাঁকালো না।
তিন দিন পর শান্তি দেবী বাবার বাড়ি থেকে ফিরলেন, এই তিন দিনে দিয়া একবারের জন্যও না অগ্নির দিকে তাকিয়েছে না কোন কথা বলছে। দিয়ার এমন ব্যবহারে অগ্নি পুরো অস্থির হয়ে আছে, অভি সুযোগ বুঝে অগ্নিকে খুব খোঁচাছে
অভি- কেমন ফিল হচ্ছে তোমার দাদাই। আমার কিন্তু বেশ লাগছে,,,, এখন বুঝতে পারছো এতো বছর ওর কেমন লাগতো??
বিকালে শান্তি দেবী বড় ছেলের রুমে এলো, সেখানে অভিও ছিলেন। দুই ছেলেকে একসাথে দেখেই তিনি বললেন
শান্তি দেবী- অভি তুই এখানে আছিস, যাক ভালো হলো, একটা বিষয় নিয়ে একটু আলোচনা করতাম, তোর (অভি) মতামত টা বেশি দরকার।
অভি দুষ্টুমি করে বললো,
অভি- কি ব্যাপার বলো তো, আমার বিয়ের জন্য কোন মেয়ে ঠিক করেছো নাকি,তাহলে আগেই বলে দি আমার কোন আপত্তি নেই।
শান্তি দেবী- আগে আমার বড় ছেলের বিয়ে করিয়ে বৌ ঘরে নিয়ে আসি, তারপর তোর কথা ভেবে দেখবো।
অভি- তাহলে এ জীবনে আমার আর বিয়ে করা লাগবে না।
শান্তি দেবী- এমন ভাবে বলছিস কেন, আমি খুব তাড়াতাড়ি অগ্নির বিয়ে দিবো।
অগ্নি- আমি বিয়ে করবো না, এর চেয়ে তুমি অভির জন্যই মেয়ে দেখো।
শান্তি দেবী- তুই বললেই হবে নাকি,তোর জন্য আমাদের দিয়ার মতো একটা লক্ষ্মী প্রতিমা নিয়ে আসবো।
অভি মনে মনে বললো,
অভি- দিয়ার মতো কেন, দিয়াকে নিয়ো আসো না তোমার বড় ছেলের জন্য।
মায়ের কথা শুনে অগ্নি তার দিকে তাকিয়ে রইলো, অভি প্রসঙ্গ পালটানো জন্য বললো
অভি- মা, তুমি কি বলতে এসেছিলে,সেটাই তো বলছো না।
শান্তি দেবী- আমার কাকাতো ভাই সুরেন্দ্র আছে না, উনার একমাত্র ছেলে তো বড় ডাঃ। ওই ছেলের জন্য মেয়ে খুঁজছে, আমি ভাবছি আমাদের দিয়ার জন্য বলবো, দিয়াকে দেখলেই উনাদের ও পছন্দ হবে। দিয়া টাকে শাঁখা সিঁদুর পড়লে পুরো জ্যান্ত লক্ষ্মী প্রতিমার মতো লাগবে।
মায়ের কথা শুনে অভি খুকখুক করে কাশছে, আর বিড়বিড় করে বললো
অভি- মা,তুমি তো দেখছি ঘরের শত্রু বিভীষণ, নিজের ছেলের প্রাণটা, অন্য কাউকে দিয়ে দিতে চাচ্ছো।
শান্তি দেবী অভিকে বললেন
শান্তি দেবী- বিড়বিড় করে কি বলছিস, জোরে বল, তোর মতামত ছাড়া তো আবার কিছুই করা যাবে না, তোর বোন বলে কথা।
অভি কিছু বলতে যাবে তার আগেই অগ্নি বললো
অগ্নি- দিয়ার এখনো বিয়ের বয়স হয় নি মা,,
শান্তি দেবী- বিয়ের বয়স হয় নি তো কি হয়েছে,, কিছুদিন পরেই ১৭ হয়ে যাবে। আর এতো ভালো ছেলে পাওয়া যাবে না, তোর পিসেমশাইয়ের বিশ্বাস নেই, হয়তো দেখবি বোনদের কথা শুনে, এতো সুন্দর মেয়েটাকে কোন অপাত্রের হাতে তুলে দিয়েছে।
অভি- দিয়ার বিয়ে নিয়ে কাউকে চিন্তা করতে হবে না, আমার বোনের জন্য আমি সুপাত্র দেখেই রেখেছি,সময় হলেই তার হাতে তুলে দিবো, আর ওই দীপক সাহা যদি উল্টা পাল্টা কিছু করতে আসে তাহলে সত্যি সত্যি ওটাকে কেটে দুই টুকরো করে দিবো।
শান্তি দেবী- ছেলে দেখে রেখেছিস তুই, নাম কি, কি করে, কোথা,,,,,,
উনার পুরো কথা শেষ করতে না দিয়েই অভি বললো
অভি- এতো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবো না, সময় আসলেই দেখবে, শুধু এটাই জেনে রাখো, সে ছেলের কাছেই দিয়া সুখে থাকবো।
রাতে, ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে অগ্নি, দৃষ্টি তার দূর আকাশে, অন্ধকার আকাশে কি দেখছে সেটা ও ভালো জানে, ছাদে যে অন্য একজন আছে সেদিকে তার কোন খেয়াল নেই। দিয়া অগ্নির আগেই এসেছিলো ছাদে,অগ্নিকে দেখেই জলের টাঙ্কের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় যাতে করে অগ্নি ওকে না দেখে। অগ্নি আসার কিছুখন পর অভি ও আসলো, অগ্নি কাঁধে হাত রেখে বললো
অভি- কি ভাবছো দাদাই
অগ্নি- কিছু না।
অভি- সত্যি কিছু ভাবছো না,,,
অগ্নি- নাহ্
অভি- এখনো সময় আছে দাদাই, একবার চেষ্টা তো করে দেখো।
অগ্নি- তুই কি বলছিস আমি বুঝতে পারছি না।
অভি- বুঝতে পারছো না, নাকি বুঝেও না বুঝার বান করছো।
অগ্নি- আমি তোকে আগেই বলেছি, এটা কখনো সম্ভব না।
অভি- থাকতে মূল্য দিচ্ছো না হারিয়ে ফেললে কেঁদে কূল পাবে না।
বলেই ছাদ থেকে নেমে গেলো,, অগ্নি ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে শব্দ করেই বললো
অগ্নি- ওকে কাছে টানতে পারি না, এড়িয়ে চলতে পারি না, ওকে হারিয়ে ফেলাটাও মেনে নিতে পারি না, নিজের করে নিবো সে আশা ও করতে পারি না, আমি এক পা বাড়িয়ে, থমকে দাঁড়িয়েছি বহুবার এটাই হয়তো নিয়তি।
প্রেম পরিণয় পর্ব ৪
অগ্নি আরো কিছু সময় পার করে নিচে নেমে যায়, অগ্নি যেতেই দিয়া বেরিয়ে এলো, ও প্রথমে ওদের কথার মানে বুঝতে না পারলেও অগ্নির পরে কথা গুলো শুনে ঠিকই বুঝতে পারছে, দিয়া বিড়বিড় করে বললো,
দিয়া- যেখানে আপনি থমকে দাঁড়াবেন, সেখানে থেকেই একসাথে হাঁটতে শুরু করবো আমরা,