অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৩
অরনিশা সাথী

বেশ কটা দিন কেটেছে। এর মাঝে আর জারাফের সাথে রুজবার কোনোপ্রকার দেখা ও হয়নি। তবুও সেদিন জারাফের চোখজোড়া দেখার পর থেকে অস্থির হয়ে আছে রুজবার মন। রাতে ঘুমাতে পারছে না। চোখ বন্ধ করলেই জারাফের সেই ভয়ংকর চোখজোড়া ভেসে উঠছে।

সাথে জারাফ যখন রুজবার উড়না উঠিয়ে ওর কোলে রেখে দিলো তারপর একপলক তাকিয়ে কেমন ঝড়ের গতিতে চলে গেলো সেই দৃশ্যটাও বারবার ভাবছে। অচেনা অজানা ছেলের চোখদুটো ভাসছে কেন চোখে? ছেলে মানুষের চোখ এত সুন্দর হয়? এরকম হাজারো সাতপাঁচ ভেবে ঘুমের রাজ্যে তলিয়ে গেলো রুজবা।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

সকাল সাড়ে ছয়টায় এলার্মের শব্দে ঘুম ভাঙে রুজবার। সাতটা বেজে দশ মিনিটে আইসিটি প্রাইভেট আছে। সপ্তাহে প্রথম তিনদিন আইসিটি এবং বাকী তিনদিন ইংলিশ প্রাইভেট। এবং সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস শেষে একাউন্টিং প্রাইভেট পড়ে। দ্রুত উঠে হাতমুখ ধুয়ে রেডি হয়ে নেয় ও। একটা ডিম সিদ্ধ আর এক কাপ চা খেয়েই ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায় রুজবা। ফারিনের বাসায় গিয়ে ওকে ডেকে নিয়ে দুই বান্ধবী কলেজের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়।

সাতটা পঞ্চান্ন মিনিটে প্রাইভেট শেষ হয় রুজবা আর ফারিনের। কলেজের প্রাইভেট গুলোতে পয়তাল্লিশ মিনিট করে পড়ানো হয়৷ ব্যাগ ক্লাসে রেখে বেরিয়ে পড়লো দুজনে। এখন ক্যাম্পাসে তেমন একটা মানুষ জন নেই। অনেকেই টিউশন শেষে বাড়ি গেছে বা অনেকের অন্য কোথাও টিউশন থাকলে সেখানে গেছে।

রুজবা আর ফারিন না বাসায় যায় আর না অন্যকোনো টিউশন আছে ওদের। দুজনে এই সময়টুকু কলেজেই কাটায় নিজেদের মতো। এসময়ে কলেজটা পুরো নিরিবিলি থাকে৷ একা একা বসে থাকতেও ভালো লাগে৷ রুজবা আর ফারিন দোতালার করিডোর দিয়ে হাঁটছে আর গল্প করছে। আচমকাই কিয়ান সামনে এসে দাঁড়ালো। কিয়ানকে দেখে ফারিন মুখ ঘুরিয়ে নিলো। রুজবার মাথায় কিছু ঢুকলো না। আজ হঠাৎ কিয়ান এত সকালে কলেজে কেন সেটাই বুঝে আসছে না৷ সাথে কিয়ানকে দেখে ফারিনের এভাবে মুখ ঘুরিয়ে নেওয়ার বিষয়টাও মাথায় খেলছে না। রুজবা কিছু বলার আগেই কিয়ান বলল,

–“তোমার বান্ধবীর এত রাগ কেন রুজবা?”
–“কেন কিয়ান ভাই? আবার কি করেছে ফারিন?”
–“কি করেনি সেটা বলো? কাল বিকেলে কথা বলার সময় ভুল করে সিগারেট___বুঝোই তো৷ এরপর থেকেই আর কথা বলছে না আমার সাথে।”

এবারেও রুজবাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফারিন বললো,
–“রুজবা চল এখান থেকে। আমি যার তার সাথে কথা বলি না।”
ফারিনের কথার জবাবে কিয়ান চট করেই বললো,
–“দেখেছো রুজবা? সামান্য একটা কাজের জন্য এখন আমি যার তার হয়ে গেলাম।”
রুজবা চোখ কটমট করে ফারিনের দিকে তাকিয়ে বললো,

–“তুই এখানে চুপচাপ দাঁড়া ফারিন, আমাকে কথা বলতে দে।”
এই বলে রুজবা কিয়ানের দিকে তাকিয়ে কোমড়ে দুহাত গুজে দাঁড়ালো৷ তারপর কিছুটা গম্ভীর স্বরে বললো,
–“আচ্ছা কিয়ান ভাই, আপনি ছেলেমানুষ আর সিগারেট খাওয়াটা ছেলেদের কাছে স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু কথা হচ্ছে ফারিনের সাথে কথা বলার সময়-ই আপনাকে সিগারেট খেতে হবে কেন? বুঝান আমাকে। খাবেন ভালো কথা, আগে পড়ে খাবেন ফারিন যাতে জানতে না পারে। ছেলেরা একটু আধটু সিগারেট না খেলে হয় নাকি?”
রুজবার কথায় ফারিন চোখ পাকিয়ে তাকালো ওর দিকে। কিয়ান হেসে রুজবাকে বললো,

–“একটু কাছে এসো তো।”
কিয়ানের কথায় রুজবা কিয়ানের দিকে কিছুটা ঝুঁকে যায়। কিয়ান রুজবার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল,
–“এই না হলে আমার শালীকা? তুমি বুঝেছো ব্যাপারট৷ সিগারেট না খেলে আবার ছেলে মনে হয় নাকি? এরপর থেকে তোমার কথাটাই কাজে লাগাবো।”

কথাগুলো বলে কিয়ান সরে এলো। রুজবাও আলতো হেসে ঠিকভাবে দাঁড়ালো। ফারিন রেগে রুজবাকে কিছু বলতে গেলেই রুজবা দৌড়ে ক্ষানিকটা দূরে সরে বলল,
–“কিয়ান ভাই, আপনি ফারিনের রাগ ভাঙান। আমি ওখানটায় দাঁড়িয়ে দেখছি এদিকে কেউ আসছে কিনা।”
–“ওক্কে শালীকা।”

রুজবা হেসে সিড়ির কাছে চলে গেলো। নজর রাখতে হবে তো। এদিকে যদি আবার কেউ এসে পড়ে। কিয়ান ফারিনের হাত ধরে একটা ক্লাসে চলে গেলো। পেছন থেকে ফারিনকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“আর রেগে থেকো না জান। আর এমন হবে না।”
–“কে বলেছে হবে না? একটু আগেই তো রুজবাকে বললে এরপর থেকে এমন ভাবে সিগারেট খাবে যাতে আমি না জানতে পারি।”

–“ওটা তো এমনিতেই বলেছি। তুমি সিরিয়াস হচ্ছো কেন? আমি তো তেমন একটা সিগারেট খাই না। তোমাকে কথা দিয়েছি না? মাঝেমধ্যে বন্ধুদের পাল্লায় পড়লে দুই এক টান দিতে হয়।”
–“ছাড়ো আমায়।”
–“আমি যদি তোমার জন্য আমার প্রতিদিনের অভ্যাস সিগারেট খাওয়া ছাড়তে পারি, তাহলে তুমি কি আমার জন্য এইটুকু ছাড় দিতে পারবে না জান? বেশি না তো, শুধু বন্ধুবান্ধবদের সাথে থাকলে দুই/এক টান দিতে হয়। এইটুকু একটু ম্যানেজ করে নাও প্লিজ। একবার বউ হয়ে আমার বাড়ি চলে আসো, এরপর আর সিগারেট ছুঁয়েও দেখবো না প্রমিস।”

–“আচ্ছা এখন ছাড়ো।”
–“উঁহু, আগে বলো এখন আর রেগে নেই।”
–“হুম।”
–“সত্যিই রেগে নেই তো?”
–“হ্যাঁ রে সত্যিই।”
কিয়ান ফারিনকে ছেড়ে দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো। তারপর ফারিনের গালে দুহাত রেখে ওর কপালে আলতো করে চুমু খেলো৷

বারান্দার রেলিঙের সাথে হেলান দিয়ে সিড়ির দিকে তাকিয়ে আছে রুজবা। এখনো এখানে দাঁড়িয়েই নজর রাখছে কেউ আসছে কিনা। পৌনে নয়টা বাজে। আর কিছুক্ষণ পর থেকেই সকলে আসতে শুরু করবে৷ রুজবা ব্যাগ থেকে ফোন বের করে ভিডিও দেখতে শুরু করে।

পায়ের শব্দ পেয়ে দ্রুত ফোন থেকে মুখ তুলে সিড়ির দিকে তাকায় রুজবা৷ সেদিনের সে মাস্ক পড়া ছেলেটা, মানে জারাফ সাহিল আর মাহিন। তিনবন্ধু কথা বলতে বলতে এদিকেই আসছে। জারাফকে প্রায় ভুলতে বসেছিলো রুজবা। আবারো আজ ওর চোখজোড়া দেখে সেই চোখে আটকে গেলো ও। সেদিনের মতো আজকেও জারাফ মাস্ক পড়া। জারাফ ওরা দোতলায় উঠে সামনের দিকে তাকাতে রুজবাকে দেখতে পায়৷ একধ্যানে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মাস্কের আড়ালেই মুচকি হাসলো জারাফ৷ তারপর এগিয়ে গেলো রুজবার দিকে। রুজবার সামনে দাঁড়িয়ে তুড়ি বাজিয়ে বললো,

–“এক্সকিউজ মি মিস?”
জারাফের কথায় হুশ ফিরে রুজবার৷ লজ্জায় চোখ নামিয়ে নেয়৷ ইশ্! আবারো ছেলেটার দিকে তাকিয়ে ধরা পড়ে গেলো ও। ছেলেটা এখন নিশ্চয়ই ওকে বাজে ভাবছে। সব ফারিন আর কিয়ানের জন্য। ওরা যদি__হুট করেই রুজবার ফারিন আর কিয়ানের কথা মনে হলো। ওরা দুজনে তো একসাথে আছে৷ এখন কেউ যদি দেখে ফেলে ওদের? তাহলে? তাহলে তো একটা বদনাম হয়ে যাবে। রুজবা এক দৌড়ে জারাফের সামনে থেকে সেই ক্লাসে ঢুকে পড়লো। ফারিন আর কিয়ান পাশাপাশি বসে কথা বলছিলো৷ রুজবাকে দৌড়ে আসতে দেখে দুজনেই ঘাবড়ে যায়। ফারিন উঠে রুজবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,

–“কি হয়েছে?”
–“কিছু না, স্টুডেন্টস আসতে শুরু করছে। বাইরে চল।”
বলেই ফারিনের হাত ধরে করিডোরে গিয়ে দাঁড়ায় রুজবা৷ ফারিনের পাশে কিয়ানও দাঁড়িয়ে আছে৷ তিনজনে মিলে একসাথে আড্ডায় মেতে উঠে। ওদিকে জারাফ দাঁড়িয়ে দেখছে রুজবাকে৷ প্রথমে তো রুজবাকে দৌড়ে যেতে দেখে ভয় পেয়ে গেছিলো। কিন্তু এখন এভাবে দৌড়ে যাওয়ার কারনটা বুঝতে পারলো। ওদের কথোপকথনের এক পর্যায়ে কিয়ান রুজবাকে নাম ধরে ডেকে উঠে। নাম শুনে জারাফ মুচকি হাসে। নিজের মনেই আরো একবার বিড়বিড় করে,

–“রুজবা! নাইছ নেম।”
সাহিল জারাফের পিঠে হাত রেখে বলল,
–“কিরে কিছু বলছিস?”
জারাফ মৃদু হাসলো, তারপর নিজেকে ঠিক করে নিয়ে বললো,
–“কিছু না, চল।”

এই বলে ওরা তিনতলায় উঠে গেলো। ওরা যাওয়ার পর রুজবা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। জারাফকে দেখলেই ওর এমন দম বন্ধ হয়ে আসে কেন বুঝে না রুজবা। অকারণেই ছেলেটাকে দেখলে ওর চোখের গভীরে হারিয়ে যায়। দিক বেদিক ভুলে তাকিয়ে থাকে সেদিকে। আর যখনই এমন হয়েছে ছেলেটার কাছে ধরাও পড়ে গেছে ও। এবার একটু বেশিই হয়ে যাচ্ছে, এরপর ছেলেটা আবার সস্তা মেয়ে ভাববে৷ এই ভেবে বিড়বিড় করে বললো,

–“মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে এসব। ওই চোখের দিকে তাকানো মানে নিজের সর্বনাশ নিজেই ডেকে আনা। তাকানো যাবে না, একদম তাকানো যাবে না ওই চোখের দিকে।”
কথাগুলো ভেবে আবার কিয়ান আর ফারিনের সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। ক্লাসের টাইম হয়ে যাওয়াতে রুজবা আর ফারিন নিজেদের ক্লাসে চলে যায়।

ফারিন আর রুজবা শাড়ি পড়বে আজ। উদ্দেশ্য ছবি তুলবে। বিকেলের দিকে ফারিন শাড়ি চুড়ি নিয়ে রুজবাদের বাসায় চলে আসে। অতঃপর দুই বান্ধবী চলে যায় রুজবার মেজ কাকিমার কাছে৷ প্রথমে ফারিনকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়৷ ফারিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হালকা সাজগোজ করে চুড়ি দুল এসব পড়ে নেয়। রুজবার শাড়ি পড়ানো শেষ হলে ও নিজেও হালকা সাজগোজ করে। দুজনেই লাল পাড়ের সাদা শাড়ি পড়েছে গ্রামীন ভাবে। চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া সাথে শাড়ির আঁচল ছেড়ে দেওয়া। হাতে পায়ে আলতা পড়েছে দুই বান্ধবী চোখে মোটা করে কাজল ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক।

দুহাত ভর্তি চুড়ি। ব্যাস! এতেই দুই বান্ধবী একদম রেডি। অতঃপর ফোন নিয়ে দুই বান্ধবী দৌড়ে ছাদে উঠে যায় ছবি তুলতে৷ দুই বান্ধবী মিলে অসংখ্য ছবি তুলে। দুজনে একসাথে বেশ কিছু ছবি তুলে। তারপর আলাদা আলাদা ছবিও তুলে অনেকগুলো।

রুজবাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটা মাটির। রাস্তার দুই পাশে সারি সারি নারিকেল আর কড়ই গাছ। রুজবা আর ফারিন ছাদ থেকে নেমে মাটির রাস্তায় চলে এলো ছবি তুলতে৷ রাস্তায় আসার মূল কারন হলো কিয়ান আসবে। একটু আগেই ফোন করেছিলো ফারিনকে। যখন জানতে পারলো শাড়ি পড়েছে তখন ফারিনকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখার লোভটা সামলাতে পারেনি। কয়েক মিনিট বাদেই বাইক নিয়ে কিয়ান আর নুহাশ এসে উপস্থিত হল।

রুজবা আর ফারিন ওদের বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে দাঁড়িয়েছে৷ কিয়ান আর নুহাশ এসে ওদের সামনে দাঁড়ালো। রুজবার আড়ালে আবডালে বেশ কয়েক বার রুজবাকে দু’চোখ ভরে দেখে নিলো। জান্নাতের বিয়ের সময় বাদে এই প্রথম নুহাশ রুজবাকে শাড়িতে দেখলো। শাড়িতে ভীষণ ভালো লাগে ওকে। নুহাশ যতবার রুজবাকে শাড়িতে দেখেছে ততবারই মুগ্ধ হয়েছে।
ফারিনের বেশ ভয় ভয় লাগছে। কেউ যদি দেখে ফেলে তাহলে কেলেংকারী হয়ে যাবে৷ কিয়ান কাছে এসে দাঁড়াতেই রুজবা হাত পেতে বলল,

–“আমার পাওনাটা?”
কিয়ান মুচকি হেসে পকেট থেকে বড় একটা ডেইরি মিল্ক সিল্ক আর দুটো কিটক্যাট চকলেট দিলো রুজবার হাতে৷ রুজবা মুচকি হেসে বললো,
–“থ্যাংকস কিয়ান ভাই।”
কিয়ান রুজবার চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বললো,
–“তোমার চকলেট নেওয়ার কারন কিন্তু আমি ঠিক বুঝি না রুজবা।”
রুজবা একগাল হেসে বললো,

–“যদি এমনি এমনি পাহারা দেই তাহলে তো আর আপনাদের বিয়ের পর আমাকে মনে রাখবেন না। একদমই ভুলে যাবেন আপনাদের সম্পর্কে আমারও কিছুটা অবদান ছিলো। তাই আমাকে যাতে কখনো ভুলে না যান সেজন্যই প্রতিবার আপনারা দেখা করার সময় আপনাদের পাহারা দেওয়ার সময় চকলেট নেই।”
কিয়ান চট করেই বললো,
–“যাতে মনে থাকে ফারিনের সাথে দেখা করার সময় সবসময়ই পাহারাদার রুজবাকে ঘুষ হিসেবে চকলেট দিতে হতো। তাই তো?”
রুজবা হেসে বলল,

–“একদম।”
কিয়ান রুজবার গাল টেনে দিলো। নুহাশ ভ্রু কুঁচকে তাকালো রুজবার দিকে। এখনো বাচ্চাদের মতো চকলেটের প্রতি এত লোভ রুজবার? নুহাশ ফারিনকে উদ্দেশ্য করে বললো,
–“ফারিন তোমার বান্ধবী তো দেখছি আস্ত একটা চকলেট-খোর। যে ওকে বিয়ে করবে তার জন্য আমার বড্ড আফসোস হচ্ছে। এই মেয়ের জন্য চকলেট কিনতে কিনতেই তো বেচারা রাস্তার ফকির হয়ে যাবে।”
নুহাশের কথায় কিয়ান আর ফারিন উচ্চস্বরে হাসলো। রুজবা মৃদু হেসে বললো,
–“হলে হোক। চকলেটে মানা নেই। বিয়ের পর প্রতিদিন যদি আমাকে চকলেট কিনে দিতে না পারে তাহলে ওরকম জামাই লাগবে না আমার।”

নুহাশ বিড়বিড় করে বললো,
–“হু মনে থাকলো কথাটা।”
–“কিছু বললেন?”
–“বললাম, শাড়িতে তোমাকে একদমই ভালো লাগছে না। শ্যাওড়া গাছের পেত্নীর মতো লাগছে।”
রুজবা চোখ রাঙিয়ে তাকিয়ে বললো,
–“ভালো হচ্ছে না কিন্তু নুহাশ ভাই।”

নুহাশ কানে ধরে স্যরি বললো। রুজবা হাসলো। কিয়ান ফারিনকে নিয়ে একটা কড়ই গাছের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো৷ এমন ভাবে দাঁড়ালো যে হঠাৎ তাকালে কেউ ওদের দেখতে পারবে না৷ ওরা নিজেদের মতো কথা বলছিলো।
আর এদিকে রুজবা গুনগুন করে গান গাইছিলো আর সেলফি তুলছিলো। সেলফি তুলতে তুলতে রুজবা নুহাশকে রেখে অন্যদিকে চলে আসে। নুহাশের একটা ফোন আসায় ও কথা বলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে।

জারাফ আর সাহিল তখন রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো। রুজবাদের পাশের গ্রামেই জারাফদের বাসা৷ দুই গ্রামের দূরত্ব বেশি একটা না। রুজবাদের বাড়ির এই সামনের মাটির রাস্তা দিয়ে মিনিট পাঁচেক গেলেই একটা বড় খাল পড়ে মাঝে৷ তারপরেই রুপনগর গ্রাম৷ রুপনগর থেকে নূরপুর গ্রামে আসার জন্য খালের মাঝেই একটা ব্রীজ দেওয়া আছে৷ বিকেলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে বোধহয় জারাফ আর সাহিল এদিকে এসেছিলো। এবার জারাফের চোখটাই আগে রুজবার উপর আটকে যায়৷ রুজবা তখনো জারাফকে খেয়াল করেনি। সাহিল জারাফের কাঁধে হাত রেখে বললো,

–“কিরে দাঁড়িয়ে পড়লি যে?”
–“এমনি, থাকি না এখানে কিছুটা সময়।”
জারাফের কথায় সাহিল সায় জানালো। জারাফ একটা নারিকেল গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ালো৷ পাশের সাহিল দাঁড়িয়ে আছে৷ সাহিল ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছে, রুজবাকে দেখলেই জারাফ কেমন যেন হয়ে যায়। কিসব ভাবে, একা একা হাসে৷ সাহিল সন্দেহের দৃষ্টিতে জারাফের দিকে তাকিয়ে বললো,

–“কাহিনী কি মামা? এই মেয়েরে দেখলেই কেমন যেন হয়ে যাস। ব্যাপার স্যাপার কি? কিছু চলতেছে নাকি দুজনের ভিতর?”
জারাফ মৃদু হেসে রুজবার দিকে তাকিয়েই বললো,
–“আপাতত তেমন কিছুই না। যদি কখনো কিছু হয় তাহলে অবশ্যই জানতে পারবি, প্যারা নিস না।”
–“আচ্ছা, অপেক্ষায় থাকলাম।”

এইটুকু বলে সাহিল হাসলো৷ পাশে তাকাতেই রুজবার চোখ পড়ে জারাফের উপর৷ জারাফ আজকে আর মাস্ক পড়া নেই৷ রুজবা প্রথমে চিনতে না পেরে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়৷ কিন্তু কিছু একটা মনে হতেই পরমূহুর্তেই আবার তাকায় জারাফের দিকে। জারাফের চোখ দুটো দেখে মোটেও চিনতে অসুবিধে হলো না রুজবার৷ এই চোখদুটো যে ওকে খুব করে টানে৷ দৃষ্টি মিলিত হলো দুজনের। অপলক দুজন দুজনকে দেখছে। আর সাহিল পাশে দাঁড়িয়ে এই দুজনের কান্ড দেখে যাচ্ছে৷ সাহিল জারাফের কাঁধে হাত রেখে বললো,

–“এই জারাফ___”
সাহিলের ডাকে রুজবা এবং জারাফ দুজনেই চোখ সরিয়ে নেয়৷ রুজবা এই প্রথম ভয়ংকর চোখজোড়ার অধিকারী ছেলের নামটা জানতে পারলো। জারাফ! চোখ দুটোর মতোই নামটাও ভীষণ সুন্দর। জারাফ এগিয়ে গেলো রুজবার দিকে। দুজনে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে৷ রুজবার ভয়ে কাঁপা-কাঁপি শুরু হয়ে গেছে। সামনেই ওদের বাড়ি। এই মূহুর্তে রুজবার বাবা বাড়িতে আছেন৷ একবার যদি দেখে ফেলে তখন? তখন সব শেষ হয়ে যাবে। রুজবার বাড়ি থেকে বের হওয়া বন্ধ হয়ে যাবে। রুজবা চলে আসতে নিলেই জারাফ বললো,

–“শুনো__”
জারাফের ডাকে রুজবা দাঁড়িয়ে পড়লো। জারাফ আবার রুজবার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
–“সুন্দর লাগছে ভীষণ।”
রুজবা আর কিছু না বলে এক দৌড়ে বাড়ির ভিতর চলে গেলো। ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে জারাফ মাথা চুলকে হাসলো৷ সাহিলের কাছে এবার ব্যাপারটা ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে। কিছু একটা ঘাপলা অবশ্যই আছে।

নুহাশ ভ্রু কুঁচকে জারাফের দিকে তাকালো। রুজবার প্রতি জারাফের দৃষ্টি নুহাশকে রাগিয়ে দিচ্ছে। রাগ সংযত করার জন্য হাত মুষ্টিবদ্ধ করে ফেললো নুহাশ। রুজবা ততক্ষণে বাড়িতে চলে গেছে। রুজবাকে দৌড়ে বাড়ির ভিতরে যেতে দেখে ফারিন কিয়ানকে বাই বলে দ্রুত ও নিজেও চলে গেলো রুজবার পেছনে।

অনেক সাধনার পরে পর্ব ২

এই মেয়েটার হুটহাট কখন কি হয় ভেবে পায় না ফারিন। এভাবেই কিছু না বলে ছুটে চলে গেলো যদি কেউ এসে ফারিন আর কিয়ানকে একসাথে দেখে নিতো? চলে যাবে ভালো কথা যাওয়ার আগে বলে তো যাবে। ওর সাথে ফারিন নিজেও চলে যেতো। তা না করে এক ছুঁটে বাড়ির ভিতর ঢুকে গেলো। ফারিন মনে মনে ঠিক করে নিলো বাড়িতে গিয়ে রুজবাকে আচ্ছা মতো বকা দিবে।

অনেক সাধনার পরে পর্ব ৪