আমার আছে জল পর্ব ৪

আমার আছে জল পর্ব ৪
মাহিমা রেহমান

আজ রবিবার।মাসের প্রথম তারিখ আজ।তাই আজকে থেকেই টিউশনি শুরু হবে শিথির।হোস্টেল থেকে অনেকটা দূর’ই স্টুডেন্টদের বাড়ি। আপাদত দুইটা টিউশনি পেয়েছে সে।উত্তরার বসবাসরত প্রতিটি মানুষই মোটামুটি ধনী। তাইতো একজন স্টুডেন্ট পড়ালেই তাকে পাঁচ হাজার করে বেতন দেওয়া হবে। একজন ক্লাস ফাইভ আর আরেকজন ক্লাস সিক্সের স্টুডেন্ট। শিথির এতে বেশ সুবিধাই হলো।দুজনকে পরালেই পুরো দশহাজার টাকা তার হাতে চলে আসছে।

তবে তাদের সময় একটু বেশি দিতে হবে।এক ঘন্টার জায়গায় তাদের দেড় ঘণ্টার মত পড়াতে হবে।এতে অবশ্য শিথির সমস্যা নেই।
এসব ভাবতে ভাবতে সে বেরিয়ে পড়ল টিউশনির উদ্দেশ্যে।লামিয়ার দেওয়া ঠিকানায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে সে একটা রিকশা ডেকে তা’তে উঠে বসল।রিকশা এসে থামলো এক বিশাল আলিশান বাড়িয়ে সামনে।কিছুটা হোচকিয়ে উঠল শিথি।লামিয়াকে ফোন করে পুনরায় ঠিকানা জিজ্ঞেস করে নিল। ‘হ্যা’ সেই ঠিকানাই। রিকশা ওয়ালার ভাড়া পরিশোধ করে সম্মুখে পা বাড়াল শিথি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দারোয়ান তাকে ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছে না।অনেক বোঝানোর পর দারোয়ান সহসা কাউকে ফোন দিল।বেশ ক্ষানিক সময় কথা বলার পর শিথিকে ঢুকতে দেয়া হলো। ভিতরে ঢুকেই শিথি চারপাশ চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগল,,এক প্রকার মুগ্ধ হলো সে, বৃহাদাকার এরিয়া জুড়ে রয়েছে বিশাল বাগান।বাগানের চারিপাশ নানা রকম দেশী-বিদেশী ফুল গাছের সমারোহ।বাড়ির দিকে চোখ যেতেই শিথি বুঝতে পাড়ল,,বাড়িটা বেশ বিশাল,শৌখিনতা রয়েছে চারিপাশ।

তাহসিনের বাড়ী বিশাল হলে ও এতটা বিশাল আর মনোমুগ্ধকর ছিল না।আর না ছিল বাড়ির সমীপে বাগান।বাড়ির ভিতর প্রবেশ করল শিথি।চারপাশ চোখ বোলাতে লাগল।বেশ শৌখিনতার ছোঁয়া রয়েছে বাড়ির ভিতর।একজন স্টাফ তাকে বসতে বলে চলে গেল। সে বসতেই আকস্মাৎ একজন মহিলা এসে তার পাশে বসল।মহিলাটা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে রইল। শিথি খেয়াল করে দেখল মহিলাটির গা ভর্তি শৌখিনতার ছোঁয়া। সারা কায়া জুড়ে অলঙ্কারের বাহার,,গায়ে জড়িয়ে বেশ দামী বেনারসি।দেখেই বোঝা যাচ্ছে মহিলাটা বেশ শৌখিন।

মহিলার এহেন দৃষ্টি দেখে কিছুটা অসস্তিতে পড়ে গেল শিথি।মাথা পতিত করে বসে রইল।কিয়ৎ কাল বাদ একজন সুন্দরী রমণীর আগমন ঘটল।আঁখি মেলে তাকাল শিথি।রমণী শিথিকে দেখে ব্যগ্র পায়ে শিথির দিকে হাসি মুখে এগিয়ে এলো। শিথির পাশে বসে চপলা কণ্ঠে বলে উঠল,
-“আরে আপনি সেই আপুটা না? যে কাল আমার শানের জীবন বাঁচিয়েছিল!আপু আপনার এই ঋণ কোনদিনও ভোলার নয়।কি নিবেন আপু বলুন! চা নাকি কফি?”

কথাটা কর্নগোচর হতেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা মহিলাটির মুখমন্ডল জুড়ে আকস্মাৎ খুশির ঝলক দেখা গেল।চকচক করে উঠল তার চোখ জোড়া।সত্বর শিথির হাতজোড়া আলগোছে পাকড়াও করে বলে উঠল,
-“তুমি সেই মেয়ে? যে আমার নাতিকে ওইদিন বাঁচিয়েছিলে? জানো অনি কাল রাতের সকল ঘটনা আমাকে বলেছে।তুমি কিভাবে নিজের জীবন বিপন্ন করে আমার শানকে বাঁচিয়েছিলে!তোমাকে দেখার বেশ ইচ্ছা জেগেছিল।আমার ভাগ্য এতো ভালো!আমি যে তোমাকে আজকেই দেখতে পারবো তা জানা ছিল না।”
অনি নামের রমণীটি একজন স্টাফকে কিছু স্নাক্সের আনার কথা বলে,,পূনরায় শিথির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চঞ্চল স্বরে বলে উঠল,

-“আপনি বুঝি আমার ছেলের মিস? জানেন আমি ভীষন খুশী হয়েছি।আপনাকে আমার ভীষন পছন্দ!কি সুন্দর আর কিউট আপনি!”
শিথি কিছুটা লজ্জা পেল।বেশ কিছুক্ষন রিধি বেগম আর অনি শিথির সাথে গল্প করল। শিথি এদের সহিত এতক্ষন কথা বলে যা বুঝলো,,এরা বেশ মিশুক প্রকৃতির মানুষ। সহসা অনি শিথির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“চলো তোমাকে শানের রুমে নিয়ে যাই।তুমি কিছু মনে কররোনি’তো?আমি তোমাকে তুমি করে বলছি বলে?
শিথি দুদিকে মাথা নেড়ে না বোঝালো।অনি শিথিকে শানের রুমে নিয়ে গেল।শান বাচ্চাটা বেশ শান্তশিষ্ট আর চুপচাপ।শানের উদ্দেশ্যে অনি বলে উঠল,

-“পাপা দেখো তো তোমার মিস. কে কেমন লেগেছে? তোমার পছন্দ হয়েছেতো?”
শান মাথা নেড়ে সায় জানাল।অনি শিথি’কে বলে বেরিয়ে গেল। শিথি শানের দিকে ফিরে তাকাল।শান সবে ক্লাস ফাইভে পড়ে। বাচ্চাটা বেশ শান্তশিষ্ট। শিথির বেশ ভালো লাগল শানকে। শিথি পড়ানো শুরু করল।পুরোটা সময় শান চুপচাপ পড়াতে মনোযোগ দিল।বাচ্চাটা দেখতে ও খুব কিউট।বেশ কিছুক্ষন পর অনি পুনরায় নাস্তা নিয়ে এলো শিথির জন্য।তবে শিথি কিছু নিল না।এখন চারটা বেজে ত্রিশ মিনিট।শানকে পড়ানোর সময়ের সমাপ্তি ঘটতেই শিথি প্রস্থান করার জন্য উঠে দাঁড়াল। হলরুমে আসতেই অনি আর রিধি বেগমকের সাথে দেখা হয়ে গেল। শিথি তাদের দুজনকে দেখে হাসি মুখে তাদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,

-“আজ তাহলে আসি।কাল ইনশাল্লাহ সময় মত চলে আসব।আসসালামু ওয়ালাইকুম।”
অনি আর রিধি বেগম কিছুক্ষন থাকতে বলছিল।কিন্তু সে কারণ দেখিয়ে বেরিয়ে এলো।এখন তাকে আরেকটা টিউশনি করতে যেতে হবে। যা এখান থেকে হেঁটে বিশ মিনিটে পৌছানো যাবে। তবে আজ সে হেঁটে যাবে না।আজ প্রথম দিন। যদি ভুল রাস্তায় দিকে চলে যায়।তাই একটা রিকশা ডেকে নিল।

এখন ছয়টা বেজে বিশ মিনিট। রিকশার জন্য দাড়িয়ে আছে শিথি।আবাসিক এলাকা হওয়ার দারুণ,,সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে এলাকাটা একদম নির্জন রূপ ধারন করেছে।মানুষের চলা ফেরা বেশ একটা নেই।অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকার ফলে ও একটা রিকশা পাচ্ছে না শিথি।তাই আর দাঁড়িয়ে না থেকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগল।হাঁটতে হাঁটতে মেইন রোডে এসে পুনরায় রিকশা ডাকতে লাগল।কিন্তু ভাড়ায় মিল না থাকায় রিকশা মিলছে না মন মতো। দাঁড়িয়ে থাকল সে। আকস্মাৎ তার দিকে একটা গাড়ি তেড়ে আসতে লাগল।চমকায় শিথি, ভয়ে কিঞ্চিৎ পিছিয়ে যায়।গাড়িটা তাকে পাশ কেটে গলির ভিতর প্রবেশ করে যায়।রাগে ফুঁসতে লাগে শিথি।বিড়বিড় করে বকতে লাগল,

-“কি বজ্জাত’রে বাবা! আরেকটু হলে আমাকে মেরে দিত।”
কথাটা শেষ করতেই সহসা গাড়িটা পুনরায় তার পাশ কেটে শিথির সন্মুখে এসে থামল।ভয়ে এবার কিছুটা লাফিয়ে উঠল শিথি।রেগে কিছুটা বলতে যাবে তখনই গাড়ির ডোর খুলে বের হয়ে এলো কালকের সেই যুবকটি।রাগের বদলে এবার শিথির মুখমন্ডলে ছড়িয়ে পড়ল চমকের অভা।

‘হ্যা’ শিথি চমকেছে, অনেক বেশি চমকেছে।আজও সেই সুদর্শন পুরুষটি তার সামনে।যে তার দুই রুমমেটের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। সারারাত তারা দুজন এই যুবকটিকে নিয়েই গল্প করে গেছে।তাদের দুজনের যন্ত্রনায় গতরাতে ঘুমাতে পারেনি শিথি।লোকটার গায়ে আজও জ্যাকেট।কালও জ্যাকেট পরিহিত দেখেছিল সে।লোকটার বুঝি গরম লাগে না?ললাট কুঁচকে এলো শিথির। নিজের ভাবনায় বিভোর শিথি।সহসা যুবকটি তার দিকে এগিয়ে এলো।আজও কিছুটা ঝুঁকে শিথির পানে বলে উঠল,

-“কি ম্যাডাম!এভাবে তৃষ্ণার্ত দুটি আঁখি মেলে আমার পানে এভাবে তাকিয়ে আছেন যে?প্রেমে পরে গেলেন বুঝি?”
এসব আজব ধরনের কথা শুনে হুশ এলো শিথির।কিছুটা পিছিয়ে গেল সে।সে লোকটাকে খুব মনোযোগ সহকারে দেখছিল।
তাই বলে প্রেমে পড়বে নাকি?একবার প্রেম করে যা বাঁশ ললাটে জুটলো, আবারো? প্রশ্নই আসে না!আর কোথায় এই লোক!আর কোথায় সে আকাশ-পাতালের পার্থক্য।নিজেকে ধাতস্থ করে বলে উঠল,
-” কি সব আজেবাজে কথা বলছেন?আমি কেনো আপনার প্রেমে পড়তে যাবো?আপনি কালকের সেই লোকটি কিনা তা সিউর হওয়ার জন্য তাকিয়ে ছিলাম। অন্যকিছু না।”

কথাগুলো বলে শিথি মুখ ঘুরিয়ে নিল।খুব অসস্তি হচ্ছে তার।একটু কি তাকিয়ে ছিল?তাই বলে কতগুলো কথা শুনলো লোকটা।অহংকারী লোক একটা!মনে মনে কথা গুলো ভাবতে লাগল শিথি।
পুনরায় সেই পুরুষটি শিথির উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“প্রেমে পড়েন নি তা না হয় বুঝলাম!কিন্তু তাই বলে সত্যি সত্যি আপনি আমার করের ড্রাইভার হতে চলে আসবেন! তা আমি মোটেও মানতে পারছি না ম্যাডাম।এমন কি আমার পিছু পিছু আমার বাড়ির রাস্তা অবধি চলে এলেন?আপনার মত এহেন সুন্দরী হবে আমার ড্রাইভার?আপনাকে আমার ড্রাইভার হিসেবে ভালো না লাগলেও,,আমার ঘরের রাণী হিসেবে কিন্তু বেশ মানাবে।”

শিথি এবার ত্বরিত কণ্ঠে বলে উঠল,
-“ফ্লাট করা বন্ধ করুন।আর শুনুন(তর্জনী আঙ্গুল তুলে)আমি মোটেও আপনার পিছু পিছু আসি নি।আর না আপনার বড়লোক গাড়ির ড্রাইভার হতে এসেছি।আমি এখানে আমার কাজে এসেছি।”
কিঞ্চিৎ ভ্রুযুগল কুঁচকে যুবকটি জিজ্ঞেস করে উঠল,
-“তাই? তা কোথায় এসেছেন ম্যাডাম?কি এমন কাজ আপনার আমার এলাকায়?”
শিথি মুখ ঘুরিয়ে বলে উঠল,

-“তা জেনে আপনার কাজ নেই।”
-“তা বলবেন না!ঠিক আছে।কিন্তু এখানে কি করছেন?”
শিথি কিছুটা আমতা আমতা করে বলে উঠল,
-“রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।”
কিছুটা গলা ঝেড়ে যুবকটি বলে উঠল,

-“এখন প্রায় রাত হতে চলছে।এই সময় রিকশা পেতে খুব বেগ পেতে হবে।এছাড়া আপনি একজন মেয়ে মানুষ। তারওপর সুন্দরী!তাই বলছি কি,,(পুনরায় গলা ঝেড়ে) আপনি চাইলে আমি আপনাকে পৌঁছে দিতে পারি। কারণ আমার মনটা আবার বিশাল বড়,,(কিছুটা ঝুঁকে)বিশেষ করে সুন্দরী নারী’দের ক্ষেত্রে।”
শিথির বেশ রাগ লাগছে।লোকটা কি প্লে-বয় নাকি?কেমন ফ্লাট করছে তার সাথে। হতেও পারে।তারওপর যেই মাত্রার সুদর্শন!হতেও পারে।এই লোকের বিশ্বাস নেই।তার উপর যদি বুঝে যায় সে এই শহরে একা একজন ডিভোর্সি নারী!তাহলে নিশ্চয়ই ছাড় দিবে না। ডিভোর্সি মেয়েদের যেমন ছেলেরা একপ্রকার সস্তা পণ্য মনে করে। সর্বদা সুযোগ খুজে বেড়ায়।কথাগুলো ভেবে শিথি কাঠখোট্টা কণ্ঠে জবাব দিল,

-“কোনো প্রয়োজন নেই। আপনি আসতে পারেন।”
স্মিত হাসলো যুবকটি। শিথির পানে তাকিয়ে বলে উঠল,
-“ভয় পাচ্ছেন ম্যাডাম?ভাবছেন যেচে এসে সাহায্যের হাত বারাচ্ছি। নিশ্চয়ই সুযোগ নেওয়ার চেষ্ঠা করছি?তাহলে বলব ভুল ভাবছেন।কারণ যতই সুন্দরী নারী হোক না কেন?এই আরহিয়ান নুসাইব চৌধুরী কোনো মেয়ের কাছে যায় না। বরং মেয়েরা আরহিয়ান নুসাইব চৌধুরীর আশেপাশে মৌমাছির মতো ঘুরঘুর করে।এক রাতের জন্য আমার বিছানায় আসার জন্য মেয়েরা মরিয়া হয়ে উঠে। সেখানে মেয়ে মানুষ বুঝি আমার অভাব হবে?”

কি অহংকারী কথা রে বাবা! গা জ্বালা করে উঠল শিথির।আর কোনো কথা না বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল সে। এই অহংকারী লোকের সাথে আর একদ’ন্ড ও না।সামনে একটা রিকশা পেয়ে আর দর-দাম না করে উঠে পড়ল।অনেকটা দেরি হয়ে গেছে তার। বাসায় গিয়ে আবার পড়তে বসতে হবে।সময় আর তেমন নেই।সামনেই তার অ্যাডমিশন টেস্ট।টেস্টের প্রিপারেশন সে আগে থেকেই নিয়েছে।কিন্তু আর বিশ দিনের মত হাতে আছে।এই কিছুদিন জান-প্রণ দিয়ে হলেও তাকে প্রচুর পরিমাণ পড়তে হবে।তাকে যে করেই হোক পাবলিকে চান্স পেতেই হবে।কারণ তার এই অসময়ে পাবলিক ছাড়া আর কোনো পথ নেই।এমন কি ন্যাশনালে পড়ায় টাকাটাও বর্তমানে তার কাছে নেই। রুদ্ধশ্বাস ছাড়ল শিথি।

হোস্টেলের সামনে এসে রিকশা ভাড়া মিটিয়ে রুমে প্রবেশ করতেই লামিয়া আর ঋতু এসে তাকে ঘিরে ধরলো।লামিয়া শিথিকে প্রশ্ন করে উঠল,
-“আজকের দিন কেমন গেল তোর?স্টুডেন্ট কেমন লাগলো?ঠিকঠাক পৌঁছতে পেরেছিস তো? মোট কথা আজকের দিনের সব ঘটনা খুলে বল আমাদের।”
শিথি কিঞ্চিৎ হেসে চা বানাতে চুলার ধারে চলে এলো। তারা লুকিয়ে চুকিয়ে এক সাইডে একটা চুলা বসিয়ে নিয়েছে।মাঝে-মধ্যে এটা সেটা করে থাকে চুলা দিয়ে।
শিথির পিছুপিছু তারা দুজন ও এলো। শিথি একটা পাত্রে পানি ঢেলে দুজনের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করে উঠল,

-“চা খাবি তোরা?”
দুজন সায় জানাল। শিথি চা,চিনি আর দুধ দিয়ে চা বসিয়ে দিয়ে রুমে এসে বিছানায় আয়েশ করে বসল।তার পাশে লামিয়া আর ঋতু ও বসে পড়ল। শিথি আজকেই সকল ঘটনা শুরু থেকে শেষ অবধি দুজনকে বলল।দুজনের চোয়াল ঝুলে গেল আকস্মাৎ।দুজনই আফসোস সুরে শিথিকে বলে উঠল,
-“ইশ’রে! শিথি তুই এটা কি করলি?যেখানে কাল থেকে আমরা দুজন ওই হিরোকে নিয়ে সপ্ন দেখছি! আর সেখানে তুই তার দেওয়া এতো বড় প্রপোজাল ফিরিয়ে দিলি।”

শিথি চা নামতে নামাতে দুজনের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
-“তোরা স্বপ্ন দেখতেই পারিস।কিন্তু আমার এসব সপ্ন দেখার সময় কি আর আছে এখন?”
লামিয়া শিথির কাঁধে হাত রেখে বলে উঠল,
-“কেনো দ্বিতীয়বার বুঝি মানুষ জীবন সাজায় না?”
শিথি এককাপ চা লামিয়ার হাতে ধরিয়ে দিয়ে দুকাপ নিজে নিয়ে এসে বিছানায় বসলো।ঋতুর হাতে চা দিতে দিতে বলে উঠল,

আমার আছে জল পর্ব ৩

-“এসব প্রেম ভালোবাসায় প্রতি বিশ্বাস উঠ গেছে আমার একপ্রকার।তার উপর আমি একজন ডিভোর্সি মেয়ে।একজন ডিভোর্সি মেয়েকে কখনোই সমাজ ভালো চোখে দেখে না।আর তোরা যেই হিরোটার কথা বলছিস।উনানে আমার মোটেও সুবিধার মনে হয়নি।কেমন প্লে-বয় টাইপ লেগেছে।আর উনি আমাকে কেবল মানবতা দেখিয়েছে। তোরা এতো সেন্টি খাস না।তাছাড়া ওনার আর আমার মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ।তাই এসব বাজে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে চা’টুকু শেষ কর।ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

আমার আছে জল পর্ব ৫