আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৩

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৩
Raiha Zubair Ripte

-“ কি বললো তোমার ছেলে?
চিত্রার আকুল প্রশ্নে তুষার ফোন টা পকেটে ভরলো।
-“ কাল আসবে বললো সকালে।
-“ আর মেয়েটা কেমন আছে,বাজে ব্যাবহার করে নি তো?
তুষার কিছু বললো না। পরপর দুটো শ্বাস ফেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। বড্ড ক্লান্ত সে। কোথায় ভেবেছিল শেষ বয়সে এসে ছেলেকে নিজের জায়গায় বসাবে তা না ছেলে তার এসব রাজনীতি থেকে ১০০ হাত দূরে থাকে।

-“ কি হলো চুপ কেনো?
-“ স্বাভাবিক আছে সব। কিন্তু তুমি কি করে তন্ময়ের সাথে দোলনের বিয়ে টা দিলে! কোথায় ভেবেছি ছেলেটার ধুমধাম বিয়ে দিব,আনন্দ করবো সব কিছু ভেস্তে দিয়েছো।
-“ খুব খারাপ কাজ করে ফেলেছি তাই না?
-“ এখন আর এটা ভেবে কি হবে। যা হওয়ার হয়ে গেছে। কাল ছেলে আর ছেলের বউ আসবে তার আয়োজন করো।
-“ অধরা আপু কে মিস করছি। আজ কথা বললাম শুনলাম খুব শীগ্রই দেশে ফিরবে।
-“ আমাদের মনে রেখেছে তাহলে?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ এই রাহা তান কোথায়?
রাফি তৃষ্ণার মেয়ে রাহা,এবার অনার্স প্রথম বর্ষে পড়ে। মায়ের ডাক শুনে পড়ার টেবিল থেকে উঠে দাঁড়ায়।
-“ তোমার ছেলে কই আমি কিভাবে জানবো? পড়ার জন্য পাঠিয়েছিলে অঙ্ক করতে দিয়েছিলাম সে উল্টো আমাকে পড়িয়ে চলে গেছে। মানুষ হবে না তোমার ছেলে বদের হা’ড্ডি।

তৃষ্ণা এবার বেশ রেগে গেলো। ছেলেটা বড্ড পাজি। পড়তেই চায় না। সারাদিন টইটই করে একে ওকে ঝামেলায় ফেলবে। এই তো সেদিনে বাগানে রহিম চাচা পানি দিচ্ছিল পেছন থেকে তান গিয়ে পানির পাইপে পাড়া দিয়ে পানি আটকে দিলো। রহিম চাচা পানি আসছে না দেখে যেই না পাইপ টা মুখের সামনে ধরলো ওমনি তান পা সরিয়ে দিলো। সহসা পানি সব রহিম চাচার মুখে এসে পড়লো।

তৃষ্ণা মেয়ের ঘর ছেড়ে এবার তান কে গলা ছেড়ে ডাক দিলো। তান তার বড় বাবার ঘরের দিকে যাচ্ছিল। তুষার কে সে বড় বাবা ডাকে। এ নিয়ে তৃষ্ণা প্রায় তান কে বকে। মামা কে কেনো বড় বাবা ডাকবে? তখন রাফি এসে ছেলেকে শিখিয়ে দিত বাবার ভাইকে মানুষ কি ডাকে? বড় বাবাই তো ডাকে। সে এখন তোমার ভাই হলে আমার ছেলে বড় বাবা রেখে মামা ডাকবে কেনো?
এ নিয়ে কয়েক চট তর্কাতর্কি হয়ে যেত।
মায়ের গলার আওয়াজ শুনে দশ বছরের তান তাড়াতাড়ি তুষার চিত্রার রুমে ঢুকলো। তুষার কে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে আলতো পায়ে এগিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলল-

-“ তোমার ছেলে নাকি বিয়ে করেছে শুনলাম। কথাটা কি সত্য?
তুষার চোখ মেলে তাকায়। ছোট্ট তান কে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসে তান কে কোলের মধ্যে উঠিয়ে নিলো। সারা বাড়ির সবার চোখের মনি এই ছোট্ট তান।
-“ হুমম আমার ছেলে বিয়ে করেছে, এবার তো তোমার পালা তান।
মুহূর্তে চোখ মুখ খুশিতে জ্বলে উঠলো -“ সত্যি?

-“ হুমম বিয়ে করবে?
-“ হ্যাঁ হ্যাঁ কেনো নয়?
-“ কাকে করবে শুনি। পছন্দ টছন্দ আছে নাকি তান সাহেবের?
-“ হ্যাঁ বড় বাবা। আমাদের স্কুলের ঐ মিস টাকে আমার হেব্বি লাগে। ইশ কি সুন্দর দেখতে।
তুষার ভ্রু কুঁচকালো। -“ কার কথা বলছিস?
-“ কার কথা আবার তুলি আপুর কথা।

বিরক্ত নিয়ে কথাটা বলল তান। মেয়েটা তো তাদের এতিমখানায় থাকে। চিত্রা ভীষণ স্নেহ করে মেয়েটাকে। তুষার নিজেও করে। প্রায় আসে বাসায়। বছর পনেরো আগে মেয়েটাকে এতিমখানার পাশে পেয়েছিল এতিমখানার দায়িত্বে থাকা হাফিজা বেগম। তখন মেয়েটার বয়স আনুমানিক পাঁচ ছয় হবে। সেই থেকেই মেয়েটা তাদের এতিমখানায় থাকে। তাদের এই পরিবারের একজন সদস্য ও বটে।

বেশ চঞ্চল প্রকৃতির মেয়ে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিতেই মেয়েটা তুষারের কাছে আর্জি জানায় তাদের স্কুলে সে জব করতে চায়। পড়ালেখায় বেশ মেধাবী মেয়েটা। সেজন্য তুষার মেয়েটা কে চাকরি দেয়। তবে সব ইন্টারভিউ তে টিকলে তবেই তুলি চাকরি করবে বলে জানায়।
মেধাবী হওয়ার দরুন মেয়েটা ইন্টারভিউ তে টিকে যায়। এই তো মাস কয়েক হলো জব করছে,সেই এতিমখানা তে থেকেই।
তুষার তানের কান টেনে ধরলো।

-“ তুই ফেল্টু মার্কা স্টুডেন্ট হয়ে ওমন ব্রিলিয়ান্ট মেয়েকে বিয়ে করার ইচ্ছে পোষণ করিস তান ছিঃ শ্যেইম অন ইউ।
তান কান ছাড়াতে ছাড়াতে বলে- কেনো ফেল্টু দের কি বিয়ে করার অধিকার নেই বাংলাদেশে? কোথায় লিখা আছে ফেল্টুরা মেধাবী মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না? বাবা বলেছে আমি বড় হলে তুলা আপু কে এনে দিবে আমায়। সেজন্য আমি ভীষণ পড়াশোনা করছি টপার হবো টপার দেখে নিয়ো।
ভাব নিয়ে কথাটা বলে তান। তুষার হো হো করে উঠে।

-“ যা তোর মা ডাকতেছে। কত পড়া পড়ছিস তার হিসেব নিবে। আসছে লাড্ডু খায় যে সব এক্সামে সে কি না হবে টপার হাস্যকর!
-“ ওভাবে বলো না গো বড় বাবা হার্টে এসে লাগে।
অসহায় হয়ে বলে তান। আর তখনই তৃষ্ণা ঢুকে রুমে। তানের কান টেনে ধরে বলে-

-“ তরে বলি নি পড়তে বসার জন্য? তুই এখানে কেনো?
-“ উফ মা ছাড়ো ব্যাথা পাচ্ছি। বড় বাবা অপ্স সরি মামুই তো ডাক দিলো।
তুষার চোখ বড়বড় করে তাকালো। সে কখন ডাক দিলো? তান ছাড়া পেতেই দৌড়ে চলে গেলো। তৃষ্ণাও ছোট লাগালো ছেলের পেছন, এখন নিশ্চয়ই আবার বাবার কাছে যাবে। বাপ ছেলে মেয়ে পাগল করে ফেলবে এই তৃষ্ণা কে।

সকাল সকাল ঘুম ভেঙে যায় তন্ময়ের। শোয়া থেকে উঠে ফোনে সময় দেখে নেয়। তারপর তাড়াহুড়ো করে শোয়া থেকে উঠে দরজার কাছে আসে। দরজা টানতেই বুঝতে পারে দরজা এখনও বাহির থেকে লাগানো। তন্ময় বিশ্রী একটা বকা ছুঁড়ে দিলো লিখনের উপর। পকেট থেকে ফোন টা বের করে লিখনের নাম্বারে কল লাগালে। ফোন সুইচ অফ। তন্ময় এবার রাহাতের ফোনে কল লাগালো। দুবার রিং হতেই ফেন রিসিভ হতে তন্ময় বলে উঠলো-

-“ শয়’তানের দল দরজা খোল তাড়াতাড়ি প্রানে বাঁচতে চাইলে আহাম্মকের দল। কয়টা বাজে সে খেয়াল আছে তোদের? সময় মতো পৌঁছাতে না পারলে জবাবদিহি তুই দিবি শা’লা?
রাহাত হুড়মুড়িয়ে শোয়া থেকে উঠলো। তন্ময়ের ফ্ল্যাটের চাবি তো তার কাছে নেই। তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিয়ে লিখনের ফ্ল্যাটের দিকে ছুটলো। দরজায় কড়া নেড়ে বলে উঠলো- শালা দরজা খোল তাড়াতাড়ি। দেখ কয়টা বাজে। বউ নিয়ে পরেও শুয়ে থাকতে পারবি। তাড়াতাড়ি তন্ময়ের ফ্ল্যাটের চাবি দে, কইরে বাপ উঠ তাড়াতাড়ি।
কয়েক বার কড়া নাড়ার পর লিখন আড়মোড়া ভেঙে দরজা খুলে।

-“ শালা চাবি দে।
লিখন ভ্যাবলাকান্তের মতো বলে –
-“ কিসের চাবি?
-“ তন্ময়ের ফ্ল্যাটের। আর শা’লা কিভাবে বের হইছিস,লজ্জা শরম কি বউয়ের কাছে রেখে আসছিস? যা তাড়াতাড়ি গোসল সার।
লিখন নিজের দিকে তাকালো। পড়নে শুধু হাফ প্যান্ট। রাহাতের দিকে তাকিয়ে বেক্কলের মতো হাসি দিয়ে রুম থেকে চাবি এনে হাতে ধরিয়ে দেয়। রাহাত চাবি টা হাতে নিয়ে উল্টো ফিরে যেতে যেতে বলে-

-“ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হ। কোথায় যেতে হবে ভুলে গেছিস নাকি বউ কাছে পেয়ে।
লিখনের রাহাতের কথার মানে বুঝতেই ওহ্ শিট বলে তারাতাড়ি দরজা লাগিয়ে গোসল খানায় ঢুকে।
রাহাত তন্ময়ের ফ্ল্যাটের দরজা খুলে দিয়ে তন্ময়ের অপেক্ষা না করেই চলেই যায়।থাকলে দু এক ঘা নিশ্চয়ই পিঠে পড়তো।

রাহাত নিজের রুমে ঢোকার আগে সাব্বিরের ফ্ল্যাটের দরজায় কড়া নেড়ে জাগিয়ে যায় রেডি হওয়ার জন্য।
তন্ময় একদম ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয়। তারপর রান্না ঘরে ঢুকে চুলায় গরম পানি বসিয়ে খাবার টেবিলে বসে ব্রেডে জেল লাগায়। দু প্লেটে ব্রেড বেড়ে চুলা থেকে গরম পানি টা এনে দু কাপ কফি বানিয়ে রুমে ঢুকে। দোলন তখনও ঘুমে। তন্ময় কিয়ৎ ক্ষন চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আলতো করে ডেকে উঠে –

-“ এই মেয়ে শুনছো? উঠো ফ্রেশ হয়ে আসো। বেলা হয়েছে অনেক।
দু বার ডাক দিতেই দোলন শোয়া থেকে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে। এদিক ওদিক চেয়ে বলে-
-“ ক’টা বাজে?
-“ নয় টা।
দোলন শোয়া থেকে উঠে ওয়াশরুমের দিকে যেতে নিলে তন্ময় বলে উঠে –
-“ আলমারি তে ড্রেস আছে একদম গোসল সেরে বের হবে।
দোলন অবাক হয়ে বলে- এতো সকালে গোসল দিতে হবে?

-“ নয় টা বাজে এখনও সকালে মনে হচ্ছে তোমার? ভ্রু কুঁচকে বলে তন্ময়। দোলন কথা না বাড়িয়ে আলমারি খুলতেই দেখে একটা প্যাকেট। সেটা নিয়ে বের করতেই দেখে সবুজ কালারের থ্রিপিস। ওটা নিয়ে চলে যায় ওয়াশরুমে।
তন্ময় তপ্ত শ্বাস ফেলে। থ্রিপিস টা কিনেছিল একজনের জন্য আর সেটা এখন অন্য জনের ব্যাবহারের জন্য কাজে লাগছে।
খাবার টেবিলে বসে চুপচাপ খাচ্ছে তন্ময়। দোলন খাবার প্লেটে হাত দিয়ে বসে আছে। তন্ময় ধমক দিয়ে বলে-

-“ খাচ্ছো না কেনো? তোমাকে ও বাড়ি দিয়ে আমাকে কাজে যেতে হবে।
দোলন তন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ কি কাজ?
-“ তোমার না জানলেও চলবে। আর শোনো আমি যদি না নিতে আসি তাহলে ও বাড়িতেই থাকবে। অনেক মানুষ আছে ও বাড়িতে বোরিং লাগবে না।
-“ আপনি আসবেন না আমাকে নিতে?
তন্ময় কফিতে চুমুক বসিয়ে বলে-

-” শিউর নই।
অ্যাপার্টমেন্টের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে গাড়ির সামনে তন্ময় আর দোলন। বিরক্তিতে তন্ময়ের চোখ মুখ কুঁচকে। আর তখনই সামনে নজর দিতে দেখে লিখন,সাব্বির,রাহাত এগিয়ে আসছে। রাহাত দোলনের দিকে চেয়ে মুচকি হেঁসে বলে-

-“ হাই দোলনা ভাবি,কেমন আছেন?।
দোলন নিজের নাম কে এমন বিকৃত করতে দেখে হকচকিয়ে যায়। মুখে হাসি এনে বলে-
-” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
রাহাত কিছুটা আফসোস সুরে বলে-
-“ এই তো সিঙ্গেল লাইফ চলছে কোনো রকমে আমার আর সাব্বিরের।

তন্ময় রেগে বলল- থামবি তুই। তোরা গিয়ে পৌঁছে ওখানে আমি দোলন কে ও বাসায় দিয়ে আসছি।
ওরা সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো। তন্ময় দোলন কে নিয়ে ও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
তৃষ্ণা চিত্রা সকাল থেকে রান্না বান্নার তোড়জোড় শুরু করে দিছে। আজ অনেক গুলো দিন পর তার ছেলে বাসায় ফিরছে।ছেলের পছন্দ মতো সব রান্না করলো। খাবার টেবিলে খাবার সাজাতেই গাড়ির শব্দ কানে আসতেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে উঠলো চিত্রা। দরজার পানে চেয়ে থাকতেই দেখলো তন্ময় হেঁটে আসছে পাশে দোলন। তন্ময়ের পড়নে হোয়াইট শার্ট তার উপর ব্লাক স্যুট। বেশ সাহেব সাহেব লাগছে ছেলেকে।

তন্ময় দোলন কে নিয়ে সোজা সোফায় গিয়ে বসে। দোলন এদিক ওদিক তাকিয়ে বাড়ির ভেতরা দেখে। এর আগে একবার এসেছিল এ বাড়ি ফুপুর সাথে। চিত্রা তখন অসুস্থ ছিলো। দোলন বসা থেকে উঠতেই তন্ময় বলে উঠে –
-“ উঠবে না চুপচাপ বসে থাকো।
দোলন চুপচাপ বসে রইলো। চিত্রা রান্না ঘরে গিয়ে তৃষ্ণা কে পাঠিয়ে দিলো। তৃষ্ণা ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে এগিয়ে আসে ওদের দিকে।

-“ আসলি তাহলে এ বাড়ি।
-“ বাবা বলেছে দেখে আসলাম। তা না হলে…
-“ তা না হলে কি? আসতি না তাই তো।
-“ হুমমম।
তৃষ্ণার এবার রাগ হলো। বাড়ির আর ছেলে মেয়ে গুলো এ বাড়ি থাকে। কিন্তু বাড়ির বড় ছেলেই বাড়ি থাকে না দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে।

-“ বাড়ির ছেলে বাড়ি থাকবি না তো কি করবি? বাড়ির সব সদস্য বাড়িতে থাকে কেবল তুই ই থাকিস না,বিষয় টা তে খারাপ লাগে আমাদের।
-“ বাড়ির সব সদস্য বাড়িতে থাকে না ফুপি। একজন নেই এই বাড়িতে। তাকে তোমরা ভুলে যেতে পারো আমি ভুলি নি।

শক্ত মুখে কথাটা বললো তন্ময়। তৃষ্ণা চুপ হয়ে গেলো। বুকের ভেতর বয়ে গেলো দীর্ঘ শ্বাস। তাকে চাইলেই ভুলা সম্ভব না। ভাগ্যিস চিত্রা নেই এখানে। তা না হলে পুরোনো ঘা আবার তাজা হয়ে যেত।
তুষার ছেলের মেসেজ পেয়ে নিচে নামে। তন্ময়ের কাছে আসতেই তন্ময় দোলন কে ইশারা করে সালাম দিতে।
দোলন সালাম দেয়।

তুষার সালামের জবাব দেয়। খালি হাতে বউমার মুখ দেখা এই পরিবারের পরম্পরায় নেই। তাই পকেটে ছিলো হাজার কয়েক টাকার নোট। সেটা তুষার দোলনের হাতে গুঁজে দিলো। দোলন তন্ময়ের দিকে তাকালো। নেবে কি নিবে না সেটার জন্য। তন্ময় ইশারায় নিতে বললো। দোলন টাকা টা নিলো।
একএক করে সবাই নিচে নামলো। তান দৌড়ে আসলো ভাইয়ের বউ দেখতে। দোলনের মুখ দেখেই জোরে বলে উঠলো- আরে ভালো আপু যে!

দোলন তান কে দেখতে পেয়ে মুখে হাসি গাঢ় হয়। ছেলেটার সাথে বেশ ভালো বন্ডিং দোলনের। দোলন ইশারা করলো কাছে এসে বসতে। তান দৌড়ে এসে বসলো দোলনের পাশে।
দোলনের সাথে ফিশফিশ করা শুরু করলো। তানিয়া বেগম তন্ময়ের পাশে বসে তন্ময়ের শরীরে হাত বুলিয়ে দেয়। অনেক দিন পর নাতী টাকে কাছে পেলো। আবেগে চোখে জল চলে আসলো। তাসলিমা খাঁন জহুরির চোখে দোলন কে দেখছে। চিত্রা তৃষ্ণা কে ডাক দিয়ে বলল ওদের খেতে দেওয়ার জন্য।
তৃষ্ণা তন্ময় কে বলল খেতে বসতে। তন্ময় হাত ঘড়িটায় সময় দেখে বলে-

-“ না ফুপি আমি কিছু খাবো না। ব্রেকফাস্ট করে আসছি। বাড়ির বউ বাড়িতে দিয়ে গেলাম। কাজ শেষ আসছি জরুরি কাজ আছে আমার দেরি হয়ে যাবে এখন না গেলে।
চিত্রা অসহায় চোখে তাকালো ছেলের পানে। এতো কষ্ট করে ছেলের জন্য সেই সকাল থেকে রান্না করলো আর এই ছেলে কিচ্ছুটি মুখে নিবে না? তুষার ধমকে উঠলো-

-“ এই খেয়ে যা। কত কষ্ট করে তোর মা সকাল থেকে তোর জন্য রান্না করছে। অল্প করে হলেও খেয়ে যাবি।
তন্ময় একবার মায়ের দিকে তাকালো। তারপর মুখে কাঠিন্যে এনে বলে-
-“ আমি বলি নি এতো এলাহি আয়োজন করতে। আসছি।
কথাটা বলে বড়বড় পা ফেলে চলে গেলো। চিত্রা দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলো। ছেলের কাছে নিজেকে নিয়ে এমন অভিমান আর সহ্য হচ্ছে না।

দোলন তন্ময়ের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। তান দোলনের হাত টেনে দাঁড় করিয়ে সিঁড়ি বেয়ে হাঁটা ধরে। নিজের মতো একটা মানুষ পেয়েছে তান এতো সহজে পিছু ছেড়ে দিবে নাকি?
তান দোলন কে নিয়ে নিজের রুমে দিকে যেতে নিলে চিত্রার রুমের সামনে এসে থেমে যায় দোলন। কান্নার শব্দ আসছে ভেসে। দোলন ঢুকবে কি ঢুকবে না দ্বিধায় পড়ে যায়। সব দ্বিধা দণ্ড ফেলে রুমে ঢুকে। চিত্র বালিশে মুখ গুঁজে কান্না করছে।

দোলন গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে যায়। চিত্রার পিঠে হাত রেখে বলে- “ চিত্রা মা কাঁদছো কেনো?
চিত্রার কান্না থেমে যায়। চোখ মুছে শোয়া থেকে উঠে মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে বলে-
-“ দোলন তুই? কিছু লাগবে মা?
দোলন মাথা ডানে বামে নাড়ায়। সহসা চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে বলে-

-“ উনারে ব্যাবহারে কষ্ট পেয়েছো চিত্রা মা? একদম কষ্ট পাবে না।
চিত্রা স্মিত হাসে অথচ বুকের ভেতর অসহ্য ব্যাথা উঠে আছে।
-“ না না কষ্ট পাই নি মা। তন্ময় কি বাজে ব্যাবহার করেছে তোর সাথে?
-“ না।
স্বস্তি পেলো কথাটা শুনে।

-“ খাবি না আমার হাতের রান্না তুই?
-“ কেনো খাবো না। আমি তোমার হাতের রান্না খাওয়ার জন্য ই তো এসেছি। সকালে উনি কিসব ব্রেড দিলো ভালো লাগে নি খেতে।
চিত্রা হেসে উঠলো।

অন্ধকার রুমে হাত পা বাঁধা অবস্থায় চেয়ারে বসা রাখা হয়েছে সাতাইশ বছরে পা দেওয়া এক যুবক কে। পুরো শরীর নেতিয়ে আছে। অথচ এখনও অব্দি একটা শব্দ ও বের করতে পারে নি কেউ। মারতে মারতে হাঁপিয়ে গেছে রাহাত,সাব্বির,লিখন। রাহত রেগে লাঠিটা দিয়ে পেছন থেকে ঐ যুবকের গলায় চেপে ধরে বলে-

-“ মা*** তাড়াতাড়ি বল এই নারী চক্রে তোর সাথে আর কে কে জড়িয়ে আছে? আর কার আদেশে তুই দোলন কে বিয়ে করার নাম করে পাচার করতে চেয়েছিলি?
লোকটা রাহাতের প্রশ্নের উত্তর দিলো না বরং বিশ্রী ভাবে হেঁসে বলল-
-“ মরে যাব কিন্তু কথার খেলাপ এই মিলন করবে না।
রাহাত আর ধৈর্য্য ধরতে না পেরে লাত্থি দিয়ে ফেলে দিলো মিলন কে। মিলন কে মা,রার জন্য উদ্যত হলে লিখন এসে ধরে ফেলে।

-“ ভাই আর মা,রিস না তন্ময়ের জন্য ও কিছুটা অবশিষ্ট রাখ।
রাহাত লিখনের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করে। আর তখনই তন্ময় প্রবেশ করে রুমে। ফ্লোরে মিলন কে পড়ে থাকতে দেখে বলে-
-” শু***বাচ্চা কিছু বলে নি এখনও?
লিখন না বললো। তন্ময় অপেক্ষা করলো না আর এক মুহুর্ত মিলনের দিকে এগিয়ে এসে মিলনের মেন পয়েন্টে লাত্থি দিয়ে বলল-

-“ এবার ও কি বলবি না?
মিলন গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠলো। মিলনের গলার আওয়ার এবার এই রুম ছেড়ে বাহিরে চলে গেলো। বাহিরে থাকা সকলে শিউরে উঠলো। এরমধ্যে একজন পঞ্চাশ বছরে পা দেওয়া এক লোক ইউনিফর্ম পড়ে এই রুমে ঢুকলো। সহসা সাব্বির লিখন রাহাত, কপালে হাত দিয়ে স্যালুট জানালো।
লোকটা তন্ময়ের দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল-

-“ কিছু বলে নি এখনও?
-” না স্যার।
-” ওকে এভাবেই ছেড়ে দাও। কয়েক দিন খেতে না পারলে একাই বলে দিবে সব। কাল নতুন অফিসার আসবে আমাদের এই টিমে আরো একজন যোগ হবে।
লিখন ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো- কে সে?

-“ সায়ান মাহবুব। সিলেট থেকে ট্রান্সফার হয়ে এখানে আসছে। কাল সে আসবে। পরিচয় পর্ব সেরে নিয়ো তোমরা।
অফিসার শরাফত উল্লাহ চলে গেলেন। রাহাত ঠোঁটে কোনো কয়েক বার এই নাম টা আওড়ালো। তন্ময়ের দিকে চেয়ে বলল-

-“ এটা কি সেই বদ রাগী অফিসার টা?
তন্ময় কক্ষ থেকে বের হতে হতে বলে- হতে পারে।
সাব্বির সরু চোখে তাকিয়ে বলে- তাহলে ভাই জীবন আর জীবনের সাথে থাকবে না। খাটাতে খাটাতে মেরেই ফে’লবে আমাদের।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২

( আমার এই গল্পে প্রত্যেক টা চরিত্রের জন্য আলাদা আলাদা কাহিনি আছে। তাই সব চরিত্র ই গুরত্বপূর্ণ এই গল্পে,কারো থেকে কেউ কম নয়।)

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ৪