আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৯

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৯
Raiha Zubair Ripte

-“ তৃষা কে তো আপনিই প্ল্যান করে কিডন্যাপ করেছেন তাই না?
সায়ানের কথার বিপরীতে চমৎকার এক হাসি উপহার দিলো ফারহান। তন্ময় দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করলো সে হাসি।
-“ না ঐ পিচ্চি মেয়েটা কে কিডন্যাপ করার কোনো ইচ্ছেই আমার ছিলো না। কিন্তু একজনের সহ্য হলো না তোমার বাবা মায়ের সংসার। সেই সংসার কে নরক বানানোর জন্যই তৃষা কে কিডন্যাপ করলো।
তন্ময় সহসা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। ফারহানের গলা চেপে বলল-

-“ অনেকক্ষণ ধরে আপনার এসব হেঁয়ালিপূর্ণ কথা শুনে যাচ্ছি। পরিষ্কার করে বলুন মাস্টারমাইন্ড টা কে এসবের পেছনে। আর তৃষা কোথায় এখন?
ফারহানের শ্বাস মনে হলো থেমে আসছে। চোখ উল্টিয়ে গেলো। সায়ান তন্ময় কে টেনে ছাড়িয়ে আনলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ কুল তন্ময়। আর আপনি মিস্টার ফারহান, রহস্য নিয়ে কথা কেনো বলছেন? কেউ একজন সেটা কে বলছেন না কেনো? আর আপনার ছেলে কোন গর্তে লুকিয়ে আছে ফাহাদ?
ফাহাদের নাম শুনে অজানা ভয়ে বুক কেঁপে উঠলো ফারাহ্ র। মনে মনে আল্লাহ কে ডেকে বলল- তার ভাই যেনো ধরা না পড়ে।
ফারহান কেশে চলেছে। এলোমেলো সুরে পানি চাইলো। তন্ময় পানির মগ এগিয়ে দিলো। ফারহান ঢকঢক করে পানি টা খেয়ে নিলো।

-“ এবার বলুন ঐ একজন টা কে? কে আমার বাবা মায়ের সংসার দেখতে পারে না? কার মনে এতো হিংস্রতা?
-“ আমি আর কিছু বলতে পারবো না। এখন মে’রে কুটিকুটি করলেও টু শব্দ টাও বের হবে না।
তন্ময় রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলো। সায়ান তন্ময় কে টেনে বাহিরে নিয়ে গেলো।
ফারাহ্ বের হয়ে যেতে নিলে ফারহান ডেকে উঠে। ফারাহ্ ভয়ার্ত চেহারা নিয়ে পেছন ফিরে।

-“ কাজ টা ঠিক করলে না ফারাহ্। পস্তাবে এর জন্য।
-“ এমন জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে ম’রে যাওয়া ঢের ভালো বাবা। এমন কোনো প্ল্যান করো নেক্সট টাইম যেনো সেই প্ল্যানে আমার এই জীবনের প্রদীপ চিরতরে নিভে যায়।
তাচ্ছিল্য ঘৃণা নিয়ে কথাটা বলে চলে গেলো ফারাহ্। ফারহান রাগে ফুঁসে উঠলো। ভাগ্যিস ছেলেটা তার হোটেলে থাকে নি। তাহলে ছেলেও ধরা পড়তো।
ফারহ্ তন্ময়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তন্ময় ফাইল দেখছিল। ফারাহ্ কে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে-

-“ কিছু বলবে?
ফারাহ্ মাথা ঝাকায়।
-“ কি বলবে বলো কুইক।
-“ আমার মনে হয় না দোলনের বাবা এসবের সাথে জড়িত।
-“ এটা মনে হলো কেনো?
ফারাহ্ তপ্ত শ্বাস ফেললো। তার বাবা ভুল বলেছে। দোলনের বাবা এসবে জড়িত থাকলে সে তো জানতে পারতো। সেটা তো সোজাসাপটা বলতে পারছে না।

-“ তুমি একটা বিষয় ভাবো। দোলনের বাবা যদি এসবে জড়িত থাকতো তাহলে সে কি জেনেশুনে কোনো সিআইডি অফিসারের সাথে মেয়ের বিয়ে দিয়ে নিজের বিপদ নিজের ঘাড়ে আনতো টেনে?
তন্ময় ভেবে দেখলো। ফারাহ্ কথাটা ভুল বলে নি। কিন্তু ফারহান কেনো মিনাল হোসেনের নাম বলল।
-“ তার কল রেকর্ডে কিন্তু তেমন সন্দেহ করার মতো কিছু নেই।
-“ চেক করেছিলে?

-“ হ্যাঁ। আচ্ছা কল লিস্ট টা আমায় দিয়ে যাও।
ফারাহ্ কল লিস্ট টা তন্ময়ের ফোনে পাঠালো।
তন্ময় চেক করলো। নাহ্ সন্দেহজনক কিছু নেই।
তন্ময় রাহাত কে ফোন করলো।
-“ কই তোরা?
রাহাত ওপাশ থেকে বলল-

-“ এয়ারপোর্টে এসে নেমেছি।
-“ আজকে আর সিআইডি ব্যুরো তে আসতে হবে না। কাল আসিস আজ রেস্ট কর।
-“ আচ্ছা।
-“ আর শোন,,ফয়সাল শেখ এরেস্ট হয়েছে।
রাহাত চমকালো।
-“ কিভাবে?
তন্ময় খুলে বলল। রাহাত সব শুনে ফোন কে’টে দিলো।
তুষার রাকিব হোসাইন কে নিয়ে এসেছে সিআইডি ব্যুরো তে। তন্ময় তখন চেয়ারে মাথা এলিয়ে ভাবনায় মশগুল। হন্তদন্ত হয়ে কাউকে সামনে এসে দাঁড়ানোর উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ মেলে তাকায়। তুষার কে দেখে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়।

-“ বাবা তুমি এখানে?
তুষার এদিক ওদিক তাকালো।
-” ঐ জানো**বা** কোথায়?
-“ পাশের রুমে,বেঁধে রাখা হয়েছে।
তুষার হাঁটা ধরলো সেদিকে। তন্ময় থামানোর জন্য উদ্যত হলে রাকিব হোসাইন আঁটকে দেয়।

-“ তোমার বাবা কে আঁটকানোর চেষ্টা করিও না তন্ময়। পারবে না। ও ভীষণ হিংস্র হয়ে উঠেছে।
-“ কিন্তু আঙ্কেল এটা সিআইডি ব্যুরো। বাবাকে বুঝতে হবে।
-“ তোমার বাবার পাওয়ার নিশ্চয়ই ভুলে যাও নি।
-“ মামু তুমি এখানে? কোনো সমস্যা হয়েছে?
সায়ান রাকিব হোসাইন কে দেখে অবাক হয়ে বলে। রাকিব হোসাইন তাকায় সায়ানের দিকে। ভেতরে আসছে।
-“ না কোনো সমস্যা হয় নি। এমনি এসেছি।
রাকিব হোসাইন এগিয়ে গেলো সে রুমের দিকে। সায়ান মামু কে ফারহান কে যেই রুমে রাখা হয়েছে সেই রুমের দিকে যেতে দেখে বলে-

-“ মামু ওদিকে কোথায় যাচ্ছ?
ততক্ষণে রাকিব হোসাইন চলে যায়। তন্ময় বাঁধা দেয় সায়ান কে।
-“ বাবা এসেছে সায়ান।
-“ কেনো?
-“ ফারহানের সাথে পুরনো হিসাব চুকাতে।
তুষার কে ভেতরে দেখে ফারহান ভেতর ভেতর ভয়ে শেষ হয়ে গেলেও বাহিরে তা প্রকাশ করলো না। তুষারের রাগ ভয়ংকর যা কয়েক বছর আগেই টের পেয়েছিল ফারহান। তুষারের পাশে অপরিচিত মুখ দেখতে পেয়ে ভ্রু কুঁচকে আসলো। এই লোকটা কে আবার?
তুষার চেয়ার টেনে বসলো। শান্ত কন্ঠে বলল-

-“ তৃষা কোথায়?
-“ জানি না।
-“ রাগাস না আমায়। তৃষার খোঁজ দে ট্রাস্ট মি কিচ্ছু বলবো না তোকে।
-“ সত্যি জানি না এখন তৃষা কোথায়। আর তৃষা কে আমি কিডন্যাপ করি নি।
তুষার বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। লাত্থি দিয়ে ফারহান কে ফেলে দিলো। পাশ থেকে লাঠি নিয়ে ফারহানের পায়ের পাতায় এলোপাতাড়ি বারি মে’রে বলল-

-“ কু’ত্তার বাচ্চার তুই জানিস না তো কে জানে? গেইম খেলছিস তুই আমার সাথে! আজ আমি তোকে মে’রেই ফেলবো। তাড়াতাড়ি তৃষার খোজ দে।
ব্যাথায় আর্তচিৎকার করে উঠলো ফারহান। পাশেই শরাফত উল্লাহর শরীর কাটা দিয়ে উঠলো। তুষারের চোখ এবার তার দিকে গেলো। এতক্ষণ খেয়াল করে নি।

-“ আপনি!
শরাফত উল্লাহ এক ঢোক গিললো। রাকিব হোসাইন বলল-
-“ কে এই লোক?
তুষার তাকালো।
-“এই সেই পুলিশ যে কিনা তৃষার কেইস হ্যান্ডেল করেছিল।
-“ তারমানে এও জড়িত ওদের সাথে।
তুষার এগিয়ে আসলো। শরাফত উল্লাহ এর গলা চেপে বলল-

-“ আমার মেয়ে কই?
শরাফত উল্লাহ ছোটাছুটি করলো। অস্পষ্ট সুরে বলল-
-“ আ.. আমি জানি ন.. না।
-“ তুই জানিস না,ও জানে না তাহলে জানে টা কে? তোদের দুজন কে আজ আমি মে’রে ফেলবো।
দু’জনকে এলোপাতাড়ি মা’রতে থাকে তুষার। ফারহান সত্যি জানে না এখন তৃষা কোথায়। জানলে তো বলেই দিত। কিন্তু তুষার সে কথা মানতে নারাজ।
রাকিব হোসাইন তুষার কে টেনে থামালো।

-“ মাথা ঠান্ডা কর। শান্ত হয়ে কথা বল। আর এই ফারহান সত্যি কি জানিস না তৃষা কোথায়?
-“ না সত্যি জানি না তৃষা এখন কোথায়?
তুষার ভ্রু কুঁচকালো।
-“ তাহলে কে জানে?
-“ জানি না।
রাকিব হোসাইন ভ্রু কুঁচকালো। সন্দেহ গলায় বলল-

-“ সত্যি জানিস না কে জানে? নাকি কাউকে বাঁচাতে চাচ্ছিস কোনটা?
ফাহাদ হকচকিয়ে গেলো। রাকিবের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ কে আপনি?
রাকিব হাসলো। অমায়িক সেই হাসি।
-“ চিনতে পারিস নি তাই না?
-“ না। কে আপনি?
-“ চিনতে না পারাটাই স্বাভাবিক। রাতুল কে মনে আছে?
রাতুলের নাম শুনে ভয় পেয়ে গেলো। চোক মুখে আতঙ্ক।

-“ ও তো ম’রে গেছে।
-“ ইয়েশশ ব্রাদার রাতুল ম’রে গেছে। আমি রাকিব হোসাইন।
-“ কোন রাকিব হোসাইন?
-“ যাকে মে’রেছিলিস প্ল্যান করে।
-“ ত..তুই রাতুল!
রাতুল হাসলো।

-“ ব..বেঁচে আছিস কি করে?
-“ সেটা না জানলেও চলবে। এখন বল তৃষা কোথায়।
-“ আমি সত্যি জানি না।
-“ তাহলে কি ও জানে?
ফারহান বুঝলো না ও বলতে কাকে মিন করছে।
-“ কার কথা বলছিস?

-“ তোদের মাস্টারমাইন্ডার সেই প্রতারক মহিলার কথা বলছি আমি। চিনেছিস এবার?
ফারহান স্তব্ধ হয়ে গেলো। রাতুল ওরফে রাকিব হোসাইন কি তাহলে জানে ওর কথা?
ফারহান কে চুপ থাকতে দেখে রাতুল মুচকি হেঁসে বলে-
-“ তোর নীরবতা কিন্তু প্রুফ করছে। ও জানে তাহলে তৃষা কোথায়?
ফারহান মাথা নত করে বলল-

-“ হুমম।
তুষার বুঝলো না। ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“কার কথা বলছিস তোরা। কে প্রতারক মহিলা?
রাতুল তুষার কে টেনে বাহিরে নিয়ে আসলো। তুষার হাত ছাড়িয়ে নিলো।

-“ আশ্চর্য বাহিরে নিয়ে আসলি কেনো। ও এখনও বলে নি আমার মেয়ে কোথায়। মৃত্যু যন্ত্রণা দিলে ঠিক বের হবে।
-“ ও সত্যি জানে না তুষার। যে জানে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস কর।
-“ কে জানে?
রাতুল হোসাইন তিন শব্দের একটা নাম বলল। নাম টা শুনে তুষার পিলে চমকে উঠলো। নামটা বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে। এই নাম টা শুনতে হবে কল্পনাতেও ভাবতে পারে নি। সেই ছোট্ট তৃষা কে কিডন্যাপ করে ওর লাভ টা কি?

অধরা স্কুল থেকে বাসায় এসে সোফায় গা এলিয়ে দিলো। গরমে নাজেহাল অবস্থা। শরীর ঘেমে-নেয়ে একাকার। চিত্রা কে ডাক দিয়ে পানি চাইলো। চিত্রা রান্না ঘরে তরকারি রাধছিল। শেষের পথে সেজন্য তরকারি টা নামিয়ে তারপর পানি এনে অধরার সামনে ধরে। অধরা বিরক্তি নিয়ে তাকায়। পানির গ্লাস টা নিয়ে বলে-

-“ আশ্চর্য এতক্ষণ লাগে পানি দিতে?
-“ আসলে আপু তরকারি বসিয়েছিলাম তো সেজন্য দেরি হলো।
অধরা পানি মুখে দিলো। পানি মুখে দিতেই চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল।
-“ ঠান্ডা পানি মিশাও নি কেনো?
-“ সরি আপু এখনই আনছি।
চিত্রা ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল এনে অধরার গ্লাসে ঢেলে দিলো। অধরা পানি খেলো। চিত্রা চলে যেতেই অধরা ডেকে উঠল। চিত্রা পিছু ফিরলো।

-“ আর কিছু লাগবে?
-“ নাহ্ সরি একটু রুড আচারন করে ফেলছি। আসলে মাথা টা ঠিক নেই গরমে।
-“ আমি বুঝতে পেরেছি আপু। আমারই ভুল ছিল,ঠান্ডা পানি মনে করে দিতে পারি নি।
অধরা উঠে দাঁড়ালো। চিত্রা কে জড়িয়ে ধরে বলে-

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ১৮

-“ তুমি এতোটা ভালো না হলেও পারতে চিত্রা।
চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। অধরা চিত্রা কে ছেড়ে উপরে উঠে চলে গেলো। চিত্রা অধরার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। কি বলে গেলো এসব অধরা?

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২০