আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৭

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৭
Raiha Zubair Ripte

-“ দেখো রাতুল ভাইয়া আমি তোমার কোনো কথা শুনছি না, তোমার জন্য মেয়ে দেখছি। অনেক হয়েছে আর না। তোমার উচিত নিজের জীবন গুছিয়ে নেওয়ার। কালই মেয়ে কে দেখতে যাবে। মেয়েটা আমারই ভার্সিটির ফ্রেন্ড। জব করায় এখনও বিয়ে করে নি।
রাতুল শান্ত চাহনি নিয়ে তাকালো তৃষ্ণার দিকে। পাশেই তুষার চিত্রা,তন্ময়, দোলন, রাফি বসে আছে।

-“ আমি কি বলেছি তৃষ্ণা তোমাকে আমার জন্য মেয়ে দেখতে? আজ বাদে কাল আমি ছেলে বিয়ে করাবো আর তুমি বলছো আমার নিজের জন্য মেয়ে দেখতে!
-“ তাতে কি? তুই কি সংসার করবি না?
তুষারের কথায় রাতুল বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। প্যান্টের পকেটে দু হাত গুঁজে বলল-
-“ সংসার আমি আর করতে চাই না। প্লিজ তোরা আমাকে এটা নিয়ে জোর করিস না। তাহলে কিন্তু আমি চলে যাবে বিদেশে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাতুল চলে গেলো। তৃষ্ণা অসহায় চোখে তাকালো তুষারের পানে।
-“ একটু রাজি করাও না ভাই।
-“ রাজি হবে না ও। তাই বলছি যেমন চলছে চলতে থাকুক। রাহার বিয়ে সেটায় মনোযোগ দে।
রাফি সোফায় বসে ভাবুক ভঙ্গিতে তুষার কে বলল-
-“ ব্রো তুমি কি একটা জিনিস নোটিস করেছো?
তুষার ভ্রু কুঁচকে বলল-

-“ কি?
-“ এই যে খাঁন বাড়িতে যখন বিয়ে লাগে তখন একের পর এক বিয়ের কথা হতেই থাকে৷
-“ তা যা বলেছিস। তোরা থাক আমাকে পার্টি অফিসে যেতে হবে। জামগড়ার রাস্তার পুননির্মাণ এর কাজ এসেছে। দেখতে যেতে হবে।
তুষার ও উঠে চলে গেলো। তন্ময় পরিবেশ টাকে পাল্টে দেওয়ার জন্য সকলের উদ্দেশ্যে বলল-

-“ তোমাদের না শপিং করা বাদ? তো চলো আজ শপিং এ যাওয়া যাক৷
চিত্রা সায় জানালো। তুলি,দোলন কে বলল রাহা কে নিয়ে রেডি হতে।
দোলন তুলি রাহা কে নিয়ে রেডি হয়। শপিংমলে এসেছে রাহা,রাহাত,সায়ান,তুলি,দোলন তন্ময়।
রাহাত, সায়ান কে তন্ময়ই আসতে বলেছে। বসুন্ধরা শপিং মলে এসেছে তারা। দোলন কে তন্ময় পছন্দ করে শাড়ি লেহেঙ্গা কিনে দেয়। রাহা নিজের পছন্দের শাড়ি লেহেঙ্গা কিনে। আর তুলি সে নিজের পছন্দের লেহেঙ্গা কিনলেও শাড়ি কিনার সময় সায়ান পছন্দ করে দেয়।

শপিং শেষে তারা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার খেয়ে চলে আসে বাসায়।
রাহাত বাসায় আসতেই দেখে রিয়াদ সোফায় গম্ভীর হয়ে বসে আছে। রাহাত রিয়াদ কে একবার দেখে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে রিয়াদ ডেকে উঠে –
-“ এই দাঁড়া।
রাহাত দাঁড়িয়ে যায়। পিছু ফিরে বলে-

-“ কিছু বলবে?
-“ আমার কার্ড নিছিস কেনো তুই?
-“ তোমার পুত্র বধূ কে বিয়ের শপিং করিয়ে দিতে।
-“ তোর নিজের কার্ড নেই হতচ্ছাড়া? বাপের টাকায় বউ কে শপিং করিয়ে দিস। চাকরি করে টাকা কি করছিস?
-“ আছে টাকা। তুমি এমন ভাবে বলছো মনে হয় তোমার টাকায় আমার হক নেই। আর শুনো আমি শুধু বউ কেই শপিং করিয়ে দেই নি পুরো খাঁন বাড়ির সকলকে করে দিয়েছু শপিং।
রিয়াদ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো তড়িৎ গতিতে। ছেলের দিকে হন্তদন্ত হয়ে এগিয়ে এসে বলে-

-“ কত টাকা খরচ করছিস তুই? আমাকে কি ফতুর বানানোর ধান্দা তোর?
-“ বেশি খরচ করি নি বাবা। মাত্র তিন লাখ পঞ্চান্ন হাজার টাকা।
রিয়াদের মাথায় হাত।
-“ হতচ্ছাড়া দে কার্ড দে। বিয়ে হওয়ার আগেই শ্বশুর বাড়ির জন্য এতো আদিখ্যেতা দেখাচ্ছিস বিয়ের পর তো আরো বেড়ে যাবে।

-“ তা যা বলেছো। শ্বশুর বাড়ি রসের হাড়ি। মন যুগিয়ে না চললে কি হয় বলো?
-“ ঘর জামাই হয়ে থাক গিয়ে।
-“ সমস্যা নেই আমার।
রিয়াদ চটে গেলো। রেগে রুমের দিকে হাঁটা দিতে দিতে বলে-
-“ কোন কুলক্ষণে তোর মতো হতচ্ছাড়া কে আল্লাহ আমার ঘরে দিলো! বাপ মায়ের থেকে ফুপির পরিবারের প্রতি দরদ বেশি।

-“ খালাও কিন্তু হয় এটাও বলো।
রিয়াদ পিছু ফিরে রাগী চোখে তাকিয়ে চলে গেলো।
রাহাত হেসে নিজের রুমে চলে গেলো।
দোলন শপিং মল থেকে এসে চিত্রা তৃষ্ণার হাতে হাতে রান্না ঘরে কাজ করছে। রাতের রান্না বসানো হয়েছে। তান তুলির কাছে পড়ছে। তুলির আসার পর তান এখন পড়তে বসে রোজ তুলির কাছে। রাফি,তুষার রাতুল সোফায় বসে টিভি দেখছে।

তন্ময় রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। চিত্রা দের রান্না শেষ হতেই খাবার টেবিলে খাবার সাজায়। তারপর সকল কে খেতে ডাক দেয়।
সবাই মিলে রাতের ডিনার একা সাথে খেয়ে নেয়। তারপর যে যার রুমে চলে যায়। দোলন চিত্রার সাথে এঁটো প্লেট ধুয়ে তারপর রুমে আসে। তন্ময় বিছানায় বসে দোলনের জন্য অপেক্ষা করছিলো। দোলন আসতেই তন্ময় দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। দোলনকে বলল-
-“ দরজা আটকে আসো।
দোলন দরজা আটকে তন্ময়ের কাছে আসলো। তন্ময় বসা থেকে উঠে একটা প্যাকেট দোলনের হাতে দিয়ে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো।

-“ এটা খেয়ে নাও।
দোলন প্যাকেট টা খুলে দেখে তার ভেতর জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল। দোলন লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেলো।পাতা থেকে একটা ট্যাবলেট বের করে খেয়ে নিলো। তন্ময় উঠে ঘরের বাতি নিভিয়ে দিলো।
দোলনের বুক উঠানামা করছে। বুঝতে পারছে আজ নতুন এক অনুভূতির সাথে বেশ ভালো ভাবেই পরিচিত হতে যাচ্ছে। তন্ময় দোলনের ঠিক পেছন টায় বসে দোলন কে জড়িয়ে ধরলো।
দোলন কেঁপে উঠলো। তন্ময় ঘাড়ে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে ফিসফিস করে বলে-

-“ একদম কাঁপা-কাঁপি করবে না দোলন। ইউ নোও আজ আমি কি করতে চাচ্ছি?
দোলন মাথা ঝাকালো। সে জানে তন্ময় আজ কি করতে চাচ্ছে।
তন্ময় এবার দোলনের শরীর থেকে ওড়না টা ফেলে দিলো। দোলন বরফের মতো জমে গেলো।তন্ময় দোলন কে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দোলনের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। দোলন তন্ময়ের শরীরে থাকা শার্ট টা খামচে ধরেছে। মিনিট পাঁচেক পর দোলনের ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে দোলনের পরনের কাপড় খুলতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো।

গলা,ঘাড়ে, উন্মুক্ত বুকের মধ্যিখানে অসংখ্য চুমু খেলো। দোলন তন্ময়ের শার্টের বোতাম খুলে দিলো। তন্ময় দোলন কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে দোলনের উপর উঠে দোলনের মাঝে ডুব দিলো। দোলন ফাস্ট টাইম ইন্টিমেট হওয়ায় প্রচুর ব্যাথা অনুভব করলো। তন্ময়ের নজরে আসলো সেটা। তন্ময় বেশ অনেকটাই ওয়াইল্ড হয়ে গিয়েছিল। দোলনের গালে হাতে দিয়ে বলে-

-“ খুব কষ্ট হচ্ছে? সরে যাই তাহলে?
দোলন না করলো। তন্ময় সরলো না। তবে সাবধানে সহিতে করতে লাগলো। মধ্য রাত অব্দি দোলনের মাঝে ডুবে থেকে সরে আসলো। দোলন লজ্জায় অন্য পাশ ফিরে শুয়ে আছে। তন্ময় পায়ের নিচ থেকে চাদর টেনে নিজেদের শরীরে নিয়ে দোলন কে টেনে আনলো কাছে। উন্মুক্ত পিঠে চুমু খেয়ে বলল-
-“ সব লজ্জা তো ভেঙে দিলাম বউ। তবুও কেনো এখন লজ্জা পাচ্ছ?
দোলন চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে তন্ময়ের বুকে মুখ গুঁজলো। তন্ময় দোলন কে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেয়ে বলল-

-“ গুড নাইট বউ।
খাঁন বাড়ি সাজানোর কাজ চলছে পুরোদমে। বাড়ির বড় মেয়ের বিয়ে বলে কথা। একদম ঝাঁক জমক আয়োজন করা হয়েছে। বাড়ির বাগানে স্টেজ সাজানো হয়েছে। সায়ান,সাব্বির, বিয়ে উপলক্ষে খাঁন বাড়িতেই থাকে।
স্টেজ সাজানোর লোকদের সায়ান সাব্বির এটা ওটা বলে দিচ্ছে কোথাও কি বাদ রয়ে গেছে। তুলি আজ পেস্ট কালারের কুর্তি পড়েছে। সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ সেজন্য রাহা দোলনের সাথে পার্লারে যাচ্ছে। সায়ান তখন বাগানেই। তুলিরা তার সামনে দিয়ে যেতেই সায়ান দোলনের দিকে তাকিয়ে বলে-

-“ কোথায় যাচ্ছেন ভাবি?
দোলন হাতে থাকা কাপড়ের প্যাকেট গুলো রাহার হাতে দিয়ে তাকে গাড়িতে গিয়ে বসতে বলে।
-“ এই তো পার্লারে ভাইয়া।
-“ ড্রাইভার আছে?
-“ হ্যাঁ।
দোলন চলে গেলো। তুলি পাশ কাটিয়ে চলে যেতেই সায়ান বলে উঠে –
-“ বেশি মেক-আপ করবেন না খবরদার।
তুলি সায়ানের দিকে তাকালো।

-“ কেনো?
-“ বেশি আটা ময়দা লাগালে মুখের ন্যাচরাল সৌন্দর্য হারিয়ে যায় সেজন্য।
তুলি কিছু বললো না চলে আসলো। চিত্রা আজ গায়ে হলুদে বাসন্তী কালার শাড়ি পড়েছে। তুষার সাদা পাঞ্জাবি। চিত্রা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে ব্যাস্ত আর তুষার খাটে বসে চিত্রা কে দেখতে ব্যাস্ত। কি মোহনীয় লাগছে তার বউ কে! কত গুলো বছর পর আবার সাজতে দেখলো তার বউ টাকে। চোখ জুড়িয়ে আসছে।
চিত্রা প্রোপার তৈরি হয়ে পেছন ফিরতেই তুষার কে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে –

-“ কি ব্যাপার এমপি মশাই এভাবে কি তাকিয়ে দেখছেন?
তুষার বসা থেকে উঠে চিত্রার কাছে এসে কপালে চুমু খেয়ে বলে-
-“ আমার ব্যাক্তিগত চাঁদ কে দেখলাম। কি অপরূপ দেখতে সে। এতো গুলো বছর পেড়িয়ে যাওয়ার পরও তার সৌন্দর্য একটু ও হ্রাস পায় নি। মনে হচ্ছে দিনকে দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
চিত্রা হেঁসে উঠলো।

লারা, ফারাহ্ এসেছে সন্ধ্যায় হলুদে। ফারাহ্ র চাকরি চলে যাওয়ার পর সে তার বাড়িতেই থাকে। মাস কয়েক পর মালদ্বীপ চলে যাবে। মিস্টার জনস এর অফিসে তার ভাইয়ের জায়গায় জব করবে৷ বেঁচে থাকতে হলে টাকার প্রয়োজন। তাই এক কর্ম চলে গেলে অন্য কর্ম খুঁজতে হয়।
লারা আসতে চাইছিলো না কিন্তু লিখনের বউ টায়রার জন্য না এসে পারলো না।

বাগানের এক প্রান্তে একাকী দাঁড়িয়ে আছে লারা। এসব গান বাজনা তার ভালো লাগছে না। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখছে আশেপাশের মানুষ গুলো কে। গলাও কেমন শুকিয়ে আসলো। তাই ওয়েটার কে ডেকে একটা লেমন জুশ চাইলো। ওয়েটার টা তার হাতে থাকা ট্রে থেকে লেমন জুশের গ্লাস টা লারার দিকে বাড়িয়ে দিলো। লারা গ্লাস টা নিয়ে মুখে তুলতেই পেছন থেকো কারো ধাক্কায় হাত থেকে গ্লাস টা নিচে পড়ে গেলো।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৬

লারা তাকালো মাটিতে পড়া সদ্য গ্লাস টার দিকে। রাগ তার সপ্তম আকাশে। একে তো মন মেজাজ ভালো না। তার উপর যখন একটু গলা টা কে ভেজানোর জন্য জুশ খেতে নিচ্ছিলো তখন এমন বিরক্তিকর ঘটনা!
লারা পেছন ফিরলো কিছু বলার জন্য। কিন্তু বলতে পারলো না। তার আগেই ব্লু কালারের পাঞ্জাবি পড়া এক পুরুষ দুঃখিত বলে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।

আমার শহরে তোমার আমন্ত্রণ সিজন ২ পরিচ্ছেদ ২ পর্ব ২৮