কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৬

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৬
নুজাইফা নূন

-” ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মিস্টার সৈকত।তোর খেলা শেষ। অনেক খেলা খেলেছিস তুই।প্রকৃতি ম্যামের খু’ন করেছিস।স্রোত কে কিডন্যাপ করেছিস।তোর পাপের পাল্লা অনেক ভারী হয়ে গেছে।এবার জেলের গরাদের পেছনে পচে পচে মরবি তুই।”

-” বদ্ধ রুমে পুরুষালি কণ্ঠস্বর শুনে যেন প্রাণ ফিরে পায় স্রোত।স্রোত তখন দৌড়ে পালানোর জন্য পা বাড়াতেই সৈকত ল্যাং মেরে স্রোত কে নিচে‌ ফেলে দিয়ে শার্টের বোতাম খুলতে শুরু করে।যা দেখে স্রোত পাশ থেকে একটা রড তুলে নিয়ে নিজের দিকে তাক করে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-” আপনি যদি আর এক পা আমার দিকে এগিয়ে আসেন।আমি কিন্তু নিজেকে শেষ করে দিবো।”
-” সৈকত তৎক্ষণাৎ স্রোতের হাত থেকে রড কেড়ে নিয়ে বললো , নিজেকে শেষ করে দিবে মানে কি ডার্লিং?তোমাকে বাঁচতে হবে।আমাকে সারাজীবন ভালবাসার জন্য হলেও তোমাকে বাঁচতে হবে।‌‌ তুমি আমার জন্য বাঁচবে সোনা।আমার জন্য।আমাকে ভালোবাসবে।”
-“সৈকতের কথা স্রোত তৎক্ষণাৎ সৈকতের মুখে এক দলা থুতু দিয়ে বললো, ছিঃ ছিঃ। তুই এতোটা নিকৃষ্ট জানতাম না আমি। তুই থুথু পাওয়ার ই যোগ্যতা রাখিস।”

-” স্রোতের এহেন কার্যে সৈকত যেন পশুতে পরিণত হলো।সৈকত নিজের গা থেকে শার্ট খুলে নিচে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে স্রোতের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।আর ঠিক তখনি নিলয় সৈকতের কপালে বন্দুক ঠেকিয়ে বললো,
-” ইউ আর আন্ডার অ্যারেস্ট মিস্টার সৈকত।তোর খেলা শেষ। অনেক খেলা খেলেছিস তুই।প্রকৃতি ম্যামের খু’ন করেছিস।স্রোত কে কিডন্যাপ করেছিস।তোর পাপের পাল্লা অনেক ভারী হয়ে গিয়েছে।এবার জেলের গরাদের পেছনে পচে পচে মরবি তুই।

আবদ্ধ স্রোত কে এই অবস্থায় দেখে কলিজা মোচড় দিয়ে উঠলো তার।আবদ্ধ দৌড়ে এসে সৈকত কে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে সৈকতের বুকের উপর বসে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে শুরু করলো।নিলয় এসে আবদ্ধ কে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু আবদ্ধের সেদিকে কোন খেয়াল নেই।আবদ্ধ সৈকত কে মারতে মারতে যখন দেখলো সৈকতের নাক মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে, তখন সৈকত কে নিচ থেকে উঠিয়ে বললো,

-” তুই আমার বন্ধুত্বের এই প্রতিদান দিলি সৈকত? কিভাবে পারলি এমন বিশ্বাসঘাতকতা করতে?”
-” বিশ্বাসঘাতকতা তুই আমার সাথে করেছিস।আমি স্রোত কে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসি। তুই স্রোত আর আমার মাঝে দেয়াল হয়ে দাড়িয়েছিস। তুই আমাকে ঠকিয়ে স্রোতের বাবা কে হাত করে স্রোত করে বিয়ে করেছিস।লজ্জা হ‌ওয়া উচিত তোর আবদ্ধ।”
-” একজন খু’নি’র মুখে নীতি কথা মানায় না সৈকত।”

-” আমি যে খু’ন করেছি তার কি প্রমাণ আছে তোর কাছে?আবার পুলিশ হায়ার করে এনেছিস আমাকে অ্যারেস্ট করাতে ।তো এটাও বল কোন প্রমাণের ভিত্তিতে তোর হায়ার করা পুলিশ আমাকে অ্যারেস্ট করবে?”
-” সৈকতের কথা শুনে নিলয় সৈকতের কলার চেপে ধরে বললো,

-” মাইন্ড ইউর ল্যাংগুয়েজ মিস্টার সৈকত। পুলিশ প্রমাণ ছাড়া কোনো কাজ করে না।প্রমাণ একটা নয়।অনেকগুলো প্রমাণ রয়েছে ।ক্রাইম সিনে আমি দুইটা ফুলের টব পেয়েছিলাম।যেখানে দুই টা টবেই র’ক্ত লেগে ছিলো। টব দুইটা ফরেনসিক ল্যাবে পাঠানো হয়েছিলো। ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী টবে প্রকৃতি ম্যামের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, র’ক্ত ছাড়াও আরো একজনের ফিঙ্গারপ্রিন্ট , র’ক্ত পাওয়া গিয়েছে।

আর আশ্চর্য করা বিষয় যে টবে পাওয়া ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে তোর ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করেছে। শুধু তাই নয়।টবে লেগে থাকা র’ক্তে’র ডিএন‌এ টেস্ট করে খুনিকে সনাক্ত করতে পেরেছি।এ ছাড়াও প্রকৃতি ম্যামের লা’শে’র পাশে আমি একটা ঘড়ি পেয়েছি।যেটা এই মুহূর্তে তোর হাতে নেই।তোকে অ্যারেস্ট করার জন্য এর চেয়ে বেশি প্রমাণের কোনো প্রয়োজন নেই।”

-” আমিই করেছি প্রকৃতি ম্যামের খু’ন ‌।কারণ সে আমার ভালোবাসা কে শেষ করে দিতে চেয়েছিলো।তাই আমিই তাকে শেষ করে দিয়েছি।”
-” একে ভালোবাসা বলে না সৈকত।ভালোবাসার মানুষ কে কেউ কখনো আঘাত করতে পারে না।তাকে কষ্ট দিতে গেলে আগে তার বুক কেঁপে উঠে। কিন্তু তুই স্রোতের সাথে অন্যায় করেছিস ।মেয়েটার দিকে একবার তাকিয়ে দেখ । কেমন চুপসে গেছে মেয়েটা।আমি তোর ব্যাপারে সবটা জানি সৈকত। তুই সেই ছোট বেলা থেকে আবদ্ধ কে হিংসা করিস। আবদ্ধ নিজের যোগ্যতা দিয়ে কলেজে চাকরি পায়‌।

কিন্তু তুই আবদ্ধের সফলতা মানতে পারিস নি। তুই তোর বাবার পাওয়ার প্রয়োগ করে স্রোত যেই কলেজে চাকরি করে তুই ও সেই কলেজে চাকরি নিস। কিন্তু তুই যতোই আবদ্ধ হবার চেষ্টা করিস না কেন তুই কখনো সফল হবি না।যে স্রোতের জন্য তুই খুনের মতো একটা জঘন্য অপরাধ করলি।সেই স্রোত আবদ্ধের বিবাহিত স্ত্রী।স্রোত আগে তোকে যতোটা সম্মান করতো ,এই ঘটনার পর স্রোত তোর মুখে থুথু দিবে।তুই আবেগের বশে তোর ভালোবাসা, ক্যারিয়ার সব শেষ করে দিলি।এখন বাকি জীবন জেলে কাটাতে হবে তোর। তখন দেখবি শ্বশুর বাড়ির ভাত পেটে পড়লে সব ভালোবাসা জানলা দিয়ে পালিয়ে যাবে।বাইরে ফোর্স দাঁড়িয়ে আছে। কোনো চালাকি করার চেষ্টা ভুলেও করবি না সৈকত।”

-” পৃথিবীতে এমন কোন জেল তৈরি হয় নি,যেখানে সৈকত কে আটকে রাখতে পারবে।আমি আবার ফিরে আসবো আমার ভালোবাসার কাছে।আসবোই।তখন আবদ্ধ আর তুই তোদের দুইজনকেই দেখে নিবো ।”
-” সেটা সময়ই বলে দিবে।আমি আপ্রাণ চেষ্টা করবো যাতে তোর মতো সাইকো যেনো কখনো জেল থেকে ছাড়া না পায় বলে নিলয় সৈকতের হাতে হাত কড়া পরিয়ে সৈকত কে টানতে টানতে বাইরে নিয়ে চলে এলো। সৈকতের যেতেই স্রোত এসে আবদ্ধ কে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললো,

-” আমি জানতাম আপনি আমাকে বাঁচাতে ঠিক আসবেন। খুব মিস করছিলাম আপনাকে।”
-” আবদ্ধ স্রোতের মুখ উঁচু করে বৃদ্ধা আঙ্গুল দিয়ে স্রোতের চোখের পানি মুছে দিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললো,
-” আই আ’ম সরি স্রোত।সবটা আমার জন্য‌ই হয়েছে।আমি যদি তোমাকে সাথে করে নিয়ে আসতাম। তাহলে তোমার সাথে এতো কিছু ঘটে যেতো না।কতো কষ্ট হয়েছে তোমার।মুখ খানা শুকিয়ে এতোটুকুন হয়ে গিয়েছে।সৈকত তোমার সাথে খারাপ কিছু করে নি তো স্রোত ?”

-” না স্যার।ঐ গুন্ডারা যখন আমাকে গাড়িতে তুলে অন্য কোথাও চালান করে দিতে চেয়েছিলো,তখন সৈকত স্যার আমাকে তাদের থেকে উদ্ধার করে।স্যার আমাকে বলেছিলো আপনি নাকি তাকে পাঠিয়েছিলেন।স্যার আমাকে আপনার কাছে নিয়ে যাওয়ার নাম করে এখানে নিয়ে আসে।প্রথম প্রথম আমার সাথে ভালো ব্যবহার করে। এরপর আমাকে বিয়ের কথা বলে।

পরে আমি তার প্রস্তাবে রাজি না হয় না দেখে আমাকে জোর করে বিয়ে করতে চায়।আর যখন আমি বিয়েতে ও রাজি হলাম না তখন আমাকে আঘাত করে।আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে স্রোত।আবদ্ধ‌‌ স্রোতের চোখের পানি মুছে স্রোত কে নিজের বক্ষ পিঞ্জরে মিশিয়ে নিয়ে চোখে মুখে অজস্র চুমু তে ভরিয়ে দিয়ে বললো,

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৫

-“তোমাকে আর কখনো আমি আমার থেকে দূরে সরে যেতে দিবো না স্রোত। একদম আমার কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে।সেখানে‌ তুমি একদম সুরক্ষিত থাকবে। সৈকতের মতো বীস্টের সাধ্য হবে না তোমাকে ছুঁয়ে দেওয়ার। তুমি আমার। একান্তই আমার।”

কলিজার ভেতর গেঁথে রাখবো তোমারে পর্ব ২৭