কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩১

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩১
লাবণ্য ইয়াসমিন

যার সূচনা আছে তার অন্ত আছে। তবে সূচনা যেভাবে হয় শেষটা সেভাবে হয়না। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবটা পরিবর্তন হয়ে যায়। আমরা মানুষ অতি আবেগী। আমাদের হৃদয় প্রিয়জনের কষ্টে ছটফট করে। আবার মাঝেমাঝে শত্রুর জন্য আমাদের চোখ থেকে আগুন ঝরে পড়ে। ভালো খারাপ আমাদের চরিত্রের মধ্যে মিশে আছে।

একজন মানুষ কখনও সবার কাছে ভালো হতে পারেনা। দিনশেষে কারো না কারো কাছে দোষী। জুবায়ের ফারুকী কথাগুলো আনমনে ভেবে চলেছে। বহুবছর পর বাবা মায়ের কথা মনে পড়ছে। কতটা নির্মম মৃ/ত্যু হয়েছিল তাদের ভাবলেই কষ্টে হৃদয় হাহাকার করে উঠে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কালো জাদুর চক্করে পুরো পরিবারটা আজ স্বজনদের থেকে দূরে। নিজ দেশ ছেড়ে বাইরে পড়ে থাকতে হচ্ছে। এখন মনে হয় না বাংলাদেশ নামক কোনো রাষ্ট্র ওদের নিজ ভূমি ছিল বলে। বাড়িতে বিয়ের আয়োজন চলছে। বন্ধু বান্ধবী বলতে কয়েকজন আছে। কিন্তু এখানকার সোসাইটির সঙ্গে সুলতান পরিবার বেশ জড়িয়ে পড়েছে। ব্যবসার জন্য হলেও অনেকের সঙ্গে পরিচয় আছে।

জুবায়ের ভেবেছিল সবাইকে নিমন্ত্রণ করবে কিন্তু কহিনুর নিষেধ করেছে। এতো শত আয়োজন কাদের জন্য ও সামান্য হলেও অনুমান করতে পারছে। অধরার ভয়ে মুখ শুকিয়ে আছে। বেচারী নতুন করে আর কাউকে হারাতে পারবে না। জুবায়ের বেলকনি থেকে কক্ষে ফিরে দেখলো অধরা বালিশে হেলান দিয়ে কিছু ভাবছে। জুবায়ের ওর পায়ের উপরে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। মেয়েটা কিছুটা চমকে উঠে নিজেকে সামলে নিয়ে ওর চুলের মধ্যে নিজের আঙুল পেচিয়ে আনমনে বলল,

আমার ভীষণ ভয় করছে। মেয়েটার মাথায় কি ঘুরছে কিছুই বলছে না। কিছুক্ষণ আগে জানিনা কিসের শরবত দিয়ে গেলো। ওটা খাওয়ার পর আমার চিন্তাটা আরও বেড়ে গেছে। গতকাল থেকে কারণে অকারণে রেগে যাচ্ছিলাম ওটা এখন আর নেই। আপনি জানেন ওই নতুন মেয়েদের মধ্যে আমি অদ্ভুত কিছু জিনিস লক্ষ করেছি।

ওদের চোখ দেখেছেন? কেমন অনুভূতিহীন আর পাপড়ি গুলো স্থির থাকে পলক পড়েনা। মৃ\ত মানুষের মতো। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি।
অধরার কথা শুনে জুবায়েরের ভাবান্তর হলোনা। কিছুটা উল্টে গিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে নিশ্বাস নিলো। কয়েক মূহুর্ত এভাবেই পার হলো। চুপচাপ দেখে অধরা পূণরায় জিঞ্জাসা করলো,

ঘুমিয়ে পড়েছেন?
জুবায়ের স্থিরভাবেই উত্তর দিলো,
চিন্তা করছো কেনো? যা হবে ভালোই হবে। চিন্তা করে শরীর খারাপ করোনা। নূর কথা দিয়েছে সব ঠিকঠাক করে দিবে। তুমি দিনদিন ভীতু হয়ে যাচ্ছ। অধরা বারি এমন ছিল না। আল্লাহর কাছে আমি শুকরিয়া জানাই তোমার মতো একজনকে আমার জন্য পাঠিয়েছেন। খুব ভয় হতো আমার নিজের বলতে কিছু ছিল না।

ছন্নছাড়া পরিবার আমার। যেখানে প্রতিটা মানুষের মধ্যে রহস্যের লীলাখেলা চলতো। ভরসা করার মতো একমাত্র তুমি ছিলে । এখন আরও কয়েকজন হয়েছে। সবটা তোমার জন্য। তুমি ছিলে বলেই না আমার অনূভুতির দুয়ার খুঁলেছিলো। ভোর হতে চলেছে ঘুমাতে হবে না?

অধরা উত্তর দিলোনা। সন্ধ্যা রাতে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছিলো। অধরা রেগে ছিল কিন্তু সেই রাগটা বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। জুবায়ের হতে দেয়নি। কহিনুর এসেছিল তারপর দুজনের মধ্যে ভাব জমে গেছে। ঝগড়া,মারামারি,খুনসুটি সেটাতো মানুষের চরিত্রগুণ। জীবনে সব কিছুর প্রয়োজন আছে। অধরা চোখ বন্ধ করে বলল,

আপনার কি আজ মন খারাপ? আমি অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করে আপনাকে কষ্ট দিয়েছি? আমি বুঝতে পারিনি আপনি কষ্ট পাবেন। সরি আমার ওরকম বলা উচিত হয়নি।
আমি ওসব ভাবছি না। খারাপ লাগছে কতগুলো বছর পরে আমি তোমার গায়ে হাত উঠিয়েছি। পুরুষ মানুষ বলেই হয়তো নিজের রাগ জিদ বউয়ের গায়ে হাত তুলে মিটিয়েছি। একবারও ভাবিনি তুমি আমার জন্য কি ছিলে। তুমি আমার জীবন না আসলে এতদিন আমার অস্তিত্ব কোথায় বিলীন হতো কে জানে। যতটা হারিয়েছি তোমাকে নিজের করে ততটাই সুখ পেয়েছি। আজ দেখো সব ভুলে গিয়ে তোমাকে ঠিকই থাপ্পড় দিয়ে দিলাম। ক্ষমা চাওয়ার মুখটাও নেই আমার।

আরে বাদ দিননা। আমি কিছু মনে করিনি। আর ওইটুকু থাপ্প/ড়ে আমার কিছু হয়নি। আপনি হাত উঠিয়েছেন ভেবেই কান্না পেয়েছিলো। এখন বুঝতে পেরেছি দোষ আমার ছিলো। যাইহোক ঘুমান আমার ঘুম আসছে না।
অধরা চোখ বন্ধ না করেই কথা বলছিলো। জুবায়ের মাথা উচু করে ওর দিকে চেয়ে উঠে বসলো। বালিশটা ঠিকঠাক করে উত্তর দিলো,

চোখ বন্ধ করো সকাল থেকে কয়েকদিন ঘুমের জন্য সময় পাবেনা। শরীর সুস্থ রাখতে ঘুমের প্রয়োজন। আসো।
জুবায়ের অপেক্ষা করলোনা। ওকে নিজের সঙ্গে টেনে চোখ বন্ধ করলো। ঘুম ওর নিজেরই আসবে কি সন্দেহ আছে। বাইরের বাগান থেকে অদ্ভুত কিছু আওয়াজ আসছে। এই সময় খারাপ কিছু ওই বাড়িতে প্রবেশ করতে পারেনা। তবে কে এমন করছে দেখার আগ্রহ থাকলেও ইচ্ছে করছে না। নূর আছে ওর উপরে ভরসা রেখেই নিজেকে শান্ত রাখলো।

বাগান থেকে কহিনুরের কক্ষে ফিরতেই সাঈদ হতভম্ভ হলো। পাথর ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। লোকটার সামনে পড়বেনা ভেবে কত লুকোচুরি করেছে তবুও আজ পড়তে হলো। কহিনুর নিজের কক্ষে নেই। সাঈদ মিনমিনে কণ্ঠে সালাম দিয়ে বলল,

আপনি এখানে?
পাথর তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো। তেড়ে এসে উত্তর দিলো,
বাগানে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়িয়ে মধু খাওয়া হচ্ছে তাইনা? নূর কোথায়? আমার বউয়ের যদি কিছু হয় তোমাকে আমি শূণ্যে ঝুলিয়ে রাখবো দেখে নিও। এই তুমি কহিনুরের রক্ষক? আল্লাহ !এই তোমার মতো মাথামোটা আমি জীবনে দেখিনি।
সাঈদ ভড়কে গেলো এমন ব্যবহারে। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে নিজেকে সামলে নিয়ে বলল,

নূর আমাকে কাজে পাঠিয়েছিলো। ও বাইরে না বাড়িতেই আছে। হয়তো নিচের দিকে। আর ফুলের মধু আমি পছন্দ করিনা। সেখানে নানারকম পোকামাকড় থাকে। কাবাব বা হাড্ডি হলে অসুবিধা নেই।
সাঈদ শেষে কথাগুলো লজ্জা লজ্জা মুখ নিয়ে বলল। পাথর ভ্রু কুচকে ওর পা থেকে মাথা অবধি স্কান করছে। ছেলেটাকে ওর সহ্য হয়না। সব সময় নূরের সঙ্গে চিপকে থাকে। ভাবলে রাগ হয় আবার যদি না থাকে তখন চিন্তাও হয়। উভয় দিকেই বিপদ। সব মিলিয়ে অস্বস্তিদায়ক হৃদয় পোড়ানো অনুভূতি। নির্জনতা কাটিয়ে পাথর মুখ খুলল,

টেবিলের উপরে তোমার প্রিয় কাবাব আছে দেখে নাও। খাওয়া শেষ হলে চুপচাপ ঘুমাবে। আমি নূরের সঙ্গে আছি ঠিক আছে? আর শুনো দক্ষিণের জঙ্গলটা একটু দেখে নিবে। ওখানে কারো উপস্থিতি অনুভব করেছি।
সাঈদ খুশীতে নেচে উঠলো। ইতিমধ্যে খাবারের গন্ধে পেটের ক্ষুধা হাজার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগে থেকেই গন্ধ পাচ্ছিলো। ও আর অপেক্ষা করলোনা।

তড়িঘড়ি করে খাবারের উপরে হামলে পড়লো।পাথর কয়েক সেকেন্ড ওর দিকে চেয়ে বাইরে আসলো। রেস্টুরেন্ট থেকে আসার সময় সাঈদের জন্য খাবার আনবে না ভেবেও কি মনে হলো নিয়ে এসেছে। ছেলেটা খারাপ না ভালো। একটাই দোষ ওর বউয়ের সঙ্গে চিপকে থাকে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতে পাথর ড্রয়িং রুমে এসে থামলো। বাড়িময় আবছা অন্ধকার বিরাজ করছে।

পাথর আশেপাশে তাঁকিয়ে কহিনুরের খোঁজ করে ব্যার্থ হলো। কিচেনের দিকে যেতে গিয়ে থমকে গেলো। অন্ধকারে জ্বলজ্বলে একজোড়া চোখ ওর দিকে চেয়ে আছে। পাথরের দৃষ্টি সেখানেই পতিত হলো। দৃষ্টির ভুল নেই। সোফায় একজন সুন্দরী রমনী শাড়ির আচল ছড়িয়ে বসে আছে। হালকা বাদামী কেশগুচ্ছ হাওয়ায় উড়ছে। পাথর এক’পা দু’পা করে সেদিকে এগিয়ে এসে থমকে গেলো। এই মুখটা ওর অচেনা না। কতগুলো বছর পূর্বে দেখেছিলো এখনও মনে আছে কিন্তু ও এখানে কি করছে? পাথর মহিলার সামনে গিয়ে মৃদু কণ্ঠে আওয়াজ করলো,

চন্দ্র !
মূহুর্তের মধ্যে রিনরিনে হাসির আওয়াজ চার দেয়ালের মধ্যে ছড়িয়ে গেলো। প্রতিধ্বনি হয়ে বারবার ফিরে এসে কর্ণকুণ্ডল ভারি করে তুলল। পাথরের চোখে কৌতূহল খেলা করছে। কি হচ্ছে সবটা কেমন এলোমেলো লাগছে। সবটা নিছক কল্পনা বা মনের ভুল মনে হচ্ছে। কিন্তু ওকে আরও খানিকটা চমকে দিয়ে চন্দ্র মুখ খুলল,

অর্ধমানবেরা বুঝি সামান্য পিশাচ রমণীদেরকে দেখে ভয় পেয়ে চমকে যায়? ভয় নেই আমি তোমার নূরের ক্ষতি করতে আসিনি। এসেছি সাহায্য করতে। নিজের লোভে আজ আমি অভিশপ্ত তাই আসমান জমিনের মাঝামাঝিতে ঝুলে আছি। অতৃপ্ত আত্মা হয়ে ঘুরছি। একটা সুযোগ পেয়েছি এখানে আসার তাই ভাবলাম যদি তোমাদের সাহায্য করতে পারি।
পাথর নড়েচড়ে উঠলো। চন্দ্রকে বিশ্বাস করতে ভয় হচ্ছে। চন্দ্রের আগেকার রেকর্ড ভয়ংকর ছিলো। সেসব ভেবেই কেমন অস্থির লাগছে সেটা হয়তো মহিলা বুঝতে পারলো তাই পূণরায় বলল,

আমি পাপি মানছি।কিন্তু ভালোবাসার জন্য মানুষ কতকিছু করে। ভালোবাসার মানুষকে একান্ত নিজের করতে চাওয়া কি দোষের?যদিও অন্যায় পথে চাওয়া দোষের সবটা বুঝি আমি। মানুষ যখন কিছু চেয়েও পাইনা তখন খড়কুটোকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চাই। আমিও সেটাই করেছিলাম। যাইহোক সেসব অতীত। বর্তমানে আমি কালোজাদুর অভিশাপ থেকে সুলতান পরিবারকে মুক্ত করতে চাই। তুমি সাহায্য করো আমাকে। কথা দিচ্ছি আর ফিরে আসবোনা।
পাথর সাহস পেলো চন্দ্রের কথা শুনে। গলা ঝেড়ে উত্তর দিলো,

বলুন কি করতে হবে। আপনার হাতে বলি হওয়া মেয়েগুলো কিন্তু ফিরে এসেছে এই বিষয়ে আপনার মতামত কি? ওরা প্রতিশোধের নেশায় উন্মাদগ্রস্ত হয়ে সাধারণ মানুষের ক্ষতি করছে। এই বাড়ি অবধি চলে এসেছে। আপনি বলুন কিভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে।
চন্দ্র মাথা নিচু করে ফেলল কিছু পা সামনে আসলে লজ্জায় পড়তে হয়। সোফা থেকে উঠে এসে একটা ডায়রি এগিয়ে দিয়ে বলল,

এটাতে সব লেখা আছে। ওদের নামে জানাজা পড়িয়ে দাও। লা/শ দাফন হয়নি যেহেতু পচে শরীর নষ্ট হয়ে গেছে তবুও জানাজা পড়ালেই হবে। তোমার বোন অরিত্রীর শরীর দখল করেছে যেভাবেই হোক ওই শরীরটা খুঁজে লাশ দাফ\ন করে দাও। সূর্যাস্ত পযর্ন্ত দিনের বেলা লাশের মধ্যে ও প্রবেশ করতে পারেনা। খান ভিলার স্টোর রুমে ওকে পাবে। বাকীটা এটা পড়লেই জানতে পারবে। মনে রেখো কালোজাদু থেকে মুক্ত হলেই তুমি অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। সঙ্গে কহিনুরের শক্তি বিলুপ্ত হবে। সাধারণ জীবন পাবে তার আগে না। কালোজাদুর শয়/তান বুঝতে পেরেছে ওর দিন ফুরিয়ে আসছে তাই সে বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আশাকরি সবটা সামলাতে পারবে।

পাথর মাথা নাড়লো। চন্দ্রকে ওর পছন্দ না তবুও আজ খারাপ লাগছে না। ভালোবাসার জন্য মানুষ কতটা বেপরোয়া হতে পারে এই চন্দ্র তার বড় উদাহরণ। ওর থেকে বিদায় নিয়ে চন্দ্র চলে গেলো। পাথর বইটা নিজের পকেটে রেখে উঠে আসলো। কহিনুর কক্ষে ফিরেছে। বিছানায় উপুড় হয়ে ল্যাপটপে মুখ গুজে কিছু একটা করছে। মেয়েটা ভুতের মতো হয়েছে। পাথর ওর পাশে গিয়ে শুতে পড়লো। ল্যাপটপের দিকে দৃষ্টি রেখে জিঞ্জাসা করলো,

কি করছো?
কহিনুর দৃষ্টি সরালোনা। সেভাবে উত্তর দিলো,
মাহীম রিজুয়ানকে শপিংমলের বন্ধ কক্ষে আটকে রেখে এসেছি। দেখলাম বেচারা ঠিক আছে কিনা। আমি সামান্য দোষে মানুষের ক্ষতি করতে চাইনা। লোভ সকলের মধ্যেই আছে। আল্লাহ আছেন শাস্তি দেয়ার জন্য। আমি নিজেকে বাঁচাতে যেটুকু প্রয়োজন সেটুকুই করবো।
পাথর ল্যাপটপ বন্ধ করে ওকে নিজের সঙ্গে টেনে নিয়ে বলল,

সময়টা একান্ত তোমার আমার বাকিটা মূল্যহীন। আপাতত আমাকে নিয়েই ভাবো। আমাকে দেখো। আফসোস হয় এতোটা সুদর্শন হয়ে কি লাভ হলো বউ পাত্তা দেয়না। বুকে ব্যাথা হয়।
কহিনুর ভ্রু কুচকে ফেলল। পাথরের বুঝে উঠার আগেই ওর বুকের উপরে হামলে পড়লো। ছোটছোট দাঁতের অগ্রভাগ দ্বারা কমড় বসিয়ে দিয়ে বলল,

এবার ঠিক আছে।অহেতুক আমাকে দোষারোপ করা না?
পাথর ক্ষতস্থানে হাত বুলিয়ে উত্তর দিলো,
সত্যি এবার ঠিক আছে। আমি ধণ্য হলাম। ক্ষতচিহ্ন এঁকে দিয়েছো তবুও সুখের যে তোমার কোমল ওষ্ঠদ্বয়ের ছোঁয়াতে আমার শরীর সিক্ত হলো।

তাহলে আর থেমে আছি কেনো? এমন হাজারটা ক্ষতচিহ্ন এঁকে ফেলি?
কহিনুর পূণরায় কামড় দিতে গেলো কিন্তু পারলোনা। পাথর আটকে ধরলো। ওর মুখটা নিজের হাতের তালুতে নিয়ে বলল,
পাগলামী বন্ধ করো। আমি ক্ষেপলে তুমি পালানোর রাস্তা পাবেনা। চন্দ্র কিউটি এসেছিলো। তোমার জামাইয়ের সঙ্গে খাতির করতে।
কহিনুর শান্ত হয়ে গেলো। নিজেকে সামলে উঠে বসলো। কৌতূহলী হয়ে জিঞ্জাসা করলো,

উনি আসবেন এটা বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু আপনার সঙ্গে দেখা করবেন এটা ভাবিনি। হঠাৎ কি মনে করে? কোনো তথ্য বা কিছু দিয়েছেন?
পাথর পকেট থেকে ডায়রি বের করে সামনে রাখলো। কহিনুর সেটা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করলো। বহুদিন আগেকার পুলাতন একটা বই বা ডায়রী বললে ভালো হবে। ডায়রীর উপরে শয়তানের ছবি অঙ্কন করা। মেয়ে বা ছেলে তেমন কিছু বোঝা যাচ্ছে না। শরীরে অদ্ভুত ধরণের অলঙ্করণদি সঙ্গে লম্বা চুল। কপালের মাঝামাঝিতে শিং। পায়ের কাছে অর্ধনগ্ন রমনীর শরীর পড়ে আছে। পাথর পৃষ্ঠা উল্টাতে চাইলো কিন্তু কহিনুর তারে বাঁধা দিলো। বলল,

এটা এভাবে খুলবে না।
কিন্তু কেনো? অপেন না হলে কিউটি দিবে কেনো? আমাকে দাও খুঁলে দেখি।
পাথর ওর উত্তরের আশা করলোনা। ঝটপট খুলতে চাইলো কিন্তু হলোনা। মনে হচ্ছে অদৃশ্য কোনো শক্তি আটকে রেখেছে। কহিনুর মৃদু হেসে ওর থেকে ডায়রীটা নিয়ে চোখ বন্ধ করলো।

এক হাতের তালুতে বই রেখে অন্য হাতের সাহায্য উপরে দিকে কিছু একটা আঁকার চেষ্টা করলো। কয়েক মূহুর্ত পরেই ডায়রী শূন্যে ভাসতে শুরু করলো। চারদিকে আলোর রশ্মি ছড়িয়ে প্রথম পৃষ্ঠা খুলে গেলো সেই সঙ্গে শূণ্যের মাঝে বড় বড় অক্ষরে লেখা উঠতে শুরু করলো। অদৃশ্য থেকে পুরুষালী গমগমে আওয়াজ নির্গত হচ্ছে। পাথর অবাক হয়ে দেখছে। কহিনুর মোটামুটি জানতো এমন হবে তাই ও চুপচাপ আছে। উচ্চারিত হচ্ছে,

” বধির বোবার উষ্ণ রুধির ধ্বংস করবে পাপের প্রাচীর। ছিন্ন মস্তক চন্দ্র নিশী শূণ্য হবে জাদুর প্রকোপ। ছলচাতুরি ছলাকলা তাল হারিয়ে দিশেহারা। ভুলে ভরা চন্দ্র নিশী নিদ্রামগ্ন শত্রুপক্ষ। তবে একান্তরূপে যেতে হবে সিন্ধু পাড়ে।”
আবারও ধাঁধা?পাথর বিরক্ত হয়ে বিড়বিড় করে বলল,

আরে এতো ধাঁধার কি আছে? কিউটি সাহায্য করার নামে বিপদে ফেলে দিলো। এতগুলো কঠিন কঠিন শব্দ ব্যবহারের মানে কি?
কহিনুর গম্ভীর হয়ে আছে। এই মূহুর্তে সাঈদের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন। তাই চোখ বন্ধ করে উত্তর দিলো,

রুধির অর্থ র*ক্ত। ওখানে আমার উষ্ণ র*ক্তের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
পাথর চমকে উঠলো। রক্ত চেয়েছে মানে কি? কখনও না। এমন হবে না। এই জন্য চন্দ্র ওর সঙ্গে দেখা করেছে যাতে কহিনুরকে বাঁধা দিতে না পারে। পাথর চন্দ্রের নামে ভয়ঙ্কর একটা গালি দিয়ে বসলো। বারবার মহিলা আসে আর ঝড় তুলে চলে যায়। পাথর কহিনুরের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,

তুমি একদম যাবেনা। যা ইচ্ছে হয়ে যাক তবুও যাবেনা। অন্য কিছু করবো। আল্লাহ ঠিক রাস্তা দেখাবেন। যায় বলো আমি কিছুতেই অনুমতি দিব না নূর। স্বামী অনুমতি ছাড়া তুমি প্রাণনাশক বিপদের দিকে যেতে পারবেনা। একবার ও যদি তোমার রক্তের গন্ধ অনুভব করে তবে আর ছাড়বে না। সবটা শুষে নিবে। যতক্ষণ প্রাণ থাকবে ততক্ষন থামবেনা।কহিনূর পাথরটাকে ওদের প্রয়োজন। বোঝার চেষ্টা করো।
কহিনুরের মধ্যে ভয়ের চিহ্ন পযর্ন্ত নেই। কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনে উত্তর দিলো,

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩০

পুরো নাম ইমরোজ খান পাথর।আচ্ছা আপনার নামকরণের সময় পাথর কেনো রাখা হয়েছিলো? কেমন অদ্ভুত না? পাথর কারো নাম হয়? কৌতূহল হয়না?
পাথর মাথা নাড়ালো। কৌতূহল হয়না তেমন না। খালামনির থেকে শুনেছিলো বিশেষ কোনো কারণে ওর পাথর নামকরণ করা হয়েছিলো কিন্তু সেটা কি ছিলো ওর জানা নেই।মনে হলো তবে কি কহিনুরের সঙ্গে এই নামের কোনো সংযোগ আছে?

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩২