কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩০

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩০
লাবণ্য ইয়াসমিন

নির্জন রাত্রি, কহিনুর চুপচাপ বেলকনিতে বসে আছে।পাশে সাঈদ মুখে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। দুদিন হচ্ছে পাথরের খোঁজ নেই। বাড়ির পরিবেশ মোটামুটি ঠান্ডা। মাহিম রিজুয়ান বিয়ের জন্য প্রস্তুত। লোকটা এটা ওটার ছুতোয় প্রায় দিন আসা যাওয়া করছে। কহিনুর দেখা করেনা বাইরের লোকদের সঙ্গে। কিন্তু সকালে শপিং করতে মাহিমের সঙ্গে যেতে হবে। রিজু শিকদার ফোন করেছিলেন। কোনো ছাড় নেই। কহিনুর শপিং বা বাইরে জগত সম্পর্কে উদাসীন। কখনও নিজে গিয়ে শপিং করেছে বলে মনে পড়ে না। সাঈদ হঠাৎ লাফ দিয়ে রেলিং এর উপর উঠে বসে পা নাচিয়ে বলল,

জনাব হয়তো কষ্ট পেয়েছে তোমার ব্যবহারে । কি দরকার ছিল মাহিম রিজুয়ানকে বিয়ে করতে চাওয়ার?
কহিনুর হামি ছেড়ে উত্তর দিলো,
তোমার জনাবের দুঃখ এতোটা সস্তা না সাঈদ যে অকারণে দুঃখ পাবেন। তোমার দেখি উনার জন্য প্রচুর চিন্তা। কিন্তু আফসোস তোমাকে সে পছন্দ করে না। তোমার নাম শুনলেই জ্বলে উঠে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ওটাতো মুখের কথা। আমি যখন তোমার সঙ্গে থাকি উনি ভরসা পান। আমাকে বিশ্বাস করে বলেই না শান্ত থাকেন।উনি তোমার সঙ্গ খুব একটা পাননি তাই খানিকটা আমাকে হিংসা করেন। প্রিয় মানুষটার সঙ্গ পেতে ছটফট করেন তুমি সেসব বুঝবে না।
কহিনুর কিছু একটা ভেবে বলল,

আচ্ছা সাঈদ তুমি বিয়ে করবে না? সারাজীবন আমার সঙ্গে থাকলেতো তোমার বিয়ে সংসার কিছুই হবে না। তোমার উপযুক্ত পাত্রীর খোঁজ করতে হলে হেকিম সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। আমি এদিকটা সামলে নিয়ে খুব ধুমধাম করে তোমার বিয়ে দিব ভাবছি।
কহিনুরের কথা শুনে সাঈদ ভ্রু কুচকে ফেলল। মেয়েটা একটু বেশি বুঝে। বিয়ের কি প্রয়োজন আছে ওর মাথায় আসেনা তাই কপট রাগ দেখিয়ে বলল,

একদম আমার বিয়ে নিয়ে কিছু বলবে না নূর। আমি ওসব করব না। মেয়েদের ভীষণ ভয় পাই আমি। মেয়েদের মন জার্মানির আবহমণ্ডলের থেকেও ভয়ংকর। ক্ষণেক্ষণে পরিবর্তন হয়।কখন কোন মুডে চলে যায় ওসব বোঝা আমার কর্ম না। আমি পিউর সিঙ্গেল আছি আর ভবিষ্যতেও থাকব। আমার সুখ তোমার সহ্য হচ্ছে না?

আহা রাগ করছো কেনো? তোমার আম্মি থাকলেও অতি জরুরি এই ফরজ কাজটা উনি দ্রুত করিয়ে দিতেন।আমার একটা দায়িত্ব আছে তোমার প্রতি। তাছাড়া যখন কহিনুরের শক্তি বিলুপ্ত হবে তখন তুমি স্বাধীন হয়ে যাবে। তখন তোমার একটা পরিবারের প্রয়োজন পড়বে।

তোমার পরিবার কি আমার পরিবার নয়? তুমি আমাকে আপন ভাবোনা নূর? আমি যে তোমাকে নিজের ভাবি। দায়িত্ব কর্তব্য সবকিছুর উদ্ধে তুমি।
পারব না তোমাদের ছেড়ে চলে যেতে। তোমরা ছাড়া কে আছে আমার?
কহিনুর অমায়িক হাসলো। সাঈদ ছেলেটাকে ওর ভীষণ পছন্দ। ও সঙ্গে না থাকলে বিপদের শেষ ছিল না। রাত হলে নিজের ছায়াও সঙ্গ ছেড়ে দেয় অথচ সাঈদ কখনও ওকে ফেলে যায়না। বেচারা সারারাত জানালায় বা বলকনির রেলিং ঝুলে বসে থাকে। আহার নিদ্রা ফেলে নিজের দায়িত্ব পালন করে। কহিনুর সেটা ভেবে পাশ থেকে খাবারের প্যাকেট নিয়ে সাঈদের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

এটা তোমার উপহার দৃষ্টিকে উদ্ধার করার জন্য। মেয়েটা অবুঝ নরম হৃদয়ের। আজ থেকে ওর উপরে নজর রাখবে। ঝামেলা মিটে গেলে আমি খুব দ্রুত বোনের বিয়ে দিব। একজন উপযুক্ত পাত্রের খোঁজ শুরু করতে হবে
সাঈদ খাবার দেখে লাফিয়ে পড়লো। কহিনুরের বাকি কথা কান অবধি পৌঁছালোনা। কাবাব সঙ্গে লোভনীয় সুস্বাদু মিষ্টি । কহিনুর ওর দিকে চেয়ে নিজের বিছানায় ফিরে আসলো। ঘুমানোর প্রয়োজন। সাঈদ তৃপ্তি নিয়ে আহার গ্রহণে ব্যস্ত। ভূমিকম্প হলেও খাবার ফেলে নড়াচড়া করবে না।

বালিশে হেলাল নিয়ে উপরের দিকে চেয়ে আছে অধরা। জুবায়ের ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে হাতমুখ মুছতে মুছতে বলল,
ব্যাপারটা কি বলবে? উপরের দিকে চেয়ে কি দেখো? বরতো এদিকে।
অধরা ওপরের দিকে চেয়েই উত্তর দিলো,
নজর ওপরে কিন্তু হৃদয় অন্যখানে। আপনাকে দিয়ে কাজের কাজ কিছুই হবে না। ভাবছি বর চেঞ্জ করবো?
জুবায়ের পাত্তা দিলোনা বরং দাঁত বের করে হেসে উত্তর দিলো,

সুলতান জুবায়ের ফারুকী যথেষ্ট স্মার্ট বউ চলে গেলে আবার নতুন একটা আসবে। তুমি যদি সেটা মানতে পারো তবে আমার কি? ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ধুমধাম করে আবার বিয়ের পিড়িতে বসবো। নতুন বউ,নতুন আদর যত্ন আহা ভাবলেই কেমন সুখ সুখ লাগে।
জুবায়েরের বলা কথাটা যেনো কাল হলো। অধরা ভ্রুকুটি করে ওষ্ঠ ফুলিয়ে ফেলল। রাগে ফুলে উঠে বলল,

জিমের সেই লোকটা কিন্তু বাড়িতে খোঁজ পাঠিয়েছে আমি সিগন্যাল দিলেই হাজির হবে। প্রথমে আপনার সঙ্গে ডিভোর্স,
অধরা বাকীটা বলতে পারলোনা। জুবায়ের ওর মুখে হালকা করে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো। মূহুর্ত্তের মধ্যে ঘটে গেলো অঘটন। অধরা শব্দ করে কেঁদে উঠলো। জুবায়ের বউয়ের গায়ে হাত উঠিয়ে হতভম্ভ হয়ে গেলো।

ডিভোর্স নিয়ে আলোচনা ওর কাছে প্রচণ্ড তিক্ত লেগেছে। দুজনের মধ্যে দুষ্টুমি চলছিলো ঠিক আছে তাই বলে ডিভোর্স? তাছাড়া জুবায়ের মনে মনে প্রচণ্ড জেলাস বউয়ের মুখে অন্যলোকের নাম শুনে তারমধ্যে আবার ডিভোর্স দিবে বলছে। জুবায়ের ভাবতে পারছে না। মেজাজ তরতর করে খারাপ হচ্ছে। অধরা শব্দহীন কাঁদছে। এতো বছর পরে লোকটা ওকে কিভাবে মারতে পারলো বিশ্বাস হচ্ছে না। পরিস্থিতি হাতের বাইরে দেখে জুবায়ের ওকে নিজের দিকে জোর করে টেনে নিয়ে উত্তেজিত হয়ে বলল,

খুব সরি,প্লিজ কেঁদনা। আমি ইচ্ছে করে এমন করিনি। তুমি আজেবাজে কথা বলছিলে আমার রাগ উঠে গেছে। তুমিতো জানতে আমার রাগ বেশি তবুও রাগও। তোমাকে ছেড়ে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব বলো? পালাতে চাইলে প্রাণে মে/রে ফেলব। তারপর সেই লা/শের সঙ্গে সংসার করবো। সুলতান জুবায়ের ফারুকী এক কথার মানুষ।
অধরা নাকি সুরে নাক টেনে উত্তর দিলো,

এতো বড় বড় ছেলেমেয়েদের সামনে আপনি আমাকে মারলেন? আমি ওদেরকে বলে দিব। বাবা মা নেই তাতে কি? অধরা বারির থাকার জায়গার অভাব হবে না। আমি ছেলেমেয়ে নিয়ে চলে যাব। আপনি মারলেন আমাকে।
জুবায়ের পড়লো মহা বিপদে। সারাদিন পর ভেবেছিলো শান্তিতে ঘুমাবে কিন্তু বউয়ের যন্ত্রণায় সব লাটে। কেনো যে হালকা পাতলা থাপ্প/ড় দিতে গেলো। এইটুকু থা/প্পড়ে কিছু হয়নাকি ওর জানা নেই কিন্তু কান্নার যেই গতি যেকোনো সময় সুনামী বয়ে যাবে না থামালে। জুবায়ের কন্ঠ নামিয়ে বলল,

এই সরিতো। আচ্ছা চলো ডাক্তারের কাছে যায়। বলবো ডাক্তার আমি মহাপাপি। বউকে মেরেছি আমাকে জেলে দেন,তার আগে বউয়ের চিকিৎসা দিন। মুখের সঙ্গে মস্তিষ্কের চিকিৎসাটা হলে আরও ভালো হয়।
মজা করছেন আমার সঙ্গে? থাকবো না আপনার সঙ্গে। আপনি পুরোটাই মাথামোটা। আজ অফিসের এক ছেলেকে মেরেছেন। বাচ্চা ছেলেটা এসে সেকি কান্নাকাটি। ভুল করে ফাইল অদলবদল করেছে ইচ্ছে করে করেনি। হালকা ধমক দিতে পারতেন। থা/প্পড় দেওয়া আপনার মুদ্রা দোষে পরিণত হয়েছে।
জুবায়ের কিছু একটা ভেবে বলল,

ও তোমার কাছে নালিশ করতে এসেছিলো? অদ্ভুত ব্যাপার। ঝামেলা যেখানে হয়েছে সেখানে নালিশ দিবে তানা বস এর বউকে কেনো মাঝখানে টানবে? ওই ছেলের মাথায় সত্যি সমস্যা। কতবার বলেছি কাজ শেষ করে ফাইল জমা দেবার পূর্বে পূনরায় দেখে নিবে কিন্তু না। আচ্ছা তুমি ওর জন্য রেগে ছিলে আমার উপরে?
অধরা মাথা নাড়ালো। জোবায়ের দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বিছানায় হাত পা মেলে শুয়ে পড়লো। এক হাতে অধরাকে টেনে পাশে ফেলে দিয়ে বলল,

বউ ঘুমাও, তোমার মাথা গরম আছে প্রথমে বুঝতে পারিনি। বুঝতে পারলে কি আর সখ করে নিজের বিপদ ডেকে আনি বলো? ঘুমাও এখন।
অধরা গাল ফুলিয়ে চুপচাপ চোখ বন্ধ করলো। অযথা রাগ হচ্ছে সকাল থেকে। জুবায়েরকে সহ্য হচ্ছে না। কেন হচ্ছে না জানা নেই। কাজের মেয়ে দুটো বেশ কাজকর্ম করছে। সকাল থেকে দুবার অধরাকে স্পেশাল শরবত তৈরী করে দিয়েছিল। অধরা ওদের উপরে প্রচণ্ড খুশী। সিদ্ধান্ত নিয়েছে কিচেনের দায়িত্ব ওদের হাতে তুলে দিয়ে কিছুদিন শান্তিতে থাকবে।

শপিংমলের চতুর্থ ফ্লোরে বিরক্তর চাহুনিতে দাঁড়িয়ে আছে কহিনুর। মাহিম রিজুয়ানের সঙ্গে শপিং করতে এসেছে সকাল সকাল। এখন অবধি একটাও পোশাক পছন্দ করতে পারেনি। বিয়ের শাড়ি লেহেঙ্গা বা গাউন সেসব এখানে পাওয়া যাচ্ছে কিন্তু মন মতো হচ্ছে না। কহিনুর বলেছিল যেকোনো একটা তুলে নিতে। কিন্তু শোনেনি সেই থেকে মাহিমের ওপরে ও বিরক্ত। সাঈদ এদিক ওদিক ঘুরঘুর করছে। ওর সহজাতীয় অনেকেই শপিংমলে আছে আলাপ করছে। হঠাৎ কহিনুরের ধ্যান ভাঙলো মাহিমের কথা শুনে,

নূর এটা পরে এসো দেখি কেমন লাগে।
কহিনুর খেয়াল করলো মাহিমের হাতে লাল রঙের একটা শাড়ি। বোরখা খুঁলে এখন শাড়ি পড়তে হবে ভেবে কহিনুরের কপালে চিন্তার ভাজ পড়লো। মাথা নিচু করে ফিসফিস করে বলল,
আমি শাড়ি পরতে জানিনা। তাছাড়া বোরখা পরে আছি। কিভাবে সামলাতে হবে জানিনা। আপনি কি আমার সঙ্গে ওই কক্ষে যাবেন যেখানে চেঞ্জ করা হয়?
কহিনুরের এমন প্রস্তাব শুনে মাহিমের চোখে খুশির ঝিলিক খেলে গেলো। চটপট আরও কয়েকটা পোশাক নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো।

নিশ্চয়ই যাব। আসো আমার সঙ্গে।
লোকটা এগিয়ে গেলো। কহিনুর বাঁকা হাসলো। মস্তিষ্কে ভয়ংকর একটা বুদ্ধি খেলা করছে। চুপচাপ মাহিমের পেছনে পেছনে গিয়ে দরজা আটকে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। ছেলেটা পাশে পোশাক গুলো রেখে নির্দেশ দিলো,
বোরখা খুলে ফেলো। আমি তোমাকে সাহায্য করছি শাড়ি পরতে। লজ্জা পাবেনা দুদিন পরে আমাদের বিয়ে। হবু বর কে লজ্জা পেতে হয়না।
কহিনুর ওর চোখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলো,

লজ্জা কেনো পাবো? লজ্জায় পড়তে হয় এমন কাজ কহিনুর জীবনেও করবে না। আচ্ছা মাহীম আমি যদি আপনাকে এই কক্ষে হাত পা বেধেঁ রেখে যায় কেমন হবে?
মাহীম খলখল করে হেসে উঠলো। মনে হলো মজার কোনো জোক শোনানো হয়েছে।
এইটুকু একটা মেয়ে আমার মতো যুবকের সঙ্গে পারবে তুমি? আমার ওয়েট জানো কত?
দেখবেন আমার ক্ষমতা?
দেখাও।

কহিনুর অপেক্ষা করলো না। অনুমতি পেতেই ঝটপট বাম হাতের টেপটা ওর মুখে লাগিয়ে দিলো। হাত দিয়ে বাঁধা দিতে আসলে সেটা দড়ি দিয়ে বেধেঁ ফেলল। ছেলেটা হতভম্ভ হয়ে বাঁধা দেবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলল। কহিনুর এমন কাজ করতে পারে ওর ধারণার বাইরে ছিলো। মেয়েটা নিজের মনমতো কাজ করে যাচ্ছে। হাত বাঁধার পরে পা দুটোও বেঁধে দিলো। বাঁকা হেসে দেয়ালে হালকা চাপ দিতেই সেখানে গোপন দরজার খুলে গেলো। কহিনুর এখানে এসেই বুঝেছিলো এই কক্ষের মধ্যে আরও একটা দরজা আছে। বহু আগেকার শপিংমল। হাত বদল হয়েছে কয়েক বার। এখানকার নতুন মালিক এতোকিছু জানেনা। কহিনুর সেই সুযোগে মাহিমকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ফেলে দিয়ে বলল,

থাকুন এখানে যতদিন না কহিনুরের বিয়ের ভুত মাথা থেকে নামে। সুলতান কহিনুর ফারুকীকে পাওয়া এতোটা সহজ না। ওদিকটা আমি সামলে নিব একদম চিন্তা করবেন না। প্রচুর কাজকর্ম করেছেন এখন বিশ্রাম করুন।
মাহিম ফ্লোরে পড়ে গড়াগড়ি করতে লাগলো। মুখ দিয়ে আওয়াজ বের হচ্ছে না। ছটফট করছে। কহিনুর দেখেও দেখলোনা। ঝটপট দরজা বন্ধ করে পোশাকগুলো হাতে তুলে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। দরজায় সাঈদ দাঁড়িয়ে আছে। ও বের হতেই গোল গোল চোখ করে বলল,

একাকী ওটাকে সামলাতে পারলে? আমাকে ডাকলে না কেনো?
প্রয়োজন হয়নি। বাইরে তোমার জনাব দাঁড়িয়ে আছেন। উনার মেজাজ কিছুটা গরম। তুমি বরং ওটাকে সামলাতে সাহায্য করতে পারো।
সাঈদ চমকে উঠলো। মুখটা কাচুমাচু করে ফেলল,

উনাকে সামলাবো আমি? দেখলেই রেগে আগুন হবেন। তুমি বরং নিজে যাও আমি দূরে আছি। ওষুধের কথা এখনো উনার মনে আছে। আমাকে দেখলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে শপিংমল যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত করবেন। আমি আসছি।
সাঈদ অপেক্ষা করলোনা। টানপায়ে হেটে বেরিয়ে গেলো। কহিনুর বিরক্ত হলো ওর এমন আচরণে। জমের মতো ভয় পাবার কি আছে কে জানে।

কহিনুর চুপচাপ গিয়ে পোশাক ফিরিয়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসলো। লিফটের কাছাকাছি গিয়ে পাথরের সঙ্গে দেখা। ছেলেটা এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে কহিনুরের দিকে। কালো বোরখা মুখে নেকাব লাগানো তবুও কিসের মুগ্ধতা ওকে পেয়ে বসেছে কে জানে।ঘোর লাগা সেই দৃষ্টি। প্রিয়জন যেমন পোশাকেই থাকুক বা যেকোনো পরিস্থিতিতে থাকুক দেখতে ভালো লাগে। বুকের মধ্যে ছটফটানি শুরু হয়। কাছে পাওয়ার আকুলিবিকুলি হৃদয়কে পুড়িয়ে মারে। কহিনুর ধীরগতিতে গিয়ে পাথরের পাশে গিয়ে ফিসফিস করে বলল,

এখনো রেগে আছেন?
পাথরের কান অবধি সেটা পৌঁছালোনা। হাত বাড়িয়ে কহিনুরের মুখটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে কপালে ওষ্ঠদ্বয় রেখে দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বলল,
আমার হৃদয় শুধুমাত্র এই মুখটা দেখেই থমকে যায় । রাগ অভিমান সব হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। কেন এমন হয় নূর? জাদু করেছো আমাকে?

করেছিতো ভালোবাসার জাদু। ভালোবাসার চেয়ে বড় জাদু কি পৃথিবীতে আছে? আপনার মন নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে অহেতুক আমাকে দোষারোপ করবেন না। কোথায় ছিলেন এতোদিন? বউয়ের বিয়ের কথা শুনে নিশ্চয়ই রেগে আছেন?
পাথরের কপালের ভাজ পড়লো। মুখে বিরক্তির চিহ্ন ফুটিয়ে উত্তর দিলো,

একদম না। সামান্য বিষয়ে আমি তোমার উপরে রাগ করিনা। রাগ করেছি একাকী ওর সঙ্গে শপিং করতে কেনো এসেছো? সাঈদ কোথায়? বেকুব কোনো কাজের না। ওটাকে আমি কঠিন শাস্তি দিবো দেখে নিও।
মোটেই না। ও আমার সঙ্গেই ছিলো আপনাকে দেখে ভয়ে পালিয়ে গেলো। বেচারি কতটা কাজের আপনাকে কিভাবে বোঝাই। যাইহোক ফিরবেন তো আমার সঙ্গে?

তার আগে বউয়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করি? জীবনে প্রথমবার এমন সুযোগ পেয়েছি হাতছাড়া করতে ইচ্ছে করছে না।
পাথর ওকে নিজের সঙ্গে টেনে নিলো। খানিকটা জড়িয়ে ধরে পূণরায় বলল,
কি নিবে বলো? শাড়ি নাকি অন্য কিছু?
কহিনুর ওর চোখের দিকে চেয়ে বলল,
আপনার ইচ্ছে। যেভাবে দেখতে পছন্দ করবেন সেভাবে কহিনুর ফারুকী প্রস্তুত হবে।
পাথরের ওষ্ঠে দুষ্ট হাসি খেলে গেলো। মজা করে বলল,

খোলামেলা পোশাক নিলে কেমন হবে? তোমার রূপে আমি এমনিতেও ঘায়েল তারপর যদি,
পাথর এইটুকু পযর্ন্ত বলতেই কহিনুর চোখ রাঙিয়ে ফেলল,
কাজ আছে যেতে হবে।
পাথর মাথা নাড়িয়ে ওকে নিয়ে বেরিয়ে আসলো। ঝটপট শপিং শেষে গাড়িতে গিয়ে উঠলো। কহিনুর চোখ বন্ধ করে সিটের সঙ্গে হেলান দিয়ে বলল,

বাড়িতে দুজন মহিলা এসেছে। ওদেরকে কিছু বলতে পারছিনা। বাকিদের এক সঙ্গে দেখার জন্য চুপচাপ অছি।দাদুকে গিয়ে বলবেন আপনি পূণরায় আমাকে বিয়ে করতে চাইছেন। আমি চাই সুলতান ভিলাতে সবগুলো শয়/তান আবারও এক হোক। ওরা সংখ্যায় বেশি কিন্তু আমাদের কৌশল ওদের থেকে খতরনাক হবে।

চিন্তা করোনা আমি সবটা সামলে নিবো। তিব্বত প্রদেশে বেড়ে উঠা এক বৃক্ষ থেকে প্রাপ্ত ওষুধ থেকে তৈরী বিষ আমাদের শক্তিকে দ্বিগুণ করবে। আমি ওটা সংগ্রহ করে হেকিম সাহেবের থেকে ওষুধ তৈরী করে নিয়েছি। একবার ওদের পেটে গেলে ইহজীবনে আর জান নিয়ে ফিরবে না। অর্ধমানব জ্বীন বা পিশাচ কারো ক্ষমতা নেই ওটার থেকে বাঁচার। খানিকটা কৌশল অবলম্বন করতে হবে। ঐতিহ্যবাহী এই বিয়ের অনুষ্ঠানে শুধুমাত্র শয়/তানের আগমন ঘটবে। কোনো মানুষের উপস্থিতি আমি চাইছি না।

হয়ে যাবে।
পাথর একমনে গাড়ি চালিয়ে সুলতান হাউজের সামনে গিয়ে থামলো। ভেতরে প্রবেশ করবে না ভেবে ঝটপট কহিনুরকে নিজের দিকে টেনে নিয়ে নেকাব খুলে নিলো। কয়েক সেকেন্ড মুখের দিকে চেয়ে কপালে চুমু দিয়ে বলল,
ওষ্ঠদ্বয় আজকাল বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কখন কি ঘটিয়ে ফেলবে বলা মুশকিল। তুমি ভেতরে যাও। সময় মতো পৌঁছে যাবো। তোমাকে ছাড়া একটা প্রহর বেঁচে থাকা মৃত্যুর সমান।
কহিনুর উত্তরে শুধু হাসলো। গাড়ি থেকে নেমে গটগট করে ভেতরে প্রবেশ করলো। দরজা খোলা ছিলো তাই অসুবিধা হলোনা। ড্রয়িং রুমের সোফায় আলফা আর দৃষ্টি বসে আছে। কহিনুর ওদের পাশে প্যাকেটগুলো রেখে বলল,

আমাকে একা ফেলে মাহিম পালিয়ে গেছে। তোমাদের উচিত ছিল আমার সঙ্গে যাওয়া।
দৃষ্টি প্যাকগুলো খুলতে খুলতে বলল,
আপি তুমি ওই চোরটাকে বিয়ে করতে কেনো রাজি হলে বলবে? ক্লাবে ওর বদনাম আছে। প্রায় ওয়াইন খেয়ে মারামারি করে। মেয়েদের বিরক্ত করে আবার নিজেকে ভালো বলে দাবি করে।
আলফা দৃষ্টির সঙ্গে সহমত। এই প্রথম দৃষ্টিকে ওর পছন্দ হলো। তাই গলা মিলিয়ে বলল,

ইমরোজ খান লোকটাকে আমার ভীষণ পছন্দ। তুমি না বলেছিলে উনি সম্পর্কে আমাদের অন্যকিছু। সেটা কি তবে মিথ্যা?
কহিনুর পানির গ্লাসে চুমুক দিয়ে বলল,
মিথ্যা কেনো হবে? প্রশ্ন করোনা এখন উত্তর পাবেনা। শুনো ছোট আম্মুকে বলবে আজ থেকে দুদিন কিচেনের দায়িত্ব তার। ভুলেও যেনো অন্য করো তৈরী খাবার পরিবেশ না হয়। চাচ্চু কোথায়?
আলফা কিছুটা বুঝতে পারলো। দৃষ্টি অবাক হয়েছে কিন্তু ওকে কেউ পাত্তা দিলোনা। কহিনুর সোজা উপরে উঠে গেলো। মায়ের কক্ষের দরজা বন্ধ দেখে নিজ কক্ষে ফিরে গেলো।

কিচেনের পাশাপাশি লাগোয়া কক্ষের ফ্লোরে মানুষের শরী/রের ভিবিন্ন অঙ্গ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। লাল উষ্ণ তরলের স্রোত ওয়াশরুমের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কিছু মূহুর্ত পরে খট করে ওয়াশরুমের দরজা খুলে একজন অল্প বয়সী তরুণী বেরিয়ে আসলো। ফ্লর জুড়ে এসব দেখেও দেখলোনা। সোজা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে নিজেকে পরিপাটি করে দেখতে দেখতে রিনরিনে আওয়াজে বলল,

দ্রুত ঘুম থেকে উঠো অনেক কাজ আছে। এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমানোর মানে কি?
সঙ্গে সঙ্গে বেডের উপরে পড়ে থাকা ছি/ন্ন মস্ত/কের চক্ষুদ্বয় খুলে গেলো। উত্তর দিলো,
আরও খানিকটা ঘুমের প্রয়োজন। তুমি বাইরে যাও আমি আসছি।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ২৯

তরুণী নিজেকে প্রস্তুত করে বেরিয়ে গেলো। ছিন্নভিন্ন অঙ্গ জোড়া লাগতে লাগতে পরিপূর্ণ মানুষে রূপান্তরিত হলো।অর্ধ নগ্ন নব রূপান্তরিত মেয়েটা বেডে থাকা চাদরটা টেনে নিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলল।আলমারি থেকে পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে প্রবেশ করলো। কক্ষের কোথাও র/ক্তের চিহ্ন অবশিষ্ট থাকলোনা। দুজন তরুণীর মধ্যে লুকিয়ে আছে গভীর কোনো রহস্য। এই দুজন তরুণীর পরিচয় জানার জন্য জানালায় একজোড়া চক্ষু ছটফট করতে করতে মিলিয়ে গেলো।

কহিনুর তৃতীয় খণ্ড পর্ব ৩১