খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ২৫

খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ২৫
আভা ইসলাম রাত্রি

ত তাকে আপনার সামনে নিয়ে আসব, কথা দিলাম।’
শেহজাদ চোখ বুঁজে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। জিজ্ঞেস করল,
‘গাড়ি বের করো। আমরা দুপুরে খাবার পরই বের হব প্রতাবপুরের উদ্দেশ্যে।’

শেহজাদ আয়ুষ্মান মহলে আসার পর থেকে দেখতে পারছে, আয়ুষ্মান মহলের সকল সদস্যের ঠোঁটে হাসি। শেহজাদকে আলাদা করে অন্যরকম আজ অ্যাপায়ন করা হচ্ছে। চিত্রাকে এখন অব্দি চোখের দেখা দেখা হয়নি। সেই যে প্রথম পর্দার আড়ালে একবার দেখা দিয়ে লুকিয়েছে, আর চোখে পরে নি। শেহজাদ খাবার খাচ্ছে। রেখা এবং শিউলি খাবার বেড়ে দিচ্ছেন সবাইকে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নওশাদ ছেলেকে বারবার বড় মাছের মাথা এগিয়ে দিচ্ছেন। সৌরভ নিজে পাতের মুরগির গোশতের রান তুলে দিচ্ছেন শেহজাদের পাতে। রেখা ঘুরেফিরে শেহজাদের ঘন চুলে হাত বুলিয়ে দোয়া করে দিচ্ছেন। শেহজাদ এসব শুধু দেখেই চলেছে। কোনো টু শব্দ অব্দি করছে না। শেহজাদ পানি চাইল। রেখা দ্রুত ঠান্ডা পানি ফ্রিজ থেকে এনে শেহজাদের হাতে ধরিয়ে দিলেন। শেহজাদ পানি খেয়ে রেখাকে জিজ্ঞেস করল,

‘আম্মাজান, আজকে কি কোনো বিশেষ আয়োজন আছে বাড়িতে?’
রেখার ঠোঁটের হাসি এবার আরো চওড়া হয়েছে। তিনি শেহজাদের কপালে হাত রেখে বললেন,
‘খাবার শেষ করে, বসার ঘরে এসব আলোচনা হবে। তখন জেনে যাবে সব, হুঁ?’
শেহজাদ শুনেই গেল। একবার ভেবেছিল রেখাকে চিত্রার কথা জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু সবার সম্মুখে স্ত্রীর কথা জিজ্ঞেস করা লজ্জায় কাজ। তাই সে তখনকার ন্যায় চুপ থাকল।

বসার ঘরে আয়ুষ্মান মহলের সবাই জড়ো হয়েছেন। মেহজাদ একপাশে সোফায় বসে তার তথাকথিত আইফোন ব্যবহার করছে। রেখা পান তৈরি করছেন নওশাদ এবং সৌরভের জন্যে। শেহজাদ দুটো সুপারির টুকরো নিয়ে মুখে তুলল। রেখা সবাইকে পান দিয়ে অন্য সোফায় গিয়ে বসলেন। শেহজাদ এবার জিজ্ঞেস করল,
‘বলবেন না আম্মাজান, আজকে কি?’

রেখা নওশাদের দিকে তাকালেন। ইশারায় নওশাদকে বলতে বললেন। নওশাদ মাথা ঝাঁকিয়ে শেহজাদকে বললেন,
‘তোমার আম্মাজান বলবেন। বলো তুমি রেখা।’
রেখা পুত্রের দিকে তাকালেন। সোফা থেকে উঠে এসে শেহজাদের কপালে হাত রেখে মিষ্টি স্বরে বললেন,
‘আয়ুষ্মান মহলে এক নতুন আয়ুষ্মান আসছেন। আল্লাহর রহমতে আমাদের বংশের প্রথম উত্তরাধিকারী, তোমার ছেলে এবং আমার প্রথম নাতি আয়ুষ্মান মহল আলো করে আসছে।’

রেখা এ কথা বলার সঙ্গেসঙ্গে মেহজাদ বিস্ময়ে হালকা আওয়াজে চিৎকার করে উঠল। শেহজাদ শুরুতে ফ্যালফ্যাল চোখে রেখার দিকে চেয়ে রইল। তারপর সামান্য হাসল। মাথা নত করে বিড়বিড় করে উচ্চারণ করল,
‘আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহর রহমত নাযিল হচ্ছে আমার ঘরে।’
মেহজাদ সোফা থেকে উঠে রেখার কাঁধে হাত জড়িয়ে বলল,

‘সত্যি আম্মাজান?’
রেখা মাথা নেড়ে সায় দিলেন। মেহজাদ খুশির চোটে বলল,
‘ভাবিজান তো আমাদের জান্নাতের এক টুকরো আলো দিয়ে দিলেন। এখন কি দেওয়া যায় ভাবিজানকে?’
রেখা শেহজাদের উদ্দেশ্যে বললেন,
‘বড় করে গ্রামের লোকদের দাওয়াত করব আগামীকাল। তবে আপাতত গ্রামের সবাইকে জানানোর দরকার নেই এ কথা। পোয়াতি হবার কথা যত কম জানবে, তত ভালো। নাহলে কার নজর লাগে কি বলা যায়। কি বলো শেহজাদ?’
শেহজাদ মাথা নেড়ে বলল,

‘আপনি যা ভালো মনে করেন, করবেন।’
মেহজাদ শেহজাদের দিকে তাকাল। শেহজাদকে দেখে বোঝা যাচ্ছে না সে কতটা খুশি হয়েছে। সবসময় এমনই হয়। শেহজাদের খুশির পরিমাণ কেউ আন্দাজ করতে পারেনা। অনুভূতি খুব কমই প্রকাশ করে সে। কিন্তু মেহজাদ জানে, শেহজাদের এই মুহূর্তে চিত্রার হাতে পুরো দুনিয়ার খুশি তুলে দিতে ইচ্ছে করছে।

খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ২৪

প্রচন্ড খুশিতে মেহজাদের বুক জ্বলছে। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে। বহুদিন পর, বহুদিন পর আয়ুষ্মান মহলে বাচ্চার আওয়াজ শোনা যাবে। সে ছিল আয়ুষ্মান মহলের সবচেয়ে ছোট সদস্য। এখন তার আদরের ভাগ বসাতে তার ভাতিজা আসছে। মেহজাদ এত খুশি কোথায় রাখবে।

খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ২৬