শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪৫

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪৫
তানিয়া মাহি

শুভ্রতা মন খারাপ করে রুমে বসে আছে। আয়েশা বেগম দুই মেয়ের জন্য নাস্তা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন। শুভ্রতাকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে তিনি নাস্তার প্লেটটা টেবিলে রেখে জিজ্ঞেস করেন,” কি হয়েছে? মন খারাপ করে বসে আছিস কেন?”
” কিছু না মা, তুমি এসো বসো এখানে।”
” বসব না, নাস্তা শেষ করে তোর বাবার কাছে যা। তোর সাথে কি কথা আছে বলল।”
” ট্রান্সফারের ব্যাপারে। ”
” হ্যাঁ, হবে হয়তো।”

আয়েশা বেগম চলে যেতেই আবিরা রুমে আসে। শুভ্রতাকে বসে থাকতে দেখে সে নিজেও চেয়ার টেনে বসে। আবিরাকে দেখে হাতের ফোনটা বিছানায় রেখে বলে, ” কি হয়েছে আপু?”
আবিরা নাস্তার প্লেট থেকে খাবার মুখে নিয়ে খেতে খেতে বলে, ” বের হতে হবে, বাসায় চল।”
” কোথায় বের হব?”
” অভীক বের হতে বলেছে বিয়ের শপিং করতে বের হতে হবে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শুভ্রতা জানায় তার শরীরটা খারাপ লাগছে তাই সে যেতে পারবে না। আবিরা কয়েকবার যাওয়ার কথা বললেও শুভ্রতা যেতে পারবে না। আবিরা জিজ্ঞেস করে, ” শরীর খারাপ নাকি মন খারাপ?”
” শরীরটা ভালো লাগছে না। ”
” আমার তো মনে হচ্ছে মন খারাপ। ভাইয়ার সাথে কথা হয় নি?”
” না, উনি কল দেন নি৷ ”

” আচ্ছা কল দিলে কথা বল, ভালো লাগবে। তুই যেহেতু যেতে পারবি না প্রথমদিন তো নেহাকে নিয়ে যাই তাহলে।”
আরও কিছুক্ষণ কথা বলে আবিরা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আবিরা চলে যেতেই শুভ্রতাও চলে যায় তার বাবার কাছে। এবার নিহান আসলেই তাকে নিয়ে যাবে তাই ভার্সিটি থেকে ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শাহাদাত সাহেব বেশ কিছুদিন ধরে এ ব্যাপারেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

” আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারব না স্যার। আমি অনেক ভেবে দেখেছি, বিষয়টাতে আমার মন কিছুতেই টানছে না৷ আপনি খুব ভালো মানুষ, আপনার মাঝে কোন সমস্যা নেই কিন্তু তবুও কেন জানি না আপনাকে বিয়ের কথা আমি কিছুতেই ভাবতে পারছি না।”

” আমাকে অপছন্দ না হলে বিয়ে কেন করতে পারছেন না? নির্দিষ্ট একটা কারণ তো থাকতে হবে। আপনাকে এখনই বিয়ে করতে হবে এমন ওয়াদাও কেউ দিয়ে রাখেনি। আপনি সময় নেন যত ইচ্ছে।”
” কোন সমস্যা নেই, মন টানছে না। আপনি আমার অপছন্দের সেটাও না। আমি এই ব্যাপারটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না৷ সারাক্ষণ মাথায় এটাই ঘুরপাক খাচ্ছে।”

” আপনি না চাইলে জোর করে তো আপনাকে আমি চাইব না ওরকম ছেলে আমি নই। আপনাকে ছাড়া আমি বাঁচব না এসব ও বলব না। আমাদের বিয়ে না হলে আপনার জীবনে কেউ আসবে আমার জীবনেও কেউ আসবে, আমাদের দুজনের একটা সংসার, একটা ঘর না হয়ে আলাদা দুইটা ঘর হবে। গন্তব্য এটা থাকলে এটাই হবে। ভাগ্য তো আর বদলাতে পারব না। ”
সাহিল ওয়েটারকে ডাকে, ওয়েটার আসলে বিল দিয়ে দেয়। কফিটা ওমনি পাশে রেখে ফাউজিয়াকে বলে, ” কফিটা শেষ করুন। ”

” আপনি খেলেন না?”
” না, আসলে আর কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না। অনেককিছুই না চাওয়া সত্ত্বেও গলা দিয়ে নেমে গেছে।”
” আমি আপনাকে কষ্ট দিতে চাই নি। ”
” অপরাধবোধে ভুগবেন না, আমাদের ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। আপনি ফিরিয়ে দেওয়ার পর আমার আর আপনার কাছে ফেরা হবে না ফাউজিয়া। আসছি, সৃষ্টিকর্তা আপনাকে ভালো রাখুক।”

সাহিল শেখ ফাউজিয়াকে রেখে একাই চলে যেতে লেগে কিছু একটা মনে করে আবার ফাউজিয়ার কাছে ফিরে আসে। ফাউজিয়া মাথানিচু করে বসেই ছিল। সাহিলে শেখের উপস্থিতি বুঝতে পেরে সামনে তাকায়। ফাউজিয়া তাকাতেই বলে, ” আপনাকে আমার দায়িত্বে নিয়ে এসেছিলাম, চলুন বাড়ি পৌঁছে দিই। এরপর নাহয় আর সামনে না আসলাম।”

” আমি একা যেতে পারব স্যার। আর তাছাড়া আপনি এভাবে কেন কথা বলছেন?”
” বাসায় একা যাবেন?”
” হ্যাঁ একা যেতে পারব। ”
সাহিল আর সেখানে এক মুহূর্ত সময় ব্যয় করে না। টানাপায়ে সেখান থেকে প্রস্থান করে। ফাউজিয়া নিজেও আর কফিটা খেতে পারে না। সে অনুভব করে এটা তার গলা দিয়ে নামবে না।

” একটু চেষ্টা করে দেখুন না প্লিজ, আবিরা আপুর বিয়েতে আপনি না আসলে আমার কোনকিছু ভালো লাগবে না। সবাই এখন থেকেই কত মজা করছে, ওরা কেনাকাটা করতে গেল আর আপনি যখন বললেন আসতে পারবেন না তখন থেকে আমার মন খারাপ। ”

ফোনে শুভ্রতার এমন কথার পরিপ্রেক্ষিতে বলে, ” আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব শুভ্রা তবে কথা দিতে পারব না। এই কয়েকমাসে আমাকে তিনবার বাহিরের দেশে যেতে হয়েছে। উপর পদে গেলে ব্যস্ততা কমার কথা কিন্তু আমার বেড়েছে। এভাবে আরও দুইমাস কা*টবে তারপর আমি একটু ফ্রি হব।”
” ছোটবোনের বিয়েতে বড়ভাই না থাকলে বিষয়টা কেমন দেখাবে? আপনি চাইলেই হয়তো আসতে পারবেন একটু চেষ্টা করে দেখুন না প্লিজ। আপনি না আসলে এত আনন্দ আমার জন্য নয়।”

শুভ্রতার ভীষণ মন খারাপ সেটা নিহান বুঝতে পারছে কিন্তু তার যে কিছুই করার নেই। কাজের প্রেশার বেড়েছে, সবাইকে সব কাজ বুঝিয়ে দিতেই তার দিন চলছে। কাজগুলো যেন গলায় ঝুলে পড়েছে। শুভ্রতাকে ফোনেই সময় দিতে পারছে না সেখানে বাড়ি আসা তো অনেক দূরের ব্যাপার।
শুভ্রতা আবার বলে ওঠে,” আসবেন না আপনি?”

প্রিয়তমাকে মিথ্যা আশায় ভুলিয়ে রাখার মত অপরা*ধ নিহান করতে চাইছে না। কথা অন্যদিকে নিতে বলে,” তোর কি ট্রান্সফারের ব্যবস্থা হয়ে গেছে? আমি এবার বাড়ি ফিরলে আমার বউকে নিয়ে আসতে পারব?”
” হ্যাঁ, আপনি বিয়েতে আসবেন বলুন?”
” এরকম আবদার করিস না শুভ্রা, প্রিয় মানুষের আবদার মেটাতে না পারার মতো কষ্ট এই পৃথিবীতে আর নেই। আমি খুব চেষ্টা করব আসার বাকিটা আল্লাহ জানেন।”
” হুম।”

নিহান আর শুভ্রতার কথা বাড়তে থাকে। কথার সাথে একজনের অভিমানও বাড়তে থাকে আর আরেকজনের সেই অভিমান ভাঙানোর ক্ষমতা। পুরুষদের সবসময় নারীকে বোঝার ক্ষমতা রাখতে হবে নইলে সেই নারী তার হয়েও তার হবে না।
সময়টা শরৎকাল হলেও সময়ে সময়ে ভীষণ বেগে বৃষ্টি নামে। গরমের আভা কা*টিয়ে পরিবেশ নিস্তব্ধ শীতল করতে মাঝেমধ্যেই বৃষ্টির আগমণ ঘটে। আজকের অতিরিক্ত গরমেও এটার হেরফের হলো না। অভীক, আবিরা আর নেহা শপিং শেষ করে একটু জিরিয়ে নিতে আর কিছু খেতে সামনের ‘মধুবালা’ রেস্টুরেন্টে চলে যায়। আবিরা আর নেহা গিয়ে বসে নিহান বলে, ” তোমরা বসো, আমি দুই মিনিটের মধ্যে আসছি।”

আবিরা শপিং ব্যাগগুলো পাশের চেয়ারে রাখতে রাখতে নেহাকে বলে,” এটা কার রেস্টুরেন্ট জানিস?”
” আমি এখানে আসিও নি জানিও না। রেস্টুরেন্ট হচ্ছে খাবার খাওয়ার জন্য মালিকের নাম জেনে কী করব? আর এত বড় এত সুন্দর রেস্টুরেন্টের মালিক নিশ্চয়ই আমাদের পরিচিত হবে না!”
” পরিচিত হতেও পারে। আগেই কেন ভেবে নিচ্ছিস যে পরিচিত হবে না?”
” কারণ আমাদের বাড়ি থেকে পরিচিত সবাই চাকরি করে। ব্যবসা তো কেউ করে না। কারো সাহস আছে এমন একটা কাজে টাকা ব্যয় করার তুই বল আপু?”

” তা ঠিক, আমাদের বংশে সবাই জব করে তবে আমার মনে হয় জবের চেয়ে ব্যবসা অনেকগুণে ভালো। এটা যার রেস্টুরেন্ট তাকে তুই খুব ভালোভাবে না চিনলেও কিছুটা চিনিস। নাম বললে, চিনিয়ে দিলে ঠিক চিনবি। আমাকে সেদিন….”

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪৪

” আসসালামু আলাইকুম ভাবি।” আবিরাকে কথা শেষ করতে না দিয়েই একজন এসে সালাম দিল। তাকে দেখেই আবিরার মুখে খুশির রেখা দেখা দিল। সালামের জবাব দিতেই লোকটা এগিয়ে এলো। নেহা রেস্টুরেন্টের বাহিরের দিকে মুখ করে থাকায় দেখতে পায় নি তাই পিছনে ঘুরে তাকাতেই কেমন এক ঝটকায় চুপচাপ হয়ে যায়।৷ থেমে যায় তার চোখ। অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে আসে, ” সিয়াম!”

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪৬