খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ৩৬

খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ৩৬
আভা ইসলাম রাত্রি

শেহজাদ আয়ুষ্মান, গ্রামের সম্মানীয় নেতা, এমনকি সম্পূর্ণ সদর যার একান্ত মুখোপেক্ষি, এমন পুরুষকে চিত্রা সুভাষিণী মজুমদার নামক ছোট পিঁপড়ে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চলে গেল, শেহজাদ তীক্ষ্ম চোখে এসব ভাবছে বসে। ছেলে অনেক আগেই শেহজাদের কোলে ঘুমিয়ে পরেছে। শেহজাদ ছেলেকে শুইয়ে দিল বালিশে।

অপটু হাতে ছেলের দুপাশে দুটো ছোট কোলবালিশ রেখে সরে এল। ঘরের এপাশ থেকে ওপাশে পায়চারি করতে লাগল, অপেক্ষায় সে। ভেবেছে, চিত্রা নিজে আসবে রাগ ভাঙলে। অথচ সেগুরে বালি। ঘণ্টা পেরিয়ে গেল চিত্রার আসার নামগন্ধ নেই। বাড়িতে কোথাও আছে কে জানে। শেহজাদ নিজের উপর হতভম্ব বোধ করছে। বাঘা-বাঘা নেতাদের সামলে নিতে পারলেও, এই ছোট চুনোপুটির কাছে শেহজাদের হার মেনে নিতে হচ্ছে। বিরক্ত হয়ে কপালে আঙুল ঘষে নিজের রাগ সংবরন করার চেষ্টা করল সে। অতঃপর গা ঝাঁকিয়ে, হাতের আঙ্গুল ফুটিয়ে গটগট করে চলল চিত্রার খোঁজে। এ নারী শেহজাদকে একদিন নির্ঘাত পাগল করে দেবে।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

হিয়া পাশ দিয়েই যাচ্ছে। শেহজাদ ডাকে হিয়াকে,
‘হ্যাঁ, ভাইয়া বলো।’
হিয়া বড্ড ব্যস্ত আজকাল। কিছুদিন পরই মাধ্যমিক পরীক্ষা তার। এখন হাতে চায়ের কাপ নিয়ে পড়তে যাচ্ছে নিজের ঘরে। শেহজাদ তাই হিয়ার সময় নষ্ট করে না। প্রশ্ন করে,
‘তোমার ভাবিজান কোথায়?’
হিয়া ভাবল, তারপর উত্তর দেয়,

‘ভাবিজানকে ঘণ্টাখানেক ধরে দেখিনি ভাইয়া। তবে কিছুসময় আগে সিঁড়ি ঘরের দিকে যেতে দেখেছিলাম। আমি কি ডেকে দেব ভাবিজানকে?’
‘না, প্রয়োজন নেই। পড়তে যাও।’
হিয়া মাথা দুলিয়ে চায়ের কাপ নিয়ে নিজের ঘরের দিকে চলে যায়। শেহজাদ পাঞ্জাবি টেনেটুনে ঠিক করে সিঁড়ি ঘরের দিকে চলল।

দুতলা সিঁড়ি বেয়ে ছাদে যাবার পূর্বে ছোট একটা ঘর বানানো হয়েছে। বাড়ির অব্যবহৃত জিনিসপত্র সেখানে রাখা হয়েছে। এ ঘরটা যথেষ্ট নোংরা এবং ভ্যাঁপসা গন্ধ। চিত্রার এ ঘরে আসার প্রয়োজন কি ছিল? বাড়িতে আর কি কোনো জায়গা নেই রাগ দেখানোর? শেহজাদ আর অপেক্ষা করে না, মাথা ঝাড়া দিয়ে সে ঘরে ঢুকে গেল।

চিত্রা ওপাশে পিঠ দিয়ে জানালার দিকে মুখ করে চেয়ে আছে। শাড়ির আঁচল মাটিতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। পিঠে স্পষ্ট কাঁপুনি, ফুঁপিয়ে কাদছে শুধু। শেহজাদ আলগোছে এগিয়ে যায়। মেঝেময় শাড়ির আঁচল নোংরা হচ্ছে দেখে আঁচল নিজের হাতে তুলতেই চিত্রা ঘুরে তাকায়। চোখে চোখ মেলে। শেহজাদ চিত্রার কান্নারত মুখের দিকে চেয়ে তাজ্জব হয়ে যায়। কেঁদেকেটে গাল-মুখ একদম মাখিয়ে ফেলেছে। শেহজাদকে দেখে চিত্রা অন্যপাশে ফিরে মুখ চোখ মুছতে ব্যস্ত। শেহজাদ চিত্রার বোকামি দেখে যারপরনাই বিরক্ত। শাড়ির আঁচল চিত্রার কাঁধে তুলে দিয়ে চিত্রার পাশে এসে দাঁড়ায়। চিত্রা অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। ভাঙা গলায় প্রশ্ন করে,

‘এখানে কেন এসেছেন? আমি আজকে এখানেই ঘুমাব, আপনি ছেলের কাছে যান।’
শেহজাদ চিত্রার মুখ দেখার চেষ্টা করে, পারে না। চিত্রা সম্পূর্ণ অন্যপাশে ঘুরে আছে। শেহজাদের সহ্যের সীমা পেরিয়ে যাচ্ছে। গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করে সে,

‘কাঁদছ কেন? কেউ মেরেছে তোমায়? না কেউ মারা গেছে?’
চিত্রা একপল শেহজাদের দিকে চাইল, পরপরই চোখ সরিয়ে বলল,
‘এখন কেউ মারুক সে অপেক্ষায় বসে থাকি। আপনি আপনার কথা দ্বারা আমাকে আঘাত করেছেন।’

শেহজাদ অতিষ্ট! নারী মন বোঝা কার সাধ্য। ছোট কথাকে কত বড় ঝামেলা বাঁধিয়ে নিজেই কষ্ট পাচ্ছে। শেহজাদ চিত্রার কাঁধে হাত রাখে। কিছু বলার আগে চিত্রা নিজের কাঁধ সরিয়ে নেয়। শেহজাদ ভ্রু কুঁচকে দেখে চলে সব। শেহজাদ মূলত এটা ভাবছে, তার বিড়াল ছানা তাকেই ‘ম্যাউ’ করার সাহস কোথা থেকে পেল? শেহজাদ চিত্রার দিকে কিছুটা এগোয়। আবারো বলে,

‘ঘরে চলো। ছেলে ঘুম থেকে উঠে যাবে।’
চিত্রা তেতে উঠে বলে,
‘তো? আমাকে লাগবে কেন এখন? আপনি পারেন না সামলাতে?’
শেহজাদের অধৈর্য্য উত্তর,

‘ছেলেকে সামলাতে পারব আমি। কিন্তু ওর পেট ঠাণ্ডা করার ক্ষমতা আমার নেই। ঘরে চলো, ঘেমে গেছো।’
চিত্রা কথা শুনে না। মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে ঠাই দাড়িয়ে থাকে। কান্না কিছুটা থেমেছে। হয়ত শেহজাদ চিত্রার রাগ ভাঙাতে না আসলে এ কান্না সারারাত ধরে চলত। শেহজাদ চিত্রার অবস্থা দেখে বুঝে নে, এ নারীর রাগ আজ সারারাত যাবৎ চলবে। শেহজাদ তাই নিজের চৌকশ ক্ষমকা কাজে লাগায় বরাবরের মত। গম্ভীর স্বরে ডাকে,

‘আমার দিকে তাকাও।’
চিত্রা তাকায় না। শেহজাদ এবার ধৈর্যহারা হয়ে চিত্রার দু গাল চেপে ধরে চিত্রার মুখ নিজের দিকে টেনে আনে। ব্যথায় ‘আহ্’ করে উঠে চিত্রা। শেহজাদের দৃষ্টি চিত্রার ঠোঁটের দিকে। চিত্রা ব্যথায় দু চোখ খিঁচে আছে। শেহজাদ ঝুঁকে, হিসহিসিয়ে বলে,

‘শেহজাদ আয়ুষ্মানকে রাগ দেখাতে বুক কাঁপে না? আমার বিড়াল আর আমাকেই ম্যাউ। শেষবার বলছি, ঘরে চলো। জায়গাটা নোংরা, শরীর খারাপ করবে।’
চিত্রা চোখ খুলে চায়। টালমাটাল চোখে কিছু বলার আগেই শেহজাদ এবার পুরোপুরি ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলে। প্রবল আক্রোশে শেহজাদের পুরু ঠোঁট ছুঁয়ে যায় চিত্রার গালে, পরপরই ঠোঁটে ঠোঁটে মিলন ঘটে।

চিত্রা আচমকা এমন আচরণে হতভম্ব। দু চোখ খিঁচে শক্ত হয়ে ঠাই দাড়িয়ে আছে। ধীরে ধীরে সময় কেটে যায়। রাগের পর্ব শেষ হয়! রাগের অনুভূতি পাল্টে ভালোবাসে প্রজাপতি উড়ে বেড়ায় মনের ঘরে। আবেশে চিত্রার দুহাত উঠে আসে শেহজাদের পিঠে। শেহজাদের রাগ কমে আসে, চিত্রার নরম গা চেপে ধরে নিজের সঙ্গে। শেহজাদ জানে, নারী রাগ ঠিক কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে। সঙ্গে বুদ্ধিমান শেহজাদ এ-ও জানে, নারী ঠিক এক জায়গায় প্রচন্ড দুর্বল। দুর্বলতায় হানা দিলে তাদের রাগ দ্রবীভূত হয়ে যায়, বশ মানে প্রিয় পুরুষের কাছে। শেহজাদ তাই শেষ পদক্ষেপ হিসেবে নিজের এ সাইকোলজি কাজে লাগায়।

ঘরে আসার পর থেকে চিত্রা আর লজ্জায় শেহজাদের দিকে তাকাতে পারছে না। ছেলেকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শুয়ে আছে। শেহজাদ কখন থেকে লক্ষ্য করছে, চিত্রা কিছু বলতে চাইছে। অথচ পারছে না।
চিত্রা শেহজাদের মাঝখানে ছেলে শুয়ে আছে। শেহজাদ ছেলেকে এবার অন্যপাশে রেখে নিজে চিত্রার কাছে ঘেঁষে এলো। চিত্রা কোমর দুহাতে পেঁচিয়ে নিতেই চিত্রা সেঁটে গেল শেহজাদের গায়ের সঙ্গে। শেহজাদ চিবুক চিত্রার নরম ঘাড়ে রাখে। চিত্রা ছটফট করছে ভেতরে ভেতরে। শেহজাদ চিত্রা ঘাড়ে ছোট করে এক চুমু খেয়ে নরম স্বরে প্রশ্ন করে,

‘কি ভাবছ?’
চিত্রা চোখ খুলে, কিছু বলতে চায়,
‘আপনি —- আমাকে –’
‘কি আমি তোমাকে?’
‘স-রি বলেন নি।’
কথাটা বলেই চোখ মুখ খিঁচে ফেলে চিত্রা। কথাটা এতক্ষন মনের ভেতরে কি জঘন্যভাবে চেপে রেখেছিল। ভয় করছিল, শেহজাদ এ কথা শুনলে হয়ত রেগে যেতে পারে। অথচ শেহজাদ কথাটা শুনে হালকা হাসল। পরপরই সে হাসি মিলিয়ে গেল। চিত্রাকে শক্ত করে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে আদ্র কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

‘কেন? রাগ ভাঙেনি এখনো?’
ইশ! এভাবে বললে চিত্রা কখনোই রাগ করে থাকতে পারবে না, কোনোদিন নয়। চিত্রা বলতে চায়, রাগ ভাঙার এ অভিনব পদ্ধতি শেহজাদ কিভাবে জানে? রাগ করার সুযোগ দেয়নি, সরি বলেনি। অথচ দেখো! চিত্রা কেমন করে মোমের ন্যায় গলে গেছে এ মানুষের তরে। শেহজাদ সদা এমন করে কেন? চিত্রা কি কখনোই আদৌ রাগ করে থাকতে পারে স্বামীর সঙ্গে?

শেহজাদ হয়ত বুঝতে পারে চিত্রার মনের কথা। সে বড্ড শান্ত স্বরে শুধায়,
‘আমার কাছ থেকে কখনো সরি আশা করো না, আমি পারব না বলতে। অভ্যাস নেই, আর অভ্যাস করাও সম্ভব নয়। আমি এভাবে রাগ ভাঙ্গাব, এভাবে মানাব।’

চিত্রা আর কথা বলার সুযোগ পায় না। অবশ্য চিত্রা আশা করেনি, শেহজাদ তাকে সরি বলবে। শেহজাদ বরাবরই গোমড়ামুখো পুরুষ, মুখে রসকষ একদম নেই। হাসে না কখনো, দু চারটে মিঠা কথা বলতে যার মুখে বাঁধে। এমন মানুষের মুখে চিত্রা সরি আশা করে কোন জন্মে?
কিন্তু চিত্রা জানে এবং মানে। শেহজাদের মত করে এমন আকষর্ণীয় ভাবে আর কেউ রাগ ভাঙাতে জানে না, জানবেও না। শেহজাদ যেমন অনন্য এক পুরুষ, তেমনি তার আচরণ কথা বলার ভঙ্গিমা সব কিছুই একচ্ছত্র, অনন্য। এমন পুরুষ চিত্রা কি সাত জনমে কখনো খুঁজে পাবে?

শেহজাদ আজ শহরে যাবে ফিরবে আগামীকাল। তার পরেরদিন শেহজাদের পুত্রের আকীকা করা হবে। আকিকার জন্যে গরু কিনা হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। শেহজাদ যাবার আগে সকল ব্যবস্থা করে যাচ্ছে আকিকার, যেন আসার পর পেরেশানি না করতে হয়। তাই আজ সকাল থেকেই আয়ুষ্মান মহলে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। পলাশ এবং তার স্ত্রী মেহমানের মত সব কাজ দেখছে। কেউ তাদের কিছুতে হাত দিতে দিচ্ছে না। পলাশ কয়েকবার নওশাদ–সৌরভের আশপাশে ঘেঁষার চেষ্টা করেছে, লাভ বিশেষ হয়নি। সৌরভের থমথমে মুখের দিকে চেয়ে মিনমিন করে সরে এসেছে।

শেহজাদ এক্ষুনি বেরুবে। যাবার আগে ছেলেকে কোলে নিয়ে অনেকক্ষণ আদর করল সে। চিত্রা পাশে শেহজাদের আদেশমত তাকে ক্ষীর খাইয়ে দিচ্ছে। শেহজাদ ছেলের সঙ্গে রাজ্যের গল্প জুড়ে দিয়েছে। চিত্রা ভেবে পায় না, এ পাঁচদিনের ছেলের সঙ্গে শেহজাদ এত কি কথা বলে। যখনই বাবা ছেলেকে দেখে চিত্রা, তখনই দেখতে পারে শেহজাদ ছেলের সঙ্গে অকপটে গল্প করছে। চিত্রা মাঝেমধ্যে ভাবে, হয়ত শেহজাদ ছেলেকে নেতাগিরি শেখাচ্ছে। বাপের পরে ছেলেই হয়ত নেতাবংশের হাল ধরবে, চিত্রা হাসে।

শেহজাদ বাড়ির কাজ সামলে মাত্রই গাড়িতে উঠেছে। আজ ড্রাইভার আসেনি কোনো কারণবশত। তাই শেহজাদ নিজেই গাড়ি চালিয়ে শহরে যাবে ভেবেছে। সব ঠিক করে খানিক পর গাড়ি ইঞ্জিন চালু করে সে। শেহজাদ আয়নায় লক্ষ্য করে, পেছনে পলাশ আয়ুষ্মান হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে এদিকেই চেয়ে আছে। ব্যাগের ভেতরে কি আছে? দেখে তো বোধ হচ্ছে, কোনো যন্ত্রপাতি আছে। শেহজাদ অবশ্য ততটা পরোয়া করে না। গাড়ি ততক্ষণে গ্রাম ছেড়েছে।

শেহজাদের গাড়ি গ্রাম ছেড়ে সদরের মহারাস্তা ধরে। রাস্তা এখন অনেকটা খালি, শেহজাদ নির্বিঘ্নে গাড়ি চালাচ্ছে। হঠাৎ একটা গাছ রাস্তার মাঝখানে পরা দেখে শেহজাদ। এই মাঝরাস্তায় গাছ কেন ফেলা হয়েছে, বুঝে না সে। শেহজাদ তাৎক্ষণিক ব্রেক কষার চেষ্টা করে। অথচ ব্রেক হয় না। শেহজাদ হতভম্ব হয়ে যায়। বারবার ব্রেক কষে সে। পা ব্যথা হয়ে যায়, অথচ গাড়ি ব্রেক করে না। গাছ আর অল্প দূরেই, শেহজাদের গাড়ি গাছের সঙ্গে টক্কর দেবার পথে।

শেহজাদ আল্লাহর নাম জপে বারবার এবং ব্রেক কষতে থাকে। অথচ লাভের লাভ কিছু হয়না। শেহজাদ বুঝতে পারে, কেউ তার গাড়ির ব্রেক নষ্ট করে ফেলেছে। কে সে. পলাশ? শেহজাদ কথাটা বুঝতে পেরে ভ্রু কুচকে ফেলে। বোঝায় অনেক দেরি হয়ে গেছে ততক্ষণে! শেহজাদের গাড়ি একবার গাছের সঙ্গে টক্কর খেলে দুমড়ে মুচড়ে যাবে। সঙ্গে বিপদ ঘনিয়ে আসবে শেহজাদের নিজের জীবনের প্রতিও। শেহজাদ অসহায় বোধ করে এবার।

শেহজাদের নিজের জীবন বিপন্ন হবার পথে। চোখের সামনে চিত্রা এবং নিজের পাঁচ দিনের ছেলের মুখ ভেসে উঠে। চিত্রাকে বিধবা করে, ছেলেকে এতিম করে এত দ্রুত শেহজাদ মারা যেতে পারে না। শেহজাদ আয়ুষ্মানকে বাঁচতে হবে, নিজের স্ত্রী সন্তানের জন্য, নিজের পরিবারের জন্যে। শেহজাদ শেষবারের মত আল্লাহর নাম করে গাড়ি ঘুরানোর চেষ্টা করে। শেহজাদ ভেবেছে সে বেঁচে যাবে। কিন্তু ততক্ষণে দূর্ঘটনা ঘটে গেছে, চৌরাস্তার মোড় থেকে পাশ থেকে একটা ট্রাক এসে শেহজাদের গাড়ির সঙ্গে আচমকা টক্কর খায়।

শেহজাদ পুরো ব্যাপারটা বোঝার আগেই গাড়ি ছিটকে পরে রাস্তার পাশে। গাড়ি দুমড়ে মুচরে একাকার হয়ে যায়। শেহজাদ টাল সামলাতে না পেরে গাড়ি থেকে ছিটকে রাস্তার মাঝখানে পরে। মাথা ফেটে গড়িয়ে পরে চিকন রক্তের স্রোত। রক্ত, রক্ত এবং রক্ত! শেহজাদের মস্তিষ্ক ধীরে ধীরে অচল হয়ে আসছে। সে বুঝে, তার জীবন ফুরিয়ে এসেছে। স্ত্রী সন্তানের সঙ্গে বৃদ্ধ হবে স্বপ্ন বোধহয় এখন স্বপ্নই থেকে যাবে।

খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ৩৫

শেহজাদ শেষবারের মত মনেমনে আল্লাহর কাছে বেহেশতে স্ত্রী সন্তানসহ একসঙ্গে থাকার দোয়া করে। চোখের কোণ বেয়ে জল গড়িয়ে পরছে, শেহজাদ বিড়বিড় করে কালিমা পরার চেষ্টা করে। শেষবারের ন্যায় শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে বুক উঁচু করে সজোরে, ‘আল্লাহ আকবর’ বলে চিৎকার করে উঠে শেহজাদ। তারপরই দু চোখ বুজে আসে উপন্যাসের এক প্রধান চরিত্র শেহজাদ আয়ুষ্মানের।

খাঁচার ভেতর অচিন পাখি পর্ব ৩৭