প্রেয়সী পর্ব ৪৯

প্রেয়সী পর্ব ৪৯
নন্দিনী নীলা

চোখ বন্ধ করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে তিন্নি সবটাই খুলে বলল মধু কে। সব শুনে মধু থ মেরে বসে র‌ইল।
” ছেলেটা তোকে প্রপোজ করেছে?”
” হুম।”

” বুঝলাম তোকে ভালোবাসে। কিন্তু তাহলে নিজের পরিচয় নাম ধাম কিছু বলছে না কেন?”
” আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি বলছেই না।”
” এখানেই তো সন্দেহ লাগছে। ছেলেটা কি তোর পরিচিত কেউ হবে?”
” আমার কাছে কন্ঠ অপরিচিত‌ই লাগছে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” ওহ আচ্ছা। কে তোর সাথে এমন করতে পারে কাউকে কি সন্দেহ হচ্ছে?”
” আমাকে কেউ কোনদিন পছন্দ করেছে ভালোবেসেছে এটাই তো আজ প্রথম জানলাম। আমি কাকে সন্দেহ করব কেউ কোনদিন আমাকে পছন্দ করে বলেই নি তো।”
মধু নখ কাটতে কাটতে ভাবছে কে ওই ছেলে তার উদ্দেশ্য কি? খারাপ কোন উদ্দেশ্য নিয়ে এসব করছে না তো‌। নাকি সত্যি ভালোবাসে তিন্নি কে?

তিন্নি ওর হাত ধরে বলল,,” কি রে ঘুমাবি না?”
তিন্নি বিছানায় শুয়ে পড়েছিল। মধু কে সব বিস্তারিত বলে শুয়েছিল। মধু না শুয়ে বসে আছে দেখে চোখ খোলে ওকে টেনে বলল। মধু ওর দিকে চেয়ে বলল,,” তুই আবার ছেলেটার উপর দূর্বল হয়ে পরিস নাই তো?”

” আরে না। আমি শুধু জানার জন্যে ই কথা বলেছি।”
” আমাকে বললি না কেন এসব?”
” তোর যে অবস্থা এখন। এসব বলার মতো সুযোগ পাইনি। তাই বলা হয়নি।”
মধু লাইট অফ করে শুয়ে পড়ল। বলল,” কারো খারাপ মতলব ও থাকতে পারে। এতো সহজে গলে যাইস না। আর বেশি বিরক্ত করলে ব্লক করে রেখে দে।”

” ব্লক না করে রেখেছি নাকি। নিত্য নতুন নাম্বার দিয়ে কল দেয়।”
” ওহ।”
” এখন এসব ভেবে মাথা ব্যথা করিস না ঘুমা।”
” হুম।”

কেবলি ঘুম ধরবে এমন সময় দরজায় ধুপধাপ শব্দ করে কেউ ধাক্কা দিয়ে উঠল। মধু চমকে লাফ দিয়ে উঠে বসল। এতো রাতে দরজা ধাক্কায় কে? তিন্নির দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে দেখে মেয়েটা ঘুমে কাদা হয়ে গেছে। ও তিন্নি কে ডাকতে গিয়ে ও থেমে নিজেই দরজার কাছে এসে দাঁড়ায়। দরজার সাথে কান লাগিয়ে শুনে বাইরে থেকে সমুদ্রের আওয়াজ ভেসে আসছে। মধু দরজা খুলে দেয়। আসলেই সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে। মধু সমুদ্রের দিকে প্রশ্নতোক চোখে চেয়ে বলে,,” আপনি এই সময়?”

সমুদ্র মুখ নিচু করে বলে,” সরি মধু এতো রাতে বিরক্ত করার জন্য। কিন্তু এছাড়া আর উপায় ছিল না।”
” কিছু কি হয়েছে? আপনাকে এতো অস্থির লাগছে কেন?”
” আমার সাথে চলো।”
” কোথায় যাব এতো রাতে?” অবাক কন্ঠে বলে মধু।
” তোমার আম্মু খুব অসুস্থ হসপিটালে এডমিট করেছে। তোমাকে নিয়ে যেতে বলেছে তোমার বাবা।”

থপ করে ফ্লোরে বসে বসে মধু। মায়ের শরীর খারাপ? এতো রাতে ওকে নিয়ে যেতে বলেছে মানে তো মায়ের শরীর অনেক বেশিই খারাপ আর ও কিচ্ছু জানত না।
বাসার কেউ জানতে পারল না এতো রাতে দু’জন মানুষ কোথায় গেল। সকালে ঘুম ভেঙে তিন্নি দেখল ওর পাশে মধু নাই। ও আড়মোড় ভেঙে উঠে বসল। মধু গেল কোথায় বাথরুমে ও নাই এতো ভোরে তো মধু উঠে না। গেল কোথায়?

নিচে নেমে ও মধু কে পেল না। সময় বাড়তেই জানা গেল মধু ও সমুদ্র দুজনের কেউ বাসায় নাই। দুজনে ভোর সকালে কাউকে কিছু না জানিয়ে কোথায় গেল? সবাই সমুদ্রের নাম্বারে অনবরত কল দিতে লাগল আর মধুর ফোনটা বালিশের নিচেই পাওয়া গেছে ও ফোন নিয়ে যায়নি। তিন্নি ভাবছে মধু তো কখনো ফোন হাত ছাড়া করে না আজ এমন কোথায় গেল যে ফোনটা পর্যন্ত নিতে পারেনি। আর কখন গেল ও একটু টের ও পেল না।

সবাই রেগে আছে সমুদ্র ও মধুর উপর এভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে লাপাত্তা হ‌ওয়ার জন্য আর তিন্নি দুশ্চিন্তায় আছে। মধু এমন বেখেয়ালি হয়ে কোথায় গেল?
নাফিসা বেগম রাগে গজগজ করতে করতে সোফায় এসে বসে পান বানিয়ে মুখে দিল। মিতুল এসে তার পাশে বসে বলল,,”আন্টি এতো চিন্তা করছেন কেন? নতুন কাপল ওরা এখনি তো ঘুরা ঘুরি করবে। মনে হয় দু’জনে কোথাও ঘুরতে গেছে।”

নাফিসা বেগম রাগে ফেটে পরে বললেন,” আমার এক ছেলে নিরুদ্দেশ।‌ তার শোকে সবাই কাতর আর সেখানে আমার ছেলে ব‌উ নিয়ে ঘুরতে গেছে?”
” এখানে তো দোষ সমুদ্রের না আন্টি। সব দোষ ওই মধুর। আমার মনে হয় ওই জোর করে সমুদ্র কে নিয়ে গেছে। সমুদ্র কি ফুয়াদ এর নিখোঁজের সময় এমন ঘুরতে যেতে পারে বলেন। ওই মধুর শয়তান।”

নাফিসা বেগম মধুর উপর আরো রেগে বোম হয়ে গেল। মিতুল নাফিসা বেগম এর মুখের ভঙ্গি দেখে মনে মনে শয়তানি হাসি হাসল। মধুকে ও এতো সহজে সুখের মুখ দেখতে দিবে না। অনেক জ্বালিয়েছে এখনো কথায় কথায় অপমান করে। সমুদ্র বিয়ে করেও ও সুখি হতে পারবে না আমি সুখি হতে দেব না। আন্টির মনে এমন বিষ‌ ঢুকিয়ে দেব ওর মুখটাও দেখলে রেগে যাবেন উনি।

সারাদিন পেরিয়ে গেল সমুদ্র ও মধুর কোন খোঁজ খবর নাই। কোন ভাবেই কন্টাক্ট করা যাচ্ছে না। নাফিসা বেগম তো মধুকে দোষারোপ করে যাচ্ছে শুধু।
তিন্নির চাচীর এমন কথায় রাগ লাগছে কিন্তু কিছু বলতে পারছে না। মধু আর ভাইয়া নিজের সম্মতিতেই গিয়েছে যেখানে যাওয়ার চাচী শুধু মধু কেই বকাঝকা করেছে।

যেটা ওর ভালো লাগছে না। মিতুল এর কটু কথা শুনে আরো রাগে গজগজ করে উপরে চলে যায়। এসব সহ্য হচ্ছে না ওর। রুমে এসে দেখে ওর নাম্বারেই সেই রং নাম্বারে থেকে আবার কল আসছে। ও কল কেটে দেয়। কিন্তু নাছোড়বান্দা ছেলেটা কল দিয়েই যাচ্ছে।
বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করে,,” হ্যালো সমস্যা কি?”

” ফোন ধরছো না কেন?”
” ধরছি না দেখতেই পাচ্ছেন তাহলে কর দিচ্ছেন কেন?”
” তুমি না ধরলে কল দেব না কবে বলেছি? উল্টো না ধরলেই আরো বেশি দেব।”
” কল দিয়ে আপনার লাভ কি বলেন তো? মানুষ কে বিরক্ত করে কি মজা পান?”
” অনেক লাভ আছে। লাভ ছাড়া তো আর কল দিচ্ছি না।”

তিন্নি রাগে মন চাচ্ছে ফোনটা এক আছাড় মেরে ভেঙে ফেলতে। কেমন মুখে মুখে তর্ক করছে। এতো নির্লজ্জ ছেলে ও দুটো দেখেছে কিনা জানা নাই।
” কি লাভ আছে?”
” আপনার কথা শুনছি। রাগ দেখছি এটাই তো আমার লাভ।”

তিন্নি আর ন্যাকামি সহ্য করতে পারল না। কল কেটে দিল। আর কল না দিলে ও বাঁচে। আর কল ও আসল না ও শান্তির নিঃশ্বাস ফেলে মধুর ফোন থেকে সমুদ্রের নাম্বারে কল দিল।
তিন্নি ফোন রেখে উঠে দাড়াতেই দেখতে পেল মিতুল ওর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ও আশ্চর্য গলায় বলল,,” আপনি ওখানে কি করছেন?”
মিতুল বলল,” দেখছি কি করছ। আসতে পারি?”

” আসেন।”
মিতুল রুমে এসে বলল,,” দেখি এটা না মধুর ফোন এখানে কেন?”
” মধু তো ফোনটা ফেলেই গেছে।”
” ওহ।সবাই ডিস্টার্ব করবে তাই হয়ত ফেলে গেছে ইচ্ছে করে। যাতে ওদের কেউ ডিস্টার্ব করতে না পারে।”
তিন্নি তেজি কন্ঠে বলল,,” আমার ফ্রেন্ডকে আমি ভালোই চিনি আপনার বলে চিনাতে হবে না। এবার আমার রুম থেকে যেতে পারেন।”

বেহায়া মিতুল তাও গেল না নির্লজ্জের মতো বসেই র‌ইল। তিন্নি রেগে ফোনে মনোযোগ দিল। আর মিতুল রসিয়ে রসিয়ে বলল,,” তিন্নি তোমার বান্ধবী কে নিজের রুমে রেখেছিলে কেন? হাজব্যান্ড ওয়াইফ এখন আলাদা থাকে নাকি। এজন্যেই মনে হয় দু’জনে মিলে কোথাও গেছে। তুমি তো ওদের মাঝে কাটা হয়ে ছিলে।”
রাগে তিন্নি শ্যামবর্ণ মুখটা ভয়ংকর হয়ে উঠল,,” আপনাকে আমি যেতে বলেছি না। বেহায়ার মতো এখন বসে আছেন কেন?”

মিতুল নিজেও রেগে গেল। এই মেয়েটা সব সময় ওর সাথে বাজে বিহেভ করে। মধুর সাথে থেকে থেকে মেয়েটা ভারি বেয়াদব হয়েছে।
” তিন্নি আমি তোমার বড়।‌ এবং এই বাড়ী ভবিষ্যৎ ব‌‌উ। আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বলবে।”
” আপনি নিজের সম্মান নিজে বজায় রেখে চলুন তাহলেই সম্মান পাবেন। অসম্মানিত হবার মতো কাজ করে সম্মান চাইবেন না। চেয়ে কখনো সম্মান পাওয়া যায় না।”

” কি বলতে চাইছ‌? ওই বেয়াদব মেয়েটার সাথে থেকে তুমিও বেয়াদব হয়ে গেছ।”
তিন্নি বলল,,” হ্যা হয়েছি। আমি বেয়াদব ই ভালো। তাও আপনার মতো নির্লজ্জের মতো অন্যের বাসায় পরে থাকি।”
” তুমি আমাকে থাকার খোটা দিলে?” বিস্মিত কন্ঠে বলল। অপমানে মিতুলের মুখটা লাল হয়ে উঠেছে।
তিন্নি বলল,,” হ্যা ঠিকি তো বলছি। আমার বাড়ি থাকছেন, আমার বাড়ির খাচ্ছেন আমাকেই বেয়াদব বলবেন। আমি মেনে নেব? অসম্ভব।”

তিন্নির কথায় নিভল মিতুল। তিন্নি যদি ওর নামে বিচার দেয় কাউকে তাহলে তো সর্বনাশ হবে। ও তিন্নির হাত ধরে বলল,,” সরি আমার ভুল হয়ে গেছে।”
তিন্নি ঝামটা মেরে হাত ছাড়িয়ে বলল,” আমাকে কোন সাহসে বেয়াদব বললেন? আমার বাসায় আমার রুম এ এসে আমাকেই বেয়াদব বলবেন?”

” আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি ভুলে বলেছি আসলে মধুর জন্য। আমি তোমাকে বলতে চাইনি।”
” আমার বন্ধু মধু ওকে আর কখনো বাজে কথা বলবেন না। চাচি কে তো অনেক কানপড়া দিয়েছেন এবার দয়া করে নিজের বাড়ি যান। অনেক তো অন্যের কানে বিষ দিলেন এবার অন্তত রেহাই দিন।”

প্রেয়সী পর্ব ৪৮ (২)

মিতুল মনে মনে রেগে আগুন হলেও সামনে কিছুই বলতে পারল না। কারো চোখে এই মুহূর্তে খারাপ হতে চাইছে না। ওর উদ্দেশ্য সবার চোখে খারাপ বানানো মধুকে। নিজের একটু ভুলের জন্য সব প্লান ভেস্তে দিতে পারবে না।
মিতুল সামনে শান্ত থাকার চেষ্টা করলেও ভেতরে ভেতরে আগুন হয়ে আছে। ওভাবেই বেরিয়ে গেল রুম থেকে।

প্রেয়সী পর্ব ৪৯ (২)