প্রেয়সী পর্ব ৫২(২)

প্রেয়সী পর্ব ৫২(২)
নন্দিনী নীলা

মধু গাড়িতে বসে আছে সমুদ্রের পাশে। বসে একনাগাড়ে কান্না করে যাচ্ছে। সমুদ্র মধুর দিকে ড্রাইভিং এর ফাঁকে ফাঁকে তাকাচ্ছে। মধু চোখ মুখ লাল করে কাঁদছে। সমুদ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,” ধরা পরে কাঁদছ! নাকি ফুয়াদ কে না পেয়ে কাঁদছ?”
মধু চোখ ভর্তি জল নিয়ে তাকাল সমুদ্রের দিকে। তারপর কান্না মিশ্রিত গলায় বলল,,” দুই কারণেই।”

” আচ্ছা। তা এখন কি করবে? তুমি তো দুই ভাবেই ফেঁসে গেলে!”
” আপনি ফুয়াদ কে কোথায় আটকে রেখেছেন বলেন আমাকে।”
” আমার কথা তুমি বিলিভ করবে না তাই কিছুই বলার রুচি নাই।”
” মিথ্যা কথা বললে কে বিলিভ করবে? সত্যি কথা বলুন বিশ্বাস করব।”
” সত্যি এটাই আমার ভাইকে আমি কিডন্যাপ করিনি।”
” মিথ্যা কথা।” মধু সাথে সাথে উত্তর দিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সমুদ্র ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,” দেখেছ বললাম না তুমি আমার কথা বিলিভ করবে না। তোমার মনের ভুল ধারণাই পুষে রাখবে।”
মধু বলল,,” কেন এই মিথ্যাচার করছেন আমি জানি না। আমি সব জেনে গেছি আপনার ভালোমানুষী মুখোশ আমার সামনে খুলে গেছে। তবুও কেন নিজেকে ইনোসেন্ট প্রমাণ করতে চাইছেন‌ আমি বুঝতে পারছি না।”

” আমি যা বলার সত্যি ই বলছি। তোমার বিশ্বাস না হলে তো আমার আর কিছু করার থাকে না।”
” আপনি হসপিটালে কার সাথে ফুয়াদ কে নিয়ে কথা বলছিলেন? এখন নিশ্চয়ই বলবেন আপনি ফুয়াদ কে নিয়ে কোন কথাই বলেননি। কিন্তু আমি নিজ কানে সব শুনেছি।”
সমুদ্র আর কোন কথা বলল না।
মধু ওর নিরবতা দেখে বলল,,” কথা বন্ধ হয়ে গেল বুঝি।”

” আমি যাই বলব না কেন তুমি বিশ্বাস করবে না তাই আর বলতে চাইছি না।”
” আমিও ফুয়াদ কে খোঁজে বের করব‌ই। দেখি আপনি কিভাবে তাকে লুকিয়ে রাখেন।”
” আমিও চাই আমার ভাই ফিরে আসুক সেটা তোমার মাধ্যমে হলেও সমস্যা নাই।”
” খোঁজে তো পাবোই। আর আপনার উদ্দেশ্য আমি কখনোই সফল হতে দেব না।”
সমুদ্র কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,” আমার উদ্দেশ্য মানে?”

” বুঝি না মানুষ কীভাবে এতোটা ড্রামা করে। আপনাকে না দেখলে আমার জানাই হতো না।”
মধু রাগে ফেটে পরে বলল।
দৌড়াদৌড়ি করে মধু আর লুকানোর মতো জায়গা পায় না উল্টো সমুদ্র কীভাবে জানি ওর সামনে এসে দাঁড়ায়। ভয়ে ওর আত্মা কেঁপে উঠে।
সমুদ্র ওর সামনে এসেই বলে,,” মধু দৌড়াদৌড়ি না করে চলো এখানে থেকে।”
মধু অস্থির কন্ঠে বলে,,” ফুয়াদ কোথায়?”

“ফুয়াদ এখানে নাই।”
” মিথ্যা এখানেই আছে।” তেজি কন্ঠে বলল মধু।
সমুদ্র বলল,,” তুমি এখানে ফুয়াদ কে দেখেছ?”
” না দেখিনি কিন্তু মনে হচ্ছে!”
” মনে হ‌ওয়া দিয়ে কি সব হয়? চলো এখানে থেকে।”
” কোথায় আটকে রেখেছে নিয়ে চলুন আমাকে ফুয়াদের কাছে।”

সমুদ্র এগিয়ে এসে জোর করে মধুর হাত ধরে বলে,,” পাগলামি না করে চলো আমার সাথে।”
একপ্রকার জোর করে টেনেহিঁচড়ে মধু কে নিয়ে বাসার বাইরে আসে। জোর করেই ওকে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও উঠে বসে। মধু প্রথমে বের হবার জন্য ছুটাছুটি করলেও থেমে যায় আর কান্নাকাটি করতে থাকে।

সমুদ্র এগারোটার পর বাসায় ফিরে মধু কে নিয়ে। এতো রাত করে বাসায় ফেরার জন্য সবাই ওদের জেরা করতে লাগে বিশেষ করে নাফিসা বেগম বেশি। আর তিন্নি ও মধু কে পেয়েই টেনে সবার থেকে আড়ালে এনে অবাক হয়ে সব জিজ্ঞেস করতে লাগে। ও ওকে রেখে হঠাৎ কোথায় গিয়েছিল, কেন গিয়েছিল, সমুদ্র কে কোথায় পেল। ও বলে গেল না কেন? হ্যানত্যান প্রশ্ন করে ওর মাথা ধরিয়ে দেয়।

মধুর মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। একেতে ফুয়াদ কে পায়নি। এতো সাহসিকতা দেখিয়েছে কিন্তু তবুও কোন লাভ হয়নি। ও কোন প্রশ্নের উত্তর দেয় না। শুধু বলেছে আমার মাথা ব্যথা করছে একটু ঘুমাতে চাই।
মধু ক্লান্ত ও বিধ্বস্ত মন নিয়ে রুমে আসে। তারপর গোসল করে শুয়ে পরে। তিন্নি ওর দিকে শুধু অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কি হয়েছে ওর কিছুই ও বুঝতে পারে না।

মাঝরাতে মধু ঘুম ভেঙ্গে যায়। ও উঠে রুম থেকে বেরিয়ে আসে সমুদ্রের খোঁজ নিতে। সমুদ্র কে উঠতে বসতে ফলো করবে এমনটাই ওর ইচ্ছে। ও লুকিয়ে রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় ভূতের মতো। দরজা খুলতে গিয়ে দেখে ভেতর থেকে লক করা। রাগ হয় দুইবার একটু একটু ধাক্কা দিয়ে সরে আসে। হঠাৎ মিতুল এর রুমের দিকে হাঁটা ধরে। মিতুল রাহীর রুমে থাকে। মধু রুমে উঁকি মারে। দরজা চাপানো ছিল। উঁকি দিতেই দেখে মিতুল এই মাঝরাতে টেবিল লাইট জ্বালিয়ে বিছানার মাঝে বসে আছে। মধু কপাল কুঁচকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।

এই মাঝরাতে মিতুল না ঘুমিয়ে এভাবে বসে আছে কেন? অনেক সন্দেহজনক লাগে বিষয়টা ওর কাছে। ও রুমে দরজা খুব সাবধানে আরো ফাঁকা করে মাথা ভেতরে ঢুকিয়ে দেয় আর গলা উঁচিয়ে দেখার চেষ্টা করছে মিতুল বসে কি‌ করছে?

মধু দরজা থেকে শুধু মিতুলের পেছন দিকটাই দেখতে পারছে। সামনে কি করছে মিতুল সেটা দেখতে পারছে না মধু সেটা দেখার জন্য উঁকিঝুঁকি মারতে লাগল। মধু এভাবে উঁকিঝুঁকি করতে গিয়ে ঠাস করেই দরজা খুলে ভেতরে চলে গেল। মিতুল ছিটকে পিছনে ফিরে তাকাল দেখল অন্ধকারে কেউ দাঁড়িয়ে আছে। মধু ভেতরে প্রবেশ করেই দেখেছে মিতুলের সামনে ফোন। কলে হয়ত কেউ আছে।

ভিডিও কল মধু সেটা দেখার আগেই মিতুল ওর দিকে ফিরে তাকিয়েছে আর মধু ভয়ে পিছু ঘুরে দৌড় দিয়েছে। আর এক দৌড়ে রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়। মিতুল ফোন অফ করে লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায়। ভয়ে ওর কপাল ঘামতে শুরু করেছে। ও তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে দেখে কে উঁকি মারছিল। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে তিনটা বাজে ও ভয় পায় এতো রাতে কে আসবে ওটা ভূত ছিল না তো? মিতুল ভয়ে কপাল মুছতে লাগে। ভয় প্রচুর পেলেও ওর মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয় কেউ ওকে নজর রাখছিল না তো? ও রুমে ছেড়ে বেরিয়ে আসে।

এদিক ওদিক চোখ ঘুরিয়ে দেখতে লাগে কেউ আছে নাকি। কিন্তু কেউ নাই‌। ও হেঁটে সামনে যেতে চায় কিন্তু কেমন জানি একটা ভয় ওকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রেখেছে ও যেতে পারে না। নিজের রুমেই আবার ঢুকে দরজা লক করে দেয়।

তিন্নি মধু কে রুমের মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঘুমঘুম চোখে ওর দিকে বিস্মিত নয়নে তাকিয়ে বলে,,” তুই ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
মধু তিন্নির আওয়াজ পেয়ে চমকে উঠে। বিছানায় উঠে বসে‌। ড্রিম লাইটের আলোয় দেখতে পায় তিন্নির চোখে মুখে চরম বিষ্ময়। মধু ঢোক গিলে ওকে বলে,,” আমি লুকিয়ে মিতুল আপুর রুমে উঁকি দিয়েছিলাম।”

” মানে কেন?”
” এমনিতেই। জানিস উনি এই এতো রাতেও জেগে বসে ছিল আর কার সাথে যেন কলে কথা বলছিল। আমি দেখলাম কিন্তু আমাকে চিনে নাই হয়তো।”

” তুই কি পাগল হয়েছিস কেন তার রুমে উঁকি দিতে গেলি। মিতুল জানতে পারলে তোকে জ্বালিয়ে মারবে।”
মধু বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগল সমুদ্রের কথা। কত কথা জমে আছে কিন্তু শেয়ার করার মতো কেউ নাই। তিন্নি কে যদি সব বলতে পারতাম কত ভালো হতো।
তিন্নি ওকে ধাক্কা দিয়ে বলল,,” কি হলো কথা বলছিস না কেন?”
মধু বলল,” কি বলব?”

” কেন গিয়েছিলি ওই রুমে?”
” ঘুমা।” মধু চোখ বন্ধ করে বলল।
” বলবি না?”
মধু আবার চোখ খুলে ওর দিকে তাকিয়ে বলল,,” ঘুম পাচ্ছে খুব দোস্ত।”
” আচ্ছা সকালে সব খুলে বলবি আমায়।”
দুজনেই ঘুমিয়ে পরে এরপর।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মধু বাইরে এসে মিতুল কে খুঁজতে লাগে। মিতুল নিচে বসে আছে সোফায় নাফিসা আন্টির সাথে। মধু সিঁড়ি দিয়ে নেমে ও আবার উল্টো ঘুরে উপরে উঠে। মিতুল নিচে আছে তাহলে ওর রুম ফাঁকা মধু তাড়াতাড়ি হাঁটা দেয় মিতুলের রুমে যাবার জন্য। মধু মিতুলের রুমে ঢুকে মধুর বুক ধরফর করতে লাগে।

রুমে এসেই প্রথমে বালিশ উঁচু করে। বালিশ উঁচু করতেই রাতেই সেই ফোনটা ভেসে উঠে‌। আনন্দ উত্তেজনায় মধু থমকে যায়। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা হাতে তুলে নেয়। ভয়ে সারা শরীর অস্বাভাবিক মাত্রায় তখন কাঁপছে। কাঁপার দমকে ও দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। ফোনটা অন করতেই বিপত্তিতে পরে লক খোলা নিয়ে। যা মনে আসে তাই দিয়ে তিন চার বার লক খোলার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়।

কি করবে এখন মধু। টেনশনে ও নখ কাটতে লাগে। হঠাৎ মাথায় আসে মিতুল চোখ ফুয়াদের উপর দূর্বল ফুয়াদের নাম দেখি। ফুয়াদের নাম দিতেই লক খুলে যায়। খুশিতে মধু চিৎকার করতে চায়। তাড়াতাড়ি কল লিস্টে ঢুকে রাতের নাম্বারটা নিজের ফোনে নিয়ে নেয়‌।
মধু তাড়াতাড়ি কাজটা করেই রুম থেকে বেরিয়ে আসে। বাইরে আসতেই সামনে পরে চিত্রা ভাবি তিনি ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে দেখেই মধুর গলা শুকিয়ে আসে।

ও আমতা আমতা করতে লাগে।
চিত্রা ভাবি বলে,,” মধু গুড মর্নিং।”
মধু নিজেকে স্বাভাবিক করে সামনে এগিয়ে হেসে বলে,,” ভাবি কেমন আছেন?”
” এক বাসায় থাকলেও মনে হয় আমাদের দেখা হয় এক যুগ পর তাই না?”
” জি ভাবি।” মধু মাথা নাড়িয়ে বলল।

প্রেয়সী পর্ব ৫২

মধু একটা ব্যাপার লক্ষ্য করেছে চিত্রা ভাবি আগে যেমন কঠিন মুখ করে থাকত এখন থাকে না। আগে ওকে এরিয়ে চলত এখন চলে না উল্টো হাসি মুখে কথা বলে।

প্রেয়সী পর্ব ৫৩ (১)