প্রেয়সী পর্ব ৫২

প্রেয়সী পর্ব ৫২
নন্দিনী নীলা

মধু চোখ পিটপিট করে তাকাতেই চমকে উঠে। ও একটা অপরিষ্কার ময়লা জমে থাকা রুমে বসে আছে। হাত পা নাড়াতে গিয়ে খেয়াল করল ওর হাত পা বাঁধা কথা বলতে গিয়ে অনুভবে করল ওর মুখটা ও বাধা বিষ্ময় এ হতভম্ব হয়ে ও এদিকে ওদিকে তাকাতে লাগল। এসব কি হচ্ছে ও কি স্বপ্ন দেখছে? গুন্ডা গুলোর পায়ের শব্দ নিজের কাছে আসতেই ভয়ে মধু কান্না করে দেয় আর অতিরিক্ত ভয়ে মধু অজ্ঞান হয়ে যায়। তাই তারপর কি ঘটেছে ওর মনে নেই। কিন্তু ও যে ধরা পরে অনেক বড়ো বিপদে পড়ে গেছে তখন অজ্ঞান হ‌ওয়ায় বুঝতে না পারলেও এখন ঠিকি বুঝতে পারছে।

মধুর হাত পেছনে নিয়ে বাধা ও হাত মুচড়ামুচড়ি করে হাত ব্যথা করে ফেলে। এখানে এইভাবে বন্দি হয়ে থাকতে হবে। এতোক্ষণে সমুদ্র কানে না চলে গেছে ওর খবর উফফ কি বিপদ হলো। কাজের কাজ তো কিছু হলোই না উল্টো ঝামেলা বাঁধিয়ে দিলাম। সমুদ্র যদি জেনে যায় আমি সব জেনে গেছি তখন কী হবে আল্লাহ। ভয়ে ওর কপাল ঘামতে লাগে। চিৎকার করতে ও পারছে না। নড়তেও পারছে না। এভাবে কি করবে ও।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মধু চোখ বন্ধ করছে তো খুলছে দুশ্চিন্তায় ওর দিশেহারা লাগছে। কি করবে এখানে থেকে কীভাবে মুক্তি পাবে কিছুই বুঝতে পারছে না। নিজেকে খুব অসহায় ভীতু লাগছে। এভাবে একা একা এসে ও ভুল করেছে।
দরজা খোলার শব্দ পেয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিল মধু। বন্ধ চোখ একটু খোলার মতো করে সামনে তাকিয়ে দেখল কে এসেছে। দেখল একটা মুখ ঢাকা লোক দাঁড়িয়ে ওর দিকে কেমন করে জানি তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তার দিকে তাকাতে ও ভয় লাগছে। মধু চোখ সম্পূর্ণ বন্ধ করে বসে আছে। ভয়ে ওর হাত পা কাঁপছে। লোকটা কথা বলল নাকি আরেকজনের এসে কথা বলল মধু জানে না।

দুই মিনিট বাদেই একটা কন্ঠ পেল।
তারপর দুজন মানুষ কথা চলল ওকে নিয়ে কি করবে স্যার কে জানাবে নাকি। হ্যানত্যান মধু তখনি চোখ মেলে তাকাল। দেখল লোক দুটো নিজেদের দিকে তাকিয়ে ওকে নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে মধু ভাবছে এখন এই দরজা দিয়ে বেরুতে পারলেই হয়ত ও অনেক কিছুই করতে পারত। কিন্তু বের হবে কি করে এর তো হাত পা সব বাধা।

রাগে দুঃখে মধু কথা বলার ট্রাই করল কিন্তু মুখ দিয়ে কোন আওয়াজ বের হলো না। শুধু উম উম করতে লাগল। লোক দুটো নিজেদের কথা অফ করে ওর দিকে তাকিয়ে ওকে দেখল তারপর গটগট করে বেরিয়ে গেল দুজনেই আর বাইরে থেকে শব্দ করে দরজা আটকে দিল।
মধু টেনশনে হাঁসফাঁস করতে লাগল। হাত পায়ের বাঁধন খোলার চেষ্টা করে আরো হাত পা ব্যথা করে ফেলল। কিন্তু খুলতে পারল না।

রাত তখন কয়টা বাজে মধু জানে না। বন্ধ রুমে হাত, পা ও মুখ বাধা অবস্থায় অনেকটা সময় কাটিয়ে দিল মধু। তারপর হঠাৎ দরজা খুলে ওর সামনে এসে দাঁড়াল সমুদ্র। যার চোখে মুখে চরম বিষ্ময়। সমুদ্র নিজের উত্তেজনাকে সামাল দিতে পারছে না। ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের দেখা পাওয়া যাচ্ছে। পাগলের মতো ছুটে এসেছে‌ বুঝাই যাচ্ছে। সমুদ্র এগিয়ে এসে মধুর সামনে ফ্লোরের বসে পড়ল।

মধু রাগান্বিত চোখে দুটো মেলে ওর দিকে আগুন দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে। সমুদ্র ওর পাশে বসে প্রথমে ওর মুখের টেপ খুলল। দীর্ঘ সময় পর মুখ খুলতেই মধু বড়ো বড়ো শ্বাস নিতে লাগল হাঁপানি রোগীর মতো। এতোক্ষণ যেন দমটাই বন্ধ হয়ে ছিল। সমুদ্র ওর পায়ের বাঁধন খুলতে যাবে পাশের দাঁড়িয়ে থাকা লোকগুলোর মধ্যে একজন বলল,,” বস কি করছেন?”

সমুদ্র হাত থামিয়ে ক্রোধের সাথে তাকাল লোকটার দিকে লোকটা ভয়ে পিছিয়ে গেল। সমুদ্র চিৎকার করে সবাইকে বাইরে যেতে বলল। সবাই বিনা বাক্যে বাইরে চলে গেল। রুমে এখন শুধু সমুদ্র আর মধু। সমুদ্র মধুর পায়ের ও হাতের বাঁধন খুলে দিল। মধুর হাত যেন ঝিমঝিম করছে। পেছনে নিয়ে শক্ত করে বেঁধে রেখেছিল। আবার ও মুচড়া মুচড়ি করছে খোলার চেষ্টা করে তাই অনেক ব্যথা করছে। মধু হাত নাড়াতে লাগল। ব্যথায় ওর চোখ মুখ কুঁচকে আসছে।
সমুদ্র ওকে ধরে উঠে দাড় করালো। মধু দাঁড়িয়ে সমুদ্রের বুকে ধাক্কা মেরে নিজের থেকে সরিয়ে দিল। সমুদ্র দুই কদম পিছিয়ে অবাক হতে তাকাল মধুর দিকে।

সমুদ্র এগিয়ে এসে মধুর সামনে দাঁড়িয়ে বলল,,” হাত ব্যথা করছে বেশি?”
মধু হাত নাড়িয়ে হাত ঠিক করার চেষ্টা করেছিল। সমুদ্রের কথা‌ শুনে ঘৃণা ভরা দৃষ্টিতে তাকাল ওর দিকে তারপর ঠাস করেই সমুদ্রের গালে থাপ্পড় মেরে বসল।
তারপর চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,,”দয়া করে আমার সাথে আদ্যিখেতা করবেন না। আমার হাতে ঠিক আছে দেখলেন তো থাপ্পড় কত জুড়ে দিলাম।”

সমুদ্র কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ও গালে হাত দিয়ে হতবিহ্বল চোখে মধুর দিকে তাকিয়ে আছে। মধুর চোখের ঘৃণা ওর ধরতে সময় লাগে নি। ও এগিয়ে এসে মধুকে বলল,,” ঘৃণার কারণ টা কি?”
” এখনো বুঝতে পারছেন না?”
” আসলেই বুঝতে পারছি না। তুমি এখানে কিভাবে এলে?” বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করল সমুদ্র।
মধু বলল,,” আপনার গাড়ির পেছনে লুকিয়ে এসেছিলাম।”

” হোয়াট?”
” আমি তিন্নির সাথে রেস্টুরেন্টে গিয়েছিলাম সেখানে থেকে আপনার সাথে এসেছি।”
” এভাবে লুকোচুরি করে কেন এসেছ? তুমি আমায় ফলো বা কেন করেছ?”
” করেছি করার মতো কাজ করেছেন বলেই।”
” ফলো করার মতো আমি কি কাজ করেছি?”

” এখনো অভিনয় করছেন? আপনি তো অভিনয়ে অস্কার পাবেন দেখা যাচ্ছে।”
সমুদ্র কিছুই বুঝতে পারছে না। মধুর কথা বার্তা ও শুধু অবাক হচ্ছে মধুর বিহেভিয়ার এ।
মধুই আবার বলল,,” খুব অবাক হচ্ছেন তাই না। আমিও হয়েছিলাম বিশ্বাস করেন যখন জেনেছি আপনি আমাকে পাবার জন্য নিজের ভাইকে আটকে রেখেছেন। সবার কাছে তাকে মৃত প্রমাণ করেছেন। শুধুমাত্র আমায় বিয়ে করার জন্য ছিহ!”
সমুদ্রের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল।

” হোয়াট? আর ইউ ম্যাড মধু? তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে কিসব বলছো আবুলতাবু্ল।”
মধু বলল,,” আমার মাথা একদম ঠিক আছে। মাথা খারাপ হয়েছে আপনার। না হলে কেউ নিজের ভাইয়ের সাথে এসব করতে পারে?”

” আমি কি করেছি? তুমি কেন মিথ্যা অভিযোগ আমাকে দিচ্ছ। আমি আমার ভাইকে জান দিয়ে ভালোবাসি। আমি ওকে কিডন্যাপ করব এমন একটা কথা তুমি ভাবতে পারলে কি করে মধু? এটা ঠিক আমি তোমাকে পছন্দ করতাম কিন্তু সেটা ফুয়াদের অনুভূতি জানার পর মাটি চাপা দিয়ে দিয়েছি। আমি তোমাকে পাওয়ার জন্যে নিজের ভাইকে মারব এমন নোংরা কাজ আমি করব?”

” ভালো সাজার নাটক একদম করবেন না। আপনিই করেছেন সব আমি জানি। হসপিটালে আপনি ফোনে সব বলেছেন আমি সব শুনেছি। একদম চালাকি করবেন না আমার সাথে।”
” আমি সত্যি কিছুই বুঝতে পারছি না মধু। তুমি কিসব বলতেছ?”
” আচ্ছা সব বাদ দেন। এই গুন্ডা গুলো কারা এদের সাথে আপনার কি সম্পর্ক?”
” কোন সম্পর্ক নাই।”

” তাহলে এদের কাছে কার জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলেন তখন।”
” খাবার নিয়ে এসেছিলাম সেটাও জানো?”
” দেখুন আমার সাথে চালাকি করবেন না। এখানে ফুয়াদ কে আটকে রেখেছেন আমি জানি। ওর কাছে আমাকে নিয়ে চলুন।” চিৎকার করে বলল মধু।

সমুদ্র মধুর কথায় অবিশ্বাস্য চোখে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। মধুর চোখে মুখে রাগে ছাপ। সমুদ্র ওর রাগ দেখে হতভম্ব।
” তুমি ধরেই নিয়েছ ফুয়াদ কে আমি কিডন্যাপ করেছি!”
” যেটা সত্যি আমি সেটাই বলেছি। যার সাথে গুন্ডা দের সম্পর্কে সে এর চেয়ে ভালো আর কি বলতে পারে?”
” তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো মধু!”

” হ্যা করছি। আপনি এখনি আমাকে ফুয়াদ এর কাছে নিয়ে না গেলে আমি থানায় আপনার নামে কেস করব।”
নিজের মাথাটা অনেকটা সময় ঠান্ডা করে রাখতে পারলেও এবার আর পারল না সমুদ্র। রাগে ওর চোখ মুখ লাল হয়ে উঠল। রাগী কন্ঠে বলল,,” তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো মধু। চলো আমার সাথে।”
বলেই সমুদ্র মধুর হাত ধরতে চাইল‌। মধু হাত ধরতে দিল না উল্টো দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে যেতে বলল,,” আমি জানি ফুয়াদ এখানে কোথাও আছে। আমি তাকে ছাড়া কোথাও যাব না। আপনার ভালো মানুষিক মুখোশ আমি সবার সামনে বের করে দেব।”

সমুদ্র চিৎকার করে উঠল,,” মধু দাঁড়াও। দেখো বাড়াবাড়ি করে নিজের বিপদ ডেকে এনো না।”
মধু দৌড়ে এদিকে ওদিকে ছুটতে লাগল। এদিকে বাইরের ছেলে গুলো আচমকা মধু কে দৌড়াতে দেখে চমকে উঠে। ধরার আগেই মধু অন্য দিকে চলে যায়। সমুদ্র কে পেছনে ছুটতে দেখে তারা ও মধু কে ধরতে পিছু ছুটে। মধু ভালো করে দৌড়াতে ও পারছে না। হাঁটু ব্যথা হয়ে আছে তখন গড়িয়ে পরার জন্য।

একটু দৌড়ে এক গলির মধ্যে বস্তা পেল। মধু বস্তার পিছনে লুকিয়ে পড়ল। বস্তার উপরে একটা ময়লা কাপড় ছিল মধু একবারে সেই কাপড়ের দিয়ে নিজেকে ঢেকে ফেলল। পেছনে থেকে সবাই দৌড়ে সামনে চলে গেল। মধু আড়াল থেকে বেরিয়ে আবার উল্টো দিকে দৌড় দিল।

প্রেয়সী পর্ব ৫১

সমুদ্র রা পেছনে মধুর ধুপধাপ আওয়াজ পেয়ে আবার পিছু ঘুরল। মধু কোনদিকে যাবে কিছুই বুঝতে পারছে না। সমুদ্রের হাতে ধরা পরে গেছে সমুদ্র ওকে আর ছাড়বে না। যেভাবেই হোক ওকে ফুয়াদ কে নিয়েই ফিরতে হবে।

প্রেয়সী পর্ব ৫২ (২)