বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩১

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩১
জাওয়াদ জামী

” আফরোজা, এই বেয়াদব আজ পর্যন্ত তোমার কাছে যত টাকা রাখতে দিয়েছে, সব ফেরত দিয়ে দাও। সে লায়েক হয়েছে। আমাদেরকে তার আর প্রয়োজন নেই। বড় মাপের ডক্টর বলে কথা! লাখ লাখ টাকা কামাই করছে। তাই আমাদেরকে মানুষ বলে মনে করছেনা। ” সানাউল রাশেদিন গরজাতে গরজাতে বললেন।
এতে তাহমিদের কোন হেলদোল নেই। ও ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে পানি পান করছে।

” কি হয়েছে! এভাবে বলছ কেন? তিনজন একসাথে বাজার করতে গেলে কিন্তু বাসায় এসেই শুরু করেছ! ছেলেটাকে কি একটুও শান্তি দিতে তোমার মন চায়না? ”
” তোমার ছেলে নিজেই শান্তি খুঁজে নিয়েছে। তাকে তার মত থাকতে দাও। আজ থেকে সে আলাদা খাবে। তার কোন বিষয়ে কেউ নাক গলাবেনা। ” সানাউল রাশেদিনের রা’গ কমার কোন লক্ষ্মণ নেই।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” তুমি এবার বেশি বলছ কিন্তু। কি করেছে ও? বাসায় আমরা মানুষ কয়জন, আরেকটা ছেলেতো এখানে থাকেইনা, এখন আরেকজনকে আলাদা খেতে বলছ? তোমার বিবেক বলে কিছু আছে? ”
” না ভাবি, বড় ভাই মোটেও ভুল কিছু বলেনি। ছেলেকে আমরা মানুষ করতে পারিনি। এই ছেলের মধ্যে অর্থের দম্ভ ঢুকেছে। সে সম্পর্ককে অর্থের মাপকাঠিতে দেখতে শিখেছে। ” এবার মুখ খুললেন শফিউল রাশেদিন।

এবার ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে গেছে। কিন্তু তাহমিদ সেসবে পাত্তা না দিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
কুহু রান্নাঘরের সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ওর বোধগম্য হচ্ছেনা কি হল এতটুকু সময়ের মধ্যে।
” তাওহীদের বাবা, এত টেনশন নিতে পারছিনা। কি হয়েছে একটু বলবে কি? আমার ছেলে কিন্তু এতটাও খারাপ নয়। ” তাহমিনা আক্তার স্তিমিত গলায় জিজ্ঞেস করলেন।

” ও বাজারে গেল সেটা ঠিক আছে। প্রয়োজনীয় সকল কিছু কেনার পর, ও টাকা পরিশোধ করল। অনেক নিষেধ করেছি, কিন্তু ও শোনেনি। এরপর লিষ্টের বাইরে মাছ-মাংস কিনল। সেখানেও আমাদেরকে টাকা দিতে দিলনা। ওকে আগেই বলেছিলাম, সংসারের কোন খরচ ওকে দিতে হবেনা। ও আগে নিজের স্বপ্ন পূরণ করুক। আজ প্রায় ত্রিশ হাজার টাকার কেনাকাটা করল। এতগুলো টাকা গোছালে একটা দিকে কাজে লাগাতে পারত। ”

এতক্ষণে বিষয়টি সবার বোধগম্য হল। কুহুও যেন হাঁপ ছাড়ল।
” তাই বলে তোমরা দুই ভাই মিলে ছেলেটাকে আলাদা খাওয়ার কথা বলবে! দিনদিন কি তোমরা ছোট হচ্ছ? ও নাহয় বাজার করেছেই। তোমরা বাসায় এসে সেই পরিমান টাকা আমার কাছে দিতে পারতে। ওর টাকার সাথে রেখে দিতাম। কিন্তু সেটা না করে হম্বিতম্বি শুরু করে দিলে। ” আফরোজা নাজনীন ভিষণ রে’গে গেছেন।
তাহমিনা আক্তার শুধু ভাসুরের জন্য কিছু বলতে পারছেননা। তারও প্রচন্ড রা’গ হয়েছে। তিনি সেখান থেকে রান্নাঘরে চলে আসলেন।

তাহমিদ গোসল সেড়ে এসে মেডিকেলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন সময় কুহু রুমে আসল।
” কি বউ, বাজার পছন্দ হয়েছে? ”
” আপনি খুব খারাপ। বাবাকে বললে কি হত আমার কথা রাখতেই আপনি বাজার করেছেন? ”
” এটা আমাদের ঘরের বিষয়। তাই সেটা বাহিরে যাওয়া উচিৎ নয়। এবার একটু কাছে এস, আদর করি। ”

” পা’গ’ল! আপনার সাথে কোন কথা নেই। আমার জন্য কি বিচ্ছিরি ঘটনাটাই না ঘটল। ভিষণ লজ্জা লাগছে। ”
” তাহলে চুমুবিহীন একটা দিন আমাকে কষ্টে পার করতে হবে! ” বেজার মুখে বলল তাহমিদ। ওর মুখভঙ্গী দেখে কুহু না হেসে পারলনা। ও এগিয়ে এসে তাহমিদের বুকে মাথা রাখল।
তাহমিদ কুহুকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দেয়।

” আজ ক্লাস আছে? ”
” এগারোটায় একটা আছে। তারপর আরেকটা। ”
” তাহলে আর দেরি করোনা। তৈরি হয়ে নাও। তার আগে আমার সাথে খাবে চল। ”
” আমি মা,ফুপুর সাথে খাব যে। আমাকে ছাড়া মা খায়না। ” কুহু মুখ ভার করে বলল।
” আমার সাথে না খাও, আমাকে খাবার পরিবেশন করতে পারবেতো? ”
” পারব। ”

” তাহলে তাই কর। এবার চল। আজ দেরি হয়ে গেছে। মেডিকেলে পৌঁছাতে অনেক সময় লাগবে। ”
” চলুন। ”
সানাউল রাশেদিন আর শফিউল রাশেদিন দুই ভাই খাবার সামনে নিয়ে বসে আছেন। তারা তাহমিদের জন্য অপেক্ষা করছেন। তাহমিদ আসলে তারা খেতে শুরু করলেন।

” বড়মা, আজকের পর থেকেতো আর তোমাদের সাথে খাওয়া হবেনা। আমাদের দু’জনের সংসারে যা যা লাগে, তুমি সব গুছিয়ে দিও। কুহু তোমার প্রয়োজনমত সবকিছু নিয়ে রান্না কর। একটুও লজ্জা পাবেনা, বুঝলে? তোমার শ্বশুর মহোদয়েরা খুবই দয়ালু। তাদের কাছে কিছু চাইলে, তারা হাসতে হাসতে সেগুলো তোমাকে এনে দিবে। ”
তাহমিদের কথা শুনে দুই ভাই মুখ শক্ত করে বসে থাকেন।

” তুই থামবি? আমার আর এসব ভালো লাগেনা। মন চায় সব ছেড়ে ছুড়ে কোথাও চলে যাই। ” তাহমিনা আক্তার ছেলেকে ধমক দিলেন।
” তুমি যেখানেই যাও আমাকে আর কুহুকে সাথে নিয়ে যেও। তবে তার থেকেও বেশি ভালো হয়, দুই সিনিয়রকে রেখে আমরা সবাই মিলে কোথাও হাওয়া হয়ে যাই। দুই ভদ্রলোক তখন মনের সুখে বাজার করে খেতে পারবে। ”

” তাহমিদ তুই কি পা’গ’ল হয়েছিস, বাপ? তোর বাবা আর চাচ্চুকে রেখে আমরা কোথায় যাব? আমরা যেখানেই যাই তাদেরকে নিয়ে যাব বুঝলি? ”
” তোমার যা ইচ্ছে, বড়মা। কিন্তু কোথাও যাওয়ার আগ পর্যন্ত আমার বউকে আলাদা রান্না করার ব্যবস্থা করে দিও। হাজার হোক আমি বাধ্য ছেলে। গুরুজনদের কথা তো অমান্য করতে পারিনা। ”

” চুপ কর, ফাজিল ছেলে। একই বাসায় থেকে আলাদা খাবি কিরে? তারা বললেই, তাদের কথা মানতে হবে? জানিসই তো তোদের গোষ্ঠীতে কিছু সিজনাল ত্যাড়া মানুষ আছে। কারনে-অকারনেই যাদের ত্যাড়ামো করার স্বভাব। ”
দুই ভাই কিছু না বলে চুপচাপ খেয়ে চলেছেন। তারা দুইজনই বুঝতে পারছেন, তারা আজ বাজেভাবে ফেঁসে গেছেন।
আনান সন্ধ্যার পর ‘ কুঞ্জছায়া ‘ আসল। এবার ও বেশ কিছুদিন পর এখানে এসেছে। মনি দরজা খুলে দিতেই ও চিৎকার করে আফরোজা নাজনীনকে ডাকতে থাকে।

আফরোজা নাজনীন নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে আনানকে দেখে অবাক হয়ে গেছেন।
” আনান, তুই কতদিন পর এমুখো হয়েছিস, বাবা! কেমন আছিস তুই? কতদিন দেখিনি তোকে। ”
” আমি ভালো আছি, খালামনি। তুমি কেমন আছো? খুব ক্ষুধা লেগেছে। খাবার আছে? দুপুরে বাসায় যাইনি। বন্ধুদের থেকে নোটস জোগাড় করতে গিয়ে দেরি হয়ে গেছে। তাই সোজা এখানে চলে আসলাম। বাসায় যেতে চাইলে আরও রাত হত। ”
” খাবার থাকবেনা কেন! তুই ফ্রেশ হয়ে আয়। আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি। ”

সিক্তা রুম থেকেই আনানের গলা শুনতে পেয়ে তড়িঘড়ি করে নিচে নামে। হঠাৎই যেন ওর হৃদয় আকাশে মেঘমল্লার সুখের বৃষ্টি ঝরায়। এই ছেলেটা অল্প ক’দিনেই ওর অস্তিত্বে মিশে গেছে।
ও পা’গ’লে’র মত ভালোবাসে সিক্তাকে। সিক্তার কতশত দুষ্টুমি, পা’গ’লা’মি হাসিমুখে সহ্য করে। কয়েকদিন আগের সেই সদা চঞ্চল ছেলেটা যেন হঠাৎ করেই একজন দ্বায়িত্ববান পুরুষে রুপান্তরিত হয়েছে।
সিঁড়ির মাঝখানে দু’জন মুখোমুখি হয়। আনান সিক্তাকে দেখে ঠোঁটের কোন প্রসারিত করল।

” আমার ভবিষ্যৎ বউ, কেমন আছিস? ” সিক্তাকে চোখ মে’রে বলল।
” একটু আগেও তোমার সাথে কথা হল। তখনতো বললেনা, তুমি এখানে আসবে! ”
” তখন বললে কি এখন তোর এভাবে অবাক হওয়া হাসিমাখা মুখটা দেখতে পেতাম? তোর হাসিতে আমার এক চিলতে সুখ, এটা কি জানতে পারতাম? তুই নিচে যা, আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ”
সিক্তা আনানের কথায় মাথা নেড়ে সায় দিয়ে নিচে যায়।
আনান তাহমিদের রুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

” কোকিলা, আছিস? একটু ভেতরে আসতাম যে। ”
কুহু এই সময় আনানের গলা শুনে একটু অবাক হয়। ও বিছানা থেকে নেমে শাড়ি ঠিকঠাক করে দরজার কাছে আসল।
” ভাইয়া, তুমি! আমার রুমে আসতে তোমার পারমিশন লাগবে? এস ভেতরে এস। ”
” আমাকেতো পা’গ’লে কা’ম’ড়ে’ছে! বিনা পারমিশনে তোর রুমে ঢুকে, ঐ তাড় ছেঁ’ড়া ডক্টরের চক্ষুশূল হই। ”
” ভাইয়া, উনি মোটেও তাড় ছেঁ’ড়া নন। ”

” আরিব্বাস! এ আমি কাকে দেখছি! এক পা’গ’ল ডক্টরের জন্য ভাইয়ের মতবাদকে ভুল বলছিস! ঐটা হার্ট স্পেশালিষ্ট না হয়ে, পাবনা মেন্টালের ডক্টর হলে ভালো হত। তুই আর মানুষ পেলিনা, ঐ তাড় ছেঁ’ড়া’কে’ই পটাতে গেলি। ”
” আমি উনাকে মোটেও পটাইনি। এটা তোমার ভুল ধারনা। ”

” বাদ দে। এটা তোর শ্বশুর বাড়ি হওয়ার সাথে সাথে আমার কপাল পু’ড়ে’ছে। আগে এসে এই রুমেই থাকতাম, কাপড়চোপড় এখানেই রাখতাম। এখন থেকে আর সেটা হবেনা। শ্বশুর বাড়িতে তোর কত আদর কিন্তু আমার কপালে সেটা নেই। আর এরজন্য ঐ পা’গ’ল ডক্টর দায়ী। ”

” এই বাড়ির সবাই তোমাকে খুব আদর করে, ভাইয়া। উনিও তোমাকে অনেক ভালোবাসেন। ”
” জানিতো, সবই জানি। এবার আলমিরা খোল। তোর পা’গ’ল ডক্টরের পোশাকআশাকের সাথে আমার টি-শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট আছে। আমাকে সেগুলো বের করে দে। আজ থেকে নিজের রাস্তা নিজেকেই দেখতে হবে। অন্য রুমে শিফ্ট হতে হবে। ”

কুহু আনানের কথামত তাহমিদের পোশাকের পাশ থেকে আনানের কয়েকটা শার্ট, টি-শার্ট, জিন্স, থ্রী কোয়ার্টার বের করে দিল। আনান সেগুলো নিয়ে দোতলার আরেকটা রুমে যায়।
সেদিনও তাহমিদের বাসায় ফিরতে রাত হল। আনান, সিক্তা, কুহু, নীরা সবাই ড্রয়িংরুমে আড্ডা দিচ্ছিল। আনানকে দেখে তাহমিদ একটা গা জ্বা’লা’নো হাসি দেয়। কেউ না বুঝলেও আনান ঠিকই বুঝতে পেরেছে।

” কি রে, আনান, তোর চেহারা মনে হচ্ছে চমক দিচ্ছে? স্পা, ফেসিয়াল করছিস নাকি! তা এতদিন পর এই গরীবখানায় কি মনে করে? ”
” দেখেছিস কোকিলা, আমি বলেছিলামনা এটা আস্ত একটা তাড় ছেঁ’ড়া? মানুষের হার্ট কা’টা’ছেঁ’ড়া করতে করতে এটার মাথা নিশ্চয়ই গেছে। ” কুহুর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে কথাগুলো বলল আনান।

” আমার বউয়ের কানে কানে এত কথা কিসের? দিনদিন দেখছি তোর চরিত্রের অবনতি হচ্ছে! ভালো হয়ে যা আনান। এখনও সুযোগ আছে ভালো হয়ে যা। ”
” ভুলে যেওনা তোমার বউ আমার বোন। আর বোনের কানে কানে ভাই কথা বলতেই পারে। তাই আমি ভবিষ্যতেও এভাবেই কথা বলব। ”
” সিক্তা, তুই ঐ ফাজিলকে থামতে বল। নইলে ঐটার কান ছিঁ’ড়ে নিব কিন্তু। ” তাহমিদ একটু এগিয়ে এসে সিক্তার কানে কানে বলল।

” ওর কানে কানে কি বলছ, ভাই? ” আনান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল।
” আমি আমার বোনের সাথে কথা বলছি। সেসবে তোর কান দিতে হবে কেন? ভাই-বোনের মধ্যেকার কথা শোনার আগ্রহ জাগছে কেন তোর? ”
আনান বুঝল ওর কথার ফাঁদে ও নিজেই জড়িয়েছে। ব্যাটা আস্ত একটা ধড়িবাজ।

” ঝগড়া বাদ দিয়ে এখন রুমে চলুন। আমরা আপনার জন্য না খেয়ে বসে আছি। আপনি ফ্রেশ হয়ে আসলেই আমরা খাব। ”
” এত রাত পর্যন্ত না খেয়ে থাকার কোন দরকার ছিল কি! এটা কিন্তু তোমরা মোটেও ঠিক করনি। যাও তুমি টেবিলে খাবার দাও। আমি দশ মিনিটেই আসছি। ”

তাহমিদ ফ্রেশ হয়ে আসলে, সবাই একসাথে খেয়ে নেয়। এরপর বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দেয়।
তাহমিদের কথামত গত চারদিন ধরে তাওহীদকে ফোন দেয়নি নীরা। তাহমিদের ওপর ওর যথেষ্ট আস্থা আছে। কিন্তু তবুও একটা ভয় ওকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে। এদিকে গতকাল থেকে রাকিবও ওকে বিরক্ত করেনি। এই বিষয়টা আরও ভাবাচ্ছে নীরাকে। রাকিব কি কোন গভীর ষড়যন্ত্র করছে?

তিনদিন পর হঠাৎ তাহমিদ নীরাকে ফোন দিয়ে মেডিকেলে যেতে বলল। তাহমিদ আগেই তাহমিনাকে বলেছে, নীরাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবে। তাই বাড়ির কেউ কোন প্রশ্ন করেনি।
নীরা মেডিকেলে পৌঁছুলে, তাহমিদ ওকে নিয়ে সরাসরি এসপির কার্যালয়ে যায়। সেখানে ওর জন্য অপেক্ষা করছিল ওর বন্ধু যে এই এরিয়ার এএসপি। আর এই এরিয়ার এসপি ওর এক কলিগের হাজবেন্ড।
নীরা এসপি অফিসে গিয়ে বেশ ঘাবড়ে যায়। তবে খুব দ্রুতই নিজেকে সামলে নেয়।

এরপর ও বেশ গুছিয়েই এসপি র প্রশ্নের উত্তর দেয়
তাহমিদ গোপনে সবকিছু করছে। ওদের ফ্যামিলির একটা রেপুটেশন আছে। ও কিছুতেই চায়না, ওর সামান্য একটা ভুলে ওর বাবা-চাচ্চুদের অসম্মান হোক।
রুগী দেখার ফাঁকে তাহমিদ ফোন করে তাওহীদকে।

” হ্যাঁ তাহমিদ, বল। কেমন আছিস তোরা? কুহু কেমন আছে? ”
” আমরা সবাই ভালো আছি। তুমি কবে আসছ ঢাকা? ”
” আপাতত কোথাও যাচ্ছিনা। ”
” সেটা বললেতো হচ্ছেনা। তোমাকে কাল সকালেই আমি ঢাকা দেখতে চাই। তুমি কিভাবে আসবে সেটা তোমার ব্যাপার। কিন্তু আসতে তোমাকে হবেই। ”

” এমন গোঁয়ারের মত কথা বলছিস কেন? আমি একটা চাকরি করি। সেখান থেকে ইচ্ছে করলেই ঢাকা যেতে পারিনা। ”
” তুমি কি পার আর কি পারনা, সেটা আমি ভালো করেই জানি। আমি আগামীকাল সকাল আটটার মধ্যে তোমাকে আমার চেম্বারে দেখতে চাই। আর তুমি না আসলে আমি কি করতে পারি সেটা তুমি ভালো করেই জান। তাই আমি চাইবনা ছোট ভাই হিসেবে এমন কোন পদক্ষেপ নিতে, যেটাতে বড় ভাইয়ের অসম্মান হয়। ” তাহমিদের প্রচ্ছন্ন হুমকি শুনে তাওহীদ একটু ঘাবড়ে যায়। ও ভালো করেই জানে, ওর ছোট ভাই ওপরে যতটা ভালোমানুষি দেখায় ভেতরে ঠিক তার উল্টো।

” আমি চেষ্টা করব। ” তাওহীদ স্তিমিত গলায় বলল।
” সেটা তোমার ব্যাপার। তবে একটা কথা কি জান? নিজের ভালো পা’গ’লেও বোঝে। রাখছি। ” তাহমদি ফোন কেটে রোগী দেখায় মন দেয়।
পরদিন সকাল আটটটার কয়েক মিনিট আগে তাওহীদ মেডিকেলে পৌঁছে। ও সরাসরি তাহমিদের চেম্বারে গিয়ে বসে। তাহমিদ ওর জন্যই অপেক্ষা করছিল।
সকাল সাড়ে নয়টায় তাহমিদ তাওহীদকে নিয়ে কোর্টে পৌঁছাল। তাওহীদ এতে বেশ অবাকই হয়েছে।

” কি ব্যাপার তুই এখানে কেন? ”
” যার দ্বায়িত্ব সে পালন না করলে, অন্যকেই নাক গলাতে হয়। তোমার কাছে একটা অনুরোধ থাকবে, সব প্রশ্নের ঠিকঠাক উত্তর দেবে। ”
তাহমিদ জজের রুমে যায়। যেখানে ওর বন্ধু আর এসপি অপেক্ষা করছি৷
মিনিট খানেক পর তাহমিদের ফোন আসলে ও বাহিরে যায় এব দুই মিনিট পরই নীরাকে নিয়ে ভেতরে ঢোকে। নীরা তাওহীদের দিকে না তাকিয়ে চুপচাপ বসে থাকে।

এরপর জজ সাহেব আসলে, তার সামনেই সব কথা হয়। তাওহীদ সব শুনে বড় একটা ধাক্কা খায়। ভেতরে ভেতরে এতকিছু ঘটেছে অথচ ও নীরাকে ভুল বুঝেছে!
জজ এব এসপির সহায়তায় অতি গোপনে মামলার কার্যক্রম পরিচালিত হয়। কয়েকদিন আগেই রাকিবকে এ্যারেষ্ট করা হয়েছে। সব প্রুভ দেখিয়ে রিমান্ডে নিতেই গড়গড় করে সব স্বীকার করেছে রাকিব। ওকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিলেও, সে কোন সুবিধা করতে পারেনি। সব প্রমান ওর বিরুদ্ধে কথা বলছে। এছাড়াও ওর অতীতের রেকর্ড ভালো নয়।

নিজ থানায় কয়েকটা মামলাও আছে ওর নামে। একটা মা’র্ডা’র কেসের প্রথম আসামি সে। ধনীঘরের মেয়েদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করত। নীরাকেও তাই করতে চেয়েছিল। ও ভেবেছিল, ফেইক ছবি তাওহীদ, নীরার কাছে পাঠিয়ে বিরাট অংকের টাকা আদায় করবে। কিন্তু ঘটনা উল্টোই ঘটেছে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩০

ময়মনসিংহ থানায় যোগাযোগ করে রাকিবের সব মামলা রি ওপেন করা হল। ওর জেল থেকে বের হওয়ার সব পথ রুদ্ধ করেই তাহমিদ বাসায় ফিরল। ওর সাথে তাওহীদ আর নীরাও আছে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩২