বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৩

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৩
জাওয়াদ জামী

” ফুপু আজকে কি রান্না হবে? তুমি আমাকে বলে দিলে আমি সব রেডি করতাম। ” কুহু আফরোজা নাজনীনের কাছে এসে জানতে চাইল।
” সোনা মা, তুই কি আমাদের অলস বানাতে চাস? তোর কিছুই করতে হবেনা, যা করার আমি আর তাহমিনা করব। আর হেল্প করার জন্য দুইজন মেইড আছে তো। তুই আজ ভার্সিটিতে গেলিনা কেন? এভাবে ক্লাস মিস দিলে চলবে? ”

” আজকে ক্লাস ছিলনা, ফুপু। এসব কথা বাদ দিয়ে, এবার বল কি রান্না হবে? আমি যেদিন বাসায় থাকব, সেদিন তোমাদের রান্নাঘরে আসতে হবেনা। আমিই এদিকটা সামলাব। ”
” তাহমিদের জন্য চিংড়ির মালাই কারি, করলা-আলু ভাজি, তাওহীদের জন্য ইলিশের সর্ষে বাটা, আলু-বেগুন দিয়ে ইলিশের ঝোল করবি। আর দেখ পুঁইশাক এনেছে তোর ফুপা। পুঁইশাক মসুর ডাল দিয়ে রান্না করবি। আর এক কাজ করিস, ঝাল কম দিয়ে মুরগী রান্না করিস। তূর বেশি ঝাল খেতে পারেনা। এক কাজ করি সোনা মা, আমি সব গুছিয়ে দেই, তুই রান্না কর। ”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” তোমার কিছুই করতে হবে না। আমি সব করে নিব। কিন্তু ফুপু, ভাইয়া তো কিছুই খেলোনা। আমি পরোটা বানাই, তুমি ভাইয়াকে ডেকে নিয়ে আস। ”
” তোর এখন পরোটা বানানোর দরকার নেই। তুই রান্নার আয়োজন কর। তাওহীদের যখন ক্ষুধা লাগবে, ও খেতে চাইলে তখন করে দিস। শোন, আমি তোর দিদুনের রুমে আছি। কোন প্রয়োজন হলে ডাক দিস। ”
” ঠিক আছে, ফুপু। ”

তাহমিনা আক্তার বড় ছেলেকে বাসায় দেখে ভিষণ খুশি হয়েছেন। তিনি ছেলেদের জন্য পিঠা তৈরি করবেন বলে তোড়জোড় করছেন। চালের গুঁড়া রোদে দিয়ে ছাদের দরজায় চেয়ার নিয়ে বসে রয়েছেন। আপাতত কিছুক্ষণ তিনি নিচে যেতে পারবেননা। চালের গুঁড়া ভালোভাবে রোদে শুকাতে হবে। তার চিন্তা নেই, তিনি জানেন তার দুই ছেলের বউ মিলে রান্নাঘর ভালোভাবে সামলাবে। তার ভাগ্য ভালো। মেয়ের মত দুইটা ছেলের বউ পেয়েছেন। এখনকার অধিকাংশ মেয়েরা যেখানে আত্নকেন্দ্রীক। নিজের মত করে আলাদা সংসার পাততে চায়। শ্বশুর-শ্বাশুড়ির অস্তিত্ব সেখানে থাকেনা। সেখানে নীরা আর কুহু সম্পূর্ণই ব্যাতিক্রম। দু দুটো হীরার টুকরা তার সংসারে এসেছে।

লম্বাচওড়া গড়নের সুর্দশন একটা ছেলে কয়েকদিন থেকে একজনের খোঁজে পুরো এলাকা চষে বেড়াচ্ছে। গত একমাস যাবৎ সে ঢাকা শহরের এদিক-সেদিক ঘুরছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত মানুষটার দেখা মেলেনি। রা’গে হাতে থাকা চায়ের কাপ রাস্তায় আছাড় মারল। দোকানী ছেলেটার এমন কাজে বিরক্ত হয়ে তেড়ে আসলে ছেলেটা পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকার নোট বের করে দোকানীর কাছে দেয়।

তার মাথা কাজ করছেনা। এত বড় ঢাকায় সে কোথায় কোথায় খুঁজবে। বাধ্য হয়ে অন্য কিছু করার সিদ্ধান্ত নেয়। আজকেই সে ঢাকা ছাড়বে। এরপর শুরু করবে তার আসল খেলা।
” আম্মু ও আম্মু, আব্বুকে বলনা, আমাদের ঢাকা নিয়ে যেতে। কতদিন হয়ে গেল আপুকে দেখিনা৷ বিয়ের পর আপুও আসলনা আর আমাদেরও যাওয়া হলোনা। ” দৃষ্টি কয়েকদিন থেকেই ওর মায়ের সাথে জিদ করছিল।

” তর বাপে আসুক। তারে কইয়া দেখি। হের কাম ইকটু কম হইলে, হেয় তোগোরে কবেই ঢাকা নিত। আমি তাহমিদরে ফোন কইরা আবার কইলাম কতবার। হের নাকি সময়ই হয়না। নতুন জামাই শ্বশুর বাইত্তে না আইলে মাইনষে কয় কি। ”
দৃষ্টি ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। ও লক্ষ্য করেছে, কিছুদিন থেকে ওর মা আর আগের মত নেই। আগে সে কুহুকে সহ্য করতে পারতনা। কিন্তু এখন মাঝেমধ্যেই কুহুর সাথে ফোনে কথা বলে। আবার তাহমিদকে তো প্রতিদিনই ফোন দেয়। এই বিষয়টা দৃষ্টির বেশ লাগছে। কোন সন্তানই তার মা’য়ের খারাপ রূপ দেখতে চায়না।

” তুমি আজকেই আব্বুকে বলবে। আমাদের সাতদিনের ভেতরই যেন ঢাকা নিয়ে যায়। একটাই বোনের বিয়ে হয়েছে অথচ তার শ্বশুর বাড়ি এখনও চোখে দেখলামনা। না দেখলাম দুলাভাইকে। ” দৃষ্টি মন খারাপ করে বলল।
” ঐ ছেমড়ি, তুই তাহমিদরে দেখস নাই? হেয় তো এইহান থাইকা ঘুইরা গেল। ”
” তাহমিদ ভাইয়াকে দেখেছি। কিন্তু তাহমিদ দুলাভাইকে দেখিনি। ভাইয়া আর দুলাভাইয়ের ভেতর অনেক তফাৎ। আপুর ভাগ্য কত ভালো তাইনা, আম্মু? তাহমিদ ভাইয়ার মত একজন আপুর জীবনে এসেছে। বড় ফুপু সেদিনও বলল, তাহমিদ ভাইয়া আপুকে ভিষণ ভালোবাসে। ”

” হ। এমন কপাল কয়জনের হয়। আমার এহন তরে নিয়া চিন্তা। তুই যে বজ্জাত মাইয়া। তরে যে কে বিয়া করব! ”
” কি বললে তুমি! আমি বজ্জাত! শুনে রাখ তোমার যদি বিয়ে হয়, তবে আমারও হবে। আর যাইহোক তোমার থেকে বজ্জাত আমি কমই আছি। ”

” কি কইলি তুই? আমি বজ্জাত? তুই মাইয়া হইয়া আমারে বজ্জাত কইলি? এমুন দিনও আমার দেখন লাগল! ”
” তুমি ভালো করেই জান আমি সত্যি বলেছি। একটা সময় আপুর সাথে কম খারাপ আচরণ তো করনি। তবে সেসব কথা বাদ। এখন তুমি ভালো মা হয়েছ। আচ্ছা আম্মু, আমার বিয়ে দেবে কবে? তারাতারি একটা বিয়ে দাওনা। জামাই, শ্বশুর-শ্বাশুড়ি নিয়ে সংসার করব। পড়তে আর ভাল্লাগছেনা। ”

” ছিহ্, এই মাইয়া তর শরম করেনা! তুই মা’য়ের কাছে বিয়ার কথা কইতাছস! ম্যাট্রিক পাশ না করতেই বিয়া করবার চাস? তরে এহন বিয়া করব কোন পোলায়? এহন বিয়া করবার চাইলে কপালে দোকানদার জুটব, তাহমিদের মত ডাক্তার জামাই জুটবনা। ” মেয়ের কথা শুনে খেঁকিয়ে উঠল শিউলি আক্তার।
” এত রা’গ কর কেন? আজ হলেও আমাকে বিয়ে দিতে হবে, আবার পাঁচ বছর পরে হলেও বিয়ে দিতেই হবে। যে কাজ দুইদিন পরে হলেও করতেই হবে। সেই কাজ দুইদিন আগে করলে দোষ কি! মাঝখান থেকে আমি কয়েক বছর বেশি সংসার করতে পারব। ”

” এই ছেমড়ি, তুই কি কস! তুই কি প্রেম-ভালোবাসা করতাছস? তাইলে কিন্তু তর কপাল খারাপ আছে। এই বয়সে টোকাই পোলাপান ছাড়া, ভালো পোলাপান পাবিনা কইলাম। আগেই কইতাছি এসব বাদ দে। বাপে যেইখানে বিয়া দিব, সেইখানেই তর রাজি হওন লাগব। আর কান খুইলা শুইনা রাখ। আগে পড়াশোনা পড়ে বিয়া। ” শিউলি আক্তার রা’গে ফুঁসছে।

” হুমম, জীবন, যৌবন শেষ হয়ে গেলে বিয়ে দিও। দৃষ্টিরে তোর ভাগ্যে বিয়ে নাই। সবার কপার কুহুর মত হয়না। ”
” নাউজুবিল্লাহ, তুই কি কইলি। বদ মাইয়া। তরে আইজ আমি শেষ কইরা ফালামু। ” শিউলি তেড়ে দৃষ্টির দিকে আসতেই, দৃষ্টি দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

ও হাসি চেপে রাখতে পারছেনা। মা’কে যথেষ্ট খেপিয়ে দিয়েছে। এবার আরেকজনের পালা। তার কাছে ফোন দিয়ে উল্টাপাল্টা বলে খেপিয়ে দিতে হবে। হুম দৃষ্টি প্রেমে পরেছে। এক শ্যামলা বর্ণের দীর্ঘদেহী পুরুষের প্রেমে মজেছে দৃষ্টির মন। যে পুরুষটির হাসি ওর হৃদয়ে কাঁপন ধরায়। যে পুরুষের ধমক না শুনলে ওর দিন ভালো যায়না। যে পুরুষটির শাসন পাওয়ার লোভে বারবার ও ইচ্ছাকৃত ভুলে নিজেকে জড়ায়। তবে তাকে এখনও ‘ ভালোবাসি ‘ বলা বাকি। তার মুখ থেকে ‘ ভালোবাসি ‘ শোনা বাকি। তবে সে কথায়, কাজকর্মে বুঝিয়ে দেয় সে-ও দৃষ্টিকে ভালোবাসে।

দৃষ্টি মুচকি হেসে ফোন হাতে নিয়ে, ডায়াল করে কাঙ্ক্ষিত নম্বরে।
বিকেল তিনটায় তাওহীদের ঘুম ভাঙ্গতেই দেখল নীরা এখনও ঘুমাচ্ছে। নীরাকে বেঘোরে ঘুমাতে দেখে তাওহীদ অবাক হয়ে যায়। সামান্য শব্দেই যে মেয়েটার ঘুম ভেঙে যায়, আজ এতক্ষণ তাকে জড়িয়ে রাখার পরেও, তার ঘুম ভাঙ্গলোনা! ও নীরার মাথায় হাত বুলিয়ে ধীরে ধীরে ডাকতে থাকে। কিন্তু নীরা কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়না। এবার তাওহীদ ভয় পেয়ে যায়। ও দৌড়ে বড়মার কাছে যায়।

আফরোজা নাজনীন তাওহীদের কথা শুনে ছুটে আসলেন। তিনি নীরাকে প্রানপনে ডাকছেন কিন্তু নীরা কোন প্রত্তুত্যর করেনা। তাওহীদ হতবুদ্ধি হয়ে সবকিছু দেখছে। ওর হাত-পা কাঁপছে। এবার আফরোজা নাজনীন বুদ্ধি করে নীরার চোখেমুখে পানির ছিটা দিলেন। মাথার তালুতে পানি দিলেন। তিনি নীরার চোখেমুখে অনবরত পানির ছিটা দিতেই থাকলেন। কিছুক্ষণ পর নীরা একটু নড়ে উঠল। তিনি আরেকবার ভালো করেই পানি দিয়ে চোখমুখ মুছে দিতেই, নীরা পিটপিটিয়ে চাইলো। তবে ওর চাহনি বেশ দুর্বল।

” নীরা মা, তোমার কি হয়েছে? তুমি এভাবে ঘুমাচ্ছ কেন? তুমি কি কিছু খেয়েছ, মা? ” আফরোজা নাজনীন ব্যাগ্র হয়ে জানতে চাইলেন।
” ব..বড়মা, আমি আমি আ…আমি একটু ঘুমাব। আমাকে এখন ডেকনা। আমি অনেকদিন থেকে ঘুমাইনা। ” নীরা টেনে টেনে বলল। সেই সাথে কয়েক ফোঁটা পানি ওর চোখের কোন বেয়ে গড়াল।

” ও মা, তুমি কিছু খেয়ে তারপর ঘুমাও। সকালে না খেয়ে বাসা থেকে বের হয়েছিলে। অনেক বেলা হয়েছে, মা। ” আফরোজা নাজনীন নীরার দুই গাল ঝাঁকিয়ে বললেন।
এবারও নীরা অনেক কষ্টে তাকাল।
” ঘুম ভাঙ্গলে আমি খেয়ে নিব, বড়মা। এখন একটু ঘুমাইনা। ” নীরা অনেক কষ্টে কথাগুলো বলেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল।

তাওহীদ বুঝতে পারছে নীরা নিশ্চয়ই স্লিপিং পিল খেয়েছে।
আফরোজা নাজনীন অসহায় চোখে তাওহীদের দিকে তাকিয়ে আছেন। এতবড় ঘটনা তিনি বাসার সবার কাছে ধামাচাপা দেবেন কেমন করে?

বাসার মানুষ জানলে অসুবিধা নেই। কিন্তু যারা মেইড আছে তাদের থেকে লুকাবেন কিভাবে! মেইডদের মধ্যে দুইজন পাশের বিল্ডিংয়েও কাজ করে। ওদের কানে কথাটা যাওয়া মাত্রই পুরো এলাকা ছড়িয়ে যাবে। মাঝখান থেকে মেয়েটার দুর্নাম হবে। নানান জন নানান কথা বলবে। মানুষের কাজই তিলতে তাল বানানো।

নানান চিন্তায় মাথা ঘুরছে আফরোজা নাজনীনের। তিনি তাওহীদকে নীরার পাশে বসতে বলে নিচে গেলেন। হাফ জগ পানিতে তেঁতুল গুলে নিয়ে আসলেন। এরপর সেই পানি একটু একটু করে নীরাকে খাওয়াতে থাকলেন। যদিও বেশিরভাগ পানিই বাইরে পরে যাচ্ছিল। তুবও তিনি হাল ছাড়লেননা। ভাগ্যিস বাসার সবাই এই মুহূর্তে নিজ নিজ রুমেই রেষ্ট নিচ্ছিল। তিনি নীরাকে পানি খাওয়ানোর ফাঁকেই তাহমিদকে ফোন দিয়ে বাসায় আসতে বললেন।

প্রায় ঘন্টা খানেক পর নীরা একটু জেগেই হরহর করে বমি করে দেয়। এরপর ক্লান্ত হয়ে বিছানায় লুটিয়ে পড়ল।
তাহমিনা আক্তার নাতনিকে ঘুম পাড়াতে গিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে গিয়েছিলেন। ঘুম ভাঙ্গলেই তিনি তড়িঘড়ি করে রান্নাঘরে আসলেন। পিঠা বানানোর প্রস্তুতি নিতে হবে।

আফরোজা নাজনীন বেড কভার তুলে ওয়াশরুমে ভিজিয়ে রাখলেন। নীরা জ্ঞান হারিয়েছে। তিনি ধীরেসুস্থে নীরার মাথায়, চোখমুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরালেন। এরপর তিনি নীরাকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলেন। নীরাকে ভালোভাবে গোসল করিয়ে, কাপড় পাল্টাতে বলে তিনি রুমে আসলেন।
তাওহীদ অপরাধীর ন্যায় মাথা নিচু করে বসে আছে। আফরোজা নাজনীন ওর দিকে তাকিয়ে কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেননা। এতটুকু শাস্তি ওর প্রাপ্য।

নীরা অনেক কষ্টে কাপড় পরিবর্তন করে রুমে এসেই বিছানায় ঢলে পরল। ততক্ষণে আফরোজা নাজনীন বিছানায় আরেকটা চাদর বিছিয়েছেন।
নীরাকে ভালোভাবে শুইয়ে দিয়ে তিনি নিচে আসলেন। মেয়েটাকে খাওয়াতে হবে।

” ভাবি, তুমি কোথায় ছিলে? তোমার ছেলেদের জন্য পিঠা বানাচ্ছি কিন্তু তুমিই নেই। আর তাওহীদ কোথায়? ও নিচে আসছেনা কেন? নীরাও সেই যে রুমে ঢুকেছে আর বের হওয়ার নামই নেই। ”
” শোন তাহমিনা, তুই, আমি বুড়ো হয়েছি। কিন্তু ওরা তো বুড়ো হয়নি। ছেলেটা কতদিন পর বাসায় আসল, সেটা মনে আছে তোর? একটু থাকুকনা দুজন একসাথে। পিঠা আমরা দুজন মিলে বানাব। ”

” এই খাবার নিয়ে কোথায় যাচ্ছ? কে খাবে এখন? ” আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন তাহমিনা।
” নীরার জন্য নিয়ে যাচ্ছি। ওরা দুজন রুমেই বসে খেয়ে নিক। ”
তাহমিনা আক্তার শুধু হাসলেন। কিছুই বললেননা।
আফরোজা নাজনীন খাবার গরম করে নীরার কাছে আসলেন। তিনি নীরাকে জোড় করে বসিয়ে দিয়ে, খাবার নীরা মুখে প্রায় গুঁজে দিলেন। নীরা আবার ঘুমিয়েছিল।

তাহমিদ হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে তাওহীদকে দেখেই রা’গে গজগজ করতে থাকে। কিন্তু নীরার দিকে তাকিয়ে, তাওহীদকে কিছু না বলে বড়মাকে সরে বসতে বলল। নীরা কয়েক লোকমা ভাত মুখে নিয়েছে। ও ঘুমের কারনে খেতে পারছেনা।
তাহমিদ নীরার প্রেশার, হার্ট বিট সব চেইক করল।
” শরীর খুব দূ্র্বল, আর প্রেশারও কম। হার্টবিটও কম দেখাচ্ছে। এক কাজ কর বড়মা, তুমি ভাবিকে স্যালাইন খাইয়ে দাও। বাকিটা আমি দেখছি। ”

আফরোজা নাজনীন তাহমিদের কথামত কাজ করলেন।
তাহমিদ বাসায় আসায় তিনি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। এরপর তিনি তাহমিদকে নীরার দ্বায়িত্ব দিয়ে নিচে গেলেন। এভাবে বেশিক্ষণ ওপরে থাকলে সবাই সন্দেহ করবে।

দুই জা, কুহু, আর আয়েশা সালেহা মিলে পিঠা বানাল। মাঝেমধ্যে বিভিন্ন অযুহাতে আফরোজা নাজনীন ওপরে এসে নীরাকে দেখে গেছেন। মেয়েটার ঘুম ছুটেছে কিন্তু শরীর প্রচন্ড দূর্বল। তাহমিদের ধমক খেয়ে নীরা স্বীকার করেছে ও তিনটা স্লিপিং পিল খেয়েছে। তিনটা স্লিপিং পিল খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনা, তবে খালি পেটে খাওয়ায় নীরার সমস্যা হয়েছে।
তাহমিদ একবারও তাওহীদের দিকে তাকায়নি। ও আপাতত নীরার দিকেই মনযোগ দিয়েছে।

সন্ধ্যায় নীরা একটু ভালো বোধ করতেই নীচে আসল। ড্রয়িংরুমে বসে শ্বাশুড়ির সাথে এটাসেটা গল্প করছে।
তাহমিনা আক্তার নীরার চোখেমুখ দেখে জিজ্ঞেস করলেন, কি হয়েছে?
নীরা জানাল, প্রেশার ফল করেছে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩২

তাহমিদের কথামত ও শ্বাশুড়িকে বলল।
তাহমিনা আক্তার ছেলের বউকে কয়েক রকম পিঠা এনে দিলেন। নীরার ক্ষুধাও লেগেছিল, তাই কিছু না বলেই খেতে থাকে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৩৪