বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৫৫

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৫৫
জাওয়াদ জামী

দৃষ্টি বাবার দিকে তাকিয়ে কেঁদে ফেলল। এ কি অবস্থা হয়েছে ওর বাবার চেহারার!
” আব্বু, তুমি কেমন আছো? তোমার শরীরটা কি বেশিই খারাপ? খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার? ” দৃষ্টি ফোঁপাতে ফোপাঁতে বলল।
” না রে, মা, আমি এখন অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছি। কিছুক্ষণ আগ পর্যন্তও শরীরটা খারাপ ছিল। তোকে দেখেই আমার শরীর অর্ধেক ভালো হয়ে গেছে। বাকি অর্ধেক সারবে কুহুকে সুস্থ দেখার পর। তোরা তিন ভাইবোন হলি আমার প্রান।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আমার তিন ছেলেমেয়েরা যেমন তাদের বাবাকে নিজেদের প্রান মনে করে, তেমনি আমিও আমার সন্তানদের নিজের প্রান বলেই মনে করি। তোর শরীর এখন ভালো আছে, মা? এই যে দেখ, এরা আমাকে জোড় করে বেডে শুইয়ে রেখেছে। একবারও তোর কাছে যেতে দেয়না। আমি কত আকুতি করি, তবুও আমার কথা কেউই শোনেনা। এমনকি তোর বড় ফুপুও না। অথচ আমার প্রান আমার দুই মেয়ের কাছে পরে আছে। এরা কেউই সেটা বুঝতে চেষ্টা করেনা। ” কায়েস চোখ মুছে বলল।

শিহাব এসে দৃষ্টির পাশে দাঁড়াতেই, দৃষ্টি ওকে দেখে আরেকবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। এরপর ভাইকে কাছে টেনে নিয়ে আদর করল। শিহাবকে কোলে নিতে গিয়ে লক্ষ্য করল, ওর শরীরে শক্তির ছিঁটেফোঁটাও নেই। সেই সাথে শরীরের আনাচেকানাচে ব্যথার অস্তিত্ব টের পেল। আরেকবার ওর বুকের ভেতর দুমড়েমুচড়ে যায় ব্যথারা। কিন্তু ওর পরিবারের কথা ভেবে, আপুর কথা ভেবে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করতে লাগল। ও সিদ্ধান্ত নিল, সেই দুর্বিসহ রাত নিয়ে আর কখনোই ও ভাববেনা। সেদিন যদি বাবা-মা’র সাথে দত্তপাড়া যেতে রাজি হত, তবে ওর আর কুহুর এই করুণ পরিনতি হতোনা। যেহেতু ভুলটা ওরই, সেহেতু নিজেকে ভালো রেখে, সবাইকে ভালো রাখার দ্বায়িত্ব নিতে হবে।

শিউলি এসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে, মেয়েকে বুকে টেনে নেয়।
তাহমিদ আইসিইউর সামনে এসে নিহানকে কায়েসের কেবিনে পাঠিয়ে দেয়।
নিহান কেবিনের দরজায় দাঁড়াতেই দৃষ্টিকে দেখতে পায়। মুহুর্তেই যেন ওর বুকের র’ক্ত ছলকে উঠল। অবশেষে মেয়েটা বাহিরে এসেছে! বাবা-মা’র সাথে কথা বলছে! অবশ্যই এটা তাহমিদ ভাইয়ের জাদু। আরেকবার তাহমিদের প্রতি কৃতজ্ঞতায় ওর চোখে পানি আসল। মন থেকে কুহুর জন্য দোয়া করল। আল্লাহ্ যেন কুহু যেন দ্রুতই সুস্থ করে, তাহমিদের শূন্য বুক পূরণ করে দেয়। ও মেডিকেলে এসে বুঝতে পেরেছে আপনজনদের আহাজারি দেখার মত কষ্ট দুনিয়ায় আর দ্বিতীয়টি নেই।

নিহান কিছুক্ষণ কেবিনের বাহিরে অপেক্ষা করছে। ও দৃষ্টিকে আরেকটু স্বাভাবিক হতে দিতে চায়। ভেতর থেকে দৃষ্টির ক্ষীণ গলা শুনতে পাচ্ছে সে। শিউলি থেকে থেকেই হেসে উঠছে। কখনোবা ডুকরে কেঁদে উঠছে। শিহাবও হাসছে। আজ ও বাবা-মা, বোনকে একসাথে কাছে পেয়েছে। তাই ওর আনন্দ ধরছেনা। অবশ্য ও যে কুহুর কথা ভাবছেনা, তা কিন্তু নয়। প্রতিদিনই আম্মুর সাথে একবার করে আইসিইউর সামনে থেকে ঘুরে আসছে। কাঁচের দরজার এপাশ থেকে দেখে আসছে ওপাশের ঘুমন্ত বড় আপুকে।

প্রায় একঘন্টা পর নিহান কেবিনে প্রবেশ করল।
নিহানকে দেখে হায় হায় করে উঠল শিউলি আক্তার।
” বাজান, তুমি সকাল থাইকা কিছুই খাওনি। এম্নে না খাইলে শরীরডা টিকবো, বাজান? আবার শুনলাম তুমি পরীক্ষা না দিয়াই এখানে আসছিলা। পরে আর পরীক্ষাও দেওনি। এম্নে করলে চলবো, বাজান? আবার শুনলাম আনানেও পরীক্ষা দেয়নি। ইমুন করলে হইবো বাজান? ”

” মামি, পরীক্ষা সামনের বছরও দেয়া যাবে। পরীক্ষার চেয়েও, এই দুঃসময়ে আপনাদের পাশে থাকাটা জরুরী। দৃষ্টি, তোর ঔষধ খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। কেবিনে চল। আর মামা, তুমি চিন্তা করোনা। দেখো দৃষ্টি যেমন সুস্থ হয়ে উঠেছে, ঠিক তেমনি কুহুও তারাতারি সুস্থ হয়ে উঠবে। বেশি চিন্তা করে অসুখকে বাড়িয়ে দিওনা। আমি কিছুক্ষণ পর এসে তোমাকে নিয়ে ইকো করাতে যাব। ভাই তোমার দ্বায়িত্ব আমাকে দিয়েছে। ” নিহান দৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করছে।

” নিহান, তুমি কিছু খেয়ে নাও মামা। শিউলি দেখতো খাবার কি আছে? নিহানকে দাও, ও একটু খেয়ে নিক। ” কায়েস ভাগ্নের জন্য উদগ্রীব হয়ে গেছে।
” মামা, আমাকে নিয়ে তোমার চিন্তা করতে হবেনা। আমি খেয়ে নিব। তোমার কাজ সেড়ে ছোট খালামনির বাসায় গিয়ে, গোসল করে তারপর খাব। দৃষ্টি, তুই কি আমার সাথে কেবিনে যাবি? ”
দৃষ্টি মাথা নাড়ায়।
নিহান অতি যত্নে দৃষ্টির হাত ধরে ওকে নিয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে আসে।

” পাকামো করে জোরে হাঁটতে যাসনা। আমি যেভাবে নিয়ে যাচ্ছি, সেভাবেই চল। শরীরের যে অবস্থা জোরে হাঁটতে গেলেই মাথা ঘুরে পরে যাবি। ”
নিহানের কথা শুনে দৃষ্টির চোখে পানি আসল। নিহান খুব যত্ন করে ওর হাত ধরে রেখেছে। কিন্তু নিহানের ছোঁয়া আজ ওর শরীরে কোন অনুভূতির সৃষ্টি করছেনা। ওর শুধু সেই রাতের কথা মনে পরছে। কি হিং’স্র ছিল তাদের ছোঁয়া। অন্যদিকে তাকিয়ে কান্নাকে দমন করার চেষ্টায় রত দৃষ্টি। নিহান বুঝতে পারছে মেয়েটার মনে কি ঝড় বইছে। তাই সে কোন কথা বাড়ায়না।

কেবিনে এসেই দৃষ্টি ক্লান্ত হয়ে সোফায় বসে পরল। নিহানও একটু দূরত্ব রেখে বসল। দৃষ্টি অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থাকে। এরপর চোখ মুছে মুখ খুলল,
” তুমি খাওনি কেন? আর পরীক্ষাই বা দাওনি কেন? একটা বছর পিছিয়ে যাবে যে! ”

” তুই কয়দিন থেকে খাচ্ছিস না কেন? তুই খেলেই তবে আমি খাব। যদি মনে করিস না খেয়ে ম’রে যাবি, তবে আমিও তাই করব। দৃষ্টিকে ছাড়া বেঁচে থাকার চিন্তা আমি করতে পারিনা। আর রইল পরীক্ষা, সেটা না হয় সামনের বছরই দেব। বর্তমানে পড়াশোনা আমার কাছে জরুরী নয়, যতটা জরুরী তুই। ”

” তুমি কেন এমন করছ! আমার জীবনের সাথে নিজের জীবন জড়ানোর ভুল কেন করছ? আমি এখন সেই দৃষ্টি নেই, যাকে তুমি ভালোবেসেছিলে। কেন বোঝনা এই সামান্য কথাটুকু? যাকে ছোঁয়ার অধিকার শুধু তোমার ছিল, সে এখন দুইজনের হিং’স্র ছোঁয়া ভুলতে চেষ্টা করছে। এমন পাগলামি করোনা। চিটাগং ফিরে যাও। আর বাকি পরীক্ষাগুলো ঠিকমত দাও। ”

” তুই আমাকে এই চিনলি! এই তোর ভালোবাসা! আমার কাছে তুই সেই দৃষ্টিই আছিস, যাকে আমি ভালোবেসেছিলাম। আমার ভালোবাসা এত ঠুনকো নয় যে কারও হিং’স্র ছোঁয়ায় সেটা ভেঙে গুঁড়িয়ে যাবে। বরং এই সুবাদে আমার ভালোবাসার গভীরতা আরও বেড়েছে। ওরা তোর শরীর ছুঁয়েছে, মন ছুঁতে পারেনি।

কিন্তু আমি তোর মন ছুঁয়েছিলাম, সেখানে শরীরের কোন স্থান ছিলনা। আর একটাবার বিশ্বাস করে আমার হাতটা ধর। প্রমিজ করছি তোর অতীত আমি ভুলিয়ে দেব। একটা সময় তুই আফসোস করবি আজকের এই কথাগুলোর জন্য। আমাকে ফিরিয়ে দিসনা, দৃষ্টি। তোকে ছাড়া যে আমি বেঁচে থেকেও মৃ’ত হয়ে থাকব আজীবন। আমার জীবনে দ্বিতীয় কোন নারী আসবেনা। যেখানে তোর রাজত্ব, সেখানে অন্য কাউকে দাসীর স্থান দেয়াও আমার পক্ষে অসম্ভব। ”

নিহানের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পরল দৃষ্টি। নিহানও মাথা নিচু করে কাঁদছে। ও দৃষ্টিকে যতখানি ভালোবেসেছে, সেখান থেকে পিছু হটা অসম্ভব। দৃষ্টিকে ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতেও ভয় পায় নিহান। আর সেখানে ওকে ছেড়ে দেয়া মানে নিজের হাতে নিজের বুকে চা’কু মা’রা’র সামিল।

” আমার ক্ষুধা লেগেছে। ” দৃষ্টি আর কিছু বলতে পারলনা। ও ফুঁপিয়ে কাঁদছে।
দৃষ্টির এই কথাটুকুই নিহানের জন্য যথেষ্ট ছিল। ও নিমেষেই চোখ মুছে মুখে হাসি ফোটাল।
” কি খাবি বল? আইসক্রিম, ফুচকা না চটপটি? আমি ঝটপট নিয়ে আসব। শুধু তুই বল কি খাবি। ”

” তুমি কি বোকা না গা’ধা! আমার ক্ষুধা লেগেছে আর তুমি চটপটি, ফুচকার অফার করছ! ওগুলো খেলে কি পেট ভরবে? ”
” তাহলে বিরিয়ানি নিয়ে আসি। তোর পছন্দের বিফ বিরিয়ানি, সাথে বিফ স্টেক আর ঠান্ডা কিছু? আর কি খাবি বল? ”
” তোমার কাছে টাকা আছে? এত কিছু যে আনতে চাচ্ছ? ”

” তোর শ্বশুর আমাকে অনেক টাকা দিয়েছে। এই কয়দিন কোন খরচই হয়নি। তবে আজ থেকে হবে। তুই লক্ষ্মী মেয়ের মত পনের মিনিট বস। সামনে একটা রেস্টুরেন্ট আছে। সেখানে ভালো মানের খাবার পাওয়া যায়। আমি যাব আর আসব। ”
দৃষ্টি মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়। নিহান দৃষ্টির কাছে একজন নার্সকে রেখে বাহিরে যায়। ও প্রায় দৌড়েই মেডিকেল চত্বর থেকে বের হয়।

পনের মিনিটের জায়গায় নিহানের আধাঘন্টা লেগে গেল। ও হাঁপাতে হাঁপাতে কেবিনে ঢুকল। প্রথমেই সেই নার্সের জন্য নিয়ে আসা প্যাকেট তার হাতে দিল। নার্স প্রথমে নিতে না চাইলেও পরে নিতে বাধ্য হয়। কৃতজ্ঞতায় তার চোখে পানি এসে গেছে।

নার্স বেরিয়ে গেলে নিহান ধীরে সুস্থে খাবারের প্যাকেট খুলল। ও হাতমুখ ধুয়েছে, সেই সাথে দৃষ্টিকে ফ্রেশ হতে হয়েছে।
দৃষ্টিকে বসিয়ে রেখে ও প্যাকেট খুলে বিরিয়ানি হাতে নিয়ে দৃষ্টির সামনে ধরল। দৃষ্টি নিহানেন দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।

” আমার হাতে না খেলে, আমাকে তোর খাইয়ে দিতে হবে। কোনটা করবি বল? ”
দৃষ্টি কিছু না বলে হা করল। নিহান হেসে ওকে খাইয়ে দেয় সাথে নিজেও খায়।
” হ ভাই, প্রেমিকা, বউ পাইলে সকলে আনানরে ভুইলা যায়। এদিকে আমিও যে না খাইয়া, ঘুরতাছি তুই শা’লা সেডা দেখিসনা। ” আনান কেবিনে ঢুকেই দেখল নিহান দৃষ্টিকে খাইয়ে দিচ্ছে। তাই ও তাদেরকে বিরক্ত করার লোভ সামলাতে পারলনা।

” আরে শা’লা, আমি কি জানি তুই এখন আসবি। এই যে আরেক প্যাকেট বিরিয়ানি আছে, তুই খেয়ে নে। আমরা দুইজন মিলে একটা শেষ করতে পারছিনা। ”
” দেখ নিহাইন্না আমি তোর বউয়ের বড় ভাই হব। আমাকে সম্মান দিয়ে কথা বল। কি শা’লা, শা’লা করছিস! ”
” সে তো আমিও তোর বউয়ের বড় ভাই। তুই আমাকে শা’লা বললে, আমি কি তোকে হুজুর হুজুর করব? প্যাচাল বাদ দিয়ে মুখহাত ধুয়ে আয়, খেয়ে নে। ”

আনান কিছু না বলে মুখহাত ধুয়ে এসে, খাবারের প্যাকেট হাতে নেয়। সারাদিন দৌড়ের ওপর থাকায় এখনও খাওয়া হয়ে ওঠেনি।
নাজমা পারভিন কেবিনে ঢুকে দেখলেন ওরা তিনজন খাচ্ছে। অথচ ওদের জন্য খাবার এনেছেন তিনি। তবে তিনি দৃষ্টিকে খেতে দেখে নিজের আনা খাবারের কথা কিছুই বললেনা। হাসিমুখে তাকিয়ে থাকলেন দৃষ্টির দিকে। মেয়েটাকে অনেকটাই স্বাভাবিক লাগছে।

” খালামনি, তুমি দৃষ্টির কাছে থাক। আমি নিহানকে নিয়ে বাহিরে যাচ্ছি। ভাই একটু ডেকেছিল। ” খাওয়া শেষে নাজমা পারভিনের ওড়নায় মুখ মুছে বলল আনান।
” আচ্ছা, তোরা যা। আমি আমার মেয়ের কাছে থাকব। ”
” আম্মু, সিস্টারকে জিজ্ঞেস করে নিও ওকে এখন কি ঔষধ দিতে হবে। আজকে বোধহয় একটা ইনজেকশন দিতে হবে। কখন দিতে হবে সেটাও জিজ্ঞেস করে নিও। ”

নিহানের কথা শুনে নাজমা পারভিন মৃদু হাসলেন। তার ছেলে সত্যিই দৃষ্টিকে খুব ভালোবাসে।
” যা করার আমি করব। তোরা কোথায় যাবি যা। ”
আনান আর নিহান তাহমিদের সামনে এসে দাঁড়াল।

” ভাই, সব ব্যবস্থা করেছি। ওদের দিয়েই বস্তিতে একটা ঘর ভাড়া করিয়েছি। ওরা নিজেদের বাবা-ছেলে বলে পরিচয় দিয়েছে। তুমি যেমনটা বলেছিলে, তেমনটাই করেছি। তুমি কি ওদের সাথে দেখা করবে? ” আনান জানতে চাইল।
” নিহান, তুই যাবি আমাদের সাথে? নাকি দৃষ্টির কাছেই থাকবি? ”

” ভাই, ওদের নিজের হাতে খু’ন করার সাধ আমি মিটিয়ে তবেই, দৃষ্টির কাছে আসব। ” নিহান রাগে গজালো করছে৷
” ওদেরকে এখনই মা’র’ব’না। আগে কয়েকটা দিন কষ্ট ভোগ করুক। ওদের মা’র’লে দৃষ্টি, কুহু যে কষ্ট পেয়েছে, তার দ্বিগুণ কষ্ট ভোগ করবে কে? আগে মেয়েদুটোর কষ্টগুলো ওদের ফিরিয়ে দিই। পরে মা’রা’র কথা ভাবব। ”

” কিন্তু ভাই, ওরা যদি পালিয়ে যায়? ” নিহানের কন্ঠে ভয়।
” সামনে, আড়ালে যমদূত ওদেরকে পাহারা দিচ্ছে। পালাতে গেলেই মা’রা পরবে। ওদের পালানোর সব রাস্তা আমি বন্ধ করে দিয়েছি। ”

” কিন্তু ভাই, মামার ইকো করবে কখন? আমি মামাকে বলে এসেছি, আজকেই সব করবে। ”
” সন্ধ্যার পর একজন ডক্টর আসবে। তার সাথে আমার কথা হয়েছে। সে আসলেই সব টেস্ট করা হবে। ”
” তাহলে এখন আমাদের যেতে হবে, ভাই। আম্মু এসেছে। মামাকে দেখে এখানে আসুক। তারপর আমরা বের হই? ” আনান প্রশ্ন করল।

শাহনাজ সুলতানা আসলে, তাকে রেখে ওরা বেরিয়ে যায়।
দৃষ্টিকে বাসায় নেয়া হবে আজ। শাহনাজ সুলতানা চাইছেন, দৃষ্টিকে তিনি নিজের বাসায় নিয়ে যাবেন। কারন সেখানে সিক্তা, আরোশি আছে। ওদের সাথে থাকলে দৃষ্টি খুব তারাতারি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে। তবে কায়েস এখনও মেডিকেলে ভর্তি আছে। তার রিলিজ কবে হবে তা কেউই জানেনা।

সার্বিক দিক বিবেচনা করে আফরোজা নাজনীন দৃষ্টিকে তার ছোট বোনের বাসায় পাঠাতে রাজি হলেন।
শিউলি বেশিরভাগ সময় মেডিকেলে কাটাচ্ছে। তাই সে ইচ্ছে করলেই দুই ননদের বাসায়ই যেতে পারবে। তাই শিউলিও আফরোজা নাজনীনের কথা অমান্য করেনা।

নিহানের হাত ধরে দৃষ্টি মেডিকেল থেকে বেরিয়ে আসে। তবে আসবার আগে আইসিইউর সামনে গিয়ে কুহুকে দেখে এসেছে। এরপর কায়েসকেও দেখে এসেছে।
কুহুকে দেখার পর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি দৃষ্টি। হু হু করে কেঁদেছে। কুহুর এউ অবস্থার জন্য বারবার নিজেকেই দায়ী করছে দৃষ্টি।

সারাটা রাস্তা আনমনা হয়ে কাটাল দৃষ্টি। নিহানও ওকে বিরক্ত করেনি।
বাসায় এসে প্রথমেই গোসল করতে চাইল দৃষ্টি। শাহনাজ সুলতানা পরম আদরে ভাইয়ের মেয়েকে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলেন। দৃষ্টির গোসলের সময়ও তিনি সেখানেই রইলেন। তিনি কিছুতেই দৃষ্টিকে একা রাখতে চাননা।
ফুপুদের এরূপ দ্বায়িত্ববোধ দেখে দৃষ্টির চোখে পানি আসে। আজকাল ওর সব কিছুতেই কাঁদতে ইচ্ছে করে। চোখের পানি যেন ঝরে পরতে সর্বদাই প্রস্তুত থাকে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৫৪

গোসল শেষ করে রুমে এসে বিছানায় বসল দৃষ্টি। কিছুক্ষণ পরই সিক্তা ওর জন্য খাবার নিয়ে এসেছে। সিক্তা বড় বোনের মমতায় দৃষ্টিকে খাইয়ে দেয়। এরপর ও আর আরোশি মিলে দৃষ্টিকে সঙ্গ দেয়।
দৃষ্টিকে বাসায় রেখেই আনান আর নিহান কোথাও বেড়িয়েছে। কাউকে সেটা বলে যায়নি।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৫৬