বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১০

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১০
জাওয়াদ জামী

” খালামনি, আমি বাসায় যাচ্ছি। ”
” কেন বাবু, তুই এখন যাবি কেন? দুপুরে খেয়ে তারপর যাস। রান্না শেষের দিকে। ”
” না খালামনি, আজ আর দেরি করতে পারবনা। চারটার আগেই আমার স্যারের বাসায় যেতে হবে। আমি আরেকদিন আসব। যেদিন ভাই বাসায় থাকবে, সেদিন আসব। ”

” এ কি বলছিস, আনান? এই ভর দুপুরে তুই না খেয়ে চলে যাবি? তুই বস, দুইটা তরকারি রান্না হয়েছে সেগুলো দিয়ে খেয়ে যা। আচ্ছা, তাহমিদ তোকে কিছু বলেছে? ওর সাথে রাগ করে চলে যাচ্ছিস নাতো? ” তাহমিনা আক্তারের কন্ঠে সন্দেহ।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” না ছোট খালামনি, ভাই আমাকে কিছুই বলেনি। তুমি তো জানোই ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক কেমন। সে আমার সাথে যেমন ঠাট্টা করে, আমি তেমনি তার সাথে মজা করি। এটাই অরিজিনাল ভালোবাসা বুঝলে? আর তাছাড়া তোমার শ্বশুর বাড়ির মানুষজন একটু তার ছেঁড়া এটা তোমরা সবাই জান৷ তোমার ছেলেও তেমন। তাই আমি তেমন কিছুই মনে করিনা। আমি আর দেরি করবনা। তুমি খাওয়ার জন্য আর পিড়াপীড়ি করোনা। ”

” এভাবে চলে যাবি? ” তাহমিনা আক্তার আনানের কথা শুনে হাসছেন।
” আমি সময় পেলেই চলে আসব। তখন খাব, এখন চিল করো। কোকিলা থাক, আমি যাই। আমাদের বাসায় যাওয়ার ইচ্ছে হলে, আমাকে ফোন দিয়ে জানাবি। তোকে নিয়ে যাব। ”
আনান দেরি না করে বেরিয়ে যায়।
কুহু আজকে চিংড়ির মালাই কারি, লাউ পাতায় রুই মাছ আর কালো জিড়া ভর্তা করেছে। বাকি রান্না ওর খালামনিরা করেছে।

সানাউল রাশেদিন খাবার টেবিলে এসে সবাইকে ডাকেন। বাসায় থাকলে সবাইকে নিয়ে খেতে তিনি ভালোবাসেন।
সিক্তা, কুহু, তাহমিদ ডাইনিং রুমে এসে দেখল দিদুন ও চলে এসেছেন। কুহু আর সিক্তা পাশাপাশি চেয়ারে বসেছে। তাহমিদ সানাউল রাশেদিনের ডানপাশে, কুহুর মুখোমুখি চেয়ারে বসেছে।
” বড়মা, আনান কোথায়? ও খাবেনা? ”
” ও তো চলে গেছে, বাপ। অনেকবার খেয়ে যাওয়ার কথা বলেছি, কিন্তু ওর নাকি কোন স্যারের বাসায় যেতে হবে। তাই দেরি করলনা। ”

” ওহ্। ” তাহমিদ মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় খাওয়ার পর আনানের কাছে ফোন দিবে।
” আমিও বললাম কতবার করে। কিন্তু ও শুনলে তো। ভর দুপুরে ছেলেটা চলে গেল। ” তাহমিনা আক্তার আফসোস করলেন।
” বড় চাচ্চু, তোমার শরীর এখন কেমন আছে? হাঁটুর ব্যাথা কমেছে? কাল একবার মেডিকেলে যেও। আমি ডক্টরের সাথে কথা বলে রেখেছি। ”

” বাব্বাহ্, আফরোজা! বেয়াদবটা দেখি আজ আমাকে চাচ্চু বলে ডাকছে! সূর্য আজ কোন দিকে উঠেছে! একটু কষ্ট করে বাইরে যেয়ে দেখে আসবে। ”
” বাবা, আজ আকাশে সূর্যি মামা নেই, তার মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়েছে। তাই চারপাশটা অন্ধকার অন্ধকার লাগে। ” সিক্তা কথাটা বলেই খিলখিল করে হেসে উঠে।

” তুমি থামবে। ছেলেটা ভালো করে ডাকলেও তোমার সমস্যা আবার টিটকারি মারলেও তোমার সমস্যা। আর সিক্তা, তুই তোর বাবার দিকে টেনে কথা বলছিস কেন? ” আফরোজা নাজনীন খেঁকিয়ে উঠলেন।
” সিনিয়র বুঝি আমার মুখ থেকে ঐসব কথা শুনতে ভালোবাসে! কি কপাল আমার। সিনিয়র, মন খারাপ করোনা। এখন থেকে তোমার পছন্দমতই তোমাকে আমি ডাকব। ”
” বেয়াদব, অসভ্য, বর্বর। শুধু আমাকে অপ্রস্তুত করার পাঁয়তারা করে। তাহমিনা, তোমার ছেলে উচ্ছন্নে গেছে। ওকে আর মানুষ করতে পারলেনা। ”

সানাউল রাশেদিনের কথা শুনে কুহু হাসি আটকে রাখতে পারেনা, ও মুখ টিপে হেসে দেয়। কুহুর হাসি কেউ না দেখলেও তাহমিদের চোখে ঠিকই পরেছে। এই প্রথমবার ও কুহুর হাসি দেখল। তাহমিদের মন ভালো লাগায় ছেয়ে যায়। মনের আকাশে মুহূর্তেই হাজারো প্রজাপতি পাখনা মেলে উড়তে থাকে। হৃদয়ের দুকূল ছাপিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রনয়েরা তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে আসতে চায়। ওর হৃৎস্পন্দনের গতি দিগুণ হয়েছে। বাঁধভাঙা উথাল-পাথাল প্রেম এসে জানান দিচ্ছে, তোর স্বপ্নকন্যা তোরই সামনে। এবার তাকে আপন করে নে। বেঁধে নে পাঁজরের হাড়ে। যেখান থেকে পালানোর কথা ও স্বপ্নেও ভাবতে পারবেনা। তোর বিরহে যে পাগলিনী হয়ে দু-চোখ ভাসাবে, তেমনি তোর মিলনে সে চাতকিনী হয়ে বারেবারে তোকেই খুঁজবে।

তাহমিদ আবেগের বশে সানাউল রাশেদিনের গালে টুপ করে চুমু দেয়। ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত সকলে তাহমিদের এমন কান্ডে হা হয়ে গেছে। সানাউল রাশেদিনের অবস্থা হয়েছে দেখার মত। তিনি গালে হাত দিয়ে ফ্যালফেলিয়ে তাকিয়ে আছেন তাহমিদের দিকে।

” থাংকিউ, সিনিয়র রাশেদিন, থ্যাংকিউ। তোমার জন্য আজ আমি দুনিয়ায় জান্নাতের সুখ দেখেছি। খাবার টেবিলে না থাকলে আজ তোমাকে কোলে নিয়ে আমি পুরো বাড়ি ঘুরতাম। অবশ্য তোমার বেয়ারা ভুঁড়ি একটু টালবাহানা করত, তবুও আমি এতকিছু কেয়ার করতামনা। আজ মনে হচ্ছে তোমার ভুঁড়িও তোমার মতই কিউট। আজ থেকে প্রতিদিন তোমার ভুঁড়িতে একটা করে চুমু দিব। এটা তোমার পাওনা। ”

সানাউল রাশেদিন ভাতিজার এমন কান্ডে লজ্জায় পরে গেছেন। তিনি কি এমন করেছেন, যার দরুন তাহমিদ তাকে চুমু দিল! তিনি তাহমিদের প্রত্যেকটা কথা চুপচাপ শুনে যান। তিনি ভালো করেই জানেন এই ছেলেটা তার কতখানি জুড়ে আছে। কিংবা এই ছেলেটাই বা তাকে কত ভালোবাসে।

” বাপ, এখন কোন কথা না বলে পেট ভরে খা। তোর চাচ্চু আজ বড় ঝাটকা খেয়েছে। সে বোধহয় বেশি কিছু খেতে পারবেনা। আরেকটা কথা, তুই সামনে সপ্তাহে কয়েকদিন ফ্রি থাকার চেষ্টা করবি। আমরা সবাই মিলে গ্রামে যাব। নাজমা, শাহনাজের পরিবারও যাবে। এখান থেকে আমরা সবাই যাব। কয়েকদিন থাকব সেখানে। ”

” আমি কয়েকদিন কোথাও গিয়ে থাকতে পারবনা, বড়মা। যাতায়াত মিলে বড়জোর দুইদিন থাকতে পারব। তাই আমার চিন্তা না করে তোমরা যাও। আমি সময় করে সেখানে যাব। তোমার ভাইয়ের সাথে দেখা আমাকে করতেই হবে। তার সাথে অনেক কথা বলার আছে। সে আমাকে ছোটবেলায় যেসব কথা দিয়েছিল, সেসব কি মনে রেখেছে নাকি জিজ্ঞেস করতে হবে। ”

” কায়েস আবার তোকে কি কথা দিয়েছিল, বাপ! অবশ্য তুই বরাবরই তার ন্যাওটা ছিলি। গ্রামে গেলে তোকে কাঁধে নিয়ে ও সারা গ্রাম ঘুরাত। তোর আব্দার পূরণ করত ও। এসব জানি। কিন্তু কথা দেয়ার বিষয়টা বুঝলামনা! ”
” এটা আমাদের দুইজনের বিষয়, বড়মা। সে যদি ভুলে যায়, তাকে মনে করিয়ে দেয়ার দ্বায়িত্ব আমার। আচ্ছা, দিদুন, তুমিও যাবে? ”
” হুম দাদু ভাই, আমিও যাব। আমার ভুলের জন্যই ছেলেটার জীবন অন্যরকম হয়ে গেছে। তার কাছে আমার ক্ষমা চাইতে হবেনা? ”

” আম্মা, আপনি আবার ঐ একই কথা বলছেন! আমি অনেকবার বলেছি, এটা আমাদের সাথে হওয়ারই ছিল। আল্লাহ আমাদের ভাগ্য এভাবেই লিখে রেখেছিলেন। তবুও কেন আপনি বারবার নিজেকে দোষী ভাবেন! আপনি এভাবে বললে আমি কষ্ট পাই। ”
কুহু অবাক হয়ে দিদুন আর ফুপুর কথা শুনে। ও ভাবে, এরা মানুষ হিসেবে এত ভালো কেন! ও এই বাসায় আসার পর থেকে কেউই ওর বাবার বিষয়ে কোন কথা তোলেনি। যেন তেমন কিছুই ঘটেনি, এমন ভাব করেছে সবাই। এই উনিশ বছরের জীবনে দুঃখ-কষ্ট ছাড়া যেখানে পথ চলতে পারেনি, সেখানে এই বাসার সকলের এত মধুর আচরণে যেন ও খেই হারিয়ে ফেলে।

এরপর আর কেউ কোনও কথা বলেনা। সবাই খেতে শুরু করে।
তাহমিদ চিংড়ির মালাই কারি দিয়েই ভাত খাচ্ছে।
” বড়মা, মালাই কারিটা জোস হয়েছে। আসলেই তোমার হাতে যাদু আছে। দেখ কতগুলো ভাত খেয়ে নিলাম। রাতেও অনেকগুলো খেয়েছিলাম। মালাই কারি থাকলে অন্য কোনও আইটেম খেতে ইচ্ছে করেনা। এখন থেকে প্রতিদিন দুপুরে এই আইটেম রাখবে। ”

” মালাই কারি আমি রান্না করিনি, বাপ। কুহু রান্না করেছে। গতকালও কুহুই রান্না করেছিল। তাই যাদু আমার হাতে না বলে বল কুহুর হাতে আছে। ”
এবার যেন তাহমিদের মাথা ঘুরতে লাগলো। শ্বশুরের মেয়ে এত ভালো রান্না করতে জানে! ওর আজ ভিষণ খুশি খুশি লাগছে। চোখের সামনে প্রিয় নারী, হঠাৎই তার হাসি দেখতে পাওয়া, আবার তারই হাতের রান্না খাচ্ছে। একদিনেই ওর প্রাপ্তির খাতা পূর্ণতার দিকে এগোচ্ছে। ভালোবাসা এত মধুর কেন! কেন আকাঙ্ক্ষিত মানুষটা সামনে থাকলে বুকের ভিতর এত তোলপাড় হয়! তাকে দু-চোখ ভরে দেখলেও দেখার সাধ মিটেনা।

চোখের সাথে বুকও পিপাসার্ত হয়ে থাকে! তার শান্ত, স্নিগ্ন চাহনিতে কেন এত মায়া! তার হাসিতে কেন এত সুখ! একদিনেই তাহমিদের সামনে অনেক কেন এসে ধরা দেয়। ও একটার উত্তরও জানেনা। শুধু জানে সামনে বসা ঐ শ্যামাকন্যাকে তার চাই। তার হাতে হাত রেখে দিগন্তে হারাতে চাই। তাকে ফুলেল বর্ষনে ডোবাতে চাই সময়ে-অসময়ে। তাকে পেলেই ওর সকল চাওয়া পূর্ণ হবে।

” বাহ্, তোমার ভাইয়ের মেয়ে দেখছি ভিষণ গুণবতী! শোন মেয়ে, প্রতিদিন এই একটা আইটেম তুমি আমার জন্য রান্না করবে যত্ন নিয়ে। এই বাড়িতে একটাই কাজ তোমার। ”
তাহমিদের কথায় কুহু মাথা নাড়ায়।
খাবার পর যে যার রুমে গেলেও তাহমিদ ড্রয়িং রুমে বসে আছে। ও একটু পর পর উঁকি দিচ্ছে রান্নাঘরের দরজায়। আফরোজা নাজনীন রান্নাঘরে টুকটাক কাজ করছেন। তাহমিদ ওর বড়মাকে একা পেতে চাচ্ছে। ওর উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে হলে এই মুহূর্তে ওর বড়মাকে লাগবে।

কিছুক্ষণ পর রান্নাঘর থেকে মনি নামের মেয়েটি বেরিয়ে গেলে, তাহমিদ ওর বড়মার কাছে যায়।
পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বড়মাকে।
” তোমার সাথে একটা জরুরী কথা ছিল, বড়মা। ”
” কি কথা, বাপ? বলে ফেল। ”
” তুমি হাত থেকে এসব প্লেট রাখ, আমার দিকে তাকাও আর সোজা হয়ে দাঁড়াও। ”
তাহমিদের কথামত আফরোজা নাজনীন ওর দিকে ফিরে।
” এবার বল। ”

” বড়মা, আমি সিঙ্গাপুর থেকে সবার জন্যই কিছু না কিছু এনেছি। কিন্তু আমি এটা জানতামনা বাসায় কুহু আছে। তাই ওর জন্য কিছু আনা হয়নি। আমি সবাইকে তাদের জন্য নিয়ে আসা জিনিসগুলো দিচ্ছি, কিন্তু কুহুকে কিছু দিচ্ছিনা, এটা কেমন দেখায় বল? তাই একটা কাজ করতে চাচ্ছি। যদি তুমি অনুমতি দাও। ” এই প্রথমবার তাহমিদ ওর বড়মার সাথে মিথ্যা বলছে। সেজন্য ওর বুকটা দুরুদুরু করছে।

” কি কাজ, বাপ? ” আফরোজা নাজনীন আগ্রহভরে তাহমিদের দিকে তাকান।
” আমার এক ফ্রেন্ডের জন্য একটা ফোন এনেছিলাম। সেটা কুহুকে দিতে চাচ্ছি। ” আসলে তাহমিদ কুহুর জন্যই ফোনটা কিনেছিল। সেইসাথে আরও অনেক কিছু কিনেছে। ও ভেবেছিল যখন তার স্বপ্নকন্যার দেখা পাবে, তখন সে তার স্বপ্নকন্যাকে সেগুলো দিবে।

” তোর ফ্রেন্ডের জন্য নিয়ে আসা ফোন কুহুকে দিবি! এতে তোর ফ্রেন্ডের মন খারাপ হবেনা? শোন, আমি বলি কি কুহুকে কিছুই দিতে হবেনা। তোর চাচ্চু ওকে ফোন কিনে দিয়েছে। আর তাছাড়া কুহুও মনে হয় নিবেনা। কারন ও অন্যরকম একটা মেয়ে। ”

” প্লিজ বড়মা, আমার ফ্রেন্ড কিছুই মনে করবেনা। ওকে আমি আরেকটা কিনে দিব। আর কুহুকে তুমি বুঝিয়ে বললে ও অবশ্যই নিবে। ওকে কিছু না দিলে আমার খারাপ লাগবে। ”
আফরোজা নাজনীন তাহমিদের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলেন ছেলেটা বড় আশা নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তাই তিনি ছেলেটাকে নিরাশ করতে চাইলেননা।

” আচ্ছা, তুই কুহুকে ফোনটা দিয়ে দিস। ”
” আমি নয় তুমি দিবে। ঐ মেয়ে আমাকে দেখলেই কেমন গুটিয়ে যাচ্ছে। তুমিই বরং ওকে দিও। আমি তোমার কাছে এনে রাখছি। ”
” আচ্ছা, নিয়ে আয়। ”

তাহমিদ ভেতরে ভেতরে অট্রহাসি হাসছে। এত সহজে ওর কাজ হয়ে যাবে ভাবতেই পারেনি৷
কায়েস শোরুমে বসে ওর কলেজ জীবনের এক বন্ধুর সাথে কথা বলছিল। সেই সময় শোরুমে তার চাচাতো ভাই আসে। বয়সে সে কায়েসের কিছুদিনের বড়। তবে তাদের সম্পর্ক বন্ধুর মত। কিছুক্ষণ পর কায়েসের বন্ধু বিদায় নিলে কায়েসের ভাই এসে কায়েসের পাশে বসে।

” কায়েস, তোর সাথে কয়েকটা জরুরী কথা বলতে আসলাম। ”
” বাড়িতেই তো বলতে পারতিস। কষ্ট করে এখানে আসলি কেন? ”
” বাড়িতে বলা যাবেনা জন্যই এখানে আসা। ”
” কি হয়েছে! কোন সমস্যা? ”

” আমার কথা মনযোগ দিয়ে শোন। আমাদের গ্রামের জমির উদ্দিন মেম্বার, সে খুবই খারাপ মানুষ। চুরি, বাটপারি, নারীঘটিত কেলেঙ্কারি এমন কোন কিছু বাদ নেই যা সে করেনি। আপারা তোকে তার বিষয়ে সাবধান করে দেয়নি? ”
” হুম, আপারা সবাই বলেছে তার থেকে দূরে থাকতে। কি ঘটনা বলতো? ”

” আজ দেখলাম তোদের বাড়ি থেকে জমির উদ্দিন মেম্বার বের হচ্ছে। আমাদের কাজের ছেলের কাছ থেকে জানতে পারলাম সে প্রায় দেড় ঘন্টা আগে তোদের বাড়িতে ঢুকেছিল। তোর বউ গ্রামে নতুন এসেছে, সে কিন্তু কাউকেই চিনেনা। তোকে এখন থেকেই সাবধান হতে হবে। বউকে নিষেধ করবি মেম্বারকে যেন প্রশ্রয় না দেয়। আমরা কেউই তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিইনা। ”

” ঠিক আছে, আমি বাড়িতে যেয়ে শিউলিকে জিজ্ঞেস করব। তুই ভালো করেছিস আমাকে জানিয়ে। এখন থেকে যা ব্যবস্থা নেয়ার নিব। ”
কায়েস চিন্তিত হয়ে জবাব দেয়। আসলে ও শিউলিকে হাড়েমজ্জায় চিনে। ও জানে শিউলি কেমন প্রকৃতির মানুষ। কায়েস অনুভব করে এবার তার কঠোর হওয়ার সময় এসেছে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ৯

আফরোজা নাজনীন তাহমিদের দেয়া ফোন কুহুকে দিতে চাইলে, কুহু না নেয়ার জন্য টালবাহানা করতে থাকে। ওর একটাই কথা, আমার ফোন আছে। কিন্তু ফুপুর কাছে তাকে হার মানতে হয়।
তাহমিদ কুহুকে ফোন দিতে পেরে ভিষণ খুশি। ও কুহুর জন্য কেনা ঝুমকো জোড়া হাতে নিয়ে ভাবছে, এগুলো কিভাবে কুহুকে দেয়া যায়। অনেক ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেয়, অতি শীঘ্রই ও কুহুকে নিজের মনের কথা জানিয়ে দিবে। এরপর কুহুর জন্য কেনা সবকিছুই ও কুহুকে দিবে।

বিন্দু থেকে বৃত্ত সিজন ২ পর্ব ১১