বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ৩৮

বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ৩৮
নিশাত জাহান নিশি

“প্রস্তাবটা মন্দ নয়। সাহিলের সাথে রুমকিকে ভীষণ মানাবে। শুভ কাজ জলদি সেরে ফেলাই উত্তম।”
উপস্থিত সবার মুখে হাসি। খুশি যেনো ধরছেইনা। বিশেষ করে নাজিয়া চৌধুরীর ঠোঁট থেকে হাসি মিলছেইনা। প্রফুল্ল গলায় তিনি সবার উদ্দেশ্যে বললেন,

“আমিও তাই ভাবছি। শুভ কাজে দেরি করে লাভ নেই। মিশাল এলে পরেই না হয় মিশালের কাছে আমি প্রস্তাবটি রাখব। বড়ো ভাইয়ার অবর্তমানে মিশালই তো রুমকির অভিভাবক।”
ফট করে মিশাল জায়গা থেকে সরে গেল। মাথায় তার গণ্ডগোল লেগে গেল। বেলকনির ধারে এসে সে অস্থির হয়ে সাহিলের নাম্বারে কল করল। প্রথম কলটি বেজে ওঠতেই সাহিল খিটখিটে মেজাজ নিয়ে কলটি তুলল। কর্কশ গলায় বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“হ্যালো।”
“কোথায় তুমি?”
“বাসায়। আফিম গিলছি!”
“মানে? হয়েছেটা কী? ফুফু এসব কী বলছে?”
“মা পাগল হয়ে গেছে। আমার কোনো কথাই শুনছেনা সে। প্লিজ তাঁকে থামা। আমার মাথা গরম হয়ে গেলে কিন্তু আগের রূপে ফিরে যেতে আমার বেশি সময় লাগবেনা!”

“তুমি আমাদের এখানে একবার আসো তো। বসে কথা বলি। ব্যাপারটা সিরিয়াস মনে হচ্ছে।”
“জেনিয়া আছে বাসায়?”
“হুঁ।”
“আচ্ছা তাহলে আসছি আমি।”

ঝট করে কলটি কেটে দিয়ে সাহিল রেডি হতে লাগল মিশালদের বাড়ির উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য। জেনিয়াকে তার ভালো লাগে বিষয়টি আজই খোলসা করতে হবে তাকে। যদিও সে চেয়েছিল ধীরে ধীরে জেনিয়ার মনে প্রবেশ করতে তবে তা আর হলো কই? তার মা নাজিয়া চৌধুরী তো এর আগেই সব ঘেটে ‘ঘ’ করে দিলো।
ফোনটি হাতে নিয়ে মিশাল পিছু ঘুরতেই সামান্তার মুখোমুখি হয়ে গেল। ভ্রু যুগল কিঞ্চিৎ উঁচালো সামান্তা। আগা গোঁড়া পর্যবেক্ষণ করতে লাগল মিশালের। সন্দিহান গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কী ব্যাপার? এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে কার সাথে কথা বলছিলে?”
ফোনটি প্যান্টের পকেটে রাখল মিশাল৷ সামান্তার দিকে নিশ্চল দৃষ্টিতে তাকালো। ক্ষীণ গলায় বলল,
“সাহিল ভাইয়ার সাথে।”
“কী ব্যাপারে?”

“ড্রইংরুমে চল তাহলেই বুঝতে পারবি।”
“জরুরি হলে যাব। ছবি তোলার জন্য সবাই আকুপাকু করছে। এখন ছাদে যেতে হবে।”
“তেমন জরুরি নয়। আচ্ছা যা, ছবি তোল। তবে একটা শর্ত।”
“কী শর্ত?”
“কোনো ছবি ফেসবুকে আপলোড দেওয়া যাবেনা!”

মিশাল আরও দু-কদম বাড়িয়ে সামান্তার গাঁয়ের সাথে যতোটুকু সম্ভব ঘেঁষে দাড়ালো। মেয়েটিকে আজ এতো সাজতে কে বলেছিল? অপরূপা দেখাচ্ছে তাকে। স্নিগ্ধ এক মায়াবী পরী। চোখের নিচে গাঢ় কাজল পরেছে এতোটুকু অবধি ঠিক ছিল কিন্তু কপালে ঐ কালো টিপ। কে পরতে বলেছিল তাকে? এই ছোট্টো টিপটি যে তার সৌন্দর্যকে আরও দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো।

চুলে আবার ঘটা করে খোঁপাও বেঁধেছে! খোঁপার মাঝখানে গাজরা ফুল হলে মন্দ হতোনা। দৃষ্টি মগ্ন হয়ে এলো মিশালের। এই নেশালো দৃষ্টি কোনো ভাবেই সরাতে পারছেনা সে। সামান্তা ছাড়া আর কিছুতেই সিরিয়াস হতে পারছেনা। অথচ সামনেই তাকে কঠিন কিছু পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। মিচকে হাসল সামান্তা! মিশাল যে তাতে ডুবে আছে বুঝতে কিচ্ছুটি বাকি নেই তার। ক্ষেপাতে চাইল মিশালকে। গলা ঝাকালো সে। মিশালের মুখের সামনে তুরি মারলো। দেঁতো হেসে বলল,

“ছবি শুধু আজ ফেসবুকে আপলোড দেওয়া নয় বরং ইন্সটাতে, হোয়াটসঅ্যাপ ডে তে, রিলসে সব জায়গায় আপলোড দেওয়া হবে। তুমি শুধু দেখেই যাবা। কিছু করতে পারবানা!”
খিলখিল করে হেসে সামান্তা জায়গা থেকে প্রস্থান নিলো। সামান্তার যাওয়ার পথে তাকিয়ে মিশাল ক্রুর হাসল! বেশ ভেবেচিন্তে বলল,

“আমি কী করতে পারি বা না পারি তা একটু পরেই টের পাবি! আমাকে জ্বালানোর ইচ্ছা পোষণ করাটাও তোর এক ধরণের বোকামি।”
ড্রইংরুমের দিকে হেঁটে গেল মিশাল। তাকে দেখে মিজানুর রহমান, নাজিয়া চৌধুরী ও জেসমিন বেগম জায়গা থেকে নড়েচড়ে বসলেন। নাজিয়া চৌধুরীর ইশারা অনুযায়ী মিশাল বাধ্য ছেলের ন্যায় তাঁর পাশে মাথা নুইয়ে বসল। গলা ঝাকালেন নাজিয়া চৌধুরী। মিশালের হাতে হাত রাখলেন। সবার অনুমতিক্রমে তিনি নরম স্বরে মিশালকে বললেন,
“ফুফু কী তোর কাছে একটা প্রস্তাব রাখতে পারি মিশাল?”

চোখ তুলে মিশাল তার ফুফুর দিকে তাকালো। বুঝতে বাকী রইলনা নাজিয়া চৌধুরী কী প্রস্তাব রাখতে চাইলেন। সব বুঝেও ক্ষীণ হাসল মিশাল। মিহি স্বরে বলল,
“কেন পারবেনা ফুফু? বলোনা কী প্রস্তাব?”
“রুমকিকে আমি আমার ছেলের বৌ করে নিয়ে যেতে চাই। তোর কোনো আপত্তি নেই তো?”
“আপত্তি আছে ফুফু!”

মুহূর্তেই উপস্থিত সবাই ভড়কে ওঠল। মিশালের অসম্মতি সবার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। চুপ হয়ে গেলেন নাজিয়া চৌধুরী। রীতিমতো হয়রান হয়ে গেলেন তিনি। তাৎক্ষণিক মিশালের হাতটি ছেড়ে দিলেন। মিশাল তাঁকে মুখের ওপর এভাবে না করে দিতে পারল? উত্তেজিত হয়ে ওঠলেন মিজানুর রহমান। মিশালকে বললেন,
“আপত্তি কীসের মিশাল? আমাদের মতে তো আপত্তি করার মতো নাজিয়া কোনো কু-প্রস্তাব দেয়নি। রুমকির জন্য এরচেয়ে ভালো ঘর তুই পাবিনা। ভাগ্যিস নাজিয়া এই প্রস্তাবটি দিলো আমরা তো এই নিয়ে কখনও ভেবেও দেখিনি।”

“আমি জানি চাচা রুমকির জন্য এরচেয়ে ভালো ঘর হয়তো আমি পাবনা। ফুফুর চিন্তাভাবনাকেও আমি সম্মান জানাই। ফুফু আমাদের জন্য কতটা ভাবে বলে প্রস্তাবটি দিয়েছে আমি জানি। কিন্তু এসবের আগে একটা বিষয়ও আমাদের মাথায় রাখতে হবে বিয়ে শুধু দুটো পরিবারের বন্ধন নয়, বরং দুটো মনেরও বন্ধন। যাদের কথা চিন্তা করে আমরা সিদ্ধান্ত নিবো তারা আমাদের মতামতকে কতোটুকু গ্রহণ করল এর ওপরেও কিন্তু অনেক কিছু নির্ভর করে।

জোর করে মানিয়ে নেওয়ার অভিনয় করা আর মন থেকে মেনে নেওয়া দুটো কিন্তু আলাদা বিষয়। তোমরা কিছুটা সময় নাও। ভেবে দেখো আমার কথাগুলো। হুটহাট করে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো কিছু বয়ে আনতে পারেনা। যদি আমার কথায় তোমরা কষ্ট পেয়ে থাকো আমি মন থেকে দুঃখীত। তোমরা আমার আপন মানুষ, কাছের মানুষ। তোমাদের সিদ্ধান্তকে অসম্মান করার দুঃসাহস আমার নেই।

রুমকির অভিভাবক হিসেবে আমি আমার মতামত তোমাদেরকে জানালাম। বাকিটা তোমাদের ওপর ছেড়ে দিলাম। রুমকির ওপর তোমাদের অধিকারও কিন্তু কম নয়।”
জায়গা থেকে ওঠে গেল মিশাল। দ্রুত পায়ে হেঁটে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। উপস্থিত সবাই দ্বিধায় পরে গেল। যদিও মিশালের কথাগুলো ফেলে দেওয়ার মতো নয়! কিছুক্ষণ ভেবেচিন্তে দীর্ঘশ্বাস ফেললেন মিজানুর রহমান। চিন্তিত ও বিষণ্ন নাজিয়া চৌধুরীকে বললেন,

“মিশাল খারাপ কিছু বলেনি নাজু। সময় নে, ভেবেচিন্তে দেখ কী করা যায়। ভাগ্যের লিখন তো আর খণ্ডানো যাবেনা। সাহিলের ভাগ্যে যদি রুমকি থেকে থাকে তবে ঘুরে ফিরে রুমকিকে তার কাছেই আসতে হবে।”
বাড়ি ফিরল মিশাল। দ্রুত পায়ে হেঁটে তার রুমের দিকে অগ্রসর হতে লাগল। জেনিয়ার রুমের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতেই আচমকা থেমে গেল সে। কানে ভেসে এলো জেনিয়ার কান্নাজড়িত কণ্ঠস্বর! ভীষণ কাঁদছে জেনিয়া৷ তাকে আটকানোর চেষ্টা করছেন শাহনাজ বেগম। কঠিন গলায় বলছেন,

“পাগলামি করিসনা জেনিয়া। কিছুদিন পরেই তোর টেস্ট এক্সাম। প্রয়োজনে এক্সাম শেষ হলে বাড়ি যাবি। এখন আমি তোকে কোথাও যেতে দিচ্ছিনা।”
“প্লিজ খালামনি। তুমি আমাকে আর আটকিও না। আমি পারছিনা সহ্য করতে। মিশাল ভাইয়াকে সামান্তা আপুর সাথে সহ্য করতে পারছিনা আমি! ছাদের দৃশ্যটি আমার বার বার চোখে ভাসছে! এখানে থাকলে তাদের একসাথে দেখলে আমার কষ্ট হবে বেশি। আমি তাদের থেকে দূরে চলে যেতে চাই খালামনি। তাদের থেকে দূরে সরে যেতে পারলেই আমি ভালো থাকব।”

ফুঁপিয়ে কেঁদে জেনিয়া তার ল্যাগেজপত্র নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল। ইতোমধ্যেই সে মিশালের মুখোমুখি হয়ে গেল। শাহনাজ বেগমও জেনিয়ার পিছু পিছু এলেন। মিশালকে দেখে থেমে গেল জেনিয়া। চোখের জল বাঁধ ভাঙতে লাগল। সেই সাথে ঘৃণাও কাজ করতে লাগল! মিশাল কপাল কুঁচকালো। বিরক্তির স্বরে প্রশ্ন ছুড়ল,
“কী ব্যাপার? কোথায় যাচ্ছ তুমি?”

মিশালের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিলো জেনিয়া। হাতের উল্টো পিঠ দ্বারা চোখের জলগুলো মুছে নিলো। ভরাট গলায় বলল,
“বাড়ি যাচ্ছি।”
“তোমার না টেস্ট এক্সাম বাকি?”
“প্রবলেম নেই। বাসা থেকে আসা যাওয়া করে এক্সাম দিব।”
“হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত?”
“তুমি বুঝোনা? অবুঝ তুমি?”

রাগে হুংকার ছেড়ে কথাটি বলল জেনিয়া! তার মানে কী একটু আগে ছাদে মিশাল যখন সামান্তার কপালে চুমু খাচ্ছিল তা কোনোভাবে দেখে ফেলেছে জেনিয়া? মিশালকে উপেক্ষা করে জেনিয়া বাড়ির সদর দরজায় চলে গেল। অপ্রত্যাশিতভাবে তখন সাহিলের আগমন ঘটল সেখানে। জেনিয়ার মুখোমুখি দাড়িয়ে সে! চোখের কোণে তখনও জল লেগে রয়েছে জেনিয়ার। সাহিল ব্যস্ত হয়ে ওঠল। বুকটা কেঁপে ওঠল তার। সাহিলকে দেখে জেনিয়া বিরক্তবোধ করল। সাহিলের সামনে থেকে সরে যেতে চাইল। পাশ কাটিয়ে গেল। তবে সাহিল তা হতে দিলোনা। পুনরায় সে জেনিয়ার মুখোমুখি দাড়িয়ে গেল। অধীর গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কোথায় যাচ্ছেন?”
“আপনাকে বলে যেতে হবে?”
“বলে না যান। অন্তত সাথে তো নিয়ে যান!”
সাহিলের কথায় অবাক হয়ে গেলো জেনিয়া। সাথে প্রচণ্ড রাগও হলো। মিশাল তার পেছনের দিকটিতে এসে দাড়ালো। ইশারায় সাহিলকে ইন্ধন জোগালো। জেনিয়াকে আটকাতে বলল। তীব্র রাগ দেখালো জেনিয়া। পুনরায় চেষ্টা করল সাহিলের পাশ কাটিয়ে যাওয়ার। খরখরে গলায় বলল,

“সরুন সামনে থেকে। যেতে দিন আমায়।”
“বললাম তো আমাকে সাথে নিয়ে যেতে হবে।”
বার বার জেনিয়ার পথ আটকে দিচ্ছে সাহিল! ধৈর্যহারা হয়ে জেনিয়া এবার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলল সাহিলের দিকে। কর্কশ গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,

“কী চান আপনি আমার থেকে? কেন আটকাতে চাইছেন আমাকে?”
দৃষ্টি শিথিল সাহিলের। যথেষ্ট সোজাসাপটা গলায় বলল,
“আপনি থেকে গেলে আমার ভালো লাগবে। এছাড়া আর কোনো কারণ নেই।”
“আপনাকে ভালো লাগানোর দায়িত্ব আমার নয়! যথেষ্ট হয়েছে এবার পথ ছাড়ুন।”
“দায়িত্ব বুঝে নিলেই হয়! নিবেন আমার দায়িত্ব?”

“আর ইউ ম্যাড? বুঝেশুনে কথা বলছেন তো আপনি? আমার মনে হচ্ছে আপনি পাগল হয়ে গেছেন।”
“আমারও তাই মনে হচ্ছে! আচ্ছা পাগলকে ভালো করার ঔষধ আপনার জানা আছে?”
মিশাল মাঝখানে ফোঁড়ন কাটল। বহু কষ্টে হাসি থামালো। গলা ঝাকিয়ে জেনিয়াকে বলল,
“আমার মনে হচ্ছে আপাতত তুমি রুমে গেলেই পাগলটা ঠিক হয়ে যাবে জেনিয়া! তার পাগলামি আমিও সহ্য করতে পারছিনা।”

“সাইকো, স্টুপিট!”
সাহিলকে মুখের ওপর গালমন্দ করে জেনিয়া রাগে ফোঁস ফোঁস করে তার রুমের দিকে এগিয়ে গেল! মিশাল ও সাহিলের উদ্দেশ্য সফল হলো! দুজনই বাঁকা হেসে হাই ফাইভ করল! শাহনাজ বেগম আড়াল থেকে দাড়িয়ে সব পর্যবেক্ষণ করছিলেন। জেনিয়ার ওপর যে সাহিলের কিছু দুর্বলতা কাজ করছে তিনি বুঝতে পারলেন! এভাবে চলতে থাকলে যে জেনিয়া ও সাহিলের সম্পর্ক অনেক দূরে এগুতে থাকবে তা নিয়েও তাঁর কোনো সন্দেহ নেই। তবে এতে আপত্তিও নেই! বোনের মেয়ের একটা গতি হলেই হলো।

জায়গা থেকে সরে গেলেন শাহনাজ বেগম। রাফিনকে কলে পাচ্ছেননা তিনি। জরুরি কিছু কথা ছিল রাফিনের সাথে। প্রয়োজনে রাফিনকে পাওয়াই যায়না একদম। ফোন টোন বন্ধ করে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এই নিয়ে শাহনাজ বেগমের মেজাজ বেশ চটে আছে!

শাহনাজ বেগম সরে যেতেই মিশাল প্রসঙ্গ তুলল। বেশ তৎপর গলায় সাহিলকে বলল,
“আই থিংক জেনিয়ার ব্যাপারটা এবার তোমার ফুফুকে বলা উচিৎ। তবেই হয়তো রুমকির ভূত ফুফুর মাথা থেকে নামবে।”
“ওকে। বাট জেনিয়ার কাছ থেকে কোনো পজেটিভ সাইন না পেলে আমি কী করে জেনিয়ার কথা মাকে বলতে পারি?”
“আচ্ছা তাহলে কয়েকটা দিন সময় নাও। অবশ্য আমিও ফুফুর থেকে সময় নিয়েছি।”

এইসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য দুইভাই মিলে বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল। মিশালদের বাড়িতে এলেননা নাজিয়া চৌধুরী। শাহনাজ বেগমকে তিনি দু’চোখে দেখতে পারেননা! তাই মূলত মিশালদের বাড়িতে আসা হয়নি তাঁর। ছোটো ভাইয়ের বাড়িতে থেকে সময় কাটিয়ে সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফিরে গেলেন তিনি। যাওয়ার সময় রুমকিকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আদর করে গেলেন। জারিফ ও রাফিনের থেকে দূরে থাকতে বললেন। রুমকিও হাসিমুখে তার ফুফুর কথা মেনে নিলো। মিশালের মতো রুমকিও তার ফুফুকে ভীষণ ভালোবাসে।

রাত গভীর হলো। ঘড়ির কাটা তখন দুটো ছুঁইছুঁই। চারিদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার, নীরবতায় আচ্ছন্ন। ঘুমে নিমগ্ন সবাই। সেই সময় সামান্তাদের বাড়ির মেইন গেইটের ভেতরে দাড়িয়ে মিশাল ও সামান্তা। তাদের দুজনের মধ্যে বেশ হাতাহাতি চলছে। মিশালের পুরো বডি সার্চ করেও সামান্তা তার ফোনটি খুঁজে পেলোনা! কোথায় লুকালো মিশাল তার ফোনটি? গাঁয়ে শুরশুরি লাগছে মিশালের। তবুও সে সোজা হয়ে দাড়িয়ে রইল। ক্লান্ত হয়ে গেল সামান্তা। কোমড়ে হাত গুজে মিশালের মুখোমুখি দাড়ালো। অগ্নিঝরা দৃষ্টি তার। চোয়াল উঁচিয়ে প্রশ্ন ছুড়ল,

“কোথায় লুকাইছ আমার ফোন?”
“আশ্চর্য। তোর ফোন আমি লুকাতে যাবো কেন?”
“তুমি কী ভাবছ আমি কিছু বুঝিনা? বলো আমার ফোন কোথায় লুকাইছ? বিকেল থেকেই কিন্তু আমি ফোনটা খুঁজে পাচ্ছিনা।”

“এক সেকেন্ড এক সেকেন্ড। তুই কী কোনোভাবে মিন করতে চাইছিস আমি তোর ফোন চুরি করেছি?”
“চুরি করোনি বাট ফোনটা লুকাইছ তুমি। যেনো আমি ফেসবুকে কোনো ছবি আপলোড না করতে পারি সেজন্য।”
ক্রুর হাসল মিশাল। নিষ্ক্রিয় দৃষ্টিতে তাকালো সামান্তার দিকে। ডানপিটে গলায় বলল,
“কী যেন বলেছিলি? ফেসবুকে আপলোড দিবি, রিলস বানাবি, ইন্সটাতে আপলোড দিবি আমি শুধু দেখব কিন্তু কিছু করতে পারবনা। এবার দেখলি তো মিশাল চাইলে কী কী করতে পারে? আগামী একমাসও তুই ফোন পাবিনা! ফোন পাওয়ার আশা ছেড়ে দে।”

ফেঁসে গেল সামান্তা। মিশালের সাথে পাঙা নেওয়া তার উচিৎ হয়নি। রাগী ভাব ভুলে সে ভোলাভালা ভাব নিলো। কোকিল কণ্ঠে বলল,
“মিশাল ভাইয়া প্লিজ। আমি কখনও কোনো ছবি আপলোড করার কথা আমার মাথাতেও আনবনা। ফোনটা দিয়ে দাও প্লিজ। ফোন ছাড়া এখন চলা যায় বলো? কতো ইম্পর্টেন্ট কাজই তো থাকতে পারে ফোনে।”

“আহা উড়নচণ্ডী থেকে এখন সুশীল, ভদ্র মেয়ে! রূপ বদলাতে তোর সময় লাগেনা না রে?”
ইতোমধ্যেই রাস্তায় একটি বিশাল গাড়ির বিকট হর্ণের শব্দ এলো। মিশাল তাৎক্ষণিক ছুটে গেল সেখানে। শো শো বেগে গাড়িটি কোথায় যেনো উধাও হয়ে গেল। মিশালের কেমন সন্দেহ হতে লাগল। দৌড়ে মিশাল তার বাড়ির ভেতর ঢুকল।

বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ৩৭

সদর দরোজাটি সে যেভাবে খোলা রেখে গিয়েছিল দরোজাটি ঠিক সেভাবেই খোলা পরে আছে। বাড়ির আসবাবপত্র সব ঠিকঠাক আছে। চুরি, ডাকাতির কোনো আলামত নেই। তবে জেনিয়ার রুমের দরজা খোলা। কিন্তু জেনিয়া রুমে নেই!
রাফিন ও জারিফ কী তবে রুমকির জায়গায় ভুল করে জেনিয়াকে তুলে নিয়ে গেল?

বুকে যে শ্রাবণ তার পর্ব ৩৯