মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ১৫

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ১৫
আবরার আহমেদ শুভ্র

নিস্তব্ধ রাত্রি! সাথে ঝিঁঝি পোকার অজস্র ডাকনি। এই ডাকনি রাত্রিকে করে তুলেছে আরও রহস্যময়। আকাশে বেশ বড়সড় চাঁদ উঠেছে আজ। সাথে হাজারো তারার মেলা নিকষ কালো এই আকাশের মাঝে! এক একটা জোনাকির আলোতে মোহে পরিণত হয়েছে চারপাশের পরিবেশ।

বারান্দায় দাঁড়িয়ে চন্দ্র বিলাস করছে তানজিম। মনভরে অনুভব করতে চাই আজ সে প্রকৃতির প্রতিটি রূপ। কিন্তু তার এই মুহুর্তের ব্যাঘাত ঘটিয়েছে ঘাড়ে পড়া একের পর এক তপ্তশ্বাস। চমকালো সে! এই মুহুর্তে এখানে আসার কোনো রাস্তায় তো নেই। কারণ তার রুমের দড়জা তো বন্ধই রয়েছে। কিন্তু আসলো কে তার রুমে! ঘাড়বে গেলো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে। জমে এলো সারা শরীর তার। সাহস নিয়ে সেদিকে তাকালো সে। মুহুর্তেই অবাক হলো সে। বিস্ময়ের ন্যায় বলে উঠলো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

–ফুয়াদ ভাইয়া আপনি? এতো রাতে এই রুমে? কেমনে এলেন? কেউ দেখলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
তানজিমের একসাথে এত্তগুলা প্রশ্নে বিরক্ত হলো ফুয়াদ। বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো,
–হুসস্, এত্তো প্রশ্নের জবাব দিতে আমি বাধ্য নয়। আমার বাসা সো, আমি যেকোনো রুমেই যেতে পারি। এনি সমস্যা?
চোখ ছোট ছোট করে তাকালো তানজিম ফুয়াদের দিকে। তার সামনে মুখ নিয়ে বলল,

–সমস্যা তো অবশ্যই হবে মিস্টার ফুয়াদ। এতো রাতে একটা মেয়ের রুমে এসেছেন, অথচ বললেন কোনো সমস্যা আছে কিনা! আজব মানুষ তো আপনি।
আচমকা তানজিমের কোমর ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো সে। ফুয়াদের এহেন কান্ডে বেশ অবাকই হলো তানজিম। কেঁপে উঠল সে! মুহুর্তেই একরাশ লজ্জা এসে ভর করলো তানজিমের মুখশ্রীতে। ফুয়াদ একমনে তাকিয়ে রইল তার প্রেয়সীর দিকে। তানজিমের লজ্জায় রাঙা মুখশ্রীতে বারংবার রাঙাভাব ফুটে উঠছে। তবুও অস্বস্তি নিয়ে সে বলে উঠলো,

–ক্ কি করছেন ফুয়াদ ভাই, ছাড়ুন। কেউ দেখে ফেললে কেলেংকারী হয়ে যাবে।
–ডাফার! দড়জা বন্ধ থাকলে কেউ কি দেখতে পায়? নূন্যতম এতটুকুই সেন্স নেই তোর?
–আমায় ছাড়ুন প্লীজ। এভাবে আমাকে কাছে টেনে নিলেন কেন? আপনার কেশবতী জানলে কি করবেন শুনি?
–উহু, কেশবতী তার জায়গা থেকেই ঠিক আছে। এই ওয়েট ওয়েট, এই নামটা তুই জানলি কেমনে? নিশ্চয়ই আমার রুম তল্লাশি চালিয়েছিস তাই তো? …বলে আরও শক্ত করে নিজের দিকে চেপে ধরল ফুয়াদ।

–হুহ, আমার বয়েই গেছে? আপনার রুম তল্লাশি করার কোনো ইচ্ছে করিও নি আর করবোও না। বুঝছেন? আর ছাড়ুন না প্লিজ, হাতে ব্যথা লাগছে। নাহলে আমি শক্তি প্রয়োগ করে ছাড়িয়ে নিতে পারি হুহ।
–না, ছাড়বো না। কি করবি? অবশ্য আমার সাথে পাঙ্গা নিয়েও পারবি বলে মনে হয় না। শক্তি আছে নাকি?
–আমি কিন্তু চিৎকার করবো। তখন দেখবেন ফুফি যদি এসে দেখে আপনার এই কান্ড তাহলে একেবারে কানে ধরে নিয়ে যাবে এখান থেকে, হুহ।
ফুয়াদ এবার তানজিমের কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

–বলে দাও না উড়ুফড়িং, মাম্মা এসে দেখবে আমি কেমন করে তোমার সাথে রোমাঞ্চ করছি। তখন তো ভালোই মজা হবে। তাই না? তুমি কি বলিস জানু? হয়তো মাম্মা আমাদের আরও সুযোগ করে দিবে রোমাঞ্চ করার! ইশ ভাবতেও মনে লাড্ডু ফুটছে আমার! … বলে চোখ টিপ দিলো ফুয়াদ।

চোখ বড়বড় করে তাকালো সে ফুয়াদের দিকে। কথাটার মানে বুঝতে কিয়ৎপরিমাণ সময় লাগলো তানজিমের। তবে বুঝার সাথে সাথেই দুগালে লজ্জায় রাঙাভাব ফুটে উঠলো তানজিমের। তারপরে মাথাটা নিচু করে নিলো সে। তানজিমের মুখশ্রী দিকে তাকিয়ে রইলো ফুয়াদ। তানজিমের মুখশ্রীতে এই রাঙা ভাব তাকে বারংবার প্রেমে পড়তে বাধ্য করেছে! মুচকি হাসি ফুটে উঠলো তার। সে নিঃশব্দে তার প্রেয়সীর হৃদকম্পন অনুভব করছে। সাথে তানজিমও ফুয়াদের তপ্তশ্বাস অনুভব করছে মন ভরে! আনমনে সে কখন যে ফুয়াদকে জড়িয়ে ধরেছে নিজেও বুঝতে পারলো না।

হঠাৎ ফুয়াদের কথায় ধ্যান চ্যুত হলো তানজিম। ফুয়াদের দিকে তাকালো সে। তানজিমের এমন নধর চাহনির প্রতুত্তরে ফুয়াদ মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো,
–এই যে ম্যাডাম এমন করে আমায় জড়িয়ে ধরে রাখবেন নাকি? তখন তো খুব বড় করে বলছিলেন য্…
ফুয়াদকে আর বলতে না দিয়ে তানজিম বলে উঠলো,

–আপনি কি যাবেন না নাকি? অনেক রাত হয়েছে আমার ভীষণ ঘুম পাচ্ছে। প্লীজ আপনি আসুন।
বলে অন্যদিকে ফিরে গেলো সে। তার এখন ভীষণরকম অস্বস্তি লাগছে, সাথে অস্বাভাবিক লজ্জাও ভর করেছে!
ফুয়াদ আর কথা বাড়ালো না, আজ অনেক লজ্জা দিয়ে সে তার কেশবতীকে। আর না! হালকা হাসি দিয়ে সে নিঃশব্দে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।

তানজিমের রুম থেকে বেড়িয়ে যেতেই একটা ছায়া মূর্তিকে সরে যেতে দেখলো ফুয়াদ। তার বুঝতে অসুবিধা হলো সেই ছায়ামূর্তিটি কার। অধরের কোণে তার বাঁকা হাসির ঝলক দেখা দিলো। মনে মনে নিছক পরিকল্পনা করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলো সে। আর বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

–আমাদের মাঝে আসতে মোটেও চেষ্টা করিও না মিস নাফিশা ইবনাত নিশি। ছারখার করে দিবো আমি সবকিছুই। এলোমেলো হয়ে যাবে তোর জীবন। ঠিক যেমনটা করেছি আমি মিস্টার মৃন্ময় আহসানের সাথে।
বলে বাঁকা হাসি দিলো ফুয়াদ। যার অর্থ আসলেই তাদের দুজনের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে নিজেকে প্রকাশ করলে নিজের জীবন সংশয়ের মুখে পরতে হবে নিশিকে।

নিজের রুমে এসে দেয়ালে মোবাইলটা ছিঠকে ছুড়ে মাড়লো নিশি। রাগে তার শরীরের প্রতিটি অংশ তিরতির করে কাঁপছে। সে না চাইতেও নিকৃষ্ট মনোভাব ফুটে উঠছে তার মনের কোণে। কারোর ক্ষতি করার নিকৃষ্ট থেকে নিকৃষ্টতর মনোভাবনা! বারংবার নিজেকে কন্ট্রোল করতে চেষ্টা করেও পারছে না সে। তবুও তার মনের রাগ মিটছে না কোনো মতেই। তানজিমকে সে মেয়ে হিসেবে বেশ পছন্দ করে। কিন্তু তার মানুষের সাথে কখনও সে তানজিমকে মেনে নিতে পারছেনা। রাগে গজগজ করতে করতে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

–তোকে আমি শেষ করে দেবো তানজিম, কোনো মতেই তোকে আমি ফুয়াদ ভাইয়ের হতে দিবো না। তার জন্যে যদি খুন করতে হয় তো আমি খুনই করবো। তোকে আমি তার জীবনে কোনো মতেই আসতে দিবো না। কোনো মতেই না! ফুয়াদ ভাই শুধুই আমার। তার কাছে অধিকার একমাত্রই আমার। যাকে মনের সুপ্তস্থানে সেই দিন স্থান দেয়ার সময় প্রতিজ্ঞা করেছিলাম তাকে আমি আমার করবোই উইথ আউট এনি কৌস্ট! স্যরি ফর এভরিথিং, বাট তুই তাকে কখনোই পাবি না।

–কিন্তু তোর সাথে যে সে ছায়া হিসেবে জড়িয়ে গিয়েছে! কেমনে তার মনে তোর প্রতি বিষের ছড়াছড়ি করতে পারি রে? হা সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবো আমি। কিন্তু এতে কাকে ব্যবহার করা যেতে পারলে সবটাই সহজ হওয়ার সুযোগ রয়েছে!…. বলে ভাবতে লাগে সে। হঠাৎ মাথায় তার আরও একবার বিষাক্ততার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
বাঁকা হাসি ফুটে উঠলো তার বিষাক্ত অধরের কোণে,

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ১৪

–মামিই আমার প্রধান অস্ত্র। তাকে বশ করতে পারলেই কেল্লাফতে! সো বি রেডি ফর ইউর জার্নি মিস তানজিম!

মেঘফুল ফুটলো মনে পর্ব ১৬