মেজর পর্ব ১১

মেজর পর্ব ১১
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

মুশফিকের কটেজের কিছুটা দূরে আরো তিনটা একই মডেলের কটেজ।চারজন অফিসারের চারটা কটেজ।মুশফিক আজকে কাজে মন বসাতে পারছে না।কম্পিউটারের সামনে বসে আছে অথচ মনোযোগ স্কিনে নেই।সে বারবার মোবাইলের দিকে তাকাচ্ছে।আসার সময় মিতুকে বলে এসেছিলো ঘুম থেকে উঠে যেনো তাকে ফোন দেয় কিন্তু এখন বারোটা বাজে অথচ মিতু ফোন দেয়নি।আগে কখনো বাসায় যাওয়ার জন্য মন এতো ছটফট করেনি,কিন্তু আজকে মন ছটফট করছে।

কর্ণেল ফারুক আহমেদ মুশফিকের ছটফট নজরে পরে।মুশফিক কাজ পাগল মানুষ অথচ আজকে একটু পরে পরে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে,যেনো কারও প্রতিক্ষায় অপেক্ষারত।উনি মুশফিকের কাছে যায়।
“মেজর!আর ইউ ওকে?”
স্যারের কথা শুনে মুশফিক নড়েচড়ে বসে।গমগমে গলায়,প্রফেশনালভাবে বলল,
“ইয়েস স্যার।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“তোমাকে চিন্তিত্ব লাগছে।এনি প্রবলেম? ”
মুশফিক যে বিয়ে করেছে এই খবরটা এখনো কাউকে জানানো হয়নি।চাকরিসূত্রে তার বিয়ের পারমিশন আছে। মেজর যেহেতু নিজস্ব কটেজও পেয়েছে।সে বললো,
“নো স্যার।”

উনি মুশফিককে ভিষণ স্নেহ করেন।কাজের প্রতি এতো সৎ,আর কর্মঠ মানুষ উনি কমই দেখেছেন।তাছাড়া মনে মনে মুশফিককে নিয়ে আলাদা চিন্তাও আছে।উনি মুশফিকের কপালে হাত রেখে বললো,
“শরীর ভালো আছে তো?”
উনার কাজে মুশফিক বিব্রতবোধ করে কিন্তু উনাকে বুঝতে না দিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো,
“ঢাকা গিয়েছিলাম তাই একটু ক্লান্ত লাগছে।”
“তাহলে একটা ব্রেক নাও।”

মুশফিক এটাই বলতে চেয়েছিলো,উনি বলাতে মুশফিকের ঠোঁটের কোনে কৃতজ্ঞতার হাসি ফুটে উঠে। সে বলে,
“জ্বি স্যার।”
“দুইটার সময় আবার চলে আসবে।”
“ইয়েস স্যার।”

মুশফিক দক্ষ হাতে জলদি গাড়ি চালিয়ে কটেজের সামনে এসে থামে।গাড়ি থেকে নেমে তার ভিষণ শান্তি অনুভব হয়,এতোদিন তো এমন শান্তি লাগেনি আজ কেনো লাগছে?প্রশ্নটা শুনে মুশফিক নিজেই হাসে,সে জানে কেনো বুকে এতো শান্তি লাগছে কারণ তার শান্তির ভোমরা বাসায়।সে আদোও যানে না মিতু তাকে কতটুকু শান্তি দেবে কিন্তু সে মিতুকে অসহ্য রকমের শান্তি দেবে।

এগুলো ভাবতেই গম্ভীর ঠোঁটের ভাজে হাসি ফুঁটে উঠে।সে কটেজের ভেতরে ঢুকে অনুভব করে কটেজ এখনো শান্ত,নিরিবিলি। কোথাও মিতুর সাড়াশব্দ নেই।সে দ্রুত পায়ে উপরে উঠে আসে।সকালে বাসার পরিবেশ যেমন রেখে গিয়েছিলো সবকিছু সেভাবেই আছে।সে নিঃশব্দে বিছানার কাছে এসে দাঁড়ায়।শক্ত কড়াপড়া হাত দিয়ে যথেষ্ট নরম স্পর্শ নিয়ে ছুঁয়ে দেয় মিতুলের তুলতুলে গাল।

একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে,মেয়েটাকে দেখলে ভালোবাসার লাল নীল ফুলে চারপাশ ভরে যায়,অজানা এক সুগন্ধির প্রাণভরা সুভাসে ভরে যায় মনের আঙ্গিনা।মিতু সারা রাতের জার্নি আর বমি করে দুর্বল হয়ে গিয়েছে,সকালে পাখির মতো একটু খাবার খেয়ে যে ঘুমিয়েছে আর উঠেনি।সে মিতুর রেশমী চুলে হাত ভুলাতে ভুলাতে তীক্ষ্ণ নজরে মিতুকে পর্যবেক্ষণ করে।এই ছোট দেহের অধিকারী মেয়েটা তার অধাঙ্গ।একেই ভালোবাসতে হবে।রাগী,গম্ভীর মেজরকে ছুঁয়ে দেয়ার অধিকার কারও নেই অথচ এই মেয়েটা তাকে ছুঁয়ে দেবে নিবিরভাবে।মুশফিকের দেহে এক অন্যরকম পুলক ভর করে।নরম গলায় বললো,

“মিতু।এই মিতু।”
মিতু ভিষণ আদরমাখা, ঘুমঘুম গালায় রয়েসয়ে বললো,
“হুম।”
মুশফিক থমকে গেলো।ধীর-স্থির কন্ঠে বললো,
“দুপুর হয়ে গেলো।উঠবেনা?”
মিতু ছোট বাচ্চার মতো আহ্লাদী গলায় বললো,
“আর একটু প্লিজ।”

মুশফিক মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে।আচ্ছা গলার স্বর কি খাওয়া যায়! তার ইচ্ছে করছে মিতুর জড়ানো স্বরটা হাপুস হুপুস করে খেয়ে ফেলতে।আশ্চর্য! কি ভ,য়ংকর রকম ইচ্ছা তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।মেয়েটা কি তাকে পাগল বানিয়ে দেবে নাকি! দাম্ভিক, রুচিসম্মত মুশফিকের মনে এমন উদ্ভট চিন্তাধারায় সে নিজেই অবাক।মিতুর রেশমী কালো চুলে হাত বুলিয়ে বলল,

“খিদে লাগেনি?”
“উহু।ঘুম লেগেছে।”
মুশফিক শব্দ করে হেসে উঠে।তার নিরামিষ, ছন্দহীন জীবনে মিতু যেনো অন্ধকার রাতের ছোট ছোট জোনাকির মতো আলো ছড়াচ্ছে।মিতুর হাতটা নিজের হাতে তুলে নেয় তারপর খোঁচাখোঁচা দাঁড়িসমেত গালে নরম,কোমল হাতটা আলতো করে ঘষে দেয়।কি মনে করে মুশফিক হাতটা নাকের কাছে নিয়ে ঘ্রাণ নেয়।বেলী ফুলের ঘ্রাণ নাসারন্ধে এসে আ ঘাত হানে।মুশফিক চোখ বন্ধ করে থাকে।

মিতু কতোক্ষন ঘুমিয়েছে জানে না।কিন্তু ঘুম ভাঙ্গে নরম,ধারালো কোনো স্পর্শে।সে চোখ খুলে তাকায়।মুশফিক তার হাত পরম যত্নে তার গালে নিয়ে ঠেকিয়েছে।মিতুর গা শিরশির করে উঠে।ঘুম থেকে উঠেই যে এমন ভ,য়ানক দৃশ্য দেখবে তা সে কল্পনাও করেনি।মিতু চুপচাপ মুশফিকের দিকে তাকিয়ে আছে,সে জেগে গিয়েছে মুশফিক এখনো দেখেনি।

তার হাত গাল স্পর্শ করতেই মিতুর দেহের প্রতিটা লোম সজাগ হয়ে যায়।মুশফিক গাল স্পর্শ করিয়েই থামেনি সে মিতুর হাতটা নাকে নিয়ে ঠেকায়।পাজি মেজর!মিতু কেঁপে উঠে।আর সেই কাঁপুনি হাতের বেয়ে মুশফিকের কাছে গিয়ে পৌছায়।মুশফিক সতর্ক চোখে তাকায়।মিতুকে ফ্যাকাসে,ভয়ার্থ চোখে তাকাতে দেখে মুশফিক মিতুর হাত ছেড়ে দেয়।বিচক্ষণ মুশফিকের বুঝতে অসুবিধা হয়না যে মিতুর ভয়ের কারণ কি।সে নরম,মেদুর চোখে মিতুর দিকে একনজরে তাকিয়ে থাকে।মুশফিকের সব স্পর্শ মিতুর মনে ভ,য় জাগিয়ে দিলেও অন্যরকম এক ভালোলাগায় হৃদয় সুখে ভরে যায়।মুশফিকের গম্ভীর চোখমুখ দেখে মিতু স্বাভাবিক গলায় বললো,

“আরেকটু ঘুমাই?”
মুশফিক মিতুর হাসিমুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“আরও? ”
“হ্যাঁ।”
মুশফিক কিছু বলতে যাচ্ছিলো তার আগেই মিতু তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
“প্লিজ মেজর প্লিজ।”

মুশফিক কিছুক্ষণ মিতুর দিকে তাকিয়ে থাকে তারপর আস্তে করে উঠে দাঁড়ায়।গায়ের কাপড় পাল্টে নিচে চলে যায়।মিতু ভাবে মুশফিক আর অফিসে যাবে না সে আরেকটু ঘুমিয়ে নেয়ার জন্য চোখ বন্ধ করে।
যদিও মিতু ভেবেছিলো সে মিনিট দশেক পরে উঠে যাবে কিন্তু চোখ খুলে দেখে সূর্যের লাল আভা তার ঘরে ঢুকছে,মোবাইলে সময় দেখে মিতু চমকে যায়।চারটা বাজে।সে লাফিয়ে উঠে বসে।মুশফিক দশটা ফোন দিয়েছে কিন্তু ফোন সাইলেন্ট থাকার কারণে শুনতে পায়নি।মিতু বসে নামতে যাবে তখন হাতে একটা চিরকুট আসে। সে চিরকুট হাতে নিয়ে দেখে মুশফিকের গুটগুট করে লেখা চিঠি।বিয়ের পরে বউকে চিঠি দেয়ার ব্যাপারটা খুব মজার।মিতু চিঠিটা পড়ে।

❝এই আহ্লাদী মেয়ে।
ঘুম শেষ হলো?এতো ঘুমাতে পার তুমি?শোন ফ্রেশ হয়ে নিচে যাও।।টেবিলে খাবার সাজানো আছে। খেয়ে নাও।খাওয়ার পরে অবশ্যই আমাকে ফোন করে জানাবে।বাচ্চা বউটাকে বাড়িতে রেখে টেনশনে আছি।
তোমার হ্যান্ডসাম পুরুষ❞

চিঠিটা পরে মিতুর মুখের হাসি বিস্তর হয়।মুশফিক যত্নশীল শুধুমাত্র একটু না অনেকটাই যত্নশীল,আর অনেক আদুরে।মিতু হঠাৎ টের পায় তার পেটের নাড়িভুড়ি খাবার চাইতে চাইতে ম,রে যাওয়ার যোগার।সে জলদি ফ্রেশ হয়ে নিচে যায়।খাবার টেবিলে গিয়ে খাবার দেখে মিতু মুশফিকের প্রতি আরও মুগ্ধ হয়।দেশী মুরগী ভুনা আর ঘন ডাল।খাবার খেয়ে মিতু বাধ্য হয়ে বললো,
“বাহ!মিতু বাহ! কপাল গুনে এমন লক্ষীমন্ত জামাই পেয়েছিস।কি ভালো রান্না করে,নিশ্চয়ই খুব ভালোও বাসবে।ইশ!”

মিতু খাবার টেবিলে বসেই মুশফিকের মোবাইলে ফোন দেয়।ওপাশ থেকে দারাজ কন্ঠে কাঙ্ক্ষিত পুরুষ বললো,
“মাই গুডনেস!মিতু এতোক্ষণ ঘুমিয়েছো?”
মিতু হেসে উঠলো।রিনরিনে কন্ঠে বললো,
“খাবার খেলাম।এতো ভালো রান্না করেন কিভাবে?”
“বাসায় এসে শিখাবো কিভাবে রান্না করতে হয়।”
মিতু আস্তে করে বললো,

“মেজর সাহেব।আমি আপনার থেকে কিছু শিখতে চাই না।”
“না চাইলেও শিখাবো।তোমাকে শিখিয়ে পড়িয়ে দক্ষ বানানো আমার দায়িত্ব।”
“তাই?’
” হ্যাঁ।আমি মেজর মিতু আমার সবকিছুই একটু অন্যরকম।”
বোকা মিতু বললো,

“সবকিছু কি?”
“সবকিছু মানে কি জানতে চাইছো?”
এতোক্ষণে মিতুর মনে হলো চালাক মিতু বোকার মতো কাজ করে ফেলেছে।সে জলদি বললো,
“রাখছি।”

মুশফিক মুচকি হাসে।চঞ্চল মেয়ে তার কাছে আসলেই যেনো শামুকের খোলসে ডুকে যায়।মিতু নিজের দিকে তাকায়।ট্রাউজার আর গেঞ্জি পরা।এই অবস্থায় যদি মুশফিক তাকে দেখে তাহলে খুব হাসবে।মিতু সন্ধার পরে একটা কালো শাড়ি পরে হালকা সাজুগুজু করে নেয়।মুশফিক তাকে বলেছিলো তার কাছে আসার পরে প্রতিদিন শাড়ি পরতে হবে,সেই কথা অনুযায়ী মিতু অনেকগুলো শাড়ি নিয়ে এসেছে।শাড়ি পরার পরে মিতুর খুব লজ্জা লাগতে শুরু হলো। মাগরিবের আজান হয়ে গিয়েছে অনেকক্ষন অথচ মুশফিক এখনো আসছে না।এতো বড় কটেজে মিতুর কেমন ভ,য় লাগতে শুরু হলো।সে চুপচাপ বিছানায় বসে মুশফিককে ফোন দেয়।

“কখন আসবেন?”
মুশফিক দুষ্টুমি করে বললো,
“কেনো?”
“আমার ভ,য় লাগছে।”
“আজকে আসতে লেট হবে।তুমি খেয়ে ঘুমিয়ে যাও।”
ভয়ে তার কলিজা যেনো গলায় চলে এলো।

“লেট মানে?এই পাহাড়ের জঙ্গলে আমি একা থাকতে পারবোনা।ম,রে যাবো।”
মুশফিক হেসে বললো,
“ম,রতে হবেনা ,তুমি বাহিরে বাগানে আসতে আসতে আমি চলে আসবো।”
“আপনি এতো পঁচা।”
মুশফিক হেসে গাড়ি স্ট্রাট দেয়।মিনিট পাঁচেক পরেই কটেজের সামনে এসে থামে।হালকা আলোয় শাড়ি পরিহিতা লাবণ্যময়ী নারীটাকে দেখে বুকটা মুচড়ে উঠলো।গাড়ি গ্যারেজে রেখে চুপচাপ মিতুর সামনে এসে দাঁড়ায়।মিতু হাসিমুখে তাকিয়ে আছে।মুশফিক বললো,

“কি অবস্থা?”
মিতু মাথা দুলিয়ে বললো,
“এইতো।”
“ভেতরে চলো।”
মুশফিক আগে যায় মিতু তাকে অনুসরণ করে যায়।মুশফিক ফ্রেশ হয়ে এশার নামায পরে রাতের খাবার খায়।তারপর কড়া চা বানিয়ে বারান্দায় গিয়ে বসে।মিতু মুশফিকের দিকে ভ,য়ে ভ,য়ে তাকাচ্ছে।আসার পর থেকে মুশফিক ঠিকঠাক কথা বলছে না,চুপচাপ নিজের কাজ করছে দরকার হলে সামান্য কথা বলছে।
তখনি কানে আসে মুশফিকের ডাক।

“মিতু ;চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
মিতু রুম থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসে।মুশফিক চা খাচ্ছে।মিতুর হঠাৎ খুব কান্না পায়।এই বাসায় শুধুমাত্র তারা দুজনই আছে এর মধ্যে মুশফিক যদি কথা না বলে তাহলে কিভাবে হবে?এমনিতেই বাবা মায়ের কথা খুব মনে পরছে।সে ভেবেছিলো শাড়ি পরাতে মুশফিক তার প্রশংসা করবে কিন্তু মুশফিক ভালো করে তাকিয়েছে কিনা সন্দেহ।মিতু রেললিঙ ধরে দূর পাহাড়ের গায়ে কৃত্রিম লাইটের দিকে তাকায়।মুশফিক আরও কয়েকবার ডাকে মিতু গম্ভীর গলায় বলে,

“খাবো না।”
মুশফিক শক্ত অথচ শান্ত কন্ঠে বললো,
“কেনো?”
“ভালো লাগছে না।”

মুশফিক খুব ভালো করে জানে মিতুর ভালো না লাগার কারণ।সে তীক্ষ্ণ চোখে মিতুকে পর্যবেক্ষণ করে।মেয়েটা তাকে একটুও বুঝতে পারছে না এমনকি তার মনের প্রচন্ড ঝড় সম্পর্কেও জানে না।সে শক্ত হয়ে চেয়ারে বসে আছে।মিতুল!আহ!মেয়েটা শাড়ি পরেছে,শাড়ির প্রতি তার ভিষণ দুর্বলতা আছে এই কথাটা কেউ জানে না।কয়েকবার মিতুকে বলেছে আর মেয়েটা ঠিক মনে রেখেছে।

আজকে রাতে মিতুকে শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার দুনিয়াটা মুহূর্তেই উল্টেপাল্টে গেলো,মন মন্দিরে কেউ চুপিচুপি বলে গেলো,মুশফিক বাড়িতে তুই আর মিতু আর কেউ নেই।সে চুপচাপ নিজের কাজ করে গিয়েছে।মিতু তাকে কোনো প্রকার সাড়া দেওয়ার আগে সে একটুও এগুবেনা।কিন্তু মনে যে উত্তাল সমুদ্রের মতো তুফান হচ্ছে,মন বাঙ্গাচি জেগে তার তীব্রতা প্রকাশ করতে মুখিয়ে আছে।সে নিজেকে যতো সম্ভব কন্ট্রোলে রাখার চেষ্টা করছে আর মিতু তার এই নিশ্চুপতায় অভিমান করেছে।মেয়েটা যদি জানতো!

চেয়ারে হেলান দিয়ে মুশফিক মিতুকে দেখছে।দুধে আলতা গায়ের রঙ,এর উপর কালো শাড়ি। মিতুকে দেখতে চাঁদের মত সুন্দর লাগছে।মুশফিকের আগে কখনো এমন হয়নি কিন্তু আজকে যেনো সব উল্টাপাল্টা হয়ে যাচ্ছে।যেনো শক্ত খোলস ছেড়ে অন্য মুশফিক বেরিয়ে এসেছে,যে কিনা তার বউয়ের প্রেমে পরে গিয়েছে ভিষনভাবে।
মিতু অভিমানী চোখে মুশফিকের দিকে তাকিয়ে আবার মুখ ঘুরিয়ে নেয়।মুশফিক সকল দিশা হারায়,মেয়েটা যেনো তাকে চুম্বকের মতো টানছে।সে উঠে দাঁড়ায়।ধীর পায়ে মিতুর কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।

“মিতু।”
মিতু মন খারাপ করে মুশফিকের দিকে তাকায়।মুশফিক আস্তে করে বললো,
“শাড়ি পড়েছো কেনো মেয়ে?”
মিতু আস্তে করে বললো,
“আপনার পছন্দ তাই।”
মুশফিক আস্তে করে বললো,
“ভিষণ ভুল করেছো।”
“কেনো?”

মুশফিক মুখে কিছু বললো না,ভিষন গভীরভাবে তার দিকে তাকালো।এই দৃষ্টিতে মিতুর হৃদয় এফোড় ওফোড় হয়ে গেলো,অন্তর জুড়ে শীতের মতো ঠান্ডা বাতাস নেমে এলো।মুশফিকের দৃষ্টিটা খুব নে,শামাখা মনে হলো।মিতু মাথা নিচু করে নেয়।মুশফিক দূর পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।কিছুক্ষণ পরে মিতু বললো,
“আমাকে সুন্দর লাগছে না?”

মুশফিক মিতুর দিকে তাকিয়ে থাকে।মিতু জবাবের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে।মুশফিক বললো,
“একটা কথা বলি?রাখবে?”
মিতু মুশফিকের গভীর চোখে নিজের দৃষ্টি হারিয়ে বললো,
“রাখবো। ”

মুশফিক কোনো নাটকের নায়ক না যে এমন পুতুল পুতুল বউ কাছে থাকলে নিজেকে পাথরের মতো আটকে রাখবে।সে আসলেই আর নিজের ইচ্ছা,অভিব্যক্তি আড়ালে রাখতে পারলো না।আস্তে করে বললো,
“তোমায় একটু জড়িয়ে ধরি?”
মিতু কেঁপে উঠে কিন্তু কিছু না বলে নিশ্চুপ থেকেই যেনো সম্মতি দেয়।মুশফিক খুব নরম ভাবে মিতুকে নিজের বুকে মিশিয়ে নেয়।মিতু কেঁপে উঠে,মুশফিক তা খুব টের পায়।মিতু তার বুকের কাছে আছে।সে পরম আবেশে মিতুকে নিজের বুকের অশান্তির ধাপন বুঝাতে চায়।কানের কাছে মুখ গুজে বললো,

“মিতুল।”
মিতুর জড়ানো গলায় বললো,
“হুহ।”

মেজর পর্ব ১০

“শাড়ি কেনো পরেছো ;হুহ?এতো সুন্দর লাগছে।আমি পা,গল হয়ে যাচ্ছি,আগুন জ্বলছে মিতুল।”
ভিষণ ভদ্র,মার্জিত আর গম্ভীর মানুষের মুখে এমন কথা শুনে মিতুর দম আটকে যায়।মনে মনে কেউ বলে,
প্রতিটা পুরুষ তার নিজস্ব নারীর কাছে ভিষণ অভদ্র,সে হোকনা মেজর!!

মেজর পর্ব ১২