মেজর পর্ব ১২

মেজর পর্ব ১২
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

মুশফিকের কথায় মিতুর অন্তরাত্মা থরথর করে কেঁপে ওঠে সেই কাঁপন দেহে প্রবাহিত হয়।চোখের পাতা শক্ত করে বন্ধ করে নেয়।মুশফিক মুচকি হাসে,সামান্য কথায়,আলতো স্পর্শ পেয়েই মিতু এমন কাঁপছে, বেশী ভালোবাসলে কি হবে;এই মেয়ে নির্ঘাৎ ম,রে যাবে।মুশফিকের কাছে মিতুর এমন কাঁপন খুব অবাক লাগছে।সে কি খারাপ কিছু করল?সে তো শুধুমাত্র একটু কথাই বললো যা কিনা স্বামী স্ত্রীর মাঝে খুবই স্বাভাবিক।মিতু ফট করে বললো,

“আমি প্রস্তুত না।”
মুশফিক ভ্রু কুঁচকে নেয়।চোখের দৃষ্টি তীক্ষ হয়।
“কিসের জন্য?”
মিতু জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজায়।মনে ভ,য়ের রাজা খামচে ধরে আছে।সে কিছু না বলে মুশিফিকের দিকে তাকায়।মুশফিক মূহুর্তেই বুঝে যায় বালিকার মনের ঝড়,ভ,য়,লজ্জা।তার ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুঁটে উঠে।মেয়েটা কি ভেবেছে সে এখনি ঝাপটে ধরে সব আদায় করে নেবে?সে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কথা বলো।”
মিতু মাথা নেড়ে বললো,
“কিছু না।”
“বল। ”
মিতু আমতা-আমতা করে বললো,
“আমি আসলে…..”

“মিতু।আমি এতটাও হিং,স্র নই যে কাছে আনার পরে নিজের হিং,স্রতা প্রকাশ করার জন্য মুখিয়ে আছি।তুমি আমার, সেটা শুধুমাত্র কয়েকদিন বা কয়েকমাসের জন্য না সারাজীবনের জন্যই তুমি আমার।এতে জোর-জবরদস্তির কিছু নেই,আমরা একে অপরকে আগে বন্ধু হিসেবে পরিচয় করাই তারপর বাকিটা।আর তুমি ভাবলে কি করে আমি তোমার সম্মতি ব্যতীত কোনো পদক্ষেপ নেবো?”
মিতু জিভে কাঁমড় দিয়ে বললো,

“আল্লাহ! আপনি কত ফাস্ট চিন্তা করেন।”
“ফাস্ট না এটা তোমার মনের কথাই, কি ভেবেছো এখানে আসার পরে প্রধান কাজ হবে শারীরিক সম্পর্ক করা।তাই না?”
মিতু আস্তে করে বললো,
“এটাই কি স্বাভাবিক নয়?”

মুশফিক থমকে যায়।চোখ মেলে তাকায় কালো শাড়িতে জড়ানো মিষ্টি মেয়েটার দিকে।মেয়েটা আসলে কি চায়!এখন বলে সে প্রস্তুত না আবার এখনই বলছে, কাছে আসাই স্বাভাবিক।
“কি যানি।আর তো বিয়ে করিনি।এটাই প্রথম বিয়ে।”
মিতু অবাক হয়ে বললো,

“এসব জানতে হলে আরও বিয়ে করে অভিজ্ঞ হতে হয় জানতাম না তো।”
মুশফিক অবুজ ভান করে বললো,
“না জানলে তো বিয়ে করেই অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে।”
মিতু মুশফিকের পাঠরের মতো শক্ত বুকে ধাক্কা দিয়ে বললো,
“উফ।”

মুশফিক বুকে হাত দিয়ে মুচকি হাসে।মিতু মুগ্ধ হয়ে মুশফিকের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে।হাসিটা বরাবরের মতো সুন্দর,হৃদয় ছোঁয়া।মিতু মুশফিককে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে,অফ হোয়াইট টি-শার্ট আর কালো ট্রাউজার পড়নে।এতো দাম্ভিক,রাগী,মেজরকে এখন ঠিক মেজর মনে হচ্ছে না,মুচকি হাসিমাখা মেজরকে মনে হচ্ছে পাশের বাড়ির খুব সাধারণ ছেলে।মুশফিক বললো,

“শোন বালিকা,আমাকে ভ য় পেতে হবে না।যেদিন এমন কাঁপা-কাঁপি বন্ধ হবে সেদিন খবর দিও,একটু ছুঁয়ে দেবো।”
“কাঁপা-কাঁপি কখনো বন্ধ হবে না। ”
মুশফিক মিতুর দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে।হাস্কি স্বরে বললো,
“আমি অপেক্ষায় আছি।”
“কিসের?”

মুশফিক একগাল হাসে।বিয়ে করার পরে স্ত্রীকে কাছে পাওয়ার জন্য যে এতপ্রশ্ন শুনতে হবে তা কে জানতো।মাথা ঝুকিয়ে বললো,
“নাথিং।”
মিতু মুশফিকের হাসির দিকে তাকিয়ে বললো,
“মেজর!আপনি খুব খারাপ।”
“সেটা তো প্রথম দিন থেকেই।”
মিতু চুপ করে থাকে। মুশফিক বললো,

“শোন।আমাকে এতো ভ,য় পেতে হবে না।আমি কোন রা,ক্ষস না আমি তোমার স্বামী।আর এই দুনিয়ায় মেয়েদের শান্তির,ভরসার,আপনজন হলো তার স্বামী।তো নরমাল থাকো।অকে?”
মুশফিক এসব কিছু মিন করে মিতুর কাছে আসেনি,অথচ সে কতো কি ভেবে নিয়েছে।মুশফিকের কথায় তার সম্মান বেড়ে গেলো।মিতু মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
মিতুর দিকে তাকিয়ে মুশফিক হেসে উঠে।
তার হাসি দেখে মিতু বললো,

“হাসেন কেনো?”
মুশফিক ঠোঁট চেপে নিজের হাসি নিয়ন্ত্রণে আনলো।
“আচ্ছা,হাসবো না।”
মিতু মুশফিকের দিকে তাকিয়ে আছে।এই যে কেমন শান্ত সুরে কথা বলছে, মুচকি হাসছে কে বলবে এই ছেলে খুব রাগী, গম্ভীর।সে ভাবলো একটু আগে বেশীই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেলেছে।বিয়ে যেহেতু হয়েছে হাজবেন্ড অবশ্যই কাছে আসবে,সম্পর্ক সহয করার চেষ্টা করবে কিন্তু সে কিনা একটা ইমম্যাচুয়্যার মেয়ের মতো প্রতিক্রিয়া জানিয়ে ফেলেছে।মিতু বললো,

“শাড়ি পরেছি।”
“হ্যাঁ।দেখলাম। ”
“আপনার জন্য।”
মুশফিক শান্তচোখে তাকিয়ে বললো,
“আচ্ছা।”
মিতুর এবার অভিমান হলো।উনার জন্য শাড়ি পরেছে অথচ উনিই কোনো প্রশংসা করলো না,অথচ সে কানজোড়ানো প্রশংসা শুনতে চাইছে।

“কেউ সাজুগুজু করলে প্রশংসা করতে হয়।”
মুশফিক গম্ভীর হয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর বললো,
“একটু প্রশংসা করাতে যে প্রতিক্রিয়া এসেছে,বেশী প্রশংসা করলে তুমি ম,রে যাবে।তখন টিভিতে ব্রেকিং নিউজ হবে,জন- সাধারনকে রক্ষা করার দায়িত্ব যার কাধে তার হাতে স্ত্রী খু,,ন।অ-মাই- গড!”
মুশফিকের কথা শুনে মিতু খিলখিল করে হেসে উঠে।মুশফিক মুগ্ধ হয়ে মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে।

“মিতু।অনেকদিন বাসায় যেতে পারবোনা বলেই আমি তোমাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছি।আমি….আমি নিজেকে কন্ট্রোল করে নিতে পারবো। তুমি স্বাভাবিক থেকো।দ্যাটস ইট।”
মিতুর মুখে হাসি ফুটে উঠে।মুশফিকের প্রতিটা কথা তাকে মুগ্ধ করছে।সে মুশফিকের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়।
“ফ্রেন্ডস!”
মুশফিক ঠোঁট টিপে টিপে বললো,

” এতবড় ছেলের বন্ধু হবে?”
মিতু আস্তে করে বললো,
“এত বড় ছেলেটা আমার বর।”
মুশফিক মিতুর হাতটা ধরে বললো,
“ওকে।”

মিতু আর মুশফিক কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছে।মুশফিক মিতুর হাতটা তখনো নিজের বলিষ্ট হাতের মুঠোয় পুরে রেখেছে।পাহাড়ের ঠান্ডা বাতাস তাদের ছুঁয়ে দিচ্ছে।মুশফিক অভস্থ হলেও মিতুর ঠান্ডা লাগছে।সে আস্তে করে বললো,
“আমরা কি পাহাড়ের উপর আছি?”
“পাহাড়ের উপরে না কিন্তু মাঝে।গহীন পাহাড়ের মাঝে।”
মুশফিক মিতুর হাতটা উপরে তুলে ধরে।বৃদ্ধাজ্ঞুলি দ্বারা হাতে স্পর্শ করে বললো,

“মিতু।”
“হুম।”
“তুমি আমার জীবনে প্রথম নারী।আমি চেষ্টা করবো তোমাকে খুশী করতে।”
মিতু চোখে আসস্ত করে বললো,
“আমিও।”
রাতে ঘুমাতে গিয়ে তারা আরও বিপাকে পড়ে।মিতুর সাথে বিছানা শেয়ার করতে চাইলে যদি মিতু তাকে সস্তা ভাবে।সে বললো,

“মিতু তুমি এই রুমে থাকো।আমি পাশের রুমে আছি।”
মিতু মুশফিকের অসস্তির কারণ বুঝলো।সে মাথা নেড়ে সায় জানালো।
মুশফিক চুপচাপ শুয়ে আছে।ইচ্ছে করছে ছুটে পাশের রুমে যেতে,গিয়ে মিতুকে বলতে যে’মিতু আমি শুধু তোমার পাশে শুয়ে থাকবো,আর কিছু করবো না।আমরা একসাথে থাকি?স্বামী-স্ত্রী দূরে থাকা খারাপ কথা,একটুও ভালো কথা নয়।’ কিন্তু দাম্ভিক, গম্ভীর মুশফিক এসব মুখে বলতে পারলো না।সে চুপচাপ ঘুমানোর চেষ্টা করে।

সব ঠিক ছিলো,একা থাকার অভ্যাস মিতুর আছে।শুয়ে পরার পরেও তার ঘুম আসছিলো না।সে এপাশ ওপাশ হয়ে ছটফট করে। রাত গভীর হয়ে যাওয়ার পরেও মিতুর চোখে ঘুমের দেখা নেই।হঠাৎ কানে আসে,বন্য কোনো প্রানীর হুং,কার,শুকনো পাতায় কেউ হাটলে যেমন ম,র,ম,র শব্দ হয় তেমন শব্দ যেনো কেউ হাটছে,কারও কথার শব্দ,হাসির শব্দ।মিতুর মনে হতে লাগলো কেউ তার গলা টি,পে ধরতে আসছে।

ভয়ে সে উঠে বসে।মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে সে মুশফিকের রুমের দিকে ছুটে যায়।সারাদিনের পরিশ্রমে মুশফিক ক্লান্ত ছিলো,সে ঘুমিয়ে আছে।ভারী নিঃশ্বাস সারা রুমে ঘুরছে।মিতু আস্তে করে মুশফিকের পাশে শুয়ে পরে,মুশফিক এসি অন করে ঘুমিয়েছে বাধ্য হয়ে মিতু মুশফিকের কম্বল টেনে গায়ে দেয়।আবছা আলোয় মুশফিকের দিকে তাকিয়ে আবিষ্কার করে মুশফিকের প্রেমে সে একটু একটু করে ডুবে যাচ্ছে,এই প্রেম সাগর থেকে কখনো সে উঠতে পারবে না।এই যে কাছে আসার পরে,সকল ভয় দূর হয়ে সেখানে যায়গা করে নিয়েছে এক আকাশ ভালোলাগা।মিতু নিশ্চিন্ত মনে ঘুমিয়ে যায়।

তখনও ভোর হয়নি।সাধারণর ফজরের আজান দিলেই মুশফিক উঠে যায় কিন্তু আজকে তার ব্যতিক্রম হলো,মাঝ রাতে ঘুম ভাঙ্গলো।সে অনুভব করে তার বুকের মাঝে নরম একটা দেহ লুটিয়ে আছে।দু’হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাচ্ছে।মিতুর গরম নিঃশ্বাসের জন্যই তার ঘুম ভেঙ্গেছে।

মুশফিকও মিতুকে জড়িয়ে রেখেছে।মুশফিকের মনে হলো,তার হৃদপিণ্ড লাফিয়ে বাহিরে চলে আসবে।ঠোঁট শুকিয়ে চৌচির।মন বাঙ্গাচি ঝুপ করে মাথা তুলে তাকায়,নরম তুলতুলে দেহটাকে পিষে ফেলার অদম্য ইচ্ছা অনেক কষ্টে সংবরণ করে নেয়, মনে করে সন্ধ্যায় কথা দিয়েছে, আকষ্মিক কিছু করবে না।মিতুকে আস্তে করে একটু উপরে উঠিয়ে নাকের সাথে নাক স্পর্শ করে,মুশফিক নিজেই কেঁপে উঠে।ফিসফিস করে বললো,

“মিতুল।আমি তো সময় দিতে চাচ্ছিলাম কিন্তু তুমি কি সময় নিতে চাও না?কাছে যাবোনা বলেই তো এই রুমে আসলাম কিন্তু তুমিই আমার কাছে চলে এলে।ইউ নো না?আমি একজন পুরুষ।তোমার এই সুগন্ধি আমায় মাতাল করে দিচ্ছে।”

মুশফিক থেমে মিতুকে নিজের বুকে আরেকটু মিশিয়ে নেয়।সে আবার বললো,
“এই মেয়েটাকে কবে থেকে এতো ভালোবাসতে শুরু করলাম?এই মেয়ে তুমি কি জানো তোমার মাঝে আমি আমার জীবন খুঁজে পাই।”

মেজর পর্ব ১১

মিতু নড়ে উঠে লোমস বুকে নাক ঘষে দেয়।মুশফিক শক্ত করে চোখ বন্ধ করে নেয়।মনে মনে ভাবে,
মিতুকে না আনলেই ভালো হতো।

মেজর পর্ব ১৩