মেজর পর্ব ১৪

মেজর পর্ব ১৪
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

রাত দুইটার দিকে মিতু আর মুশফিক রুমে আসে।মিতু মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বোকার মতো হাসে।মুশফিক ট্রাউজার পরে মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে,তার হাসি দেখে ঘন কালো ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি সমস্যা? ”

মিতু ততক্ষণে মুশফিকের বুকের দিকে তাকিয়েছে। পেশীবহুল বাহু,পেটানো শরীর,মেদহীন ঝরঝরে গা মিতু বরাবরের মতো মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। মিতুর দৃষ্টি অনুসরণ করতে বুদ্ধিমান মেজরের কয়েক সেকেন্ডও লাগল না।মুশফিকের পুরু ঠোঁটের ভাজে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠে।মিতুর লজ্জামাখা হাসি দেখে মুশফিক বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“লজ্জা পাচ্ছো কেনো?অযথাই!”
“অযথা!এমন করে কেউ ঘুরে বেড়ায়?”
মুশফিক বুঝেও না বুঝার ভান করে;ঠোঁট উল্টে বললো,
“কেমন করে?”
মিতু আস্তে করে বললো,
“এমন আদুল গায়ে।”

মুশফিক অন্তর্বেদী দৃষ্টি মেলে মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“তো!সমস্যা কি?ইট’স মাই বেডরুম।”
“অ; হ্যালো মেজর!আপনার বেডরুমে এখন আরেকটা মানুষ আছে তাও মেয়ে মানুষ সুতরাং কাপড়চোপড় পরে ঘুরবেন।”

“হ্যাঁ একটা মেয়ে আছে যে কিনা আমার বউ।আমার একমাত্র বউ।”
মিতু থমথমে গলায় বললো,
“ইশ!বউ হয়েছি বলে কি এমন করে ঘুরবেন?”
“হ্যাঁ। এটা স্পেশাল মুহূর্ত।”
মিতু দেখলো মুশফিক তার দিকে এগিয়ে আসছে।তার মুখের কাছে মুশফিকের লোমস গা।মুখের সব পকপক মূহুর্তেই গলায় আটকে যায়।সে আস্তে করে বললো,

“আপনার লজ্জা করে না?”
মুশফিক মাথা নিচু করে মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“লজ্জা!কিসের লজ্জা?”
মিতু আস্তে করে পিছু হটে।
“এই যে আমার সামনে গা দেখিয়ে ঘুরছেন।”
“উফ;তুমি আমার বউ।”

“এত কথা না বলে গেঞ্জি পরে ঘুরলেই পারেন।”
“কেনো?আমার ডেশিং বডিটা দেখে ক্রাশ খাচ্ছো?”
মিতু মুশফিকের ঝুকে আসা মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
“ভাই ;শুধু তোমার বডি না তোমার সবকিছুর উপরেই ক্রাশ খেয়ে ফেলেছি।” মুখে বললো,
“নো নো।আমি ক্রাশ ট্রাশ খাই না।”

“তাই?ওকে।”
“প্লিজ,গা ঢাকেন।”
“তোমার সমস্যা কি মিতু?”
মিতু কি করে বলবে তার কি সমস্যা।মুশফিককে এমন অবস্থায় দেখলেই কেমন পাগল পাগল লাগে।কানে কানে কেউ বলে যায় সামনের মানুষটা তার,শুধুমাত্র তার।

“আপনি না মেজর!আপনার লজ্জা নেই কেনো?আজব!”
“এটা কেমন কথা?আমি মেজর বলে আমার কি নাক অবধি লজ্জার চাষ থাকবে?”
“উফ!যা বলেছি সেটা করেন।”
“গেঞ্জি পরবো না।তুমি চাইলে বাকিটাও খুলে ফেলতে পারি।”
মিতু চোখ খিঁচে বললো,
“ছিহ!ছিহ!”
মুশফিক আরেকটু সামনে এসে বললো,

“আফটার অল আমি মেজর!মেজররা সবার সামনে এক বউয়ের সামনে এক,একটু খারা,প।”
মুশফিক এগিয়ে আসছে।মিতু আর পেছনে যেতে পারছে না।সে মুশফিকের বুকে হাত রেখে তাকে আটকায়।আসলেই মুশফিক খুব বেশী রোমান্টিক।মিতু ভেবেছিলো আর্মিরা বোরিং হয় কিন্তু তার মেজর’টা তো মাখনের মতো সফট,দেখলেই একটু আদর করে দিতে ইচ্ছে করে।সে বললো,

“এতকিছু জানেন কি করে;আগেও বিয়ে করেছেন নাকি?”
“এমনিই জানা যায় বিয়ে করা লাগে না।”
মুশফিক মিতুর হাত উপেক্ষা করে এগুতে চায়।মিতু চোখ পাকিয়ে বললো,
“এগুচ্ছেন কেনো?”

মুশফিক কিছু না বলে মিতুর কানের কাছে মুখ এনে গভীর কন্ঠে ফিসফিস করে বললো,
“খুব সুন্দর লাগছে।বলেছিলাম তোমার অনুমতি ছাড়া কিছু করব না কিন্তু আই এম সরি সোনা।”
মুশফিকের ভারী হাস্কি স্বরে ফিসফিস করে বলা কথাগুলো মিতুকে নাড়িয়ে দেয়।আদুরে ডাক শুনে মিতুর পাগলের মতো অস্থির লাগে।মেজর তার দিকে গভীর শিকারী চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।মুশফিক শক্ত কড়াপড়া হাত দিয়ে মিতুর কোমড় আঁকড়ে ধরে কাছে আনে।মিতু কেঁপে উঠে,নাকের ডগার শিরশিরানো অতি মাত্রায় বাড়ে,পেট মুচড় দেয়।মুশফিক আবার বলে,

“ইউ আর সো বিউটিফুল মাই সুইটহার্ট।”
মিতুর মনে হচ্ছে সে ম,রে যাবে।মুশফিক মিতুর গালে পরম ভালোবাসা মাখা পরপর কয়েকটা চুমু দেয়, তারপর কিছুক্ষণ স্থির হয়ে তাকিয়ে থাকে;নাকের ডগায় তার নাক স্পর্শ করে আস্তে করে বলে,
“নাউ,ইট’স অভার।”
মিতু মুখ ফসকে বলে ফেলে,
“নো।”

মিতুর কথায় মুশফিক থমকে যায়। সে শান্ত চোখে মিতুকে পর্যবেক্ষণ করে বললো,
“ঘুমাতে হবে, অনেক রাত হয়েছে।”
মুশফিক সোজা বিছানায় শুয়ে পরে।মিতু নিজের বলা কথাটায় লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে যায়।আড়চোখে মুশফিকের দিকে তাকায়।মুশফিক তার দিকেই তাকিয়ে ছিলো সে বললো,
“ও রুমে গেলাম না। দেখা যাবে বউটা রাতে ভয় পেয়ে আবার আমার কাছেই চলে যাবে তারচেয়ে ভালো আমি এখানেই থাকি।বউকে কষ্ট দেয়া অন্যায়।”

মিতুর হাত পা তখনো কাঁপছে সে রাতের কাপড় নিতে আলমারি খুলে সেখান থেকে একটা নাইটি খুলে পরে।মিতু সেটা হাতে নিয়ে দেখে।সে ভাবে মুশফিক তার জন্য এনেছে।যেহেতু উনি এনে এখনো দেয়নি তাই সে নেবে না।উনি দিলেই বরং নেবে।মিতু গেঞ্জি আর ট্রাউজার পরে এসে শুয়ে যায়।মুশফিক তার দিকে ফিরে শুয়ে আছে।মিতু তাকালে মুশফিক হাত বাড়িয়ে মিতুর গাল ছুঁয়ে বললো,

“তুমি কি আমার প্রেমে পরে যাচ্ছো মিতুল?”
মিতু মুশফিকের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পাল্টা বললো,
“আপনি কি আমার প্রেমে পরে যাচ্ছেন মেজর?”
মিতুর প্রশ্নে মুশফিকের ঠোঁটের কোনের হাসি বিস্তৃত হয়।সেই হাসিতে মিশে আছে এক আকাশ ভালোবাসা,ভালোলাগা,সুখের ভান্ডার।মিতুর বুকের ভেতরটা সুখে চিৎকার দিয়ে উঠে, কলিজাটা ফিসফিস করে বলে,’তুই পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী নারী হবি মিতু।’

আজ বুধবার।সেনানিবাসে ছয়জন পরিষ্কারকর্মী আছে।একজনের নাম কামাল।সবাই উনাকে কামাল ভাই নামেই ডাকে।উনি মুশফিকের বিশ্বস্ত;আর কটেজ পরিষ্কার করে।মুশফিকের রুমে যাওয়া নিষেধ বাদবাকি সবকিছু সাপ্তাহে একদিন পরিষ্কার করে দিয়ে যায়।আজকেও যথারীতি পরিষ্কার করতে এসেছে।

নয়না কামাল ভাইয়ের আসার দিকে নজর রাখছিলো।যেই না মুশফিকের কটেজে যায় অমনি সে পিছুপিছু আসে।সচরাচর মুশফিক তাকে কটেজে ডুকতে দেয় না,মুশফিক যা রাগী উনার উপরে কথাও বলা যায় না।আজকে সুযোগ পেয়ে সে এই সুযোগ হাতছাড়া করে না।কামাল তখন কিচেন পরিষ্কার করছে নয়না এই ফাঁকে আস্তে করে উপরে উঠে যায়।তার লক্ষ মুশফিকের রুম।

সে পা টিপে টিপে নিঃশব্দে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।মুশফিকের রুমে যাওয়ার আজন্ম ইচ্ছা এবার পূরণ হবে।নয়না আস্তে করে মুশফিকের রুমে প্রবেশ করে।মন মাতানো এক সুভাসে নাসারন্ধ্র ভরে যায়।সে এপাশ ওপাশ তাকিয়ে হটাৎ চোখ যায় বিছানার দিকে।বিছানা অগোছালো আর অগোছালো নরম বিছানায় এক মেয়ে ঘুমিয়ে আছে।নিমিষেই নয়নার সকল স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায়।সে এগিয়ে যায়,ঘুমন্ত মিতুর দিকে বি,ষ দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে থাকে।মনে উঁকি দেয় হাজারও প্রশ্ন

“কে এই মেয়ে,মুশফিকের সাথে কি সম্পর্ক, এখানে শুয়ে আছে কেনো?
মেয়েটা খুব সুন্দরী,নয়নার থেকেও সুন্দর।নয়না মূহুর্তেই মিলিয়ে ফেললো মেয়েটা কে।সুন্দরী মেয়ে এক অবিবাহিত পুরুষের বিছানায় সুতরাং মেয়েটা একটা প্রস্টিটি,উড।নয়না কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলে।মুশফিককে সে খুবই ভালো মানুষ বলে জানতো তার সম্পর্কে খারাপ ধারনা কখনোই আসেনি কিন্তু এই ছেলে যে রাতে কটেজে পতি,তা আনে এটা ক্ষুনাক্ষরেও ভাবেনি।তারপর মন হঠাৎ উল্টে যায় ফুসে উঠে মুশফিকের কোন দোষ নেই সব দোষ এই অসভ্য মেয়ের।নয়না ঘুমন্ত মিতুকে টেনে উঠায়।

হঠাৎ ঘুম ভাঙ্গায় মিতু চমকে যায়।মুশফিক কখনো তাকে এভাবে জাগাবে না মুশফিক তাকে নরমভাবে ছোঁয়।সে চোখ বড় বড় করে মেয়েটার দিকে তাকায়।মেয়েটার পরনে আর্মি ড্রেস।মিতু বুঝে একজন আর্মি তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।মিতু কিছু বলার আগে নয়না ফুসফুস করে বললো,
” এই মেয়ে উঠো আর জলদি বের হয়ে যাও।”
মিতু ভ্যাবাচেকা খেয়ে তাকিয়ে আছে।বেরিয়ে যাবে মানে কি?আর তাকে হুকুম দেয়ার উনি কে?
সে ভ্রু কুঁচকে বললো,

“মানে?”
নয়না রাগে দাঁত চেপেচেপে বললো,
“কোনো পতি,তার বাসা না এটা,সুতরাং বের হ।”
মিতুর অবাকের পাল্লা হইহই করে বাড়ছে।
“এটা কার বাসা?”
“আমার বয়ফ্রেন্ডের বাসা।”

মিতুর বুকটা মুচড়ে উঠে।বয়ফ্রেন্ড?কালকে রাতে কি এই মেয়েটাই মুশফিকের জিপ থেকে নেমেছিলো?মুশফিক কি তাদের বিয়ের কথা কাউকে বলেনি?মিতু শক্ত চোখে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছে।নয়না আবার বললো,
“কয়েকদিন আসিনি এর মাঝেই যায়গা করে নিয়েছিস,এই কটেজের প্রতিটা জায়গায় আমার ছোঁয়া আছে, মুশফিক আমাকে খুব ভালোবাসে এখানে কত রাত কাটিয়েছি।”
মিতু আস্তে করে বললো,

মেজর পর্ব ১৩

“আচ্ছা।”
“বের হ।বের না হলে চোদ্দ শিকের ভাত খাওয়াবো।”
“আচ্ছা।”
নয়না তেড়ে আসে।চিৎকার করে বললো,
“তুই একটা পতি,তা হয়ে আমার মুশফিকের বিছানায় শুয়েছিস?মুশফিক শুধুমাত্র আমার।”
মিতুর দুনিয়াটা ঝনাৎ ঝনাৎ করে ভেঙ্গে যেতে থাকে,বুকে অসহনীয় যন্ত্রণা অনুভব করে।আহা মুশফিক!আহ!

মেজর পর্ব ১৫