বুকে যে শ্রাবণ তার সিজন ২ পর্ব ১০

বুকে যে শ্রাবণ তার সিজন ২ পর্ব ১০
নিশাত জাহান নিশি

“কেমন জব্দ করলাম তোর বাবাকে বল?”
রান্নাঘরে এসে স্বস্তির শ্বাস ফেলল সাহিল। দু-হাত দ্বারা সামনের উসকো খুসকো চুলগুলো সেট করল। চুলোয় চায়ের পাতিল বসিয়ে চা-পাতা খুঁজতে খুঁজতে রাশভারি গলায় বকবক করে বলল,

“আরও কর প্রেম করে বিয়ে! ভালোবাসি বলেই তো ভয় পেতে হয়। যেখানে দুনিয়ার সবাই আমাকে দেখলে ভয় পায়, সেখানে আমি নাকি আমার বউয়ের মুখের ওপর একটা কথাও বলতে পারিনা! হাওয়া ফুস হয়ে যায় আমার। কি দিনকাল পরল আমার। এজন্যই লোক বলে এরেঞ্জ ম্যারেজ বেস্ট। অন্তত মা-বাবার দিকে আঙুল তুলে তো বলা যায় কি মেয়ে বিয়ে করিয়ে এনেছ, ঘরের বাইরের সব কাজ আমাকেই করতে হয়!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

চায়ের লিকার ফুটে ওঠতেই সাহিল গ্যাস কমিয়ে দিলো। ধরাশায়ী হয়ে সে প্যান্টের পকেট থেকে তার সেলফোনটি বের করল। ওয়াইফাই অন করে মেসেঞ্জারে প্রবেশ করল। মিশালের আইডিতে ঢুকে মিশালকে ভিডিও কল করল। প্রথম কলটি বেজে ওঠতেই মিশাল কলটি তুলল। নাইট গার্ডের কাজ করে সবে বাসায় ফিরেছে মিশাল। ফ্রেশ হয়ে শুতে যাবে ইতোমধ্যেই সাহিলের কল। মুচকি হেসে মিশাল সময় ব্যয় না করে কলটি তুলল। রুমে ঘন অন্ধকার থাকার দরুন মিশালের মুখটি স্পষ্ট দেখতে পেলনা সাহিল। কপাল কুঁচকে সাহিল শুধাল,

“এই কোথায় তুই? তোকে দেখা যাচ্ছেনা কেন?”
ফ্ল্যাশলাইট অন করল মিশাল। মৃদু আলোয় মিশালের ক্লান্ত মুখখানিতে প্রাণোচ্ছ্বল হাসি দেখে সাহিল স্বস্তি পেল। হাসোজ্জল গলায় মিশাল শুধাল,
“কি অবস্থা ভাইয়া? কেমন আছো তুমি?”
হাপিত্যেশ করে সাহিল বলল,

“আর অবস্থা। ঘরে-বাইরে কাজ করতে করতে আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ভাই। তোকে সাবধান করার জন্য কলটা করলাম জাস্ট। ভুলেও প্রেম করে বিয়ে করিসনা ভাই! লাইফ হেল হয়ে যাবে। জীবন তেজপাতা হয়ে যাবে। মনে হবে এরচেয়ে তো ব্যাচলর লাইফ বেস্ট ছিল! বাঘের মতো বাঁচতাম।”
মিশাল হেসে কুটিকুটি। দম ফাঁটা হাসি দিয়ে বলল,

“মানে? কি হয়েছে? ভাবি কি করল আবার? এই একবছরে বিরক্ত হয়ে গেলে? বাঘ থেকে বিড়ালে পরিণত হলে?”
“তা আর বলতে? সে কি না করেছে বল? অফিস টাইমে আমাকে এখন চা বানাতে হচ্ছে! ম্যাডামকে খাইয়ে দাইয়ে এরপর আমাকে অফিসে যেতে হবে। কাজের বুয়া না থাকলে তো দুপুরের রান্নাটাও আমাকে দিয়ে করাতো! আমি ফেঁসে গেছি ভাই, পুরো ফেঁসে গেছি।”

মুখ বুজে হাসি চাপল মিশাল। সাহিলকে আরও রাগাতে গিয়েও থেমে গেল। বরং সাহিলকে বুঝিয়ে ধীরেসুস্থে বলল,
“আর কয়েকটা দিনেরই তো ব্যাপার ভাইয়া। ম্যানেজ করে নাও। ফুফু, ফুফা তো আগামী কয়েক দিনের মধ্যেই হজ্জ্ব থেকে বাড়ি ফিরছে। ফুফু থাকলে তো আর কোনো প্যারাই নেই তোমার। তাছাড়া, ভাবি যেহেতু এখন অসুস্থ বিষয়গুলো তো তোমাকেই দেখতে হবে তাইনা?”

“এখন আমাকে খুব বুঝ দিচ্ছ তাইনা? দুইদিন পর যখন নিজের ঘাড়ে এসে এসব পরবে তখন বুঝবে! না পারবে বলতে, না পারবে সইতে! প্রেমের বিয়ে যে কতো মজা তখন বুঝবে। ভাইকে স্মরণ করবে আর বলবে ভাই তো ঠিকই বলেছিল, কেন প্রেম করে বিয়ে করতে গেলাম!”

“তার মানে কি বলতে চাইছ তুমি? সামান্তাকে বিয়ে করা আমার ঠিক হবেনা?”
“যদিও ডিরেক্টলি এটা বলতে চাইছিনা! তবে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, তোর সাথেও ঠিক এমনই হবে ভাই! বউরা এখন স্বামীকে দিয়ে কাজ করাতেই বেশি আনন্দ পায়। আমিতো বলি, বিয়ে না করাই ভালো! প্যারাহীন জীবন লিড করা যায়। বাই দ্য ওয়ে, ম্যাম সাহেবার নাশতার সময় হয়ে গেছে। চা-বিস্কিট, ডিম সিদ্ধ দিয়ে আসি। বাই। দোয়া ও মে ইয়াদ রাখ না!”

কাঁদো কাঁদো মুখে সাহিল কলটি কেটে দিলো। চা, নাশতা নিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে গেল। মিশাল ফোনটি বালিশের তলায় রেখে হু হা করে হেসে চিৎ হয়ে শুয়ে পরল। সাহিলের অবস্থা দেখে মিশাল সত্যিই খুব মজা পাচ্ছিল। পুরো দুনিয়ার সামনে ছেলেরা যতোই কঠিন হোক না কেন, ঘরের বৌদের কাছে তারা ভেজা বিড়াল ছাড়া আর কিছুই নয়! আজ মিশালের রেস্টুরেন্টের অফডে। রাতের ডিউটি থেকেও আজ ছুটি নিয়েছে সে। হানিয়ার জন্মদিন আজ। তাই হানিয়া ছোটোখাটো একটা পার্টি দিতে চায় মিশালকে! মিশালও মুখের ওপর বারণ করতে পারেনি। কারণ, এই পরদেশে মিশালের সমস্ত বিপদে আপদে সর্বপ্রথমে হানিয়া এসে হাজির হয়।
একজন ভালো বন্ধুর ন্যায়।

ইতালি শহরে গভীর রাত ঘনিয়ে এলো। মিশাল ও হানিয়া নদীর মাঝখানে একটি ব্রীজের ওপর পাশাপাশি দাঁড়িয়ে। দুজনের মধ্যেই প্রায় কয়েক ফুটের দূরত্ব। নিশ্চুপ হয়ে দুজনই বেশ আনমনে ও গভীরভাবে প্রকৃতি উপভোগ করছে। মিশাল একটি সিল্কের গাঢ় নীল রঙের ঢিলেঢালা শার্ট পরেছে। দখিনা বাতাসে তার পরিহিত ঢিলে শার্টটির পাশাপাশি চুলগুলোও বেশ পাল্লা দিয়ে উড়ছে।

অদ্ভুত সুন্দর দেখাচ্ছে তাকে। ঘন জোছনার আলোয় ঘেরা রঙিন আকাশের পানে তাকিয়ে মিশাল ক্ষণে ক্ষণে মৃদু হেসে ওঠছে! যেন চির আকাঙ্ক্ষিত কিছু একটা দেখে সে বেশ স্বস্তি পাচ্ছে। প্রায় অনেকক্ষণ যাবত বিষয়টি খেয়াল করছিল হানিয়া। আড়চোখে বার বার সে মিশালের দিকে তাকাচ্ছিল। অতঃপর কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে সে আগ্রহী গলায় মিশালের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

“কি ব্যাপার মিশাল? কি দেখছ আকাশে? কি দেখে এতো হাসছ?”
“সামান্তাকে দেখছি!”
আনমনে কথাটি বলে মিশাল পাশ ফিরে হানিয়ার দিকে তাকালো। ক্ষীণ হেসে বলল,
“ইউ নো হোয়াট হানিয়া? আমি যখনই এই জোছনায় মাখামাখো রাতের আকাশে তাকাই, তখনই সামান্তা চাঁদ রূপে আমার আকাশে ধরা দেয়।

আমি মুগ্ধ হয়ে তার হাসিমুখ দেখি, কল্পনায় তাকে সাজাই, প্রতিবার তাকে আমি যেভাবে দেখতে চাই সে ঠিক সেভাবেই আমার কাছে এসে ধরা দেয়, আমার মন ভালো হয়ে যায়, সকল ক্লান্তি দূর হয়ে যায়, মানসিক শান্তি ফিরে পাই। ইদানিং তাকে খুব মিস করছি জানো? আমি যেখানে তাকাই সেখানে কেবল তাকেই দেখতে পাই। এইযে আমি তোমার দিকে তাকিয়ে আছিনা?

মনে হচ্ছে এটা তুমি নও, আমার সামান্তা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে! মনে হচ্ছে আমার চোখের জ্যোতি কমে যাচ্ছে! কিছু একটা অনর্থ হওয়ার আগে আগেই আমি তাকে স্ব-শরীরে দেখতে চাই। আমি খুব জলদি তার কাছে ফিরে যেতে চাই হানিয়া। আমি জানি আমার সামান্তাও আমাকে প্রচণ্ড মিস করছে। আমাকে ছাড়া থাকতে তার কষ্ট হচ্ছে। অতি দ্রুত আমাদের অপূর্ণ ভালোবাসাটাকে আমি পূর্ণ করতে চাই।”

“আর কয়েকটা মাসেরই তো ব্যাপার মিশাল। একটু ম্যানেজ করে নাও। তাকে পাওয়ার জন্য তুমি কি পরিমাণ কষ্ট করছ তা কেউ জানুক, অন্তত আমিতো জানি। খুব শীঘ্রই তোমাদের অপূর্ণ ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে মিশাল। তুমি তার জন্য যতোটা আত্নত্যাগ করছ, পৃথিবীর কোনো প্রেমিক হয়তো তার প্রেমিকার জন্য এতটা আত্নত্যাগ করেনা।”
হেয়ো হাসল মিশাল। বলল,

“সামান্তা তার জীবদ্দশায় আমার জন্য যতটুকু আত্নত্যাগ করেছে না হানিয়া? তার এক অংশ আত্নত্যাগও আমি তার জন্য করতে পারিনি! এইযে দেখছনা সামান্তার মুখের এই অবস্থা? তা আমার জন্যই হয়েছে! আমাকে বাঁচাতে গিয়েই। আমার জীবনের সব খারাপের মধ্যে যদি একটি ভালো থাকে, সেটা সামান্তা। আমার সব দুর্ভাগ্যকে ঝাপিয়ে এই মেয়েটা আমার সৌভাগ্য হয়ে এসেছে।”

“ইন্টারেস্টিং তো। তোমাদের প্রেম কাহিনী দেখছি লায়লা মজনুর প্রেম কাহিনীকেও হার মানাবে! আমি তোমাদের পুরো লাভ স্টোরি শুনতে চাই মিশাল। প্লিজ শোনাও না, প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
হানিয়ার জোরাজোরিতে মিশাল বাধ্য হয়ে তাদের লাভ স্টোরি শুনাতে লাগল। যদিও এতে মজাই লাগছিল মিশালের। পুনরায় তাদের ভালোবাসাকে বর্ণনা করতে, আবারও তাদের ভালোবাসাকে অনুভব করতে। হানিয়া অতি মনোযোগ সহকারে মিশালের প্রতিটি কথা শুনতে লাগল। কথা বলার সময় মিশালের মুখের প্রতিটি এক্সপ্রেশন সে মুগ্ধ নয়নে দেখতে লাগল! আর বার বার নিজেকে একই প্রশ্ন করতে লাগল,

“এই হ্যান্ডসাম ছেলেটা আমার জীবনে আগে এলোনা কেন? সামান্তা নামক মেয়েটিকে এখন আমার শত্রু মনে হচ্ছে! যদি সম্ভব হতো আমি তাকে খু’ন করে মিশালকে আমার করে নিতাম!”

দীর্ঘ দেড় বছর পর মিশাল আজ বাড়ি ফিরবে! প্রবল আনন্দ বিরাজ করছে সবার মধ্যে। গত কয়েকমাস ধরে শাহনাজ বেগমের আগের সংসারের ছেলে রাফিন শাহনাজ বেগম এবং রুমকির সাথেই থাকছে! নেশা ছেড়ে রাফিন এখন কাজকর্মের দিকে মনোযোগ দিয়েছে। এইক্ষেত্রে সামান্তা তাকে প্রথম থেকেই শতভাগ সাপোর্ট করছে। সামান্তার কথামতো মিশালই তাকে এই বাড়িতে থাকতে বলেছে।

তার মা এবং রুমকির খেয়াল রাখার জন্যে। আজ সামান্তার পরিবার এবং সাহিলের পরিবারও আমন্ত্রিত এই বাড়িতে। রান্নার জোগাড়ে ব্যস্ত শাহনাজ বেগম, জেসমিন বেগম এবং নাজিয়া চৌধুরী। সবাই মিলেমিশে কাজ করছেন। মিশালের পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন পদের খাবার তৈরি হবে আজ। সাইফা, সায়মা, রুমকি ও জেনিয়া মিলে ঘর-বাড়ি সাজাচ্ছে। আট মাসের অন্তর্সত্তা জেনিয়া। ডেলিভারি ডেইট তার অতি নিকটে। দুটো দিনও ভালো থাকেনা সে। ঘন ঘন অসুস্থ হয়ে পরে। সাহিল, মিজানুর রহমান ও তরুন চৌধুরী চলে গেলেন মিশালকে এয়ারপোর্ট থেকে রিসিভ করতে।

সামান্তা তার বাড়িতে তার রুমে একা বসে। দীর্ঘ দেড় বছর পর মিশালের সাথে দেখা হবে তার। ভিডিও কলে যতোটুকু দেখেছে এই দেড় বছরে মিশালের সৌন্দর্য পূর্বের তুলনায় দ্বিগুন ফুটে ওঠেছে। নির্ঘাত মিশালকে দেখলে তার হার্ট অ্যাটাক হবে। ছেলেদের রূপেও যে আগুন হয় তা টের পাবে! বুকে হাত রেখে সামান্তা আয়নার সামনে দাঁড়ালো। হাসিখুশি মুখ তার গোমড়া হয়ে গেল। সামান্তা তার মুখের কুঁচকানো অংশটিতে হাত বুলালো। মনমরা হয়ে বলল,

“কিন্তু আমিতো এখনও আগের মতই কুৎসিত রয়ে গেলাম! এই বিকৃত চেহারা নিয়ে মিশালের সামনে যেতে আমার লজ্জা করবে! এরচেয়ে ভালো আমি আড়ালেই থেকে যাই।”
চোখের জল ফেলে সামান্তা নীল রঙের সিল্কের শাড়িটি বিছানা থেকে তুলে মেঝেতে ছুড়ে ফেলল! সাথে সমস্ত গহনাগাঁটি, সাজের সরঞ্জামগুলোও মেঝেতে ছুড়ে ফেলে দিলো। বিছানার এক কোণায় হাঁটু গেড়ে বসে কান্না জুড়ে দিলো।

কাঁদতে কাঁদতে এক পর্যায়ে সে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পরল। সেই ঘুম ভাঙল তার দরোজার প্রখর খটখটানিতে। আধো চোখ মেলল সামান্তা। কপাল কুঁচকে বিরক্তি প্রকাশ করল। পুরোপুরি চোখ খুলে তাকাতে পারছেনা সে। অতিরিক্ত কান্নার প্রভাবে চোখ ফুলে ব্যথার সৃষ্টি হয়েছে। দরোজার খটখটানি ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্রতর হতে লাগল। অবশেষে সামান্তা অধৈর্য হয়ে বিছানা ছেড়ে নামল। রাগে নিশপিশ করে দরোজার খুলে দিয়ে চিৎকার করে বলল,
“কে এভাবে দরোজা ধাক্কাচ্ছে?”

দরোজা খুলে সামনে তাকানোর সময়টিও পেলোনা সামান্তা। কেউ তাকে বুকের ভেতর আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরল! প্রথমে কিঞ্চিৎ ঝটকা খেলেও পরবর্তীতে সামান্তা বুঝতে পারল এই আলিঙ্গন কার হতে পারে! খুশি, আনন্দে, বুকের ভেতর বয়ে যাওয়া এক অদ্ভুত শান্তিতে সামান্তা চোখের জল ফেলে দিলো। নিশ্চুপ মিশাল! সামান্তাকে বুকের সাথে মিশিয়ে দেড় বছরের আকাঙ্ক্ষা, চাহিদা পূরণ করছে সে। দম বন্ধ হয়ে আসছিল সামান্তার। হাঁসফাঁস করে সে বলল,
“ছাড়ো। দম বন্ধ হয়ে আসছে আমার।”

“চুপ। একদম চুপ। আমার এইটুকু শক্তির সাথে যেহেতু পেরে ওঠতে পারবিনা তো দেড় বছরের জন্য আমাকে দূরে পাঠানোর আগে এটা ভাবা উচিত ছিল তোর।”
“ভুলে যেওনা দেড় বছরের জন্য তোমাকে দূরে পাঠিয়েছিলাম বলেই তুমি আজ নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছ। মাথা উঁচু হয়েছে তোমার। এবার কারো কোনো সাধ্য নেই তোমার দিকে আঙুল তোলার। আঙুল বাঁকিয়ে দেয়ার মতো অবস্থান হয়ে গেছে তোমার।”

সামান্তা অনেক ঠেলেও মিশালকে তার গাঁ থেকে সরাতে লাগল। উল্টো সামান্তাকে নিয়ে মিশাল ঘুরতে ঘুরতে ধপ করে বিছানার উপর পরল। দুজনই বিছানায় গড়াগড়ি খেতে লাগল। একজন উপরে তো একজন নিচে, একজন নিচে তো একজন উপরে। ক্রুর হেসে মিশাল ইচ্ছে করে সামান্তাকে রাগাতে লাগল। বিরক্ত হয়ে সামান্তা মিশালের গাল টেনে বলল,

“ইশ, করছ কি তুমি? বাড়ির কেউ দেখে নিলে ঝামেলা হবে। প্লিজ যেতে দাও আমায়।”
সামান্তার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে মিশাল কেমন গম্ভীর হয়ে বলল,
“বাড়ির কেউ কিছু দেখবেনা। কারণ কেউই বাড়িতে নেই এখন। সবাই আমার বাড়িতে। তুই এতো বিরক্ত হচ্ছিস কেন বল তো? কতদিন পর তোকে কাছে পেলাম, আর তুই কিনা আমার কাছে থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য হাঁসফাঁস করছিস?”

“আমাদের এখনও বিয়ে হয়নি মিশাল। বিষয়টা দৃষ্টিকটু। তুমি বুঝেও কেন অবুঝের মতো কথা বলো?”
“না। আমি আর কিছু বুঝতে চাইনা। আমার যতক্ষণ মন না ভরবে আমি ঠিক ততক্ষণ তোকে এভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকব। দেখি কে কি বলতে আসে আমায়!”

দুজনের মধ্যেই ধস্তাধস্তি অবস্থা। যদিও মিশাল সামান্তাকে রাগানোর জন্যই এসব করছিল। তবে ইতোমধ্যেই যে সামান্তার কথা এভাবে সত্যি হয়ে যাবে কে জানত? অপ্রত্যাশিতভাবেই জেসমিন বেগম তৃতীয় ব্যক্তি হয়ে ঘটনাচক্রে উপস্থিত হয়ে গেলেন! রুমে প্রবেশ করেই তিনি মাথা নুইয়ে নাক ঘঁষলেন। বুকের ওপর দু-হাত গুজে দাম্ভিক রূপে দাঁড়ালেন। হুড়োহুড়ি করে সামান্তাকে ছেড়ে মিশাল সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পরল। লজ্জায় মাথা কাটা গেল তার। সামান্তা মাথায় হাত দিয়ে বিছানায় বসে রয়েছে। সে আগে থেকেই জানত এমন একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। মাথা চুলকে মিশাল নিচু গলায় জেসমিন বেগমকে বললেন,

“সরি চাচী। একচুয়েলি আমি….
সম্পূর্ণ কথা শেষ করতে দেওয়া হয়নি মিশালকে। তটস্থ হয়ে ওঠলেন জেসমিন বেগম। মিশালকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

“এসব না করে বিয়ে করে ফেলো দুজন! তাহলে চোখের সামনে আর এসব দেখতে হবেনা।”
“আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করতেই এসেছি চাচী। তবে তার সার্জারির পর! আজ থেকে দেড় বছর আগে আপনার খুব কঠিন একটা প্রশ্ন ছিল বিয়ের পর আমিতো আপনার মেয়ের ঔষধ খরচই বহন করতে পারবনা, আর সার্জারির কথা না হয় দূরের ব্যাপার! তাই বিয়ের আগেই আমি আপনার সেই কঠিন প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই। আগামী একমাসের মধ্যেই সামান্তার সার্জারি হবে তাও আবার লন্ডনের সবচেয়ে বড়ো হসপিটালে!”

বুকে যে শ্রাবণ তার সিজন ২ পর্ব ৯

হনহন করে মিশাল রুম থেকে বের হয়ে গেল। চক্ষুজোড়া চড়কগাছ হয়ে গেল জেসমিন বেগমের। সামান্তা তার মায়ের দিকে তাকিয়ে শুকনো হাসল। ক্ষীণ গলায় বলল,
“বাঘ তার আসল রূপে ফিরে এসেছে। বলবনা সেদিন তুমি তাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়ে ভুল করেছ। বরং তাকে সেদিন দু-হাত দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে দিয়েছ। থ্যাংকস মা। থ্যাংকস ফর এভ্রিথিং।”

বুকে যে শ্রাবণ তার সিজন ২ পর্ব ১১