মেজর পর্ব ১৫

মেজর পর্ব ১৫
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

নয়না হিং,স্র চোখে মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে।মিতু উঠে দাঁড়ায়।মিতু নয়নার সমান লম্বা না হলেও প্রায় ছুঁইছুঁই।তাকে দাঁড়াতে দেখে নয়না বললো,
“গুড ;এবার বেরিয়ে যা।”
মিতুর ঠোঁটের কোনে শান্ত হাসি ফুটে উঠে।তাকে হাসতে দেখে নয়না ফুসে বললো,

“বেরিয়ে যা। ”
“যাবো না,আপনি কে আমাকে বের করার?”
“এত সাহস আমাকে প্রশ্ন করিস?তুই জানিস আমি কে?”
মিতু ঢাকাইয়া মেয়ে।চঞ্চল হরিণের র,ক্ত টগবগে গরম এতোক্ষণ একটা ঘোরের মাঝে মেয়েটার কথাগুলো শুনেছে কিন্তু এবার সে প্রস্তুত।নয়নার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“গায়ের লেবাস দেখে মনে হচ্ছে আর্মি,আর্মি হোন আর যেই হোন হোয়াটএবার আমার তাতে কিছু আসে যায় না।কারও বেডরুমে অনুমতি ছাড়া প্রবেশের সাহস কি করে হলো।আপনি জানেন আমি কে?”
মেয়েটাকে এত অপমান করার পরেও সে নয়নাকে আপনি বলে সম্মোধন করছে।নয়না এসব পাত্তা না দিয়ে বললো,
“তোর আবার বেডরুম!তুই জানিস আমি যা ইচ্ছা তাই করতে পারি।আর তুই কি তা জানিস না?তুই প্র….”
বাকিটা নয়নার মুখেই আটকে থাকে।মিতু কিড়মিড় করে বললো,

“সেট আপ,রা,স্কেল।উল্টাপাল্টা কথা বললে থাপড়িয়ে গালের দাঁত হাতে ধরিয়ে দেবো।”
নয়না চোখ পাকিয়ে আরও কাছে আসে।
“কি বললি?”
“কানে শুনেন না?”
নয়না অধৈর্য হয়ে মিতুর হাত ধরে বললো,
“আমার মুশফিকের আশেপাশেও আর আসবি না।”

মিতুর রাগ কিড়মিড় করে আকাশসম হয়ে যায়।নয়নার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নয়না কিছু বুঝে উঠার আগেই তার গালে গুনে গুনে চারটা থাপ্পড় দিয়ে দেয়।ইউনিফর্ম এর কলার ধরে শাশিয়ে শাশিয়ে বললো,
“মুশফিক আপনার! এসব আজেবাজে কথা বললে জ্বিভ টেনে ছিড়ে ফেলবো। ”
নয়না মিতুর সাহস দেখে অবাক,সে আর্মি,ট্রের্নিংপ্রাপ্ত কিন্তু এই মেয়ে তার থেকে বেশী চালু।দেখতে নরম দেখা গেলেও মেয়ে মোটেও নরম না কিন্তু সে নিজেও দমে যাওয়ার পাত্রী না পালটা মিতুকে ঠেলে সরিয়ে বললো,

“গায়ে হাত দিলি কেনো?”
“বেয়াদবদের গায়ে হাত দিয়েই শায়েস্তা করতে হয়।”
নয়নাও হাত উঠায় মিতুকে মা,রার জন্য কিন্তু মিতু তার হাত ধরে ফেলে।হাত মুঁচড়ে দিয়ে বললো,
“আমার গা আরেকবার স্পর্শ করতে আসলে হাত ভেঙ্গে ফেলবো।”
“এত সাহস পাস কোথায়?”

“সেটা আপনার মুশফিককেই জিজ্ঞেস করবেন।”
“আমি মুশফিকের গালফ্রেন্ড তাই এসব তাকে জিজ্ঞেস করার দরকার মনে করছিনা।”
“গালফ্রেন্ড! ”
“হ্যাঁ।সে আমাকে খুব ভালোবাসে,যত্ন করে।”
মিতু মাথা নেড়ে বললো,
“আমি বিশ্বাস করি না।”

“কিছু আসে যায় না।তুই এমন গুরুত্বপূর্ণ কেউ না যে বিশ্বাস করতেই হবে,ফালতু।”
মিতু জোড়ে শ্বাস ফেলে বললো,
“ফালতু! আমি মেজর মুশফিক আহসানের স্ত্রী মিসেস আহসান।”
নয়না হো হো করে হেসে দিলো।

“স্ত্রী! হাউ ফানি।মেজর বিয়ে করেছে অথচ কেউ জানে না?তুই নিজের মান রাখতেই এসব বলছিস তাই না?আব্বু বলেছে সামনের মাসেই আমার আর মুশফিকের বিয়ের এনাউন্স করবে।”
মিতুর দুনিয়াটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।যেনো দশফুট উপর থেকে কাচের আয়না মাটিতে পরে চুরমার হয়ে গেলো নিমিষেই।মিতুর বিবর্ন চেহারা দেখে নয়না আরও বললো,

“তুই জানিস মুশফিক আমার কত যত্ন নেয়,সবসময় জিপে করে বাসায় নিয়ে আসে,এই বাসায় কত এসেছি তার হিসাব নেই।”
মিতু জানে মুশফিক পার্টনারের প্রতি যত্নশীল,গতকাল রাতে এই মেয়েই বোধহয় গাড়ি থেকে নেমেছিলো।তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নয়না মুশফিকের নাম্বারে ফোন দেয়।কয়েকবার ফোন দেওয়ার পরে মুশফিকের ভারী স্বর শোনা গেলো,

“হ্যাঁ,নয়না বলো।”
নয়না ফোনটা সরিয়ে বললো,
“দেখলি কেমন আদর করে ডাকে।”
তারপর ফোন কানে দিয়ে বললো,
“আমি আপনার কটেজে আছি।এখানে এই পতি,তা কি করে?ওকে বের করে দিতে চাচ্ছি,যতহোক কেউ জানলে আপনার সম্মান থাকবে না কিন্তু এই মেয়ে বের হচ্ছে না ও বলে কিনা আপনার স্ত্রী।”

মুশফিক আউট অফ এড়িয়ায় আছে।পাহাড়ের আনাচে-কানাচে ড্রা,গের ব্যবসা চলছে রমরমা,সেদিন এক গ্যাংকে ধরার পরে আরও কয়েকটা শাখার সন্ধান পাওয়া গিয়েছে।আজকে সেই খোঁজেই বেরিয়েছে।এমনিতেই চাপে আছে তার উপর মাত্র বলা নয়নার কথাগুলো শুনে গায়ে আ,গুন লেগে যায়।চিৎকার করে বললো,
“আমার কটেজে ঢুকার অনুমতি কে দিয়েছে তোমাকে?আর আমার কটেজে যেই থাকুক তাতে তোমার কি?এক্ষুনী বেরিয়ে আসো।”

নয়না থমথম খেয়ে বললো
“কিন্তু ওই মেয়েটা?”
মুশফিক আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সবাই তার দিকে তাকাচ্ছে। নিজেকে শান্ত করে আস্তে বলে,
“ও আমার স্ত্রী।তুমি এক সেকেন্ডের মাঝে বেরিয়ে যাবে,যদি কথার হেরফের হয় এর ফলাফল ভালো হবে না।”
নয়না কিছু বলার আগেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।সে মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“উনিও তোকে বাঁচাতে মিথ্যা কথা বলছে।আজ ক্যাম্পে ফিরে আসুক,বাবাকে সব বলে দেবো,তখন বুঝবে প্র,স্টিটিউড বাসায় আনার ফল।”

নয়না ধুপধাপ পা ফেলে চলে যায়।মুশফিক বলেছে চলে যাওয়ার জন্য সে নিঃশব্দে চলে যায়।মিতু সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে,মোবাইল নিজস্ব শব্দে চেচিয়ে উঠে জানান দেয় মুশফিক ফোন দিয়েছে,মিতু রাগে মোবাইলটা দেয়ালে ছুড়ে মা,রে।সে কিছুতেই বুঝতে পারছেনা মুশফিক তাদের বিয়ের কথাটা কেনো লুকিয়েছে।এটা কি লুকিয়ে রাখার মতো কোন বিষয়?সবাই যদি জানতো তাহলে মেয়েটা এত কথা বলার সুযোগ পেত না।মেয়েটার সাথে কি আসলেই মুশফিকের কিছু আছে?

না থাকলে একটা মানুষ কি করে এতো জোড় দিয়ে কিছু বলতে পারে।স্ত্রী হওয়া স্বত্ত্বেও তাকে পতি,তার নাম শুনতে হলো।কাল রাতে মেয়েটা জিপ থেকে নেমেছে,মুশফিক তার যত্ন করে,আর ওই নাইটি টা এটা কি কোনভাবে এই মেয়ের? মেয়েটার কথামতে সে এখানে এসে থাকে সে কি এটা পড়েছিলো?মিতু কিছু ভাবতে পারে না।সামনের চেনা খুব পরিচিত দুনিয়াটা যেনো মুহূর্তেই রঙ বদলিয়ে ফ্যাকাসে হয়ে যায়,সে ফ্লোরে বসে পরে।তার শান্ত নদীতে ঢেউ উঠে,গাল বেয়ে পানি ঝরে।

মুশফিক তার স্বামী তাদের এখনো ভালোবাসাই হয়নি অথচ এসব কি হচ্ছে?মিতু ফ্লোরে শুয়ে পরে,নানা রকম ভাবনায় মাথাটা ভো ভো করে ঘুরে উঠে।মুশফিক শুধুমাত্র তার,তার মুশফিক অন্য কারও হতে পারে না।তখন বেলা কয়টা মিতু জানে না সে কাঁদতে কাঁদতে ফ্লোরেই ঘুমিয়ে যায়।মাগরিবের আজান দিয়েছে সেই কখন কিন্তু মুশফিক আসেনি। তার ঘুম ভাঙ্গে পেটের ক্ষুধায়।সারাদিন পেটে একটা দানাও পরেনি,শরীর নেতিয়ে আছে।সে উঠে দাঁড়ায়,কিচেনে গিয়ে পানি খায়।।

বাহিরে চাঁদের আলোয় সব ফকফকা দেখা যাচ্ছে।কি মনে করে মিতু কটেজ থেকে বেরিয়ে আসে।খানিকটা সামনে এসে দাঁড়ায়।চাঁদের আলোয় সামনের রাস্তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।ওদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মিতুর মনে হয় কারা যেনো আসছে।মানুষটা আর কেউ না মুশফিক আর সাথে নয়না।নয়না আর মুশফিককে একসাথে দেখে মিতুর চোখের কোন বেয়ে আবার নতুন উদ্দমে পানির স্রোত বয়ে যায়,বুকে অসহনীয় যন্ত্রণা অনুভব করে।সে আড়ালে গিয়ে দাঁড়ায় আর দুজনকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে।

মুশফিক সারাদিন মনে হয় পাঁচশ বার মিতুকে ফোন দিয়েছে কিন্তু ফোন বন্ধ,সে এত গুরুত্বপূর্ণ এক মিশনে গিয়েছিলো যে আসারও কোনো উপায় নেই।আর্মিদের কাজটাই এমন,সব ভেসে যাক কিন্তু দেশের কাজ আগে।নয়নার কাছে এসব শুনে মিতুর অবস্থা না জানি কি হয়েছে চিন্তায় তার অবস্থা খারাপ,নিজের মাঝে এতো অস্থিরতার মাঝেও কটেজে আসার কোন সুযোগ নেই।

তখনি ইচ্ছে করছিলো নয়নার গালে থা,প্পড় দিয়ে লাল করে দিতে।এখন নয়নাকে কটেজ থেকে বের করে এনেছে।নয়নাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শক্ত হাতের দুই থা,প্পড়ে নয়নার কান বন্ধ হয়ে গিয়েছে।নয়না গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে মুশফিকের দিকে তাকালে মুশফিক বললো,
“এই পর্যন্ত একদিনও তোমাকে আমার কটেজে ডুকতে দিয়েছি?আজকে কোন সাহসে প্রবেশ করেছো?”
নয়নার গাল ব্যথা করছে।সে বললো “আপনার কটেজ,গেলে কি সমস্যা?”
মুশফিক চিৎকার করে বললো,

“সমস্যা আছে।আর তুমি মিতুকে কি বলেছো?প,তিতা?”
“প,তিতা কটেজে আনবেন তাকে কিছু বললেই দোষ?”
মুশফিক রাগে আরেকটা থা,প্পড় দেয়। নয়না ছিটকে যায়।
“ও আমার স্ত্রী।বিয়ে করা স্ত্রী।আমার কটেজে থাকলে সে প,তিতা নয়।এসব দেখার অধিকার তোমার নেই।তুমি সাধারন এক সৈনিক তাছাড়া আর কিছু না।তোমার বাবা কর্নেল কিন্তু সেই গরম আমাকে দেখাবে না।”
নয়না হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে।মেয়েটা কি আসলেই মুশফিকের স্ত্রী!সে কি তবে ভুল ভেবেছে?এ কথা ঠিক যে সে তার আব্বুর কথা বলে অনেককিছু হাসিল করে নেয়।মুশফিক বললো,

“আর কি বলেছো মিতুকে?”
নয়না ভয়ে ভয়ে বললো,
“আর কিছু বলিনি?”
মুশফিক জানে নয়না আরও অনেক কিছু বলেছে এই মেয়ে খুব খারাপ।সে বললো,
“যদি শুনি আর কিছু বলেছো তাহলে তোমার অবস্থা খারাপ হবে।আমার ভ,য়ংকর রূপ দেখবে। ”
“আপনার স্ত্রী আমাকে মে,রেছে।সেটা?”

মুশফিকের ভ্রু কুঁচকে যায়। মিতু নয়নাকে মে,রেছে?সে বললো,
“ভালো করেছে,সে মেজরের স্ত্রী,নিশ্চয়ই বিড়াল নয়।সিংহের সঙ্গী সিংহই হয়।যাও বাসায় যাও,আর কখনো আমাদের ব্যাপারে কথা বলতে আসবে না।আমি তোমার বাবার কাছে সব বলে দেব।আর মেয়ে বলে আমার আ,ঘাত থেকে মুক্তি পেয়েছো না হলে আমার স্ত্রীকে হীন করে কথা বলার অপরাধে নির্ঘাৎ এখানেই পু,তে ফেলতাম।”
নয়না ভয়ে কটেজের দিকে চলে যায়।চোখের পানিতে গাল বেয়ে যাচ্ছে,গাল লাল টকটকে হয়ে গেছে।মনের মাঝে প্রতি,শোধের তীব্র নে,শা মাথায় নেচে উঠে।

মিতু থরথর করে কাঁপছে।দুর্বল পা ফেলে যত দ্রুত সম্ভব রুমে আসে।রুমে এসে রা,গে দেয়াল-মিররে হাত দিয়ে আ,ঘাত করে আয়নাটা চুরমার করে দিতে চায়। আয়না ভাঙ্গে কিন্তু হাত বিশ্রীভাবে কে,টে যায়।
মুশফিকের বুটের শব্দ শোনা যাচ্ছে মিতু ফুপিয়ে উঠে।বুকের কষ্টরা যেনো এই মানুষটার সানিধ্যে এসে উথলিয়ে উঠে।মুশফিক এসে দেখে মিতু চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে,সে মিতুর দিকে তাকিয়ে থাকে।বিবর্ন,ফ্যাকাসে মুখ দেখে তার কেমন কষ্ট হয়।তার চোখ যায় হাতের দিকে,হাত থেকে টপটপ করে লাল বর্নের তরল মেঝেতে জমা হচ্ছে।হাতের ব্যাগটা দূরে রেখে মিতুর কাছে আসে।হাতটা ধরার জন্য হাত বাড়িয়ে বললো,

“হাত কেঁ,টেছে কি করে?মিতু তুমি কি করেছো?”
মিতু মুশফিককে হাত ধরতে দিলো না,এক ঝটকায় মুশফিকের থেকে দূরে গিয়ে বললো,
“আমি প,তিতা।প,তিতাদের এতো যত্ন করতে হবে না।আপনি ওই মেয়ের কাছে যান যে আপনার গালফ্রেন্ড,আর্মি মেয়েটা।”

মেজর পর্ব ১৪

মুশফিক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে মিতু কিছু না বলে ছুটে কটেজ থেকে বেরিয়ে যায়।তারপর কোনোদিকে না তাকিয়ে পাহাড়ের দিকে ছুটতে থাকে।তার ইচ্ছা সে পাহাড় থেকে ঝা,প দিয়ে ম,রে যাবে।

মেজর পর্ব ১৬