মেজর পর্ব ৮

মেজর পর্ব ৮
জাকিয়া সুলতানা ঝুমুর

যখন সেনাদের সামনে দিয়ে মুশফিক হেটে যায় তখন সবাই শ্রদ্ধাভরা চোখে তার দিকে তাকিয়ে থাকে।কাজের প্রতি ভক্তি দেশের প্রতি ভালোবাসায়,ব্যক্তিত্ব,সব মিলিয়ে সবাই তাকে আদর্শ মনে করে তাকে অনুসরণ করার চেষ্টা করে।সৈনিকদের সামনে মুশফিক সব সময় তার ব্যক্তিত্ব বজায় রেখে চলেছে।কিন্তু আজকে তার মনের আকাশে একটুও সূর্যের দেখা নেই,ঘন কালো মেঘের ঘনঘটায় সবকিছু ছেঁয়ে আছে।

ঘুটঘুটে অন্ধকারে চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে আছে,বুকের ভেতরটা অশান্তিরা তোলপাড় করে দিচ্ছে,গম্ভীর, দাম্ভিক মুশফিক ছটফট করে উঠে।আগে কখনো এমন হয়নি,এই এমন হওয়ার জন্য দায়ী চঞ্চল মেয়েটা যে কিনা খাতা কলমে তার ;একান্ত নিজের।চঞ্চল মেয়েটা খুব যত্ন করে তার মনে ঝড় লাগিয়ে দিয়েছে,অথচ তাদের এখনো প্রেম হয়নি, কাছে আসা হয়নি, নিবিড় করে ছুঁয়ে দেয়া হয়নি।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তারপরও মনের এই তোলপাড় কিসের জন্য?বুকের ভেতর আগুন জ্বলছে দা,বানলের মতো দাউদাউ করে।রাতে বাড়ি ফিরে মিতুকে ফোন দেয়।তার ফোন দেয়াও সীমিত।অন্য হাজবেন্ডদের মতো সারাদিন ফোন দেয়ার ধাত তার নেই।মিস করলেই কেনো ফোন দিতে হবে?চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে না পারলে, এই সামান্য কথা বলে কি মনের আশ মিটবে?ঢাকা থেকে আসার আজকে চল্লিশতম দিন।

এই চল্লিশদিনে তাদের কথা হয়েছে হাতেগুনা কয়েক বার।মুশফিক চাইতো মিতু ফোন দিক কিন্তু মিতু ফোন দেয়নি।মেজরের বুঝতে অসুবিধা হয়না যে তার স্ত্রী অভিমানে টইটুম্বুর হয়ে আছে।কিন্তু অভিমান ভাঙ্গাবে কি করে সে যে খুব দূরে।আগামী নয় মাস কোনো ছুটি নেই যে বাড়ি যাবে।মিতু ফোন রিসিভ করলে মুশফিক বললো,

“কেমন আছো?”
মিতু আস্তে করে বললো,
“ভালো।”
“পড়ালেখা কেমন হচ্ছে?”
মিতু পাথরস্বরে বললো,
“হুম।ভালো।”

মুশফিক মুচকি হাসে।মিতুর রাগের পারদ তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে।
“তারপর আর কি খবর.. ”
“কিছুনা।”
“তুমি রাগ করতেও জানো?”
“না।”
মুশফিক কিছুটা থেমে বললো,
“কথা বলতে চাইছো না মিতুল?”

“না।এইটুকু কথা বলে আমার আশ মিটে না।বুকে চলমান রক্তক্ষরণ আর বাড়াতে চাই না। কথা না বললেই ভালো রক্তক্ষরণ সীমিত হয়। ”
মিতুর কথাটা মুশফিকের অন্তর ছুঁয়ে যায়।সে কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো,
“আমি এতো কষ্ট দেই তোমায়?”
এবার মিতু নিজের দিশা হারায়।শক্ত খোলস সরিয়ে সশব্দে কেঁদে উঠে।ম্যাচিউর মেয়ের মন যেনো অবজপানায় ভরে যায়। সে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বললো,

“আপনি খুব খারাপ,পাষাণ।আমি আপনাকে একটুও ভালোবাসি না।আই হেইট ইউ মেজর।”
মিতু লাইন বিচ্ছিন্ন করে দেয়।মুশফিক তারপরও মোবাইলটা কানে নিয়ে বসে থাকে।দায়িত্বে কর্মরত এক অফিসারের যে কতো দায়িত্ব তা অন্যকাউকে বোঝানো সম্ভব না।কিভাবে বুঝাবে;পরিকল্পনা যে অন্যকাউকে বলা নিষেধ,এটা গো,পনীয়তা ।

মিতু যে তাকে খুব চাইছে তা অভিমানের ফাঁক গলে নিঃশব্দে তাকে জানিয়ে যায় মনপাখি।মুশফিক ও যে মিতুকে খুব চায় তা কি মেয়েটা জানে?জানবে কি করে মেজর যে কখনো বলেনি,ফোনে দুই এক মিনিট কথা ছাড়া আর কিছুই হয়নি।সে কটেজের বারান্দায় এসে বসে।চোখের পর্দায় ভেসে উঠে ফর্সা কোমল রমনীর শাড়ি পড়ার দৃশ্য যা কিনা এখনো হৃদয় কাঁপিয়ে দেয়।সে চোখ বন্ধ করে নেয়।

সেদিন সে ঘুমাচ্ছিলো কিন্তু হঠাৎ দরজা খুলার শব্দে সতর্ক, ট্রের্নিংপ্রাপ্ত মেজরের ঘুম ভেঙ্গে যায়।বাথরুমের দরজা দিয়ে মিতু বেরিয়ে আসে।গায়ে কোনোরকম শাড়ি জড়ানো।মিতু মুশফিকের দিকে তাকানোর আগে মুশফিক আবার চোখ বন্ধ করে নেয়,মিতু শাড়িটা আবার প্রথম থেকে পরার চেষ্টা করে।ফর্সা শরীর,পেলব নরম দেহের অধিকারী মেয়েটা একান্ত তার নিজের।কখনো কোনো নারীর দিকে পূর্ণদৃষ্টি না ফেলা মুশফিক মিতুর আদুল উদরের থেকে দৃষ্টি সরাতে পারলো না,তৃষ্ণার্থ পাখির মতো এইটুকু দেহই প্রানভরে দেখতে লাগলো।সে মনকে বুঝালো এভাবে দেখা অন্যায়,পাপ কিন্তু মন তাকে ধমকালো বললো,

“ইশ!মেয়েটা তোর বউ রে গাধা,দেখলে কিচ্ছু হবে না। চুপচাপ দেখ।অন্য মেয়ে হলে অবশ্যই পাপ হতো কিন্তু এই রমনী তোর বউ।”
মনের কথায় মুশফিক শুকনো ঢোক গিলেছে,বুকের ভেতর তখন অন্যরকম ঝড়।পুরুষালি দেহমন তখন আন্দোলন শুরু করে,সে শক্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে থাকে।এই মেয়েটা অতি গম্ভীর, সংযত মেজরের বুকে ঝড় তুলে ফেলেছে যা আর কেউ পারেনি,অবশ্য আর কারো দিকে সে এমন চোখে তাকায়নি।

মুশফিকের মনে হয়েছিলো মিতুর উদর তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকছে,ইচ্ছে করছে বলিষ্ঠ হাতে মিতুকে শক্ত করে পাথরকঠিন বুকে পিষ্ট করে দিতে কিন্তু সে নিজেকে খুব সামলে নিয়েছে,একটুও ছুঁয়ে দেখেনি,না মিতুকে বুঝতে দিয়েছে।সেই দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে।মুশফিকের কেমন লাগে,ঘুমন্ত ব্যাঙ্গাচি ফুস ফুস করে জেগে উঠে।হাত দিয়ে চুল টেনে মুখ দিয়ে অস্পষ্ট করে বললো,

“উফ!মিতুল!”
কাকডাকা ভোর!চারদিকে তখনো অন্ধকার।মিতু নামায পড়েছে।আজকাল নামাযে মুনাজাতে বসলেই না চাইতেই মুশফিকের জন্য দোয়া চায় বিস্তর অথচ মানুষটার প্রতি তার এক আকাশ অভিমান।মাঝে মাঝে গলা ছেড়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে।ইশ বিয়ের আগে কতো কি ভেবেছে কিন্তু এখন কিছুই হচ্ছে না।

ভেবেছিলো আর্মিরা বুঝি খুব রোমান্টিক আর বউ ঘেষা টাইপ হয় কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে আর্মিরা আনরোমান্টিক,অযন্তশীল,আর খুব খারাপ হয়;বিশেষ করে তার মেজর।এই যে কিছুদিন পরে পরে একটু ফোন দেয় এতে কি হয়!এইটুকু কথা বলে মিতুর মন আরও বেশী খারাপ হয়।গম্ভীর হাষ্কি স্বরটা আরো বেশী সময় ধরে শুনতে ইচ্ছে করে,অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করে কিন্তু মুশফিক কেমন যানো দুই মিনিটের বেশী একটুও কথা বলেনা।সেদিন যাওয়ার সময় বলেছিলো প্রতিদিন ফোন দেবে কিন্তু মুশফিক ফোন দেয়নি।মেজর কথা দিয়ে কথা রাখেনি,সে চাতক পাখির মতো ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে কিন্তু ফোন আসেনা।মেজরের প্রতি তার খুব রাগ;খুউব।

মহিমা বেগম সকালের নাস্তা বানাচ্ছে এমন সময় কলিংবেল বাজে।উনি গলা ছেড়ে মিতুকে ডাকে।মিতুর হাতে তখন উপন্যাসের বই,নাম বাবলি।সে বই রেখে উঠে দরজা খুলতে যায়।দরজা খুলে দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা দুই মানব মানবীকে দেখে মিতু অবাক হয় কিন্তু মূহুর্তেই অবাকের রেশ লুকিয়ে সাহেরা বেগমকে জড়িয়ে ধরে।চঞ্চল হরিনী কলকলে কন্ঠে বললো,

“মা!ভালো আছেন?”
সাহেরা বেগম মিতুকে বললো,
“ভালো আছি।তুমি কেমন আছো?”
মিতু আড়চোখে মুশফিকের দিকে তাকায়।সাহেরা বেগমের হাত ধরে বললো,
“ভেতরে আসুন মা।আম্মু দেখো কে এসেছে।”

মুশফিক চুপচাপ তার মা কে অনুসরণ করে।গম্ভীর মুখে বারবার মিতুর দিকে তাকাচ্ছে,মেয়েটা তার সাথে কথা বলছেনা কেনো?ওদের বাসায় এসেছে অথচ তার কোনো রা নেই।সে দাম্ভিকতার সাথে সোফায় বসে।মিতুর এড়িয়ে যাওয়ায় মেজরের খুব রাগ হলো,রাগে নাকের পাটাতন ফুলে উঠলো,চুপচাপ নিজেকে সংযত করতে চাইলো।মিতু তার উপর রেগে আছে এই মূহুর্তে সে যদি রাগ করে তো পরিস্থিতি বিগড়ে যাবে।মুশফিক মিতুর দিকে তাকিয়ে দেখে মিতু আড়চোখে তার দিকে তাকাচ্ছে।মুশফিকের ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠে।
মিতু মুশফিকের ঠোঁটের হাসি দেখে চুপচাপ রুমে চলে যায়।

হঠাৎ করে মুশফিক আর সাহেরা বেগম আসার কারণ বোধগম্য হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পরে মহিমা বেগম এসে মিতুকে জানায় ব্যাগ গুছাতে।মায়ের কথায় মিতুর ভ্রু কুঁচকে যায়। মায়ের দিকে লক্ষ করে দেখে মহিমা বেগমের চোখ ছলছল করছে।মিতু কিছু বলার আগে উনি বললেন,মুশফিক তাকে খাগড়াছড়ি নিয়ে যাবে।মিতু মাথা নেড়ে না করে,চোখের পানি গাল বেয়ে নেমে যায়।

“আমি যাবো না।”
মহিমা বেগম কান্না চেপে বললো।
“মুশফিক নিতে চাইছে,যাবো না মানে কি।”
মিতু রাগী কন্ঠে জোরেই বললো”
“ও নিতে চাইলেই আমি যাবো কেনো?ওর কথায় উঠবস করবো কেনো আমি।পারবোনা।”
মহিমা বেগম মিতুকে থামিয়ে বলল,

“মুশফিক তোর স্বামী।ওর কথাই শুনতে হবে।বেয়াদবি করবিনা মিতু।”
মিতু ফুপিয়ে উঠে।খাগড়াছড়ি চলে যাওয়া মানে পরিবার থেকে অনেক দূরে চলে যাওয়া অথচ সে এখনো প্রস্তুত না।মিতু তার মা কে জড়িয়ে ধরে বললো,
“মা। আমি তোমাদের ছেড়ে যাবো না।”
তখনি সাহেরা বেগম আসে।মিতু তার মাকে জড়িয়ে ধরে মা মেয়ে অঝোর ধারায় কাঁদতে দেখে উনি চুপচাপ মিতুর মাথায় হাত ভুলায়।

মিতু তার শাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বললো,
“মা।আমি যাবো না।”
সাহেরা বেগম মিতুকে বুঝানোর জন্য বললো,

“আমি জানি মা হঠাৎ করে এতো দূরে যাওয়ার কথায় তোমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু তোমার স্বামীর ব্যাপারটাও তো দেখতে হবে।আগামী কয়েকমাস মুশফিকের কোনো ছুটি নেই।তুমি যদি না বুঝো তাহলে কিভাবে হবে?স্বামী স্ত্রী দুজন দুজনকে বুঝতে না পারলে সংসারে শান্তি আসবেনা।”

মিতু কিভাবে বলবে তাদের দুজন এখনো একটুও কাছাকাছি আসেনি,না হয়েছে কোনো বন্ধুত্ব,এই মানুষটার কাছে যেতেই অসস্থি,উনি যেমন নিজের চারপাশে শক্ত আবরণ বানিয়ে রেখেছে এই আবরণ বেধ করে সে মুশফিকের অন্তর ছুঁতে পারছে না।সে ফুপিয়ে উঠে।মাথা নেড়ে বলে,
“আমি যাবো না।”

সাহেরা বেগম আর মহিমা দুজনে মিলিয়ে বুঝিয়েও মিতুকে রাজী করাতে পারে না।মহিমা বেগম হাল ছেড়ে বললো,
“কি করবো আপা?”
সাহেরা বেগম উনাকে নিয়ে বাহিরে আসে।
“মুশফিক রাজী করাবে।”
দুজন বিষন্ন মুখে বেরিয়ে আসতে দেখে মুশফিক কিছু আঁচ করে।সাহেরা বেগম তার পাশে এসে বসে।সে গম্ভীর দৃষ্টি ফেলাতে উনি বললো,

“রাজী করাতে পারছিনা।মিতু কোনোভাবেই যেতে রাজী না।”
মায়ের কথা শুনে গম্ভীর চেহারা আরও গম্ভীর হয়।সে কখনো ভাবেনি মিতু এমন প্রত্যাখান করবে।সাধারণত মেয়েরা স্বামীর সাথে থাকতেই বেশী সাচ্ছন্দ্যবোধ করে কিন্তু মিতু চাইছেনা কেনো?সেটা কি তার উপরের অভিমান থেকে?মুশফিক যে কিনা দক্ষ,প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মেজর সে কি এতো সহযে হাল ছাড়বে?সে উঠে দাঁড়ায়।আস্তে করে মিতুর রুমে ঢুকে পর্দা টেনে দেয়।

মিতু মুশফিকের দিকে তাকায়।চোখের পানি গাল ভিজিয়ে যাচ্ছে।মুশফিক চুপচাপ সামনে দাঁড়িয়ে মিতুকে দেখতে থাকে।মিতু মুশফিকের দিকে তাকিয়ে আবারও ফুপিয়ে উঠে।কান্নার তোড়ে ঠোঁট মৃদু কেঁপে ওঠে।ভেজা গলায় অস্পষ্ট করে বললো,

“আমি যাবো না।”
মুশফিক তীক্ষ্ণ চোখে মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে।গম্ভীর কন্ঠে বললো,
“কেনো?”
“আব্বু আম্মুকে ছেড়ে যাবো না।”
“বিয়ে হয়ে গেছে,ছেড়ে তো যেতেই হবে। ”
“না।”

মুশফিক তার বলিষ্ঠ শক্ত হাত বাড়িয়ে মিতুর চোখের পানি মুছে পাশে বসে বললো,
“আমার সাথে থাকতে ইচ্ছে করে না?”
মিতু চুপচাপ মুশফিকের দিকে তাকায়।মুশফিক বললো,
“আমি মনে করি আমাদের দুজনের একসাথে থাকা উচিত।আমাদের সম্পর্কটা আট দশটা বিবাহিত সম্পর্কের মতো না,সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হলেও আমাদের একসাথে থাকা উচিত।”
মিতু ছোট করে বললো,

“হুম।”
“যাবে আমার সাথে?”
মিতু আবার মাথা নাড়ে।
“কেন?”
“আপনি একটুও ভালো না,এতো দূরে থেকেই কাঁদান,কাছে গেলে আরও কাঁদাবেন।”
মুশফিক মিতুর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নেয়।

“ভালো নাকি খারাপ সেটা তো জানতে হবে,জানার জন্য কাছে যাওয়া দরকার।দূরে আছি বলেই তো কাঁদার সুযোগ পাচ্ছ কাছে থাকলে একটুও কাঁদতে দেবো না।আমার স্ত্রীকে আমি কেনো কাঁদতে দেবো?”
মিতু চুপ করে থেকে বললো,
“জানি কষ্ট দেবেন।”

মুশফিক মিতুর চোখের দিকে তাকায়।সুচালো দৃষ্টি মিতুর হৃদয় প্রশমিত করে।মুশফিক হেসে বললো,
“কিছু তো দেবো তা নিশ্চয়ই কষ্ট না,স্বর্গসুখ হতে পারে!’
” যাবো না।”

“কালকে যে বললে এইটুকু কথা বলে তোমার মন ভরে না,বুকে আরও রক্তক্ষরণ হয়। আজকে যদি না যাও তাহলে এই রক্তক্ষরণ আরও দীর্ঘ হবে।”
মিতু মাথা তুলে মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
“কেনো?”

“আগামী নয় মাস কোনো ছুটি নেই।নয়মাস পরে তিনদিনের ছুটি।আজকের ছুটি ম্যানেজ করতে অনেক কষ্ট হয়েছে সুতরাং দূরত্ব বরং বাড়বে কমবেনা।”
মিতু চুপচাপ ভাবে কি করবে।মন একবার বলে বাবা মাকে ছাড়া যাবে না আরেকবার বলে এতোদিন মুশফিককে দেখবে না ঠিকঠাক কথাও হবে না সেটা মানা অসম্ভব ।
মিতুর দিকে তাকিয়ে মুশফিক বললো,

“পারবে এতোদিন অপেক্ষা করতে?”
মিতুর কথা বলে না।মুশফিক মিতুর হাতটা আঁকড়ে ধরে বললো,
“তুমি কি আমাকে একটুও মিস করোনা মিতু?আমি তো তোমাকে খুব মিস করি।”
মিতু আস্তে করে বললো,
“আমিও মিস করি।”
“তাহলে না করছো কেনো?”

মিতু চুপ করে থাকে।মুশফিক শক্ত কন্ঠে বললো,
“তুমি তাহলে অপেক্ষা করতে প্রস্তুত হও।”
মিতু মুশফিকের দিকে তাকিয়ে বললো,
“পারবো না।”

“কেনো?”
মুশফিকের চোখের দিকে তাকিয়ে মিতুর মনে হলো,মানুষটার কাছে না থাকলে সে ম,রে যাবে।সে আস্তে করে বললো,

“আপনার কাছে যাবো।”
মুশফিকের ঠোঁটের ভাজে কিঞ্চিৎ মুচকি হাসির রেখা ফুটে উঠে।
“শিওর?”
মিতু মাথা নাড়ে।মুশফিক মিতুর গালে হাত রেখে বললো,

মেজর পর্ব ৭

“মাই সুইটহার্ট।”
মিতু চুপ করে থাকে।মুশফিক বললো,
“আমি তোমায় অন্য দুনিয়া দেখাবো মিতুল।সে দুনিয়া শুধুমাত্র তোমার আর আমার।”

মেজর পর্ব ৯