শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪২

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪২
তানিয়া মাহি

শুভ্রতা ওয়াশরুমে, বিছানায় রাখা ফোনটা বাজছে। নিহান ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে নম্বরটা সেভ করা নেই। কারো ফোন তার অনুমতি ছাড়া ধরা ঠিক না কিন্তু নিহান ইচ্ছে দমিয়ে উঠতে পারল না। প্রথমবার কল কেটে গেলে দ্বিতীয়বার আবার কল আসলে নিহান কল রিসিভ করে। কিন্তু ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ নেই। নিহান চুপ করে আছে জানার জন্য যে ওপাশ থেকে কে কথা বলবে! কিন্তু কেউ কোন কথা না বলায় নিহানের সন্দেহ বেড়ে যায়।

কেউ শুভ্রতাকে বিরক্ত করছে? শুভ্রতার থেকে জানতে হবে ভেবে কল কেটে শুভ্রতার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে সে। কিছুক্ষণ পর শুভ্রতা বেরিয়ে আসে। নিহান তার ফোনটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। শুভ্রতা তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে জানালার দিকে এগিয়ে গিয়ে পর্দা সরিয়ে দেয়। হু হু করে বাতাস দলবেধে ভেতরে প্রবেশ করতে থাকে। শুভ্রতা সেখানেই দাঁড়িয়ে আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

” তোকে কেউ অযথা কল দিয়ে ডিস্টার্ব করছে?”
নিহানের কথায় পিছনে ফিরে তাকায় শুভ্রতা। সেই অচেনা নম্বর থেকে কি তবে আবার কল এসেছিল? নিহান রিসিভ করেছিল! ব্লক করে দেওয়া উচিৎ ছিল কিন্তু সে কয়টা নম্বর ব্লক করবে? সেদিনের পর থেকে চার/ পাঁচটা নম্বর কালো তালিকায় ফেলেছে সে। শুভ্রতাকে চুপ থাকতে দেখে নিহান আবার বলে,
” তুই ওয়াশরুমে ছিলি তখন কেউ কল দিয়েছিল। প্রথমবার রিসিভ করিনি। দ্বিতীয়বার কল আসলে রিসিভ করায় দেখলাম কেউ কথা বলল না। ”

শুভ্রতা হাতের তোয়ালেটা চেয়ারের ওপর রেখে নিহানের দিকে আসতে আসতে বলল, ” কয়েকদিন হলো এরকম কল আসছে। আমি কয়েকটা নম্বর ব্লক করেছি তবুও অন্য নম্বর থেকে এরকম কল আসে। কেউ কোন কথা বলে না।”
” আমাকে জানাস নি কেন?”
” জানানোর মতো কিছু না তো। এরকম ফোন তো আসেই, অনেকে ডিস্টার্ব করে৷ এটা নিয়ে চিন্তা করার কি আছে?”
” আমি যদি তোর ফোনের নম্বর চেঞ্জ করে দিই তাহলে কি সমস্যা হবে? যদি বলিস তাহলে আমি আজই নতুন সিম তুলে দিব।”

” হ্যাঁ সমস্যা নেই, ভালোই হবে।”
” ঠিক আছে।”
কথা শেষ করতেই দারুণ প্রবল একটা শব্দে বাহিরে তাকায় দুজন। অনেক দূর থেকে বৃষ্টি তাদের এলাকার দিকে আসছে। এরকম শব্দ অনেক কম শোনা যায়। বৃষ্টি যখন প্রবল আকার ধারণ করে অন্য এলাকার বৃষ্টি হওয়ার শব্দ শোনা যায়। মনে হয় অন্য এলাকা থেকে তেড়ে আসছে তার কয়েক সেকেন্ড পরেই বৃষ্টি নেমে পড়ে। এখানেও সেরকম হলো। হুট করে প্রবল শব্দের বৃষ্টি নেমে পড়ল। তৎক্ষণাৎ শুভ্রতার মনে পড়ল তার শাড়ি ছাদে রোদে দেওয়া হয়েছিল, নিয়ে আসার কথা খেয়াল নেই তার। শুভ্রতা বাহিরের দিকে দৌঁড়ে যাবে তখনই নিহান হাত টেনে ধরে।

” দৌঁড়াচ্ছিস কেন? ”
” ছাড়ুন, তাড়াতাড়ি ছাদে যেতে হবে। ছাদে শাড়ি রোদে দিয়েছিলাম, ভিজে গেল।”
” আমি যাচ্ছি, তোমার যেতে হবে না। বসে থাকো।” বলেই নিহান উঠে দাঁড়ায়। শুভ্রতাকে দাঁড় করিয়ে নিজে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়। হুট করে কিছু মনে হতেই আবার দাঁড়িয়ে যায়। পিছনে ফিরে শুভ্রতাকে জিজ্ঞেস করে, ” বৃষ্টিতে ভিজবি শুভ্রা?”

শুভ্রতা মুখে কিছু না বলে মাথা ওপর নিচু নাড়িয়ে বুঝিয়ে দেয় সে বৃষ্টিতে ভিজবে। নিহানও মুচকি হেসে হাতের ইশারায় তার পিছে পিছে আসতে বলে।
অন্ধকার নেমে পড়েছে, এখানে ওখানে আলো জ্ব*লছে। দূরের আলোগুলো ঠিক যেন জোনাকি পোকার মতো লাগছে। দুজন এখনো ছাদে দাঁড়িয়ে ভিজছে। নিহান চিলেকোঠার পাশে দাঁড়িয়ে মুগ্ধচোখে শুভ্রতার বৃষ্টিতে ভেজা দেখছে। কয়েকবার ডেকেছিল চলে আসার জন্য কিন্তু শুভ্রতা আসে নি। তার নাকি আরও কিছুক্ষণ ভিজতে হবে। মেয়েরা কি আসলেই এতটা বৃষ্টিবিলাসী হয়! বৃষ্টি দেখলেই কেমন ছটফট করে বাহিরে আসার জন্য, বৃষ্টি ছুয়ে দেওয়ার জন্য।

শুভ্রতা দুইহাত দুই পাশে মেলে দিয়ে আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। মনে মনে হাজারো দোয়া, আকুতি-মিনতি রবের কাছে। বৃষ্টি হলো আল্লাহর রহমত। বৃষ্টির সময় দোয়া করলে দোয়া কবুল হয়, আকাশের দিকে তাকালে রব সেটা দেখেন। শুভ্রতা বৃষ্টিতে ভিজে নিহানকে সারাজীবনের জন্য পাশে চাইছে। নিহান শুধু বৃষ্টিতে ভেজা মেয়েটাকে দেখছে, তার ভেতরের কথাগুলো তো শুধু রব শুনছেন।

” আপু, তুমি মাকে বোঝাও না স্যারের ব্যাপারটা। স্যারকে কখনো বিয়ে করা যায় বলো? মানছি উনি খুব ভালো মানুষ কিন্তু উনাকে নিয়ে আমি কোন কিছুই ভাবতে পারছি না কিন্তু মা বলছেন তুমি আর ভাইয়া বাসায় আসলেই বিয়ের কথা পাকাপাকি করে ফেলবেন। যেই না শুনেছে আমার দুই বান্ধবীরই বিয়ে হয়ে গেছে তারপর থেকে আরও বেশি তাড়াহুড়ো করছে। মাত্র অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি এখনই এত তাড়াহুড়ো কীসের বলো তো?”

ফাউজিয়া কথাগুলো একনাগাড়ে বলে দম নিল। ওপাশ থেকে ফাউজিয়ার বড়বোন মেহজাবিন কথাগুলো শুনে বলল,” স্যার আর ছাত্রীর অবশ্যই বিয়ে হয়। অহরহ হচ্ছে, কিন্তু বিষয়টা তোর ভালো না লাগলে আমি মা’র সাথে কথা বলব। তুই একদম এসব নিয়ে চিন্তা করিস না, মন দিয়ে পড়াশোনা কর।”
” আচ্ছা, তুমি প্লিজ মাকে কল করে বলে দিও।”
” আচ্ছা বলব। তোর টেস্ট পরিক্ষা কবে?”
” সাহিল স্যার তো বলল এই মাসেই পরিক্ষা হবে।”
” এত জলদি?”

” হ্যাঁ, ডিপার্টমেন্টের প্রধান এসেছে নতুন। উনি খুব স্ট্রিক্ট। পড়াশোনায় গাফিলতি একদম সহ্য করেন না।”
দুই বোনের মাঝে আরও কিছুক্ষণ কথা হলো। কথা শেষ করে ফাউজিয়া মায়ের রুমে চলে গেল। খাওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে, খাবার খেয়ে ওষুধ দিতে হবে মাকে।

ফাউজিয়া মায়ের রুমের দিকে গিয়ে দেখে মা ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। একটু এগিয়ে গিয়েই শুনতে পায় তার মা বলছে, ” আপনি চিন্তা করবেন না আপা, আমার মেয়ের সাহস নেই আমার মুখের ওপর কথা বলার। আপনার ছেলের মতো ছেলেই হয় না। ওর রাজি না হওয়ার কোন কারণ দেখি না আমি। আপনি এসব নিয়ে একদম ভাববেন না। আমি আমার মেয়ে-জামাইকে আসতে বলেছি। ওদের সাথে আলোচনা করে অবশ্যই ভালো সিদ্ধান্তে পৌঁছব। ”

ফাউজিয়া বুঝতে পারে তার মা সাহিলের মায়ের সাথে কথা বলছে। বিষয়টা ফাউজিয়ার কাছে একদম ঠিক লাগছে না। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে খাওয়ার সময় হয়ে গেছে। তাই সে টেবিলের দিকে যায় খাবার বেড়ে মাকে দিতে যাবে বলে।
ফাউজিয়া মনে মনে অস্বস্তিবোধ করছে। মায়ের সাথে কোন কথা বলা যাচ্ছে না। স্যারের সাথে বিয়ের বিষয়টায় মন কোনভাবেই সায় দিচ্ছে না কিন্তু মা সেই কথা শুনতে নারাজ৷

” ব্যাগপত্র গুছিয়েছিস নিহান? কালকে ট্রেন কয়টায় তোর বিকেল পাঁচটায়?”
মিসেস রাবেয়ার কথা শুনে ভাতের লোকমাটা মুখে তুলতে পারল না শুভ্রতা। নিহান আগামীকালই চলে যাবে! কই কথাটা তো তাকে জানায়নি নিহান। শুভ্রতা খাবারটা মাঝপথেই আটকে রেখে নিহানের দিকে তাকালো৷ নিহান আগে থেকেই শুভ্রতার দিকে তাকিয়ে আছে। শুভ্রতা তাকালে সে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে মাকে বলে,
” এই তো রুমে গিয়েই গুছিয়ে ফেলব। ”

রাবেয়া বেগম শুভ্রতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ” শুভ্রতা তুই একটু নিহানকে সাহায্য করিস রে মা। আমিই গুছিয়ে দিতাম আগে কিন্তু এখন তো তুই এসেছিস। এই কাজটা এখন থেকে তোর।”
শুভ্রতা মুখ দিয়ে কোন কথা উচ্চারণ করল না। শুধু মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালো। আবিরা খাওয়া শেষ করে চলে গেল। আবিরার সাথে সাথে শুভ্রতাকেও উঠতে দেখে রাবেয়া বেগম বললেন, ” খাবার শেষ হয়নি, প্লেটের খাবার শেষ করে উঠবি। বস ওখানে।”

শুভ্রতা বাম হাত দিয়ে চেয়ার ধরে দাঁড়িয়ে বলল, ” আমার পেটে আর জায়গা নেই বড়আম্মু। আর খেতে পারব না।”
” কিন্তু…”
” থাক মা জোর করো না। ওর খাওয়া হয়েছে জন্যই তো উঠে পড়েছে।”
শুভ্রতা কোন কথা না বলে সেখান থেকে চলে যায়। নিহানও আর খেতে পারছে না। সে শুভ্রতার মুখের কালো মেঘটা দেখেছে। হয়তো রুমে গেলেই গাল বেয়ে পড়া বৃষ্টি দেখতে হবে। মেয়েটা ভালোবাসি না, ভালোবাসি না বলেও এত অভিমান করে!

এত এত ভালো মুহুর্তের মাঝে নিহানের চলে যাওয়ার বিষয়টা বলতে ইচ্ছে করছিল না তার। চলে যা গিয়েও তো উপায় নেই। এই চলে যাওয়াটা যে কোনভাবেই আটকে রাখা যাবে না। প্রিয় মানুষকে এত কাছে পাওয়ার পর কি এতদিন এত দূরে থাকা সম্ভব হবে নিহানের পক্ষে? নিহানের মতো শুভ্রতারও কি কষ্ট হবে!
নিহান প্লেট থেকে হাত গুটিয়ে নিয়ে মায়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, ” মা আগামীকাল গেলে আমার আসতে আসতে দুই থেকে আড়াই মাস৷ আমি ভেবেছি আগামীবার এসে শুভ্রাকে নিয়ে যাব। ওখানে তো পুরো ফ্ল্যাটে শুধু আমাকেই থাকতে হয়। রান্নাবান্না করাও ঝামেলা, শুভ্রা গেলে আমার একটু সুবিধাও হবে।”

” হ্যাঁ নিয়ে যাবি সমস্যা কি? আর তাছাড়া আমিও ভেবেছিলাম ওকে এবারই নিয়ে যাবার কথা বলব কিন্তু তোর বাবা আসবে কিছুদিনের মধ্যে আবার নাকি শুভ্রতার টেস্ট পরিক্ষা। তারপর কয়েকমাস পর ফাইনাল৷ এসে ফাইনাল দিলেই হবে। ”
” আচ্ছা আমি কাকার সাথেও কথা বলে দেখব। ”
” শুভ্রতার বাবার সাথে?”
” হ্যাঁ। ”

” আচ্ছা বলে দেখিস। এখন যা রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নে।”
রাবেয়া বেগম খাওয়া শেষ করে উঠে চলে গেলেন। নিহানও উঠে দাঁড়ালো। একবার উপরতলার দিকে তাকিয়ে রইল অসহায় দৃষ্টিতে। মেয়েটা কি করছে কে জানে! সে ভেবেছিল খাওয়া দাওয়া করে রুমে গিয়ে শুভ্রতাকে বিষয়টা জানাবে কিন্তু তার আগেই জেনে গেল। নিহান হাত ধুতে চলে যায় তাড়াতাড়ি করে।

নিহান রুমের ভেতরে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। শুভ্রতা রুমে নেই তার মানে নিশ্চয়ই ব্যালকনিতে মন খারাপ করে দাঁড়িয়ে আছে। বিয়ের দুইদিনে নিহান শুভ্রতার প্রতি আরও বেশি ভালোবাসা অনুভব করতে পারছে। এই মেয়ের চোখের পানি সে কোনভাবেই আগেও সহ্য করতে পারত না এখনো পারবে না। নিহান মনে মনে ভাবতে থাকে, ” আচ্ছা, যাওয়ার কথাটা মায়ের মুখে শুনে কি খুব কষ্ট পেয়েছে শুভ্রা? “এত এত ভালো সময় কাটানোর সময়ে যে মন খারাপ করিয়ে দিতে একদম ইচ্ছে করেনি নিহানের।

নিহান ব্যালকনিতে গিয়ে দেখে শুভ্রতা দাঁড়িয়ে আছে। নিহানের উপস্থিতি বুঝেও ঠায় দাঁড়িয়ে রইল শুভ্রতা। নিহান গিয়ে পিছন থেকে শুভ্রতাকে জড়িয়ে ধরলেও শুভ্রতা নিশ্চুপ। শুভ্রতাকে চুপ থাকতে দেখে নিহান এবার শুভ্রতাকে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিয়ে বলল, ” কি হয়েছে? মন খারাপ?”
শুভ্রতা কিছু না বলে অন্যাদিকে তাকালো। নিহান আবার শুভ্রতার মুখটা তার দিকে ফিরিয়ে নিল। ” কথা বলবি না আমার সাথে?”

” আপনি চলে যাচ্ছেন সেটা আমাকে বললেন না কেন?”
” তুই তো জানতি বিয়ের পরের দিন আমার চলে যেতে হবে। তবু আজকের দিনটা ম্যানেজ করেছিলাম। ভাবলাম তোর মনে আছে তাই বলিনি। এত ভালো মুহুর্তে চলে যাওয়ার কথা বলে মন খারাপ করতে চাইনি। শুনলে তোর ও মন খারাপ হত। তাই ভাবলাম রাতে রুমে এসে তোকে ব্যাগ গুছাতে বলব।”

” আমার একটুও ভালো লাগছে না। ”
” ভালোবাসিস আমাকে?”
শুভ্রতা নিশ্চুপ হয়ে যায় আবার। নিহানও কিছু বলে না। শুভ্রতা নিরবতা কাটিয়ে বলে ওঠে, ” আপনার অনুপস্থিতি হয়তো আমার মন খারাপের কারণ হবে। গত কিছুদিন ধরে ভালো লাগা কাজ করছিল কিন্তু কাল থেকে অদ্ভুত এক অনুভূতি কাজ করছে। তাকে ভালোবাসা বলা যায় কি না ঠিক বুঝতে পারছি না। এই অনুভূতির নির্দিষ্ট কোন সঙ্গা আছে কি না তাও জানি না।”

” আল্লাহ না করুক, আমি যদি তোর জীবনে ভাগ্যক্রমে কখনো না-ও থাকি তোর চারপাশের সবকিছু, ভোরের সূর্য থেকে শুরু করে রাতের চাঁদ পর্যন্ত তোকে আমার কথা মনে করিয়ে দিবে। আমার উপস্থিতি হয়তো তুই এই রুমের আনাচে কানাচে পাবি। ”
” আপনি আমার আছেন এই কথায় দিন আসুক, সেখানো আপনার অনুপস্থিত আমি সহ্য করে নেব কিন্তু আপনি আমার নেই এই ভেবে একটা সেকেন্ড আমার না আসুক।”

” ভালোবাসিস?”
” বলতে পারব না।”
” প্লিজ…”
” আপনার ব্যাগ গুছাতে হবে না? আপনি কিন্তু ওখানে গিয়ে প্রতিদিন আমাকে কল করবেন। একদিন হেরফের হলে কিন্তু আমি কথা বলব না বলে দিলাম। শুনুন মানুষ তার অবসরে প্রিয় মানুষের সাথে কথা বলে না, ব্যস্ততার মাঝে সময় বের করে কথা বলতে হয়। এখন চলুন, মন খারাপ করে থেকে তো কোন লাভ হবে না, শুধু শুধু সময় খারাপ যাবে। তার চেয়ে যতক্ষণ আছেন, একটু ভালো সময় কাটানো যাবে।”

” এভাবেই সবসময় আমাকে বোঝার চেষ্টা করবি, বদলে যাস না কখনো।”
” হুম।”
রুমে এসে দুজন মিলে ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে। নিহান কাজের মাঝে বারবার সময় দেখছে। শুভ্রতা নিহানের এমন আচরণ দেখে জিজ্ঞেস করে, ” বারবার ঘড়ি দেখছেন কেন?”
” অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে ঘুমোতে হবে তাইইই।”

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪১

নিহান কথা শেষ করতেই টেবিলে রাখা ফোনটা বেজে ওঠে। নিহান তাড়াতাড়ি করে ফোনটা কেটে দেয়।
” আচ্ছা তুমি থাকো, আমি একটু বাহিরে থেকে আসছি।” বলেই নিহান রুম থেকে বেরিয়ে যায়। শুভ্রতা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত এগারোটা। প্রয়োজনীয় কল আসলে ব্যালকনিতে যাবে, কল কেটে বাহিরে কেন গেল সে!

শুভ্ররাঙা ভালোবাসা পর্ব ৪৩