সংকটময় প্রেম পর্ব ৯

সংকটময় প্রেম পর্ব ৯
সুরাইয়া সাত্তার ঊর্মি

বিয়ের সাজে সজ্জিত চৌধুরী বাড়ির বৃষ্টি বিলাস বাড়িটা। সুন্দর করে বউয়ের সাজে সজ্জিত হয়ে বসে আছি আমি আবারো নিজ ঘরে আয়নার সামনে। ভ্রু-কুচকে ভাবছি! কিভাবে আবার ছুমন্তর হওয়া যায়। কিন্তু আশেপাশের মানুষদের ফিসফিস করে কথা বলা গুলো কান পর্যন্ত না পৌঁছালেও আমি বুঝতে পারলাম কিছু একটা হয়েছে। আমি সেদিকে পাত্তা দিলাম না। নিজে কিভাবে পালাবো তার ফন্দি আঁটতে লাগলাম।

এবং কিছুক্ষণের মাঝেই পুরো ঘর ফাকা হয়ে যেতেই আমি সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ফেললাম। এবং আমার হবু বরের লেহেঙ্গা পরেই ছুটে বেড়িয়ে যেতে লাগলাম পিছনের দরজা দিয়ে। ঠিক তখনি চোখ পড়লো, বাড়ির সব মানুষ জড় হয়ে আছে বাগানের পাশটায়। থমথমে তাদের মুখ।গুমোট পরিবেশ, চিন্তার লেশ সবার মাথায়, যেন বড় কিছু ঘটে গেছে। আমার মা আবারো মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নানাজান চিন্তিত মুখে কি যেন বলছেন পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ইউসুফ ভাইকে। আজ তাকে মাত্রাত্মিক সুন্দর লাগছে। সাদা পাঞ্জাবির বদলে আজ তার সুঠামো শক্ত পোক্ত দেহে ফর্মাল সুট।কোটে খুব সুন্দর করে জরিদার কাজ করা। রোয়াল ব্লু আর সাদা কম্বিনেশনের পোশাকে লোকটিকে আরো আকর্ষিত লাগছে। ওই বেটা রসু, ফসুর জায়গায় এই জ্বিনী পুত্রটা হলে এক পায়ে রাজি থাকতাম। আমার মতে ইউসুফ ভাইয়ের মতো সুপুরষ কমই আছে পৃথিবীতে।

তবে এই ভয়ানক লোকের মেজাজটাও ভয়ানক রকমের, হুটহাট খারাপ হয়ে যায়, এক ধমকেই শেষ। আর সব থেকে বড় কথা.. সে আমার হবার৷ নয়। পরক্ষণেই নিজেকে শাসিয়ে নিলাম, এসব চিন্তা আমার মাথায় কিভাবে? হাউ?হুট করেই মনটা আবারো খারাপ হয়ে গেলো আমার।সেই মন খারাপের রেশ নিয়ে দরজায় এসে ভীষণ রকমের অবাক হলাম। একটি গার্ড নেই! গেলো কই সব? হলো টা কি? পরক্ষণেই চিন্তা বাদ দিয়ে বৃষ্টি বিলাস বাড়িটা ছেড়ে রাস্তায় নেমে পড়লাম। সন্ধ্যা তখন ৭ টা। শুক্রবার হওয়াতে চারপাশটা সুনশান-নিস্তব্ধ। পাশেই কবরস্থান থেকে ভেসে আসছে শেয়ালের হাঁক। আমি এই এলাকার তেমন কিছুই চিনি না। তাই একটি রিকসাওয়ালাকে ডেকে নিলাম,

” মামা রেলস্টেশনে যাবো।”
রিকমাওয়ালা মামা আমার দিকে অদ্ভুত নজরে তাকালেন, উপর থেকে নিচ পর্যন্ত দেখে নিয়ে মুখ কুঁচকে ফেললেন। যেন বড্ড বিরক্ত হলেন আমার প্রশ্নে, আমি কিছুটা থতমত খেয়ে গেলাম তার কান্ডে। কিছুক্ষণ এভাবে থেকেই মাথা চুলকিয়ে বললেন বিরক্তি সুরে,
” নাহ্ জামু না।”

আমার গা রি রি করে উঠলো রাগে। না গেলে আগেই বলতে পারতেন? এতে ভনিতা কেন? আমি রেগে মেগে কিছু বলবো তার আগেই কয়েকটি গাড়ির এক সাথে হেডলাইট আমার উপর ফেললো। আমি আলোর ঝলকানিতে কিছু দেখতে পারলাম না। রিকসাওয়ালা মামাতো তাৎক্ষণিক প্রস্থান করে ফেললেন। যেতে যেতে আতঙ্কিত কন্ঠে বললেন,
” আম্মাজান আপনি বিপদ নিয়া আসছেন। ঘোর বিপদ, আমার মতো খেটেখুটে খাওয়া মানুষ এই তোপ সহ্য করতে পারবো না। আপনি জলদি পালান।”

আমি উনার কথা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না। কিসের তোপ, কিসের বিপদ? একেতো তীব্র আলোয় চোখে কিছু দেখছিনা। তার উপর মামার কথায় আমার মস্তিষ্ক স্বয়ংক্রিয় হয়। তখনি গাড়ির লাইট অফ হয়ে যায়। এবং বের হয়ে আসে প্রায় বিশেক মানুষ। আমি সেদিনের ভার্সিটির কথা স্বরণ করতেই পিছনে ফিরেই দৌড় লাগাতে শুরু করি। মাথায় আমার বিন্দু বিন্দু ঘাম। তাহলে সেদিন তারা আয়জাকে নয়, আমাকেই ধরতে এসেছিলো? কিন্তু কেনো? আমি কার কি ক্ষতি করেছি, আমার বাবার ও তো কোনো শত্রু নেই, তাহলে?

আমি ভাবতে ভাবতেই পিছনে তাকালাম। রাতের নিয়ন আলোয় মনে হচ্ছে এক ঝাঁক কাক তার শিকার ধরতে এগিয়ে আসছে। আমি স্তম্ভিত হলাম। আমার মতো ছোট প্রানীকে ধরতে এত লোক আসার মানে টাই বা কি? কি চায় এরা? আমি এসব ভাবতে ভাবতেই দৌঁড়াচ্ছিলাম হঠাৎ কোনো কিছুর সাথে হোঁচট খেয়ে ধুম করে মুখ থুবড়ে পড়লাম। হাত পায়ে ব্যথা পেয়েছি খুব। আমি নিজেকে সামলে উঠতেই সামনে এসে দাঁড়ালো দু’টো পা জোড়া।

আমি উপরে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেলাম। একটা ছায়ামানব। যে এক দানবের মতো পিছনের সম্পূর্ণ আলোটুকু তার পিছনেই যেন লুকিয়ে ফেলেছে। আলো আঁধারের ফেকাসে রঙের লোকটির লাল চোখ আর গালের কাটা ক্ষতের দাগ দেখেই আমার পুরো দেহে ভয়ে কেঁপে উঠলো থরথর করে। আমার মাথা ঘুরতে লাগলো। পুরোনো অতীত আরো একবার ধরা দিলো চোখের সামনে। ধীরে ধীরে চোখ জোড়া ঘোলাটে হয়ে গেলো আমার। কোনো রকম বললাম,

“আ… শি..ক?”
শুধু কোনো রকম নামটি ঠোঁট পর্যন্ত পৌঁছালো আমার এর পর আর কিছু মনে নেই। নিস্তেজ হয়ে গেলাম আমি আর আমার চারপাশ। যখন জ্ঞান ফিরলো নিজের হাত পা৷ বাঁধা অবস্থায় দেখে হকচকিয়ে উঠি। পরক্ষণেই সব ঘটনা মনে পড়তেই আমার মাথায় আবারো সেই অতীত ঘুরতে লাগলো। মনে পড়ে গেলো সেই বিষাক্ত ঘটনা। সেদিন ছিলো আমাদের কলেজের বিদায় অনুষ্ঠান।

ঢাকা শহরের নামি-দামি কলেজে পড়তেন সব নামি-দামি, রাজনৈতিক লোকেদের ছেলে-মেয়েরা। আশিক তাদেরই একজন।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর ছেলে। সবাই তাকে জমের মতো ভয় পেতো। নিরীহ, মধ্য বিত্ত মেয়েরা উক্তুক্ত আর যৌন হয়রানির শিকার হয়েছে তাদের গ্যাং এর হাতে। বিদায় অনুষ্ঠানের দিন চলছিলো বাহিরে সোরগোল অথচ সেই সোরগোলের ফায়দা উঠিয়ে আশিকদের গ্যাং মেতে ছিলো আমার এক সহপাঠীতে।

আমি আর আমার বান্ধবী নন্দিতা ওয়াশরুমে যাচ্ছিলাম। তখনি কারো চাপা গোঙ্গানির শব্দ শুনতে পেলাম ওয়াশরুমের পাশের স্টোররুম টায়। সব সময় তালা দিয়া স্টোর রুমটি আজ খোলা। দরজা ঝুলন্ত ভাঙ্গা তালাটা দেখেই সন্দেহ হলো আমাদের। আমি উঁকি দিতে ভাঙ্গা কাঁচের জানালা ভেদ করে আসা সূর্যের মিহি আলোতেই একটি মেয়েকে ধ*র্ষণ করতে দেখে আমরা দু’জনই ঘাবড়ে গেলাম।

উপস্থিত কোনো বুদ্ধি আসছিলো না মাথায়। মেয়েটি কাতরাছিলো। চারপাশেই চার হাত পা ধরে আছে দু’জন। মধ্য বিন্দু হয়ে বসে নিজের কার্য সম্পন্ন করতে করতে বিশ্রি বেখাপ্পা গালি ছুড়ে দিচ্ছে আশিক। অন্য দিকে মেয়েটির নাজেহাল, রক্তাক্ত অবস্থা। মেয়েটার মুখ বাঁধা, যার ফলে তার গগনবিদারী চিৎকার গোঙানি রূপ নিচ্ছে। নন্দিতা চকিতে নিজের ফোনটা তুল ক্লিক করে ফেললো কতগুলো ছবি। ফোনের ফ্লাশ ওন থাকায়, তাদের ধ্যান চলে আসে আমাদের দিকে। আশিকের নজর আমার দিকে পড়তেই পাগলা কুকুরের মতো খেঁকিয়ে উঠলো। ব্রিশ্রী গালি বলল,

” মেয়েটাকে ধর সৌরভ। ”
বলতেই তেরে আসলো তারা। তার আগেই নন্দিতাকে আমি পালিয়ে যেতে বলি। নন্দিতা জায়গায় ত্যাগ৷ করে ফেললো। তার পিছনে ছুটতে লাগলো সে দু’জন আমি সঙ্গে সঙ্গে বাঁধা দিই।জানালার কাচের অংশ নিয়ে। তাতে আবারো খেঁকিয়ে উঠে আশিক,
” শা’লি তোর বুঝি মরার শখ হয়েছে?”
” আর তোর জেলে যাবার।”

তাচ্ছিল্য হাসলো আশিক। মাটিতে অস্তব্যস্ত অর্ধনগ্ন মেয়েটিকে বেহুঁশ পড়ে থাকতে দেখে বুক কেঁপে উঠলো আমার। মেয়েটি মধ্যে বিত্ত ঘরের, একমাত্র সন্তান বাবা মায়ের। অনেক স্বপ্ন নিয়ে নিজের মেয়েকে এত দামি কলেজে ভর্তি করায় তারা। স্বপ্ন ছিলো মেয়েটি ডাক্তার হবে। কিন্তু আজকের এই অবস্থার পর মেয়েটির মনোবল একদম ভেঙ্গেযাবে, আদো সেই স্বপ্ন সত্যি হবে? কিছু মানুষের স্বপ্ন এমনি দেহখাদকের জন্য নষ্ট হয়ে যায়। কেউ কেউ হয়তো বেঁচে গেলেও ধর্ষিতা ট্যাগ লাগে, আবার কেউ সইতে না পেরে আত্মহ্যাতা করে ফেলে। ভাবতেই বুকটা হু হু করে উঠলো। কাঁচের টুকরো তাদের দিকে তাক করে বললাম,

” তোকে৷ মেডাম আগেও সাবধান করেছিলো। ছিঃ তুই এত নিকৃষ্ট? ”
আশিক কোমরে হাত রেখে হো হো করে হাসলো,
” কচি খুকি, তোর চিন্তার বাহিরে আমি নিকৃষ্ট। আজ না হয় এই তোকেও এক ঝলক দেখাই? সৌরভ, ওয়াসির, এর হাত দু’টি ধরে ফেলতো।”

আমি ঘাবড়ে আবারো তাক করতেই কাঁচের টুকরো, ঠাটিয়ে চর বসালো আশিক। আমি ছিটকে পড়ে গেলাম ছুটে গেলো কাঁচের টুকরো কিছু দূরে। আমার ঠোঁটের কোন বেয়ে রক্ত ঝড়তে লাগলো। মাথাটাও ঝিমঝিম করছে। তখনি দু’জন এসে এক ঝটকায় টেনে তুললো আমায়। আশিক আমার মুখ চেপে ধরলো, হেসে বলল,
” প্রবল ইচ্ছে আমার তোর মতো ঝাসিকি রানীকে ঘরের ঘরনি করবো। যাকে ভাঙ্গতে আমার বহুত মজা লাগবে।”
আমি সঙ্গে সঙ্গে রক্ত মাখা একদলা থুতু ফেললাম ওর মুখে,

” কুকুর চাইলেই শিয়াল হতে পারে না। তুই রাস্তার কুকুর সেই কুকুর থাকবি।”
আশিক৷ ভয়ংকর রকমের রেগে গেলো। এবং আমার জামার গলায় হাত দিতেই স্ব শব্দ করে খুলে গেলো স্টোর রুমটি দরজা। বাহিরে৷ তখন স্বয়ং কলেজের প্রিন্সিপাল আর পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। আশিক৷ভয় পেয়ে গেছে। ওর বন্ধুরা পালিয়ে যেতে নিতেই ওদের ধরে ফেলে পুলিশ। এবং তার কাছে তেড়ে আসতেই আমার মাথা বন্দুক ধরলো। উপস্থিত সকলেই হকচকিয়ে গেলো। কলেজ পড়ুয়া ছেলের কাছে বন্দুক দেখে প্রিন্সিপাল নিজেও শকড।

আমি তাৎক্ষণিক নিজের সামনে পড়ে থাকা কাঁচের টুকরো ঢুকিয়ে দিয়েছিলাম আশিকের গালে। গলা কাঁটা মুরগীর ধাপড়ানো শুরু করতেই পুলিশ তাকেও ধরে ফেলে। এমন ঘটনার পর আশিকের সব কান্ড উঠে আসে পেপারে, মিডিয়ায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী নিজে ছেলের কর্মে লজ্জিত হলেন এবং উপর থেকে চাপ আসতেই ত্যাগ করেন পদ। আশিকেদের গ্যাংকে জেলে পাঠানো হয় ১৮ বছর না হওয়াতে তারা ফাসির সাজা থেকে বেঁচে যায়। এসব কিছুর মাঝে ধর্ষিতা মেয়েটি মারা যায়। পাগল পাগল হয়ে বাপ-মা অভিশাপ করে,

” আইন ছেড়ে দিলেও আল্লাহ তোকে ছাড়বে না। পঁচে গলে মরবি তুই।”
ধাম করে কিছু একটা পড়ে যাবার শব্দ হতেই ধ্যান ভাঙ্গে আমার। আমি সামনে তাকাতেই চক্ষু আমার চরাক গাছ। রসু বসে আছে, ঠিক আমার মতোই ওর হাল বেচারা নাক মুখ ফেঁটে রক্ত বের হচ্ছে। আমি কিছু বলবো তার আগেই চেঁচালো,
” তুমি?? সব তোমার দোষ মেয়ে,জানতাম তোমার বিয়ে ভাঙ্গার বাতিক আছে, এইটা জানা ছিলো না, যে তুমি তোর বর তুলে এনে পেটানো খাওয়াও? একবার পালাতে দাও মেয়ে একবার শুধু, তোমার চোদ্দগুষ্টির তুষ্টি করবো, জেলের ভাত খাওয়াবো।”

বলেই হাপালো। আমি অতিষ্ঠ হয়ে বললাম,
“আর ইউ মেড? আপনার কি মনে হচ্ছে আপনাকে পেটাতে আমি নিজেও হাত পা বেঁধে বসে আছি? আজব পাবলিক। ”
রসু কেবলাহাসি দিলো।৷ বলল,
” ওহো? তাইতো?সরি, সরি। তাহলে কি এটি কোনো প্রেম ঘটিত রোগ?”
আমি৷ বিরক্তি নিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম,
” আপনি একটু চুপ থাকবেন? নয়তো এবার আমি আপনার মুখ ভেঙ্গে ফেলবো।”
রসু৷ চুপ হয়ে গেলো। আমি৷ জিজ্ঞেস করলাম,

” আপনি৷ এখানে এলেন কি করে?”
রসু কান্না করার মতো করে বললো,
” আমি আলাদা গাড়ি করে আসছিলাম। দেখলাম ড্রাইভার অন্য৷ দিকে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে। আমি কিছু বলতেই আমার দিকে বন্দুক তাক করে নিয়ে এলো। আর তার পর কি পেঁদানো টাই না দিলো।”

আমি আহ্ করে শ্বাস ছাড়লাম। এই৷ ভিতু লোকটা আর একটু হলেই না আমার বফ হতো। আল্লাহ বাঁচাইছেন। তখনি বাহির থেকে ধুম ধাম শব্দ হতে শুরু করলো। যেন কত গুলো পা এক সাথে ধাপাধাপি করছে। আমি৷ অধির আগ্রহে দরজায় তাকিয়ে রইলাম, হয়তো কোনো সুপার হিরো এসে আমাকে বাঁচাতে?? আমার চোখ জোড়া চকচক করে উঠলো।৷ কিন্তু দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকলেন ইউসুফ ভাই। তাকে মাত্রাত্বিক সুন্দর লাগছে। ঠিক জেন ভয়ংকর রকমের তালিম ভিলেনদের মতো। হাতে তার ছোট বন্দুকটা তার পার্সোনালিটি আরো ফুটিয়ে তুলছে। ামার খন্ড খন্ড মনে একবার মন চাইলো। আমি ফিল্মি কাহিনির মতো ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বলি,

” ইউসুফ ভাই আপনি এসেন? কতটা অপেক্ষা করেছি জানে? মরি মরি করছিলো আমার অন্তর।”
কিন্তু আমার ভাবনায় জল ঢেলে দিয়ে, ঠাট্টিয়ে চর বসালেন, গম্ভীর শীতল কন্ঠে বললেন,
” পালাবার শখ মিটেছে?”
আমি মাথা নত করে ফুপিয়ে উঠলাম। যতবার লোকটির কাছে যেতে চাই? তাতে হারাতে চাই, সে আমার সব ভ্রম মিটিয়ে দেয়।
ইউসুফ ভাই আমার হাত-পায়ের বাঁধন খুলে দিলেন, হিসহিসিয়ে বললেন,

” এবার তোর পার্মানেন্ট ব্যবস্থা করছি।”
আমি মুখ ফিরিয়ে নিলাম। তাতে উনি পাত্তা দিলেন না। উল্টো ঘুরে রসুর দিকে তাচ্ছিল্য ছুরে বললেন,
” কি জামাই সাহেব? নিজের রক্ষাই করতে পারেন না, আবার বিয়ে করতে যাচ্ছেন? মাথায় এই চুল থাকবে তো?”
লজ্জায় রসু মাথা নত করে ফেললো। আমরা চলে এলাম বাসায় পিছনের রাস্তা দিয়েই। মেহমান তখন ভোজনে মেতে। এদিকে রসু বাসায় ফিরিয়েই নিজের মায়ের পা ধরে বসে পড়লো,

” আম্মা আমি এই বিয়ে করবো না, মরে গেলো না। আমাকে কেঁটে লাশ ফালিয়ে দিলেও না। ”
রসুর মা বিব্রত হয়ে গেলো। আমি মুখ৷ গুমরে করে বসে থেকেও ভিতরে ভিতরে অনেক খুশি। কিন্তু রসুর মা রাজি হচ্ছিলো না। এক পর্যায় নিজেকে মেরে ফেলবে শোনে মহিলা হেলেদুলে উঠলেন। হাত৷ জোড় করে মাফ চেয়ে বরযাত্রী নিয়ে বিদায় হলেন। আমি মহা খুশি মুখ টিপে হাসছি। এতদিনে এই একটি ভালো কাজ হলে যেনো।কিন্তু আমার তেরে এলেন,

” এবার খুশি? নিজে নানাভাইয়ের নাক কাটলি তুই?”
আমি মাথা নত করে ফেললাম। আমিতো চাইনি৷ তা করতে তারাই তো বাধ্য করলো। বাবা হাত জোড় করে নানাজানের সামনে বসে পড়লেন। নানাজানের থমথমে মুখ।
” বাবা আমাকে ক্ষমা করবেন। আমার মতো আমার মেয়েও আপনার সম্মানে দাগ লাগিয়ে দিলো।”
তিনি এই প্রথম বাবার হাতে হাত রেখে নরম৷ সুরে বললেন,

” আমার সম্মান এত ঠুনকো নয়। তোমার৷ মেয়ের বিয়ে হবে, এই আসরেই হবে। এবং কি ইউসুফের সাথে হবে।”
সবার মাঝে এবার গুটুর গুটুর শুরু হলো। ইউসুফ ভাই অবাক হয়ে বললেন,
” দাদাজান এইটা কি বলছেন৷ আপনি।”
” যা বলছি ঠিক বলছি। বসে পড়ো৷ বিয়ের পিড়িতে, এইটাই আমার শেষ কথা।”

সংকটময় প্রেম পর্ব ৮

ইউসুফ ভাইয়ের ফর্সা মুখে মেদুর ছায়া। আমি নিজেও বিস্মিত। এই লোকের বউ মানে লাইফ ত্যানাত্যানা। আমি মায়ের দিকে অসহায় মুখ করে চাইলাম। মা মুখ ফিরিয়ে নিলেন। কাজি ডাকা হলো। কালেমা পড়া হলো। কাজি ‘কবুল’ বলতে বললে যেন ইউসুফ মুখে কুলপ লাগিয়ে নিল। কাজি আবার বললেন,
” বাবা আপনি রাজি? বলেন কবুল?”

সংকটময় প্রেম পর্ব ১০