সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ৬

সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ৬
ফারজানা আফরোজ 

স্পন্দন ক্লাস রুমের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে চারদিকে চোখ বুলাচ্ছে বারংবার। শুভ্রতা স্পন্দনকে দেখতে পেয়ে নেহা এবং মিষ্টিকে ক্লাসে যেতে বলে সে ধীর পায়ে এগিয়ে আসলো স্পন্দনের সামনে। কম্পিত ঠোঁট জোড়া চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলল,

– সরি।
স্পন্দন অবাক চোখে তাকালো। ভ্রু জোড়া কুঁচকে জিজ্ঞাসা করল,
– কিছু বললেন?
শুভ্রতা নার্ভাস হয়ে ঢোক গিললো। চোখজোড়া বন্ধ করে উচ্চ কণ্ঠে বলল,
– সরি।
– হঠাৎ সরি? কীসের জন্য জানতে পারি?

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

শুভ্রতা নিজের করা অ’ন্যায়ের জন্য অনুতপ্ত হলো। পদ্ম ফুলের মত চোখের পাপড়ি দ্রুত ওঠানামা করতে লাগল। কোমল চোখের চাউনি স্পন্দনের দিকে তাকাতেই নির্মল করে উঠল স্পন্দনের মন। সহসা স্পন্দন দুর্বল হয়ে পড়ল শুভ্রতা নামের মেয়েটির উপর। স্পন্দন বিড়বিড় করে বলল,

– বেলা শেষের গোধূলি আলোয় রাঙা সেদিনের চৈত্র মাস, বুঝেছিলাম তোমার চোখেতেই আমার মনের সর্ব’নাশ।
স্পন্দনের অস্পষ্ট স্বর শুভ্রতা বুঝতে না পেরে প্রশ্ন করল,
– কিছু বললেন?
– সরি কেন বললেন?
শুভ্রতা ছোট্ট করে দম নিয়ে বলল,

– আমি সত্যিই জানতাম না ওই মেয়েটা আপনার বোন, জানলে হয়তো এধরনের ভুল জীবনেও করতাম না। আপনাকে থাপ্পড় মা’রার জন্য আমি এক্সটাইমলি সরি।
কথাগুলো বলে শুভ্রতা তড়িৎ গতিতে স্থান ত্যাগ করল। স্পন্দন কথা বলতে গিয়েও থেমে গেল। সেতো প্রতি’শোধ নিতে এসেছে তাহলে কেন বারবার দুর্বল হয়ে পড়ছে? স্পন্দন নিজের মনকে বারবার একই প্রশ্ন করল কিন্তু বরাবরই সে ব্যর্থ হলো। দুর্বল মনকে সাহসী করার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য প্রয়োজন মনোবল। স্পন্দন সেটাই সঞ্চয় করে লাগল।

সূর্যের তাপে চারদিক খাঁ খাঁ করছে। অনিক হাতে গিটার নিয়ে “খুঞ্জ ব্যান্ড ” এর সামনে দাঁড়িয়ে ফোন দিল আরিফ নামের এক বড় ভাইকে,
– ভাই, আসসালামু আলাইকুম। আমি অফিসের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি। আসবো?
ফোনের ওপাশ থেকে জবাব আসলো,
– জি আসুন।

অনিক ভীতরে প্রবেশ করতেই স্পন্দনকে দেখে চমকে উঠল । সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করল,
– স্যার আপনি এইখানে?
স্পন্দন নরম গলায় বলল,
– আরিফ আমার ফ্রেন্ড দেখা করতে এসেছি। তুমি কেন এসেছো?
আরিফ উত্তর দিল,

– ওনি আমাদের ব্যান্ডে কাজ করতে চান। আজকে ওনার ছোট্ট একটা এক্সাম নেওয়া হবে মিউজিক বিষয়ে।
অনিক ভ’য়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালো। গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। স্পন্দন অনিকের নার্ভাস ফিল বুঝতে পেরে ইশারায় পানি পান করতে বুঝালো। অনিক দ্রুত গতিতে পানিল গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পুরোটা পানি এক নিমিষে শেষ করে আরিফের দিকে তাকালো। আরিফ কিছু বলার আগেই স্পন্দন বলে উঠল,

– বন্ধু, অনিক আমার পছন্দের ছাত্রদের মধ্য একজন বলতে গেলে স্পেশাল সে। আমি চাচ্ছি তুই অনিককে তোদের ব্যান্ডে অ্যাড করে নে। আমার কথাটা আশা করি রাখবি।
আরিফ হেসে বলল,

– যেহেতু তুই সুপারিশ করেছিস সেখানে না শব্দটি উচ্চারণ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। তোর স্পেশাল ছাত্রকে আমার দলে আমি নিয়োজিত করলাম। এখন অনিক আপনি কিন্তু আপনার টিচারের মান রাখবেন আমাদের দলের জন্য ভালো কিছু আপনার কাছ থেকে আশা করছি পাবো।
অনিক কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকালো স্পন্দনের দিকে। স্পন্দন মুচকি হেসে বলল,

– কনগ্রাচুলেশন অনিক। আমি জানি মিউজিক দলকে তুমি এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
অনিক অফিস থেকে বেরিয়ে পড়ল। আরিফ অট্ট হাসিতে ফেটে উঠল। স্পন্দন আরিফের সাঠে তাল মিলিয়ে হাসতে লাগল। তিশান ভিতরের রুম থেকে বেরিয়ে এসে বলল,

– আরিফ তোকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। বন্ধুর জন্য অনেক বড় পরীক্ষা দিলি দোস্ত।
সিলেট আসার পর এক অনুষ্ঠানে আরিফ এবং তিশানের পরিচয় হয়। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব শুরু। শুভ্রতাকে শা’স্তি দেওয়ার জন্য অনিককে হাতে রাখাটা অতি প্রয়োজনীয় তাই অনিকের দুর্বল জায়গায় আ’ঘাত করলো স্পন্দন। আরিফের বন্ধু সেজে প্ল্যান অনুযায়ী অনিককে দলে অ্যাড করল। তিনজন একত্রে হেসে তিশান আবারও বলল,

– স্পন্দন, এবার দ্বিতীয় প্ল্যান স্টার্ট করার সময় হয়ে গেছে। আরিফ এখন যেতে হবে ভালো থাকিস।
আরিফ উত্তর দিল,
– আবার আছিস তোরা। আর স্পন্দন তোমার সাথে কথা হয়ে ভালো লাগলো। আবার আসবে ওকে।
স্পন্দন সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে সম্মতি জানিয়ে দুজন বেরিয়ে পড়লো পরের ধাপে। শুভ্রতার জন্য তৈরি হচ্ছে নতুন ফাঁ’দ। শুভ্রতা কি সে জালে আটকা পড়বে নিজ ইচ্ছায়?

কোলাহল পরিবেশে কান চেপে ধরে বসে আছে নেহা। শুভ্রতা এবং মিষ্টি মানিক মামার ঝালমুড়ি খেতে ব্যাস্ত। ঝালমুড়ি নামটা মনে আসতেই শুভ্রতা চট করে মানিক মামার কথা মনে পড়ে। মামার ঝালমুড়ি অলমোস্ট বেস্ট শুভ্রতার কাছে। নেহা মাথায় হাত দিয়ে হতাশ গলায় বলল,
– আমার ভালো লাগছে না শুভ্রু। লোক সমাবেশে বসলে এই সমস্যা। কথা , কথা এবং কথা। কথা ছাড়া আড্ডা হয় না?
মিষ্টি মুখ কুঁচকে বলল,

– তাহলে তুই এতক্ষণ কী করলি? তোর মুখ দিয়ে শব্দ বেরুলে সেটা কথা হয় না? কল্প হয়ে যায় তাইতো?
রক্তিম চোখে তাকালো নেহা। শুভ্রতা ওদের ঝগড়া থামিয়ে দিয়ে বলল,
– তিশান স্যারের প্রাইভেট আজকে?
নেহা বলল,

– হুম। ভাবছি আজ যাব না। মাথাটা ভীষন ধরেছে তোরা দুজন যাস পরে আমাকে বুঝিয়ে দিস।
শুভ্রতা এবং মিষ্টি সম্মতি জানালো। দূর আকাশের তেজস্ক্রি সূর্য ধীরে ধীরে তেজহীন হয়ে পড়ল। আলো আসলো নরম হয়ে। হঠাৎই ক্লান্ত শরীর ধীরে ধীরে সতেজ হতে শুরু করল।

– শুভ্রতা, মিষ্টি এবং অনিক আপনাদের নতুন ম্যাথ টিচার স্পন্দন। ওনার ক্লাস করে বুঝতে পেরেছেন ওনার পড়ানোর স্টাইল। আই হোপ আপনাদের সকল সমস্যার সমাধান স্পন্দনের কাছে আছে।
অনিক হাসি মুখে বলল,

– জি স্যার আমরা অবশ্যই স্পন্দন স্যারের কাছে পড়ব। স্যার মহৎ একজন মানুষ। আমার জন্য ওনি আজ যা করেছেন আমি কখনোই ভুলব না। আমরা চারজন স্যারের প্রাইভেট একদিনও মিস করব না।
অনিকের আসম্মিক জবানে অবাক হলো শুভ্রতা। রাগী চোখে তাকিয়ে নিচু অথচ গম্ভীর স্বরে বলল,

– তোকে ভূতে ধরেছে? আমি স্পন্দন স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়ব না।
– কেন?
– ভালো লাগে না তাই পড়ব না। তুই চাইলে পড়তে পারিস কিন্তু আমি পড়ব না।

অনিক কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে তাকালো। অনিকের বাচ্চামো বিহেভ দেখে আবারও অবাক হলো শুভ্রতা। অনিক তো এধরনের বিহেভ করে না তাহলে আজ হঠাৎ কী হলো অনিকের। অনিক ইনোসেন্ট মুখ নিয়ে বলল,
– আমি তো কখনোই কোনো কিছু তোদের কাছে আবদার করিনি। আজ একটা আবদার করলাম প্লিজ রাখ।
জিজ্ঞাসার দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে অনিক। শুভ্রতা ইমোশনাল হয়ে পড়ল অনিকের কথার জালে। ছোট্ট দম নিয়ে সম্মতি জানাতেই অনিকের মুখে ফোটে উঠল একরাশ খুশির জ্বলক।

স্পন্দন শুভ্রতার মুখের দিকে তাকিয়ে স্মিথ হাসি দিল। কারণ তার প্ল্যান মতোই কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। স্পন্দন এবং তিশান আরিফের অফিস থেকে বেরিয়ে সোজা অনিকের বাসার রাস্তায় যায়। অনিক স্পন্দনকে দেখে বলল তাদের বাসায় যাওয়ার জন্য কিন্তু স্পন্দন অসম্মতি জানায়।

অনিক জিজ্ঞাসা করল, কেন এসেছে তখন স্পন্দন বলে কোচিং সেন্টারের খোঁজে এসেছে। এ কথা শোনে অনিক বলে তারা চারজন স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়বে। তিশান তখন তার প্রাইভেট পড়ানোর বাসার কথা বলে । অনিক রাজি হয়ে ফ্রেন্ডের জানায় সে ম্যাথ প্রাইভেট ঠিক করেছে, তিশান স্যারের বাসায় পড়ানো হবে। খুশিতে গদগদ হয়ে শুভ্রতা ও মিষ্টি এসে স্পন্দনকে দেখে সবচে বড় সারপ্রাইজড হয়। নিয়তির খেলা বড়ই অদ্ভুত।

সেদিনের মত ক্লাস শেষ করে শুভ্রতা বাসায় যায়। নেহাকে স্পন্দন স্যারের কথা বলতেই নেহা সন্দেহজনক নজরে তাকিয়ে বলে,
– নতুন প্রেম প্রেম গন্ধ পাচ্ছি। কাহিনী কী?
শুভ্রতা নিরস সুরে বলে,

– প্রেমের গন্ধ নয় রে, আমি প্রতি’শোধের গন্ধ পাচ্ছি। স্পন্দন ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়েই এসেছে সিলেটে। গভীর জলের মাছ স্পন্দন। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে তিশান স্যার স্পন্দনের সাথে হাত মিলিয়ে আমাকে শা’য়েস্তা করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
নেহা শুভ্রতার মন ভালো করার জন্য বলল,

– চল বাহিরে যাই, ফুচকা ট্রিট আমার পক্ষ হতে।
– এত রাতে?
– পাঁচ মিনিট লাগবে চলনা।
শুভ্রতা এবং নেহা উঠে দাঁড়াতেই রান্না ঘর থেকে দৌঁড়ে ছুটে এসে গম্ভীর মুখে মিষ্টি বলল,
– আমাদের বরিশাল যেতে হবে।
নেহা অবাক কণ্ঠে বলল,

সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ৫

– আমাদের মানে?
মিষ্টি এক প্রকার নেচে উঠল,
– আমাদের মানে আমরা চারজন। আম্মু ফোন দিয়ে জরুরি তলব পাঠিয়েছে আমি যেন আমার বন্ধুদের নিয়ে খুব শীগ্রই বরিশাল চলে যাই। সারপ্রাইজ রয়েছে নাকি আমাদের জন্য।

সেদিন তুমি প্রেম নিয়ে এসেছিলে পর্ব ৭