অনেক সাধনার পরে পর্ব ১৭
অরনিশা সাথী
রাগে নিজের হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নিলো নুহাশ। মূহুর্তেই চোয়াল শক্ত হয়ে গলার রগ ফুঁলে উঠছে। চোখ দিয়ে যেন রক্ত ঝড়বে এমন অবস্থা। নুহাশের কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে কিয়ান বললো,
–“হ্যালো নুহাশ? শুনতে পাচ্ছিস?”
–“পরে ফোন করছি তোকে।”
কথাটা বলেই খট করে লাইন কেটে দেয় নুহাশ। কিয়ান বুঝে উঠতে পারলো না নুহাশের ঠিক কি হলো। কিয়ান ওকে ম্যাসেজ করার কথা জানালে নুহাশ অবাক হয় প্রথমে। তারপর কিয়ান যখন ম্যাসেজের স্ক্রিনশট দেয় তখনই নুহাশের কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে যায়। নুহাশের ফোন বেজে উঠতেই নুহাশ ফোন রিসিভ করে কিয়ানকে উপরোক্ত কথাটা বলে লাইন কেটে দেয়। রুজবার ব্যাপারে সবকিছু বলে উঠতে পারে না কিয়ান।
লিয়ার ঘরের সামনে এসে জোরে দরজা ধাক্কালো দুই তিনবার। লিয়া দরজা খুলে দিতেই নুহাশ ঘরে ঢুকে সজোরে লিয়ার গালে চ/ড় বসায়। মূহুর্তেই লিয়ার চোখ পানিতে ভরে উঠে৷ রাগান্বিত কন্ঠে বললো,
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
–“তুমি আমাকে চ/ড় মারলে নুহাশ?”
নুহাশ দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
–“এই চ/ড়/টা তোমাকে আরো আগেই মারা উচিত ছিলো আমার। তাহলে আজ এত দূর অব্দি আসতে পারতে না তুমি। আমার ফোন থেকে কিয়ানকে উল্টাপাল্টা ম্যাসেজ দিয়ে সেটা ডিলিট করার’ও সাহস করতে না।”
শুকনো ঢোক গিললো লিয়া। তার মানে নুহাশ সব জেনে গেছে? এবার কি তাহলে নুহাশ রুজবার কাছে ফিরে যাবে? লিয়া নুহাশকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অস্থির গলায় বললো,
–“আমি তোমাকে যেতে দিবো না নুহাশ। কোত্থাও যেতে দিবো না। তুমি এখানে থাকবে, আমার হয়ে থাকবে।”
নুহাশ লিয়াকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবারো একটা চ/ড় মেরে বললো,
–“আবারো তোমার গায়ে হাত তুলতে বাধ্য করো না আমায়। আমার থেকে দূরে থাকবে। আমাকে নিজের করার আশা ছেড়ে দাও।”
কথাটা বলেই গটগট করে লিয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে চলে যায় নুহাশ।
নুহাশ আবারো স্ক্রিনশট গুলোতে ভালো করে চোখ বুলায়। রুজবা ভেঙে পড়েছে ভীষণ ভাবে, ম্যাসেজটা চোখে পড়তেই অস্থির হয় ও। ঝোঁকের বসে উল্টাপাল্টা কিছু করে বসবে না তো আবার? নুহাশ সাথে সাথেই ফোন করে কিয়ানকে। কিয়ান ফোন তুলতেই অস্থির কন্ঠে বললো,
–“রুজবা ঠিক আছে? উল্টাপাল্টা কিছু করে বসেনি___”
–“সুইসাইড করতে গেছিলো, আন্টি ওকে নজরে নজরে রাখায় গুরুতর কিছু হয়নি।”
নুহাশ ক্ষানিকটা চেঁচিয়ে বললো,
–“হোয়াট? সুইসাইড?”
–“কিচেন থেকে ছুড়ি নিয়ে রুমে যাওয়ার সময় আন্টি দেখে ফেলেছে। ওর পিছু নিয়ে ঘরে যেতেই দেখে হাতে ছুড়ি চেঁপে ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে। আন্টি চিৎকার করতেই ভয় পেয়ে ছুঁড়ি সরানোর সময় কবজিতে হালকা লেগে যায়।”
নুহাশ ঠিক কি বলবে ভেবে পেলো না। জারাফের উপর ভীষণ রাগ হচ্ছে ওর। তার থেকেও বেশি রাগ হচ্ছে রুজবার উপর। অপাত্রে দান করলে এমন তো হবেই। নুহাশ দাঁতে দাঁত চিপে বললো,
–“এইটুকুন একটা মেয়ে তার সাহস দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি আমি। ঠাঁটিয়ে দুটো চ/ড় লাগাতে পারেনি বে/য়া/দ/ব/ টাকে। তাহলে সুইসাইড এর ভূত মাথা থেকে নেমে যেতো। কুকুর দেখলে যে ভয় পায় সে আবার হাতের কবজি কেটে সুইসাইড করতে যায়, বাহ! আমি সামনে থাকলে এতক্ষণে চড়িয়ে লাল করে দিতাম গাল।”
নুহাশের কথা শুনে কিয়ানের চোয়াল ঝুলে পড়লো। এই মূহুর্তে যে নুহাশ অস্থির না হয় রেগে রেগে এসব বলছে কিয়ান সেটা ভাবতেই পারছে না। কিয়ান বললো,
–“তুই এমন কাটখোট্টা আনরোমান্টিক দেখেই না রুজবা কোনোদিন সেরকম ভাবে তোকে নিয়ে ভাবেনি, এটা আজ বুঝতে পারলাম আমি। রুজবা সুইসাইড করতে গেছিলো এটা শুনে তুই অস্থির হবি তা না করে উল্টো রাগারাগি করছিস?”
–“রোমান্টিক না আনরোমান্টিক সেটা বিয়ের পর বউকে বোঝাবো, তোর বুঝতে হবে না। আর রুজবা যা করতে যাচ্ছিলো এর জন্য ওকে মারাই ভালো, আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না দুদিনের একটা ছেলের জন্য নিজের পরিবারের কথা না ভেবে মরতে যায় কোন গাধায়?”
–“তুই তো সেই একটা মেয়ের জন্যই নিজের দেশ/পরিবার ছেড়ে ইউএসএ তে পড়ে আছিস।”
আচমকা কিয়ানের এই কথায় নুহাশ থতমত খেয়ে যায়। কি বলবে ভেবে পায় না। কিয়ান আবারো বললো,
–“ফিরবি কবে?”
–“ফিরবো না।”
কথাটা বলেই খট করে লাইন কেটে দেয় নুহাশ। কিয়ান বোকার মতো ক্ষানিকটা সময় ফোনের দিকে তাকিয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। নুহাশ বিছানায় গাঁ এলিয়ে দেয়। শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগে রুজবার কথা। কতটা বোকা আর আবেগি হলে একটা ঠক/প্রতারকের জন্য মরতে যায়। নুহাশ উঠে বসলো। ওর পরিচিত একজন লোককে ফোন লাগালো। মিনিট গড়াতেই ওপাশ থেকে রিসিভ হলে নুহাশ বললো,
–“আই উইল গো বাংলাদেশ, বাই টিকিটস ইমারজেন্সি।”
রান্না শেষে রুজবা সাহিলকে ফোন করে আসতে বলে। সাহিল বলে বাসার সামনে এসে ফোন দিলে রুজবা যেন বের হয়। মাথা নাড়ে রুজবা। মিনিট দশেক বাদে সাহিল রুজবাদের বাসার সামনে এসে রুজবাকে ফোন দেয়। রুজবা গিয়ে সাহিলকে বাসার ভিতরে নিয়ে আসে। সাহিল রুজবার বাবা-মাকে সালাম দিয়ে ভালো-মন্দ জিজ্ঞেস করে। উনারাও বেশ বিনয়ের সাথেই সাহিলের সাথে কথা বলে।
সাহিল আসার সময় রুজবা রুপশার জন্য ওদের ফেভারিট চকলেট নিয়ে এসেছে। সাথে কোক এবং ছানার সন্দেশ। শারমিন বেগম রাগারাগি করলো এসব নিয়ে আসার জন্য। সাহিল মৃদু হাসলো। শারমিন ওদের কথা বলতে বলে টেবিলে খাবার দিতে গেলো। রুজবা সাহিল ফারিন রাফাত রুপশা ওরা জমিয়ে আড্ডা দিতে বসলো। রায়হান সাহেব উঠে নিজের ঘরে চলে গেলো। মিনিট দুয়েক বাদে শারমিন রুজবাকে ডাকলো। রুজবা কিচেনে গিয়ে দাঁড়াতেই শারমিন বললো,
–“তোর চাচীদের গিয়ে একটু দিয়ে আয়।”
রুজবা সম্মতি জানিয়ে প্রথমে ওর মেজো চাচিকে দিয়ে আসলো। তারপর ফারিনকে ডেকে দুজনে দোতলায় গেলো ওর বাকী দুই চাচিকে দেওয়ার জন্য।
সবাই একসাথে খেতে বসেছে টেবিলে। খাওয়ার সময় কেউ কোনো কথা বললো না। রায়হান সাহেব খাবার টেবিলে বসে কোনো কথা বলা পছন্দ করে না। রায়হান সাহেব চুপচাপ খাবার শেষ করে উঠে দাঁড়ালেন। যাওয়ার আগে রুজবার দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললেন,
–“রান্না ভালো হয়েছে আম্মু।”
প্রত্যুত্তরে রুজবা মুচকি হাসলো। রায়হান সাহেব উঠে যেতেই খাবার টেবিলে হই হুল্লোড় বাড়লো। রুজবা ফারিন সাহিল রাফাত রুপশা সকলেই আনন্দের সাথে খাচ্ছে। খাবার টেবিলে এবার জমে রমরমা। খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই সোফায় বসলো আরেক চোট আড্ডা দেওয়ার জন্য। রুপশা সবাইকে কোক আর ছানার সন্দেশ এনে দিলো। রাত দশটা অব্দি কোক আর ছানার সন্দেশের সাথে আড্ডা চললো। ঘড়ির কাটায় দশটা বাজতেই সাহিল উঠে দাঁড়ালো। রুজবার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
–“তুই তো রান্না দারুন করিস দেখছি।”
এই বলে পকেট থেকে একটা চকচকে পাঁচশ টাকার নোট বের করে রুজবার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
–“এটা তোর রান্নার বখশিশ, প্রথম বার হিসেবে বিরিয়ানিটা খুব ভালো হয়েছিলো।”
রুজবা নিতে না চাইলেও সাহিলের চোখ রাঙানি দেখে নিতে বাধ্য হলো। বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই রুজবা বললো,
–“এক মিনিট দাঁড়াও।”
এই বলে রুজবা এক ছুঁটে কিচেনে চলে গেলো। মিনিট দুয়েক বাদে আবার সেভাবেই ছুঁটে চলে এলো। হাতে করে একটা পলিথিন ব্যাগের ভেতর এক বক্স বিরিয়ানি নিয়ে এসে সাহিলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো,
–“এটা আনিকা আপুর জন্য। বলেছিলাম তো দিয়ে দিবো। আর আপুকে বলবা আমার জন্য কিছু রান্না করে দিতে, সেই সুবাদে তুমিও একটু ভাগ পাবা। আনিকা আপুর হাতের রান্না একেবারে জোশ হয়।”
সাহিল মুচকি হেসে রুজবার মাথার চুল এলোমেলো করে দিলো। তারপর সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে।
জারাফ গ্রামে এসেছে আজ বিকেলে। সাথে নিদ্রা’র পুরো পরিবার। মূলত একসাথে বসে বিয়ের আলোচনা করতেই জহির সাহেবের গ্রামে আসা। জারাফ ওর মতামত জানিয়েছে ও নিদ্রাকে বিয়ে করতে রাজি। সময় সুবিধা বুঝে বিয়ের ডেট ফিক্সড করবেন সকলে। নিজের ঘরের ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে আছে জারাফ। বিষন্ন মন। গত দু মাসে একবারের জন্যও রুজবার কথা মনে পড়েনি৷ কিন্তু আজ গ্রামে আসার পর থেকেই ভিতরটা হাঁসফাঁস করছে।
প্রতিবার গ্রামে এসে রুজবাকে এক পলক দেখতে ওর বাড়ির সামনে যেতো। দূর থেকে দেখেই আবার চলে আসতো। গত আড়াই বছর ধরে যেন এই রুটিনে অভ্যস্ত হয়ে ছিলো জারাফ। রিলেশনের আগে নিজ ইচ্ছায় যেতো রুজবাকে দেখতে। আর রিলেশন হওয়ার পর, লাস্ট কয়েকমাস ইচ্ছে না হলেও যেতো রুজবার জোরাজোরির কারনে। তখন বেশ বিরক্ত হতো জারাফ। কিন্তু আজ তার থেকেও বেশি বিরক্ত হচ্ছে গ্রামে আসার পরেও রুজবার কোনো ফোন ম্যাসেজ না পেয়ে।
পরমূহুর্তেই মনে হলো ওদের সম্পর্কের ইতি ঘটেছে আরো মাস দুয়েক আগেই। নিজের চুল এখন নিজেরই টানতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে রুজবাকে এক পলক দেখলে বোধহয় ভালো লাগতো, অশান্ত বুক শান্ত হতো। কিন্তু এরকম ভাবনার মানে খুঁজে পাচ্ছে না জারাফ। যেখানে আজ নিদ্রা আর ওর বিয়ের কথা চলছে সেখানে ও আবার রুজবার কথা ভাবছে? গত দু মাসে এমন হয়নি আজ গ্রামে আসার পর এমন হচ্ছে কেন?
রুজবা ওর অনেকটা কাছাকাছি আছে বলেই এমন হচ্ছে? না রুজবার কথা ভাবলে চলবে না। সামনে ওর পুরো ক্যারিয়ার পড়ে আছে। রুজবাকে চাই না ওর নিদ্রাকেই চাই। কাঁধে হাতের স্পর্শ পেয়ে চমকে পেছন ফিরলো জারাফ৷ জুহি টলমলে চোখে জারাফের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“ভাইয়া তুমি নিদ্রা আপুকে বিয়ে করবে? তাহলে রুজবা আপুর কি হবে ভাইয়া? তোমরা না একে-অপরকে ভালোবাসো? তুমি আম্মুকে বলছো না কেন এই বিয়ে তুমি করবে না।”
–“নিদ্রাকেই বিয়ে করবো আমি।”
–“আর রুজবা আপু?”
–“ও ওর বা ওর পরিবারের পছন্দে কাউকে বিয়ে করে নিবে।”
–“এরকমটা হলে তো ভাইয়া রুজবা আপু আরো দুই বছর আগেই বিয়ে করে নিতো। তোমাকে পাওয়ার জন্য সেই ছেলের পায়ে পড়তো না ওই বিয়েটা ভাঙার জন্য।”
জারাফ নিশ্চুপ। এই কথার পরিবর্তে কি বলবে ভেবে পেলো না৷ জুহি আবার বললো,
–“তুমি একবার ক্লিয়ার করে বলে দেখো___”
–“আমি নিদ্রাকে ভালোবাসি, রুজবাকে না। আর বিয়ে নিদ্রাকেই করবো। রুজবার সাথে যা ছিলো সব শেষ আরো মাস দুয়েক আগেই।”
–“এভাবে কাঁদাচ্ছো না মেয়েটাকে? ওর চোখের পানির ভার সইতে পারবে তো ভাইয়া?”
জারাফ চুপ হয়ে গেলো। জুহি বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। জারাফ নিজেও বেরিয়ে যায়। রাস্তায় যেতেই দেখা হয় সাহিলের সাথে। জারাফ হেসে জাপ্টে ধরলো সাহিলকে। সাহিল’ও মৃদু হাসলো৷ জারাফ সাহিলের হাতের দিকে খেয়াল করে বললো,
–“ব্যাগ হাতে এই রাতে কই থেকে আসলি?”
–“আনিকার বাসার সামনে যাবো, যাবি?”
–“আচ্ছা চল।”
দুজনে হাঁটতে শুরু করলো। সাহিল বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো জারাফের দিকে। রুজবার জন্য ওর একটুও কষ্ট হচ্ছে না, কোনো অপরাধবোধ কাজ করছে না একটুও অনুতপ্ত না ও। অন্যদিকে মেয়েটা ওর জন্য কেঁদে কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাচ্ছে৷ এমন কি সুইসাইড করতে গিয়েছিলো। এটা অবশ্য জারাফের অজানা। সাহিল ইচ্ছে করেই বলেনি ওকে। বলে কি হবে? সাহিল চায় না জারাফ এটা জেনে আবার ইমোশনাল হয়ে রুজবার সাথে কথা বলে মেয়েটাকে আরো কষ্ট দিক। তাই বলেনি। জারাফ বললো,
–“কি দেখছিস?”
সাহিল দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললো,
–“কিছু না, হঠাৎ গ্রামে?”
–“বড় চাচারা এসেছে। নিদ্রার আর আমার বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে।”
সাহিল মলিন মুখে হেসে বললো,
–“আচ্ছা।”
–“বললি না তো হাতে করে কি নিয়ে যাচ্ছিস?”
–“বিরিয়ানি, রুজবা পাঠিয়েছে আনিকার জন্য। ও নিজে রান্না করেছে।”
জারাফ থকমকালো। সাহিল বললো,
–“কি হলো?”
–“তোকে পেলো কোথায়? আই মিন___”
–“বিরিয়ানির দাওয়াত ছিলো আমার, অবশ্য আমি নিজেই নিয়েছি দাওয়াত। শুনলাম ও বিরিয়ানি রান্না করবে তাই দাওয়াত নিয়ে নিলাম। লাস্ট দুই-আড়াই ঘন্টা ওদের বাসাতেই ছিলাম। এই তো সবাই জমিয়ে খাওয়া-দাওয়া করলাম আড্ডা দিলাম তারপর আসলাম। আসার সময় আবার আনিকার জন্য বিরিয়ানি ধরিয়ে দিয়েছে হাতে। সাথে এটা’ও বলে দিয়েছে আনিকা যেন রুজবার জন্য কিছু না কিছু রান্না করে পাঠায়।”
জারাফ বেশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
–“কেমন আছে ও?”
–“সেটা জেনে তুই কি করবি?”
–“তোর কথা শুনে তো মনে হচ্ছে বেশ ফূর্তিতেই আছে। দুই মাস আগে যে সম্পর্ক ভাঙলো এর জন্য কোনো হায়-আফসোস নেই।”
–“স্টেইঞ্জ, হায়-আফসোস ওর থাকবে কেন? ও তো কাউকে ছাড়েনি, ঠকায়নি, যে ওকে ছেড়েছে, ঠকিয়েছে হায়-আফসোস তো একদিন সে করবে৷ আর সম্পর্ক তো তোর’ও দুই মাস আগেই ভেঙেছে, তুই যেখানে ব্রেক-আপের দুদিন বাদেই নিদ্রাকে প্রপোজ করতে পারিস, দু মাস গড়াতে না গড়াতেই আজ বিয়ের ডেট ফিক্সড করতে পারিস সেখানে ও কেন ফূর্তিতে থাকতে পারবে না? ও তো একাই আছে।
তোর মতো দুদিন বাদেই অন্যকাউকে নিজের জীবনে জড়িয়ে ফূর্তি করছে না। ফ্রেন্ডস আর ফ্যামিলির সাথেই ফূর্তি করছে। তুই কি ভাবছিস ও কি এখন তোর ছেড়ে যাওয়ার জন্য মরে যাবে? নিজের রঙিন জীবনটাকে সাদা-কালো করে রাখবে তোর শোকে? উঁহু একদমই না। ও হাসবে খেলবে আনন্দ করবে, যা ইচ্ছে করবে৷ তুই তোর মতো থাক, রুজবা রুজবার মতো। ইভেন আমি তো ওকে বলবো খুব শীঘ্রই ভালো একটা ছেলে খুঁজে বিয়ে করে নিতে।”
অনেক সাধনার পরে পর্ব ১৬
সাহিলের এমন কড়া কড়া কথায় জারাফ একদম ফাঁটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো। জারাফের কেন জানি রুজবার একা একা আনন্দে থাকাটা সহ্য হচ্ছে না। এক মনে ভাবছে রুজবা ওর সাথে আনন্দে থাকবে অন্যমনে ভাবছে নাহ ওর জন্য নিদ্রা আছে। কিন্তু রুজবা তো জারাফকে ভীষণ ভালোবাসে, তাহলে এত তাড়াতাড়ি জারাফকে ভুলে হই হুল্লোড়ে দিন কিভাবে কাটাচ্ছে রুজবা?