ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ১২

ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ১২
নীহারিকা নুর

তরুকে রুমে ডেকে নুরনাহার তখনি সেখান থেকে চলে গিয়েছে নিজ রুমে। তুরাগ এর বাবার এখন এই বিষয়ে কোন কোন মন নেই। তিনি তাড়ায় আছেন তার অফিসে লেইট হয়ে যাচ্ছে। তিনি নিচের দিকে তাকিয়ে একমনে খেয়ে যাচ্ছেন। তবে তিনি মনে মনে ভীষণ খুশি।

আজ কতগুলো দিন পড়ে ছেলে সকাল বেলা নাস্তার টেবিল এ এসেছে। তবে তিনি তার খুশি প্রকাশে অনিচ্ছুক। এজন্যই মূলত মাথা নিচু করে খাচ্ছেন। তিনি ছেলেকে ভালোবাসেন কিন্তু প্রকাশ করেন না। সব সময় একটা শাসন এর মধ্যে বড় করেছেন। তার পরেও তার ছেলেটা বিগড়েছে। নিজের ইচ্ছে মতো সব কাজ করে। এজন্যই তায়েফ সাইয়্যিদ ও কথা বলা বন্ধ করেছেন ছেলের সাথে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এদিকে তরুর খাওয়া এক প্রকার অফ হয়ে গেছে। তুরাগ একটু একটু করে খাবার মুখে তুলছে আর চারপাশের পরিবেশটা ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তরুর খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করা চোখ এড়ায় নি তুরাগ এর। তাই বলেই ফেলল
– কি হলো মিস তরুলতা এভাবে খাবার নাড়াচাড়া করছেন কেন? খেয়ে উঠুন তাড়াতাড়ি।

মিস তরুলতা ডাক শুনে ফট করে খাবার রেখে মাথা তুলে তাকালেন তায়েফ সাইয়্যিদ। তার ছেলেটা অদ্ভুত। মানুষ বড় নামকে ছোট করে ডাকে আর তার ছেলে নাম টেনে বড় করছে। তবে কথা সেটা নয় কথা হলো এদের দুজনের মধ্যে ভাব হলো কখন। এরা তো ভালোভাবে একে অপরকে চিনত ও না। তায়েফ সাহেব একবার ছেলের মুখের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার তরুর মুখের দিকে তাকাচ্ছে।
বাপ ছেলের এভাবে তাকানো দেখে খাবার আর গলা দিয়ে মোটেও নামল না তরুর। খাবার ছেড়ে উঠে দাড়ালো। তায়েফ সাহেব জিজ্ঞেস করলো

– কি হলো মামনি উঠলে কেন তুমি? খেয়ে নাও।
– না আঙ্কেল। আমার আর খেতে মন চাচ্ছে না। আমি দেখি ফুপি কেন ডাকছে।
আর কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে তরু সেখান থেকে চলে আসে।
তায়েফ এখনো সেদিকে তাকিয়ে আছে।

– অন্য মানুষ খেলো নাকি খেলো না৷ সেদিকে নজর না দিয়ে নিজের খাওয়ায় মন দেন দেরী হয়ে যাচ্ছে।
তুরাগ এর বলা কথাগুলো কানে যেতেই তায়েফ চোখ ঘুরিয়ে ছেলের দিকে তাকালেন। তুরাগ তাকে আপনি করে বলছে। এটাও মানতে হবে। সিরিয়াসলি। আবার কিছু একটা মনে করে মুচকি হাসলেন তিনি। খাওয়া ততক্ষণে প্রায় শেষ হয়ে গেছে। তিনি উঠে চলে গেলেন সেখান থেকে। একবারে তৈরি হয়েই বেরিয়েছিলেন। তাই সরাসরি অফিস এর উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লেন।

তরু নুরনাহার এর রুমের সামনে এসে দেখতে পেল তিনি তৈরি হচ্ছেন। শাড়ী পড়তেছেন৷ শাড়ীর কুচি ধরার চেষ্টা করতেছেন কিন্তু বারবার ছুটে যাচ্ছে। তরু দেখে জিজ্ঞেস করলো ফুপি আমি কি কুচিটা ধরে দেব।
তরুর কথা শুনে সেদিকে তাকালেন নুরনাহার। তারপর মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললেন

– ওহ তরু এসে পড়েছিস। আয় মা ভেতরে আয়।
তরু ভেতরে ঢুকে নুরনাহার কে শাড়ি পড়তে সহায়তা করে। তিনি শাড়ি পড়া কম্পিলিট করে ড্রেসিং টেবিল এর সামনে বসলেন। এদিকে তরু এখনো কনফিউজড হয়ে সেখানেই দাড়িয়ে আছে। ওর ফুপি কি ওকে শাড়ী ঠিক করতেই ডেকেছিল। ও কি এখন চলে যাবে। বুঝতে না পেরে সেখানে দাড়িয়েই পায়ের নখ দিয়ে মেঝে খোটাতে থাকল। তারপর সাহস করে ফুপিকে জিজ্ঞেস করলো

– ফুপি তুমি কি বের হবে এখন।
– হ্যা।
– আমি কি চলে যাব এখন।
– না তোমার সাথে কথা আছে অপেক্ষা করো।
তরু আর কোন কথা না বলে৷ আবার চুপচাপ দাড়িয়ে রইল।
নুর নাহার তার হাতের কাজ শেষ করে একবারে খাটের কর্নারে বসলেন। তরুকে বললেন বসার জন্য। নুরনাহার বলার সাথে সাথেই তরু তার পাশে বসল।

– তরু
– জ্বি ফুপি।
– আমি তোমাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করবো।
– হুম।
– যা জিজ্ঞেস করবো সত্যি কথা বলবে আশা করি।
তরু একটু সময় নীরব থেকে জবাব দিল

– জ্বি ফুপি আমি চেষ্টা করবো সত্যিটাই বলার।
– যাক খুশি হলাম৷
তরুর তো হার্টবিট ফাস্ট হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। তখনি হার্টকে আরো দ্রুত গতিতে বিট করাতে নুরনাহার বলে উঠলেন
– তরু তুমি কি তুরাগকে পছন্দ করো?
হুট করে এটা কেমন প্রশ্ন ভেবে উঠতে পারে না তরু। তরুর মনে এখন তহমিনার বলা সেই কথাগুলো ঘুরপাক খায়। তহমিনা প্রায়দিনই বলতো – তোদের বাড়ির একটা মানুষরেও আমি ঠিক ঠাক বুঝি না। এদের মাথায় কখন যে কি ঘোরে বলা মুশকিল।

তরুকে চুপ থাকতে দেখে নুরনাহার আবার জিজ্ঞেস করলো
– কি হলো চুপ করে গেলে যে।
– না ফুপি কি বলো তুমি এগুলো। আমি তুরাগ ভাইকে পছন্দ করতে যাবো কেন?
– আমিও তো সেটাই ভাবতেছি। কিন্তু যে তুরাগকে এতদিন বলেও ডায়নিং এ আনতে পারলাম না সে কেন তোমার কথা শুনল।

এটার উত্তর তো তরু নিজেও জানে না৷ এখন ফুপির কথার কি জবাব দিবে। কিছু তো একটা বলতো হবে। এভাবে থতমত করলে ফুপি আবার কি না কি ভাববে। কাল রাতে তাদের কেলোর কীর্তি যে ফুপির নজর এড়ায়নি সেটা শিওর তরু। তাই বলল

– ফুপি তুরাগ ভাইয়ার জন্য তুমি যে কান্না কা’টি করো এটা আমার ভালো লাগছিল না তাই চেয়েছিলাম সে যেন এরকম বাহির এর খাবার না খায়। এতে তো তারও শরীর খারাপ হবে। এজন্যই একটু চেষ্টা করেছি।
– তাহলে কান্না করছিলে কেন ওভাবে?
ফুপির এক একটা প্রশ্নে তরুর আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হবার জোগাড়।

– ফুপি তুরাগ ভাই আমাকে বকেছিল সেজন্যই কান্না পেয়ে গিয়েছিল। তুমি যেসব ভাবছো মোটেও সেরকম কিছু না।
– সেটা হলেই ভালো। তুমি তো তোমার বাবাকে চেন আর সে তুরাগ এর জন্যই তেমাকে এ বাসায় আসতে দিতে চাচ্ছিল না আমি জোড় করেছি। এখন তুমি যাই করো ভেবে চিন্তে করবে। ভাইয়ের কাছে আমার মাথা হেট করো না।
– জ্বি ফুপি মনে থাকবে।

– আচ্ছা আমি একটু বের হবো। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হবে। তুরাগ ও হয়ত একটু পরে বেরিয়ে যাবে। তুমি দরজা ভালোভাবে দরজা লাগিয়ে দিয়ে বসে থাকবে। আজকে বোধহয় মেইড ও আসবে না। ফোন করেছিল তার নাকি শরীর প্রচন্ড খারাপ।
– জ্বি ফুপি তুমি চিন্তা করো না।
– আচ্ছা এখন নিজের রুমে যাও।

ফুপি বলে গিয়েছিল তুরাগ কিছুক্ষন পরে বেরিয়ে যাবে। কিন্তু এগারোটা বেজে গেছে। এখনো রুম আটকে বসে আছে। তরু ড্রইং রুমে বসে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করছিল তুরাগ এর বেরিয়ে যাওয়ার। কিন্তু দুই ঘন্টা পার হওয়ার পরেও যখন বের হলো না তখন তরু সেখান থেকে নিজের রুমে চলে গেল।

প্রায় দুটো বাজতে চলেছে। পেটের মধ্যে খিদের জন্য ইদুর দৌড়াদৌড়ি শুরু করেছে। এখন তো কিছু খাওয়া প্রয়োজন। তবে ফ্রিজে একজন এর খাবার আছে। তুরাগকে না সেধে তরু একা কীভাবে খাবে তাই না খেয়েই বসে আছে। এমন সময় দরজায় টোকা পড়ে। তরু ভেতর থেকে জানতে চায়

– কে বাহিরে।
– আমি।
– আমি কে?
– উফফ আমি তুরাগ। দরজা খোলো।
তরু উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিল।

– কি ব্যাপার তুরাগ ভাই আপনি এখানে?
– তোমার ফুপি কোথায়?
– কেন আপনি জানেন না সে বাহিরে গিয়েছে।
– কি বলো কখন গেছে।
– সকালেই গেছে।
– এখন৷ ক্ষুধা লাগছে খেতে দাও।
– ফুপি আপনার জন্য খাবার রেখে যায় নি।
– মানে…

– সে কি জানে নাকি আপনি দুপুরে খাবেন। বর আপনি কি বাসায় খান নাকি
খান তো বাহিরে। আজ যান নি কেন?
তুরাগ এর হুশ জয় এতক্ষণে। আসলেই তো। তাহলে এখন।
– মিস তরুলতা তৈরি হয়ে নিন।
– কিহ৷ আমি। আমি কেন তৈরি হবো।
– আমি বলেছি তাই।

– আমি যাবো না আপনার সাথে।
– তরুলতা আমাকে জোড় করতে বাধ্য করবে না বলে দিচ্ছি। ভালোয় ভালোয় নিজে চেন্জ করে নাও নয়ত কিন্তু আমি চেন্জ করিয়ে দিব বলে দিচ্ছি। আমার কথা কিন্তু নড়চড় হয় না।
তুরাগ এর কথা শুনে তরুর চোখ বড় হয়ে গেল। এ ছেলে বলে কি এগুলা। ঠোটকা’টা ছেলে একটা। এভাবে একটা মেয়ের সাথে কেউ কথা বলে। নির্লজ্জ।

– পাঁচ মিনিট টাইম। শুধু ড্রেস পড়ে বের হও। কোন আটা ময়দা মাখবা না৷ তাহলে কাচ্চি কপালে জুটবে না বলে দিচ্ছি। অনলি পাঁচ মিনিট।
হুকুম করে চলে গেলেন। তরু ভাবনায় পড়ে গেল। ওর কি এখন তুরাগ এর কথা শোনা উচিত। নাকি উচিত না। আচ্ছা একটু আগে যা বলে গেল যদি সত্যি সত্যি সেটা করে। বাসায় তো কেউ নেই। না বাপু কোন রিস্ক নেয়া যাবে না৷
তরু সত্যি সত্যি কোন সাজগোছ করে নি। শুধু একটা গাউন পড়ে আর চুলটা ঠিক করে বেড়িয়ে গিয়েছে।

সামনে দুই প্লেট কাচ্চি নিয়ে তরু আর তুরাগ দুজন বসে আছে। দুজনের মধ্যে কোন কথা নেই। তরুর মনে হঠাৎ একটা প্রশ্নের উদয় হলো। করবে নাকি করবে না এভাবে করতে করতেও কিছু সময় পার করে দিল। তারপর মনে অনেক সাহস সঞ্চয় করে জিজ্ঞেস করলো
– আচ্ছা তুরাগ ভাই আপনার গার্লফ্রেন্ড নেই?
-….

ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ১১

– না মানে আপনি তো সিঙ্গার মানুষ। কত ফ্যান ফলোয়ার আপনার। তারা কেউ আপনাকে প্রপোজ করে নি।
তরুর কথা শুনে তুরাগ এর চোখ লাল হয়ে যেতে থাকে। কন্ঠ হঠাৎ গম্ভীর হয়ে গেল। বলল
– মিস তরু আপনি আপনার লিমিট এর মধ্যে থাকেন। আপনি এখনো যথেষ্ট ছোট। আপনার সাথে একটু ফ্রি হয়েছি মানে এই নয় আপনি পার্সোনাল বিষয় কথা বলবেন।
তুরাগ এর হঠাৎ তরুলতা থেকে তরু বলা তারপর আপনি আপনি বলায় তুরাগ এর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল তরু।

ভালোবাসার বর্ষণ পর্ব ১৩