হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪২

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪২
সাদিয়া জাহান উম্মি

গাঢ় বেগুনি রংয়ের সুন্দর একটা গোল জামা পরেছে নূর।সাথে হালকা পাতলা একটু সাজগোজ করে নিয়েছে।ফাহিম আসবে বলে কথা।নূর মনের আনন্দে নেচে-কুঁদে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসল।উদ্দেশ্য নিচে বসারঘরে যাওয়া।নূর নিচে এসে দেখে ফাহিম এসে পরেছে।এবং বেশ ভদ্রলোকদের মতো বসে আছে।হাতে তার চায়ের কাপ।একটু পর পর চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে।

নূর গিয়ে আরাবীর পিছনে দাঁড়াল।ফাহিম একবার নূরকে চোখের পলক দেখে নিয়ে আবার নড়েচড়ে সোজা হয়ে বসল।মেয়েটাকে সুন্দর লাগছে।ফাহিম নিজের দৃষ্টি সংযত রাখার চেষ্টা করছে।কারন এখানে পরিবারের সবাই বসে।কিন্তু বেহা’য়া মন মানলে তো?সেই চোখ বার বার নূরের দিকে চলে যাচ্ছে।আর এই সুযোগেরই সৎ ব্যবহার করলো নূর।ফাহিম সবার সাথে কথা বলার ফাঁকে নূরের দিকে তাকাতেই নূর সবার অগোচরে খুব কৌশলে ফাহিমকে চোখ মেরে দিল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সাথে ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখাতে ভুললো নাহ।ফাহিম সবেই চায়ের কাপে মুখ দিচ্ছিল।নূরের এহেন কান্ডে চা ফাহিমের নাকে মুখে উঠে গেল।কাশতে লাগল ফাহিম।সাথি বেগম দ্রুত এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল ফাহিমকে।ফাহিম তা দ্রুত পান করে নিল।সাথি বেগিম চিন্তিত কন্ঠে বললেন, ‘ ঠিক আছো তুমি বাবা?’

গলা খাকারি দিল ফাহিম।আঁড়চোখে আবারও নূরের দিকে তাকাল।মেয়েটা হাসছে।এই মেয়েটা হাড়ে হাড়ে বজ্জা’ত।কিভাবে ওকে সবার সামনে নাস্তানাবুদ করল।ফাহিম দৃষ্টি সরিয়ে এনে বলে, ‘ জি আন্টি।ঠিক আছি আমি।’
একটু থেমে আবারও বলে,’ একটু ওয়াশরুমে যেতাম আরকি।’
সাথি বেগম বলেন,’ হ্যা হ্যা বাবা। নূর তোমায় দেখিয়ে দিবে।তুমি যাও ওর সাথে যাও।’
সাথি বেগম নূরকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘নূর যাও ফাহিমকে নিয়ে যাও।’

‘ আচ্ছা আম্মু।’
ফাহিম উঠে দাঁড়ালো।নূর বলল,’ আসুন আমার সাথে।’
নূর আগে আগে যাচ্ছে।ফাহিম পিছে পিছে।সবার থেকে দূরে যেতেই ফাহিম আশপাশ ভালোভাবে পরখ করে নিল।নাহ কেউ নেই।সবাই বসার ঘরে আড্ডায় ব্যস্ত।এই সুযোগে ফাহিম নূরের হাত শক্ত করে ধরল।নূর একটু চমকালো।কিছু বলবে তার আগেই ফাহিম ওকে টেনেটুনে পাশেই একটা রুমে নিয়ে গেল।খুব দ্রুততার সাথে দরজাটাও আটকে দিল।নূর হকচকিয়ে বলে, ‘ কি হয়েছে?কি করছেন?’

ফাহিম চোখ ছোটো ছোটো করে তাকাল।তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে,’ ওখানে সবার সামনে এমন করলে কেন?’
‘ কি করেছি আমি?’ ইনোসেন্ট একটা ভাব নিয়ে বলল নূর।যেন সে কিছুই করেনি।একেবারে ভাজা মাছ উল্টে খেতে পারে নাহ।ফাহিম মাথার পিছনে হাত বুলাল।ঠোঁট কামড়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে।হুট করে নূরের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের নিকট নিয়ে আসল।আচমকা এমন করায় ভয় পেয়ে গেল নূর।চোখ বড়ো বড়ো করে তাকাল ফাহিমের দিকে।পলক ঝাপ্টে কাঁপা গলায় বলে, ‘ কি কর..করছেন?’
বাঁকা হেসে ফাহিম বলে, ‘ কেন তুমি যা করছিলে?’

‘ কি করেছি আমি?’ ভয়ে ভয়ে বলে নূর।
‘ তখন যা তুমি ওখানে করছিলে।দূর থেকে ইশারা দিচ্ছিলে।আর সেটাই আমি প্রেক্টেকেলি এখন তোমাকে করে দেখাবো।’
‘ দেখুন এমন কিছুই নাহ।’
‘ কিছুই নাহ?’
‘ নাহ।’
‘ আমি তো জানি অনেক কিছু।’
‘ কি অনেক কিছু?’
‘ দেখবে?’
‘ নাহ।’
‘ আমি তো দেখাব।’

বলতে বলতেই ফাহিম ঝুকে আসল নূরের কাছে।চোখ বন্ধ করে নিল নূর।ফাহিম নূরের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে, ‘ তুমি যে আমায় ঠোঁটের ইশারায় চুমু দেখালে।এখন তাই আমি তোমায় চুমু খাবো।’
‘ নাহহহহ!’ চিৎকার করে উঠল নূর।
ফাহিম দ্রুত নূরের মুখ চেপে ধরল।আতংকিত গলায় বলে, ‘কি করছ?সবাই শুনবে।’
‘ উম।’
‘ ওহ সরি।’

ফাহিমের নূরের মুখের থেকে হাত সরিয়ে দিল।ফাহিম হাত সরাতেই নূর জোড়ে জোড়ে কয়েকটা নিশ্বাস নিল।তারপর বলে, ‘আ..আপনি যে এতো অস’ভ্য তা তো আগে জানতাম নাহ।অস’ভ্য কোথাকার।’
নূরের বলার ধরন দেখে হেসে দিল ফাহিম।হাসি থামাতেই বলে,’ এইটুকুইতে আমাকে অস’ভ্য উপাধি দিয়ে দিলে?এখনও তো তোমার সাথে আরও কতো কি করা বাকি।’
‘ ক…কি করবেন?’
বাঁকা হেসে ফাহিম বলে,’ সেটা নাহয় বিয়ের পরেই দেখাব।’

নূরকে চোখ মেরে সরে আসল ফাহিম।নূরের মুখশ্রী জুড়ে লালাভ আভা ছড়িয়ে পরল।মাথা নুইয়ে মুঁচকি হাসল ও।
‘ লজ্জা পেলে সুন্দর লাগে।’
কথাটা কানে এসে পৌছাতেই নূর দ্রুত চোখ তুলে তাকায়।কিন্তু তার আগেই ফাহিম দরজা খুলে চলে গিয়েছে।নূরও কয়েক মিনিট স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।পর পর ছুট লাগাল বসারঘরের দিকে।

রাতের খাওয়া দাওয়া সেরে জিহাদ সাহেব,লিপি বেগম,আর ফাহিম যাওয়ার জন্যে প্রস্তুতি নিলো।তাদের শতো বলেও থাকার জন্যে রাজি করানো গেলো নাহ।ওনারা যেতেই সবাই টুকাটাকি কথাবার্তা বলে যার যার রুমে ঘুমাতো চলে গেল।সবাই যেতেই জায়ান এইবার আরাবীকে কোলে তুলে নিয়েই ঘরে আসল।আরাবী সোফায় বসিয়ে দিয়ে বিছানা করে নিল।তারপর আরাবীকে আবারও কোলে নিয়ে ওয়াশরুমে নিয়ে গেল।আরাবীকে ফ্রেস করিয়ে নিয়ে বিছানায় রেখে আসল।তারপর নিজেও ফ্রেস হয়ে আসল জায়ান।রুমের লাইট নিভিয়ে আরাবীর পাশে গা এলিয়ে দিল।সাথে সাথে বুকের উপর নরম দেহের অস্তিত্ব টের পেয়ে হাসল জায়ান।দুহাতে আঁকড়ে ধরে আরাবীর দেহটা জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে।প্রশ্ন করল,’ ঘুমাও নি যে?’

‘ বিকেলে ঘুমালাম নাহ কতোক্ষন?অনেক্ষন ঘুমিয়েছি।ঘুমটা ভালো হয়েছে।তাই এখন ঘুম আসছে নাহ।’ বলল আরাবী।
আরাবীর কথার পরিপেক্ষিতে দুষ্টু হেসে জায়ান বলে,’ এতোদিন পর স্বামির আদর ভালোবাসা পেয়েছ।ঘুম তো ভালো হবেই।’
আরাবী জায়ানের বুকে আলতো হাতে আঘা’ত করে করল।মুখ ফুলিয়ে বলে, ‘ অস’ভ্য লোক।’
শব্দ করে হেসে দিল জায়ান।আরাবী তা দেখল চেয়ে চেয়ে।পলক ঝাপ্টালো না একটুও।নির্নিমেষ দৃষ্টি তাক করে রাখল জায়ানের দিকে।আরাবী সেই দৃষ্টি লক্ষ্য করে হাসি থামাল জায়ান।নরম চোখে চেয়ে বলে, ‘ কি দেখছ?’

‘ আপনাকে!’ সরল গলায় বলল আরাবী।’
‘ আমাকে?’
‘ হুম,এভাবে আর কারো সামনে আপনি হাসবেন নাহ।’
ভ্রু-কুচকালো জায়ান আরাবীর এমন কথায়।প্রশ্ন করে,’ কেন?কি হয়েছে?’
‘ কিছু না শুধু হাসবেন নাহ।’
‘ আরেহ বাবা কারনটা তো বলবে।’

জায়ানের বুকে মুখ গুজে দিল আরাবী।তরতরিয়ে বলে উঠল,’ এইভাবে হাসলে আপনাকে অনেক সুন্দর লাগে।ভয়ংকর সুন্দর যাকে বলে।এইযে আপনার হাসি দেখেই তো আমার বুকে চিনচিনে ব্যথা হয়।এই ব্যথাটা আমার ভীষণ ভালোলাগে।তাই আমি চাই আপনি কারো সামনে এইভাবে হাসবেন নাহ।আর কেউ যেন এই ব্যথার উপলব্ধি না করতে পারে।’
আরাবীর আবেগঘন কথায় মন জুড়িয়ে যায় জায়ানের।আরাবীর মাথায় হাত রেখে নম্র গলায় বলে,’ হাসব নাহ।কখনও হাসব নাহ।আমার কাঠগোলাপ যা অপছন্দ করে তা আমি কখনই করব নাহ।’

জায়ানের কথায় ঘুম ঘুম চোখেই হাসে আরাবী।জায়ানের বুকে মাথা রাখলেই যেন শান্তিতে চোখ বুজে আসে আরাবীর।জায়ানের আলতো হাতে চুলের ভাঁজে হাত বুলিয়ে দেয়।ঘুম না এসে উপায় আছে।আরাবীও ঘুমিয়ে পরল।জায়ান মৃদ্যু হাসল ঘুমন্ত আরাবীকে দেখে।আরাবীর এলোমেলো চুলগুলো আঙুলের সাহায্যে গুছিয়ে দিল।আরাবীর কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিল।

এই মেয়েটা তার জন্যে যে কি সেটা ও কাউকে বলে বুজাতে পারবে নাহ।জায়ান মৃদ্যু কন্ঠে বলে উঠল,’তোমার মনের সকল আশাআমি পূরন করব কাঠগোলাপ।জানি এতে তুমি কষ্ট পাবে।কিন্তু আমার কিছু করার নেই।এটা আমার করতেই হবে।তৈরি থাকো জান।খুব শীঘ্রই সকল সত্যি সম্মুখীন হবে তুমি।তবে চিন্তা করো না।এই আমি সবসময় তোমার কাছে ছিলাম,আছি,থাকব।ভালোবাসি জান। অনেক ভালোবাসি।আই লাভ ইউ।’

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪১

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন।ছোটো হয়েছে জানি।মাফ করবেন আমায়।আজ এক জায়গায় এসেছি।ভীষণ ক্লান্ত।ইনশাআল্লাহ কালকেও দিব।কাল বড়ো করে দিব ইনশাআল্লাহ।

হৃদয়াসিক্ত কাঠগোলাপ পর্ব ৪৩